Site icon অটোমোটিভ গুরুকুল [ Automotive Gurukul ], GOLN

ডি-কারবোনাইজিং করার পদ্ধতি

ডি-কারবোনাইজিং করার পদ্ধতি – এই পাঠটি “অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং” বিষয়ের “ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ, কারণ ও প্রতিকার” অধ্যায়ের একটি পাঠ।

ডি-কারবোনাইজিং করার পদ্ধতি

অত্যাধুনিক গ্যারেজগুলিতে সাধারণত তিনভাবে ডি-কারবোনাইজিং করা হয়। যেমন :

(ক) ঘূর্ণায়মান তারের ব্রাশ (rotating wire brush),

(খ) সুট ব্লাস্ট প্রক্রিয়া (soot blasting),

(গ) হাত দ্বারা চাঁছা (hand scraping)।

 

(ক) ঘূর্ণায়মান তারের ব্রাশ :

এই পদ্ধতিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের ব্রাশের নমুনা ১১.৪ চিত্র দ্বারা দেখানো হয়েছে।

 

 

এই ব্রাশগুলি সহজে বহন করা যায় (portable) এবং বৈদ্যুতিক ড্রিলের চাকে লাগিয়ে কাজ করতে হয়। কাজের বিভিন্নতার জন্য তারের ব্রাশগুলি বিভিন্নভাবে তৈরী করা হয়। চিত্রের (ক) এবং (গ) নমুনার ব্রাশ দ্বারা পিস্টন ক্রাউন পরিষ্কার করতে সুবিধাজনক। (খ) নমুনার ব্রাশ দ্বারা একজন্ট পোর্ট এবং ছোট ছোট ছিদ্র পরিষ্কার করতে সুবিধা। তারের (wire brush) দ্বারা বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পরিষ্কার করার পর ভালভাবে কেরোসিন তেল দ্বারা ধৌত করতে হবে এবং পরে বাতাসে আরও ভালভাবে সিলিন্ডার হেড, পিস্টন রিং, স্পার্কপ্লাগ, প্লাগের ছিদ্র ইত্যাদি ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে যাতে কোন আগা কার্বন না থাকতে পারে।

 

(খ) সুট ব্লাস্ট পদ্ধতি :

এই পদ্ধতিতে মোটরযানের সকল যন্ত্রাংশ ডি–কারবোনাইজিং করার জন্য একটি সুট ব্লাস্ট কেবিনেটের প্রয়োজন, যার মধ্যে উন্নতমানের স্টীল অ্যাব্রেসিভ (steel abrasive) বা সুট থাকবে। সঙ্কুচিত বাতাসের উচ্চ চাপে এই সুট বা স্টীল অ্যারেসিভ দ্বারা যন্ত্রাদির কার্বন দূরীভূত করা হয়।

একটি গাড়ীর যন্ত্রাদি ডি—কারবোনাইজিং করতে ৫-৬ মিনিট সময় লাগে। যন্ত্রগুলি প্রথমে কেবিনেটের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে কেবিনেটের সকল দ্বারা (port) বন্ধ করে দিতে হয়। ভিতরের অবস্থা অবলোকন করার জন্য কেবিনেটের উপর দিকে একটি কাচের জানালা থাকে এবং একটি ১০০ ওয়াটের ভাল্ভ থাকে। সুট ব্লাস্ট করার জন্য ১০০ হতে ১৫০ পাউন্ড প্রতি বর্গইঞ্চিতে বাতাসের চাপ দেয়। কিন্তু বাতাসের এই চাপ রেগুলেটরের মাধ্যমে কমবেশী করা যায়। সাধারণত এই চাপ ৩০ হতে ৪০ পাউন্ডে

রাখা হয়। বাতাসের চাপ বৃদ্ধি করে ডি-কারবোনাইজিং প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা যায়। অ্যাব্রেসিভ নিয়ন্ত্রণ করা হয় ফুট প্যাডেল দ্বারা। যন্ত্রাদি ডি–কারবোনাইজিং করার পর কেরোসিন তেল দিয়ে ভালভাবে ধৌত করতে হয় এবং পরে সঙ্কুচিত বাতাস দ্বারা পরিষ্কার করা দরকার। অতঃপর যথারীতি হেড-গ্যাসকেট লাগিয়ে ইঞ্জিন হেড সিলিন্ডারের সাথে যুক্ত করতে হবে এবং হেড-এর স্টাড বোল্ট পর্যায়ক্রমে কোণাকুণিভাবে আঁটতে হবে।

 

(গ) স্ক্রেপিং পদ্ধতি :

যেসব গ্যারেজে তারের ব্রাশ এবং সুট ব্লাস্ট করার কোন সুযোগ সুবিধা নেই। যেসব গ্যারেজে ডি-কারবোনাইজিং করার জন্য স্ক্রেপার রাখা একান্ত প্রয়োজন। যেসব গ্যারেজে আধুনিক সুযোগ সুবিধা নেই সেখানে স্ক্রেপার, স্ক্রু-ড্রাইভার এবং হ্যাক-স ব্লেডের পাতলা মাথা দ্বারা আস্তে আস্তে অতি সাবধানতার সাথে কার্বন দূরীভূত করতে হয়। সর্বশেষে কেরোসিন তেল দ্বারা ধৌত করতে হয় এবং পরে বাতাসে পরিষ্কার করতে হয়।

রাসায়নিক প্রক্রিয়ার ডি-কারবোনাইজিংকরণ : যখন অ্যালুমিনিয়ামের যন্ত্রাদিতে কার্বন জমে তখন উক্ত যন্ত্রাদি একটি পাত্রে ডুবিয়ে রাখতে হয়। ঐ পাত্রে “গাঙ্ক কম্পাউন্ড হাইড্রোসীল” (gunk compound hydroscal) সজ্জিত করা থাকে। প্রয়োজন হলে কয়েক ঘন্টা যন্ত্রগুলি ভিজিয়ে রাখতে হয়। পরে হাল্কা ঘর্ষণ দিলেই কার্বন দূরীভূত হয়।

 

বিভিন্ন ইঞ্জিন নির্মাতা হেডের নাট বিভিন্ন ওজনে টাইট দিয়ে থাকেন। নিম্নে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো :

(ক) ১৬০০ সিসি মাইক্রোবাস-৭৫ পাঃ ফুট হতে ৮৫ পাঃ ফুট টাইট দেওয়া হয়।

 

(খ) ১৩০০ সিসি মাজদা, ৭৫ হতে ৯০ পাঃ ফুট।

(গ) ১২৫০ সিলি ডাটসন, ৬৫ হতে ৭৫ পাঃ ফুট।

(ঘ) ১৬০০ সিসি টয়োটা, ৭৫ হতে ৯০ পাঃ ফুট।

(ঙ)বেডফোর্ড ১০০০০ সিসি, ১২০-১৫০ পাঃ ফুট।

(চ) বি.এম.সি মোক ১০ সিসি, ৫৫ পাঃ ফুট। (ছ) লিল্যান্ড হয় সিলিন্ডার ইঞ্জিন, ১৩৫–১৮০ পাঃ ফুট।

ভাল্ভ সিট ও ভাল্ভ পরীক্ষাকরণ :

ভাল্ভ স্প্রিং কম্প্রেসরের মাধ্যমে ভালভ খোলার পর ভালভাবে ডি-কারবোনাইজিং করতে হয়। অতঃপর নিম্নলিখিত ত্রুটিগুলি পরীক্ষা করতে হয়।

(ক) ভাল্ভ ফেস এবং মারজিন পরীক্ষা করতে হয়।

(খ) ভাল্ভ সিটসমূহ মসৃণ আছে কিনা তা দেখতে হয়। ভাল্ভ সিট গর্ত বা জ্বলে গেছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে।

(গ) ভাল্ভ ফেসের কোণ ঠিক আছে কিনা তা মাস্টার রিফেসারের কোণ (angle ) ইনডিকেটরের সাহায্যে পরীক্ষা করতে হবে।

(ঘ) ভাল্ভ ফেস এবং সিটে শক্ত কার্বন জমা হয়েছে কিনা তা ভালভাবে নিরীক্ষণ করতে হবে।

(ঙ) ভাল্ভ স্টেম (stem) বাঁকা এবং ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে কিনা তা লেদ মেশিন অথবা সারফেস প্লেটের উপর ‘ভি’ ব্লক স্থাপন করে ভি-ব্লকে ভাল্ভ রেখে ডায়াল গেজের সাহায্যে নির্ণয় করা যায়।

 

আউটসাইড মাইক্রোমিটার দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত ভাল্ভ স্টেম পরিমাপ করা যায়। পরিমাপের পর যদি ভাল্ভ স্টেম ও ভাল্ভ গাইডের মধ্যে ক্লিয়ারেন্স .০০৫” অথবা আরও বেশী হয় তাহলে ভাল্ভ গাইড অথবা ভাল্ভ পরিবর্তন করা প্রয়োজন। নতুন ভাল্ভ এবং ভাল্ভ গাইডের মধ্যে ক্লিয়ারেন্স থাকে .০০১৫ হতে .০০৩ ইনলেট ভাল্ভ হলে ক্লিয়ারেন্স থাকে .০০১৫”- .০০৩” এবং একজস্ট ভাল্ভ হলে ক্লিয়ারেন্স থাকে .০০৩-০০৪

ভাল্ভ স্টেম ও গাইডের মধ্যে বেশী ক্লিয়ারেন্স হলে ইনলেটের সময় এয়ার ফুয়েল মিশ্রণ বের হবে (সাকশন স্ট্রোকের সময়)। ফলে ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা কমে যাবে এবং মন্থর গতির সময় ইঞ্জিন চালু থাকতে চাইবে না অর্থাৎ অসুবিধার সৃষ্টি করবে। কিন্তু যদি একজস্ট ভাল্ভ এর কিনারা দিয়ে গ্যাস বের হয় থাহলে ভাল্ভ স্টেম ভাল্ভ গাইডে জ্যাম হয়ে যাবে। কারণ উষ্ণ গ্যাসের তাপে তেল শুকিয়ে যাবে। এর ফলে ইঞ্জিন পরিচালনার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে ।

কানেকটিং রড বাঁকানো এবং মোচড়ানো : এই রড ভালভাবে পরিষ্কার করার পর অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পরীক্ষা করে দেখা উচিত যে, এটি বাঁকা এবং মোচড়ানো কিনা। কানেকটিং রডের এই দুইটি ত্রুটি স্পেশাল ভি-ব্লক, ম্যানেড্রল (mandrels), ডায়াল গেজ এবং সারফেজ প্লেটের সাহায্যে নির্ণয় করা যায়।

 

কানেকটিং রড বেঁকে ও মুচড়ে গেলে গাজনপিন ক্র্যাঙ্কপিনের সাথে কোশের সৃষ্টি করে। ফলে বিয়ারিং-এর ক্ষয় বৃদ্ধি পায় এবং ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা লোপ পায়। ১১.৭ (ক) চিত্রে কানেকটিং রডের সম্ভাব্য ত্রুটিসমূহ দেখানো হয়েছে । 

সাধারণ কোন যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করেও পার্শ্ব বাঁকা কানেকটিং রডের দুই প্রান্তে দুইটি মসৃণ রড বা ম্যানড্রেল (দুই প্রান্তের বিয়ারিংসমূহের মাপ অনুসারে লাগিয়ে দুইটি রঙের মধ্যভাগের দৈর্ঘ্য পরিমাপ করলেই এর পার্শ্বের বক্রতা বের হবে। পার্শ্বের বক্রতা যদি .০০৫- হয় তাহলে বিশেষ ধরনের সাঁড়াশি (vice) দিয়ে কানেকটিং রড সোজা করতে হবে। ভরহল মোটর কোম্পানী লিঃ কর্তৃক কানেকটিং রড বাঁকানো ও মোচড়ানোর বিবরণ নিম্নে দেওয়া হলো।

 

একটি মসৃণ টেবিলের উপর দুইটি ডি-ব্লক পাশাপাশি রাখা আছে। কানেকটিং রডের দুই প্রান্তে দুইটি রড ম্যানড্রেল লাগানো আছে। মানড্রেল দুইটি কানেকটিং রডের দুই প্রান্তের মাপ অনুযায়ী লাগানো হয়। এমতাবস্থায় ম্যানড্রেলসহ চিত্র অনুসারে কানেকটিং রডটি ভি ব্লকের উপর স্থাপন করা হয়। (খাড়াভাবে, বিগ এন্ড বিয়ারিং ভি-ব্লকের সাথে এবং স্মল এন্ড উপরের দিকে রাখা হয়)।

সারফেস প্লেট বা মসৃণ টেবিলের উপর রক্ষিত স্ক্রাইবিং ব্লকের (scribing block) সাথে বিশেষ ধরনের আর্ম-এর সাহায্যে একটি ডায়াল গেজ লাগানো থাকে। এই গেজের সাহায্যে স্মল এন্ড বিয়ারিং (small end bearing)-এর ম্যানড্রেলের দুই প্রান্তের রিডিং নেওয়া হয়। দুই প্রান্তের রিডিং-এর পার্থক্যই হচ্ছে সাইড বেন্ডিং। এটি কোনক্রমেই .০০৪” ইঞ্চির বেশী হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। সূক্ষ্ম পরিমাপের জন্য রড বা ম্যানডেলগুলি ৮” পরিমাণের হওয়া আবশ্যক।

 

মোচড়ানো কানেকটিং রড পরীক্ষাকরণ : কানেকটিং রড বক্রতা পরীক্ষা করতে যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় মোচড়ানো পরীক্ষা করতেও সেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়। এখানে কানেকটিং রডটিকে সারফেস প্লেটের উপর ভি–ব্লক হতে আড়াআড়িভাবে রাখা হয় ঠেস দেওয়া একটি কাঠের টুকরার সহায়তায়।

৭.১১ (গ) চিত্রে এটি দেখানো হয়েছে। এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, বিগ এন্ড বিয়ারিং (Big end bearing) এর ম্যানড্রেল এবং স্মল এন্ড বিয়ারিং (small end bearing) এর ম্যানড্রেল যেন সমান্তরাল থাকে। এমতাবস্থায় পূর্বের পরীক্ষার মত ডায়াল গেজের দ্বারা স্মল এন্ড ম্যানড্রলের দুই প্রান্তের মাপ নির্ণয় করলেই মোচড়ানো কানেকটিং রডের পরিমাণ বের হবে। আরবর প্রেস বা অন্যান্য ব্যবস্থার মাধ্যমে এই বাঁকানো মুক্ত করা যায়। বাঁকা ও মোচড়ানোর স্থানসমূহ চক দিয়ে চিহ্নিত করতে হয়। অতঃপর ঐ সকল স্থানে ধীরে ধীরে চাপ দিয়ে সোজা করতে হয়।

 

 

 

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version