সি পাম্প – এই পাঠটি “অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং” বিষয়ের “পেট্রোল জ্বালানি ব্যবস্থা” অধ্যায়ের একটি পাঠ।
সি পাম্প
এ. সি. পাম্প সাধারণত তিন প্রকার। যেমন : (১) যান্ত্রিক, (২) বৈদ্যুতিক এবং (৩) কম্বিনেশন এ. সি. পাম্প। যান্ত্রিক ( mechanical) এ. সি. পাম্পের কার্যপ্রণালী এবং কিভাবে এই পাম্প স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় সে সম্পর্কে ২য় অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে।
এ. সি. পাম্প ওভারহোলিং :
এ. সি. পাম্প যখন কম তেল সরবরাহ করে, ডায়াফ্রাম ছিদ্র হয় এবং ময়লায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয় তখন ওভারহোলিং করার প্রয়োজন হয়।
এ. সি. পাম্প খোলার নিয়ম :
(১) প্রথমে এই পাম্প ট্যাঙ্ক এবং কার্বুরেটরের সংযোগ লাইন রেঞ্চের সাহায্যে বিচ্ছিন্ন করতে হবে।
(২) ইঞ্জিনের সাথে সংযুক্ত মাউন্টিং নাট দুইটি খুলে পাম্পটিকে ইঞ্জিন হতে বিচ্ছিন্ন করতে হবে।
(৩) একটি পাত্রে পেট্রোল নিয়ে উক্ত পাম্পটির বা সকল স্থান ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
(৪) ট্রেতে জমাকৃত ময়লা ও পেট্রোল ফেলে দিতে হবে এবং ভাল পেট্রোল অথবা পরিষ্কার করার তরল পদার্থ নিতে হবে। স্ক্রু ড্রাইভার দ্বারা পাম্পের স্ক্রুগুলি খুলে ফেলতে হয়। ফলে এ.সি. চেক ভাল্ভ, স্ট্রেনার, ডায়াফ্রাম পুল এবং পুশ রড খুলে যাবে।
(৫) এ. সি. পাম্পের ঢাকনা খোলার সময় পাম্পের ঢাকনা ও গায়ে দাগ বা চিহ্ন দিয়ে রাখা ভাল। এর ফলে পরবর্তী সময় এটি লাগাতে কোনো অসুবিধা হয় না।
(৬) পুল এবং পুশ রড রকার আর্মের সাথে সংযোগ করা থাকে। ডায়াফ্রামসহ রডটি নীচের দিকে ধাক্কা দিলেই এটি খুলে যায়।
(৭) ট্রেতে রক্ষিত পরিষ্কার করার তরল পদার্থ বা পেট্রোল দ্বারা যন্ত্রাংশ ভালভাবে ধৌত করতে হবে। কিন্তু ডায়াফ্রাম, অয়েল সীল, গ্যাসকেট ইত্যাদি উক্ত তরল পদার্থ বা পেট্রোলের মধ্যে ডুবানো যাবে না।
(৮) ধৌত করার পর বাতাসে ভালভাবে শুকাতে হবে। ফলে এগুলি পরিষ্কার হবে ।
(৯) এমতাবস্থায় এ. সি. চেক ভাল্ভদ্বয়, ডায়াফ্রাম স্প্রিং ইত্যাদি ভালভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে এই সকল যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ কার্যোপযোগী কিনা। যদি কার্যোপযোগী মনে হয় তবে পুনরায় লাগিয়ে পরীক্ষা করতে হবে যে পাম্পের চাপ ঠিক আছে কিনা। যদি ঠিক না থাকে তবে এ. সি. পাম্প কিট ব্যবহার করা উচিত হবে। একটি পাম্প কিটে সাধারণত এ. সি. চেক ভাল্ভ ডায়াফ্রাম, ডায়াফ্রাম স্প্রিং, গ্যাসকেট, অয়েল সীল ইত্যাদি থাকে।
এ. সি. পাম্প লাগানোর নিয়ম :
(১) নতুন ডায়াফ্রামটির পুল এবং পুশ রডের সাথে স্প্রিং রিটেইনার, অয়েল সীল ইত্যাদি বসিয়ে পুল এবং পুশ রডটিকে চাপ দিয়ে রকার আর্মের সাথে যুক্ত করতে হবে ।
(২) এখন এ. সি. চেক ভাল্ভ বডিতে চেক ভাল্ভ দুইটি স্থাপন করতে হবে এবং এই বডি পাম্প বডির সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।
(৩) এরপর গ্যাসকেটসহ বোল্ট লাগাতে হয় অথবা চেক ভাল্ভ বডির উপরের ঢাকনাটি একটি মাত্র নাট দিয়ে লাগাতে হয়। সকল এ. সি. পাম্পের গঠন, আকার ও আকৃতি এক রকম নয়। এ. সি. পাম্প ইঞ্জিন স্থাপনের পূর্বে পরীক্ষা করে স্থাপন করতে হয়। পরীক্ষার জন্যে একটি পাত্র কিছু পেট্রোল নিয়ে এতে পাম্পের ইনটেক লাইন ডুবিয়ে রেখে রকার আর্মের দ্বারা পাম্প করলে যদি দেখা যায় পাম্প আউটলেট দ্বারা ৩ হতে ৭ পাউন্ড পাম্পে তেল বের হচ্ছে তাহলেই বোঝা যাবে পাম্প সঠিক আছে।
(৪) এমতাবস্থায় পাম্পটি ইঞ্জিনের সাথে লাগিয়ে ট্যাঙ্ক এবং কার্বুরেটরের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। এর ফলে পাম্পটি পুরাপুরিভাবে লাগানো হবে।
(৫) স্থাপনের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যে, পাম্পের নিম্নভাগে বায়ুমণ্ডলের স্বাভাবিক চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য যে পোর্ট থাকে তা যেন কোন কারণেই বন্ধ না থাকে।
বৈদ্যুতিক এ. সি. পাম্প:
বৈদ্যুতিক এ. সি. পাম্প সাধারণত দুই প্রকার।
(১)সাকশন :
ইহা যান্ত্রিক জ্বালানি পাম্পের মতই ট্যাঙ্ক হতে তেল টানে।
(২) পুশার :
ইহা পেট্রোল ট্যাঙ্কের তলদেশে লাগানো থাকে এবং তেলকে ঠেলে কার্বুরেটরে পাঠায়।
সুবিধা :
বৈদ্যুতিক এ. সি. পাম্পে যান্ত্রিক এ. সি. পাম্পের তুলনায় কিছু বেশী সুযোগ সুবিধা আছে। সুইচ অন করার সাথে সাথে পাম্প কার্বুরেটরে তেল সরবরাহ করে থাকে। এই জাতীয় পাম্প ব্যবহারে জ্বালানি লাইনে তেলের সরবরাহ খুব সন্তোষজনক থাকে।
যান্ত্রিক জ্বালানি পাম্প ইঞ্জিন প্রকোষ্ঠে (compartment) বসানো হয় এবং তুলনামূলকভাবে অনেক গরম আবহাওয়ার মধ্যে চালিত হয় বিধায় ভ্যাপার লক হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে, কিন্তু বৈদ্যুতিক এ. সি. পাম্পে ভ্যাপার লক (vapour lock) হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না। কারণ বৈদ্যুতিক এ. সি. পাম্প ইঞ্জিন প্রকোষ্ঠে না বসিয়ে অন্য যে কোন ঠাণ্ডা জায়গায় যেমন ড্যাশবোর্ডে বসানো যায় অথবা জ্বালানি ট্যাঙ্কের তলদেশেও বসানো যায়। এতে পাম্প এবং তেল তাপে ভ্যাপার লক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
বৈদ্যুতিক জ্বালানি পাম্পের কার্যপ্রণালী : সর্বাধুনিক যেসব বৈদ্যুতিক এ. সি. পাম্প জ্বালানি ট্যাঙ্কের তলদেশে লাগানো থাকে তা বৈদ্যুতিক মোটর দ্বারা চালিত। এই মোটর পাম্পের ইম্পেলারকে (impeller) ঘুরায়, ফলে তেল পাম্প হয়ে কার্বুরেটরে যায়। একে পুশ টাইপ ইলেকট্রিক এ. সি. পাম্প বলে।
নিম্নে একটি সাকশন ইলেকট্রিক ফুয়েল পাম্পের কার্যপ্রণালীর বর্ণনা দেওয়া হলো। একটি নমনীয়’ (flexible) ধাতব হাপর (bellows), একটি আর্মেচার, তড়িৎচুম্বক (electromagnet) এবং একটি টার্মিনাল থাকে। টার্মিনালে যখন ব্যাটারী হতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়, অর্থাৎ ইগনিশন সুইচ অন করা হয় তখন তড়িৎ চুম্বকদ্বয় শক্তিশালী চুম্বকে পরিণত হয়। এর ফলে এটি আর্মেচারকে নিজের দিকে টানে। এই টানে হাপর নীচের দিকে লম্বা হয়। কারণ আর্মেচারের সাথে এর সংযোগ থাকে। এই টানের ফলে হাপরের মধ্যে শূন্যতার সৃষ্টি হয় এবং ইনলেট পোর্ট দিয়ে তেল পাম্পে প্রবেশ করে।
আর্মেচারটি যখন সর্বনিম্নে পৌঁছে (চুম্বকের টানে) তখন এটি কন্ট্রাক্ট বিন্দু দুটিকে খুলে দেয়। ফলে মুহূর্তের জন্য তড়িৎ চুম্বক হতে ব্যাটারীর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। রিটার্নিং স্প্রিং তখন আর্মেচারটিকে ঠেলে উপরের দিকে নিয়ে যায় এবং হাপরটিকে সঙ্কুচিত করে এবং চাপের সৃষ্টি হয়। এই চাপে তেল পাম্প হতে বের হয়ে কার্বুরেটরে যায়।
আর্মেচার যখন তার সর্বোচ্চ বিন্দুতে ফিরে আসে তখন কন্ট্রাক্ট বিন্দুদ্বয়ের সাথে পুনরায় সংযুক্ত হয় এবং পুনরায় তড়িৎচুম্বকটি ইনারজাইস্ট হয় এবং আর্মেচারটিকে পুনরায় টেনে নীচের দিকে আনে এবং পূর্ব প্রক্রিয়া পুনঃ পুনঃ করতে থাকে (যতক্ষণ পর্যন্ত ইগনিশন সুইচ অন অবস্থায় থাকে)। ফলে তেল সবিরামভাবে সরবরাহ হতে থাকে।
এ. সি. পাম্প পরীক্ষা : এ. সি. পাম্প পরীক্ষার জন্য প্রেসার গেজটিকে কার্বুরেটরের খুব কাছে স্থাপন করতে হবে এবং ইঞ্জিন চালু অবস্থায় (কিন্তু আইডেলিং অবস্থায়) রাখতে হবে। এমতাবস্থায় গেজের চাপমাত্রা এবং দাগ কাটা পাত্রে তেলের পরিমাণ এবং সময় লিপিবদ্ধ করতে হবে। নির্মাতার দেওয়া তালিকার সাথে পরীক্ষার ফলাফল মিলাতে হবে। এই পরীক্ষার ফলাফল যদি নির্মাতার দেওয়া তালিকার সাথে পরিপূরক হয় তাহলে পাম্প ভাল আছে বুঝতে হবে। এ. সি. পাম্প পরীক্ষার পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া ১০.৮ (গ) চিত্রে দেখানে হয়েছে।
কম্বিনেশন পাম্প:
যেসব এ. সি. পাম্পের সাথে ভ্যাকিউয়াম পাম্প একই সাথে থাকে এবং একই রকার আর্ম দ্বারা পরিচালিত হয় তাকে কম্বিনেশন পাম্প বলে। ভ্যাকিউয়াম পাম্প দ্বারা উইন্ডশিল্ড উইপার চালনা করা হয়। ভ্যাকিউয়াম পাম্পের ইনটেক লাইন উইপার ইউনিটের সাথে এবং আউট পুট লাইট ইনটেক মেনিফোল্ডের সাথে সংযুক্ত থাকে। এই পাম্পের কার্যপ্রণালী এ. সি. পাম্পের মতই।
ভ্যাকিউয়াম পাম্পের সঠিকতা নির্ণয় :
পাম্পটি ইঞ্জিন হতে বিচ্ছিন্ন না করেই এই পরীক্ষা করা যায়। এই পাম্পের ইনটেক লাইনটি বিচ্ছিন্ন করে ইঞ্জিনটি ক্র্যাঙ্ক করলে এবং ইনটেক লাইনের মুখে আঙ্গুল দিলে যদি টেনে ধরে তাহলে বুঝতে হবে যে পাম্পটি ভাল আছে। ভ্যাকিউয়াম গেজ দ্বারাও এই পরীক্ষা করা যায়। গেজ রিডিং যদি ১০” – ১৫” পর্যন্ত উঠে তাহলে বুঝতে হবে ভ্যাকিউয়াম পাম্প সঠিক আছে।
বায়ু পরিষ্কারক যন্ত্র (Air cleaner) :
পেট্রোল ও ডিজেল ইঞ্জিনে বিশুদ্ধ বায়ু সরবরাহের স্বার্থে বায়ু পরিষ্কারক যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এটি সাধারণত তিন প্রকার। যেমন : (১) শুষ্ক বায়ু পরিষ্কারক যন্ত্র (dry air cleaner), (২) ভিজা বায়ু পরিষ্কারক যন্ত্র (wet air cleaner), (৩) তাপস্থিতি নিয়ন্ত্রণ বায়ু পরিষ্কারক যন্ত্র (thermostatic controll air cleaner)।
এই বায়ু পরিষ্কারক যন্ত্র বিশেষ ধরনের কাগজ দ্বারা তৈরি করা হয়। এই জাতীয় যন্ত্র শুষ্ক ব্যবস্থায় ব্যবহার করা হয়। যেসব যন্ত্র তার দিয়ে তৈরি হয় সেগুলি ভিজা ব্যবস্থায় ব্যবহার করা হয়। এটি ভিজা ব্যবস্থায় মোবিল অয়েল দ্বারা সিক্ত করা থাকে। ফলে বাতাস খুব ভালভাবে পরিশোধিত হতে পারে। গরম বা ঠাণ্ডা বাতাস পরিশোধিত করার জন্য বিশেষ ধরনের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকে বলে একে তাপস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় বায়ু পরিষ্কারক যন্ত্র বলে।
জ্বালানি ট্যাঙ্কের সাবধানতা :
(১) জ্বালানি ট্যাঙ্ক যাতে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে সেইদিকে খুবই লক্ষ্য রাখতে হবে
(২) জ্বালানি ট্যাঙ্ক পূর্ণ করার সময় ছেঁকে পূর্ণ করতে হবে।
(৩) জ্বালানি ট্যাঙ্কের এয়ার ভেন্ট সবসময় পরিষ্কার রাখতে হয়।
(৪) জ্বালানি ট্যাঙ্ক পুরাপুরি পূর্ণ না করে কিছু অংশ খালি রাখতে হয়।
(৫) ট্যাঙ্ক সবসময় ঠাণ্ডা জায়গায় রাখতে হয় যেন গরম না হয়।
(৬) সবসময় আগুন হতে সাবধানে রাখা উচিত।
আরও দেখুনঃ
- ইগনিশন পদ্ধতি | বৈদ্যুতিক পদ্ধতি | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং
- ব্যাটারী চার্জ করার পদ্ধতি | বৈদ্যুতিক পদ্ধতি | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং
- স্টোরেজ ব্যাটারীর সাধারণ নিয়মাবলী | বৈদ্যুতিক পদ্ধতি | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং
- পজেটিভ ও নেগেটিভ টার্মিনাল চেনার উপায় | বৈদ্যুতিক পদ্ধতি | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং
- স্টোরেজ ব্যাটারী | বৈদ্যুতিক পদ্ধতি | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং
- মোটরগাড়ি শিল্প