Site icon অটোমোটিভ গুরুকুল [ Automotive Gurukul ], GOLN

মোটরযান চালানো বা ড্রাইভিং

মোটরযান চালানো বা ড্রাইভিং নিয়ে আজকের পাঠ। এই পাঠটি “অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং” বিষয়ের একটি পাঠ। মোটরযান চালানোর পূর্বে এবং চালানোর সময় নিম্নলিখিত নিয়মাবলী অবশ্যই পালন করা কর্তব্য।

মোটরযান চালানো বা ড্রাইভিং

 

(১) ইঞ্জিন চালু করার পূর্বে লুব অয়েল, ব্যাটারীর পানি, ব্যাটারীর সংযোগ ও চাকায় হাওয়া ইত্যাদি আছে কিনা ভালভাবে দেখতে হবে। এছাড়াও রেডিয়েটরে পানি এবং জ্বালানি ট্যাঙ্কে তেল আছে কিনা পরীক্ষা করতে হবে। এই সকল অবস্থা দেখার পর, ইঞ্জিন চালু করা উচিত।

(২) ইঞ্জিন চালু হলে হর্ন বাজিয়ে দেখা হয় যে তা ঠিক আছে কিনা। হেডলাইট, ইনডিকেটর লাইট, স্টপ লাইট ইত্যাদি জ্বালিয়ে দেখতে হবে যে, এগুলি ঠিক আছে কিনা। ঠিক না থাকলে মেরামত অথবা পরিবর্তন করতে হবে। গাড়ী কিছু সময়ের জন্য চালিয়ে ব্রেক পরীক্ষা করে দেখতে হবে। ব্রেক ভাল না থাকলে গাড়ী রাস্তায় চালানো মোটেই উচিত নয়। এতে সমূহ বিপদের সম্ভাবনা থাকে।

(৩) গাড়ীর চালককে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। সদা প্রফুল্লচিত্তে গাড়ী চালাতে হবে।

(৪) অসুস্থ, অন্যমনস্কভাবে গাড়ী চালানো মোটেই উচিত নয়। গাড়ী চালানোর সময় কারও সঙ্গে কথা বলা অনুচিত। নেশাগ্রস্ত হয়ে গাড়ী চালানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ ।

(৫) ওভারটেক করা এবং বেশী স্পীডে গাড়ী চালনা করা অপরাধের সামিল। এতে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে ১০০% ।

(৬) স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস, সিনেমা হল ইত্যাদি স্থানে আসা মাত্রই গাড়ীর স্পীড ১০ মাইল করা একান্তভাবে উচিত।

(৭) দীর্ঘ রাস্তায় চলাচলের গাড়ীকে আগে যেতে দিতে হবে। ছোট ও কম রাস্তার গাড়ী বড় রাস্তায় প্রবেশ করার সময় হর্ন বাজিয়ে আস্তে আস্তে ডানে বামে দেখে প্রবেশ করবে ; নচেৎ মহাবিপদ হতে পারে। এই সময় ইনডিকেটর লাইট জ্বালাতে হবে (যেদিকে মোড় নেবে সেদিকের ইনডিকেটর)।

(৮) রাস্তায় চলার সময় চালককে সবসময় মনে রাখতে হবে যে, তার উপর বহু মূল্যবান জীবনের দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। তাকে অত্যন্ত ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার সাথে গাড়ী চালাতে হবে। চালকের সামান্য ত্রুটি বা ভুলের জন্য বহু মূল্যবান প্রাণের ক্ষতি হতে পারে।

(৯) চালককে সব সঙ্কেত অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

(১০) চালককে সবসময় পরম মানবতাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে গাড়ী চালানো উচিত। সবসময় মনে রাখতে হবে যে সে একজন জনসেবক। চলন্ত অবস্থায় গাড়ীতে কোন অসুবিধা দেখা দেওয়া মাত্রই চালকের উচিত

(১১) চলন্ত সঙ্কেত দিয়ে গাড়ীটিকে থামিয়ে যথাযথভাবে পরীক্ষা করা।

(১২) গাড়ীর চালককে অবশ্যই মোটামুটিভাবে অটো মেকানিক্স হতে হবে, যাতে সে সহজেই গাড়ীর দোষ-ত্রুটি ও প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে পারে।

(১৩) চালককে অবশ্যই নম্র, ভদ্র ও মিষ্টভাষী হতে হবে। গাড়ী চালানো অনেক সাধনার কাজ। ধীর, স্থির ও একনিষ্ঠভাবে গাড়ী চালনা করলে দক্ষ চালক হওয়া যায়। উপরোক্ত গুণাবলীর অধিকারী হতে পারলেই পারদর্শী ড্রাইভার বা চালক হওয়া যায়।

 

 

গাড়ী চালনার নিয়ম :

(ক) গাড়ী চালাবার নিয়ম পূর্বেই বর্ণনা করা হয়েছে। ইঞ্জিন চালাবার পর ৩/৪ মিনিট ১০০০/১২০০ আর.পি.এম-এ চালিয়ে গরম করতে হবে। এ সময় গিয়ার নিউট্রালে থাকে। চচ চালাে

(খ) এখন কাচ করে (ক্লাচ প্যাডেলে চাপ দিয়ে) গিয়ার শিফটিং লিভারকে প্রথম গিয়ারের সাথে যুক্ত করতে হয়। তারপর ক্লাচ প্যাডেল সম্পূর্ণ ছেড়ে দিতে হয়। এই সময় ডান পা অ্যাকসেলারেটরের উপর রেখে আস্তে আস্তে চাপ দিতে হয়। এর ফলে থ্রোটল ভাল্ভ বেশী খোলে এবং গাড়ী বেগবান হয়। অর্ধ ক্লাচ করে গিয়ার দিতে নেই। কারণ এতে ক্লাচ এবং গিয়ারের ক্ষতি হয়। প্রথম গতিতে গাড়ী বেশী সময় রাখতে নেই ।

(গ) প্রথম গতিতে কিছু সময় চালনার পর পুনরায় ক্লাচ চেপে শক্তি সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করে গিয়ার শিফটিং লিভার পুনরায় নিরপেক্ষ অবস্থায় আনয়ন করে তারপর দ্বিতীয় গতির গিয়ারের সাথে যুক্ত করতে হয়। তারপর ক্লাচ ছেড়ে দিতে হয়। ফলে ইঞ্জিনের শক্তি সরবরাহ লাইনের সাথে সংযুক্ত হয়। এই সময় ডান পা দ্বারা অ্যাকসেলারেটরের উপর চাপ দেওয়া হয়, ফলে গাড়ী পূর্বের র তুলনায় বেশী গতিবেগে ধাবমান হয়। অনুরূপভাবে তৃতীয় গতিতে অর্থাৎ টপ গিয়ারে চালাতে হয়।

(ঘ) ক্লাচ চেপে শিফটিং লিভার রিভার্স গিয়ারের সাথে সংযোগ করলে গাড়ী পশ্চাৎ ।। এটি প্রথম গতির বিপরীত দিকে। শিফটিং লিভার নব (Knob) এর উপর গিয়ার দিকে যাবে। এটি প্রথম শিফটিং করার ছক কাটা থাকে। এটি চালককে গিয়ার পরিবর্তন করতে সহায়তা করে। ཟ་ཁང གགས་ འས་ པ་

(ঙ) গাড়ী চালানো সাধনার কাজ। তাই যত বেশী চালানোর অভ্যাস করা যায় ততই হাত পাকাপোক্ত হয়।

(চ) কার চালিয়ে অতঃপর বাস ও ট্রাক চালাতে একটু অসুবিধা হয়। আবার বাস ট্রাক চালিয়ে কার চালানোও অসুবিধা হয়। আবার দেখা যায় চালক দীর্ঘদিন মাজদা চালিয়েছে। এরপর কোন কারণে জীপ গাড়ী চালাতে হলে প্রথমে তাঁকে কিছুটা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু গিয়ার শিফটিং ছক অনুসরণ করলে অথবা গিয়ার শিফটিং করে আস্তে আস্তে গাড়ী চালানোর অভ্যাস করলেই অবস্থার উন্নতি হয়। অর্থাৎ চালকের নিকট তা সহজসাধ্য হয়ে উঠে ।

(ছ) স্টিয়ারিং হুইল ঘুরিয়ে গাড়ী ডানে বামে চালাতে হয়। চলন্ত গাড়ীকে হঠাৎ থামাতে হলে ব্রেক করতে হয়। কিন্তু ব্রেক করার পূর্বে ক্লাচ করতে হয়। বোঝাই (load) গাড়ী হলে প্রথমে একটু ব্রেক তারপর ক্লাচ করে পূর্ণ ব্রেক করতে হয়। ঐ সময় অ্যাকসেলারেটর হতে পা সরাতে হয় না, কারণ এতে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। গাড়ী যখন গিয়ারে থাকে তখন সব সময় ডান পা অ্যাকসেলারেটরের উপর রাখতে হয়।

(জ) গাড়ী থামাতে হলে ক্লাচ করে এবং ব্রেক করে থামাতে হয়। এই সময় গিয়ার শিফটিং লিভারটিকে নিউট্রালে আনতে হয়। গাড়ী পুনরায় চালনা করলে প্রথমে ক্লাচ করে প্রথম গতি, তারপর দ্বিতীয় গতি, তারপর তৃতীয় গতিতে চালনা করতে হয়।

(ঝ). গাড়ী চালনাকালে যত কম ব্রেক করা যায় ততই ইঞ্জিনের গিয়ার বক্স, ক্লাচ ইত্যাদি সবকিছুর জন্যই ভাল। বার বার ব্রেক করলে জ্বালানি খরচ বেড়ে যায় ।

(ঙ্ক) গাড়ী চালানোর সময় ঘুমের ভাব হলে, ক্লান্তি বোধ হলে, মাথা ব্যাথ্যা হলে, বমি বমি ভাব হলে বা অন্য কোন প্রকার দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকলে গাড়ী চালনা না করাই উত্তম। এমতাবস্থায় চালনা করলে সহজেই দুর্ঘটনা হতে পারে ।

(ট) গাড়ী চালাবার সময় স্টিয়ারিং ঈষৎ ডানে-বামে ঘুরাতে হয় এবং সম্মুখ পানে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হয় যেন কোন মানুষ, বস্তু, যানবাহন এবং জীবজন্তুর সঙ্গে ধাক্কা না লাগে। ডানে- বামে মোড় নেওয়ার সময় হর্ন এবং ইনডিকেটিং লাইট জ্বালিয়ে পশ্চাৎ ও সম্মুখের যানবাহন এবং মানুষকে সতর্ক করে দেওয়া উচিত।

(ঠ) পিছনের গাড়ী সাইড চাইলে সুবিধাজনক স্থানে সাইড দিতে হবে। গাড়ী সব সময় রাস্তার পাশ দিয়ে চালানোর নিয়ম।

(ড) চালককে সকল ট্রাফিক সঙ্কেত মেনে চলতে হবে। বেপরোয়াভাবে গাড়ী চালনা করা আইনত দন্ডনীয়। কোন প্রকার সঙ্কেত না, দিয়ে হঠাৎ করে রাস্তার মধ্যখানে গাড়ী থামানো নিষেধ। পুলের উপর, রাস্তার মোড়ে, রেল ক্রসিং-এর উপর ইত্যাদি স্থানে গাড়ী থামানো চালকের উচিত নয়।

(ঢ) হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মসজিদ, মন্দির ইত্যাদি স্থানে গাড়ীর গতি মন্থর করা উচিত এবং হর্ন বাজানো উচিত নয় ।

(ণ) চৌরাস্তা, ব্রীজ, খাড়া পাহাড়, রেলক্রসিং, উঁচু নীচু রাস্তা, ফেরী পারাপার ইত্যাদি অতিক্রম করার সময় চালককে খুবই সতর্ক থাকতে হয় এবং সঙ্কেত মেনে চলতে হয়।

 

 

(ত) বর্তমানে রাস্তায় অটোমেটিক সিগনাল ব্যবহৃত হয়। যেমন : লাল আলোর বাতি, অর্থাৎ যানবাহন থামানোর সঙ্কেত। হলুদ আলোর বাতি, যানবাহন চালানোর প্রস্তুতি। সবুজ আলোর বাতি, অর্থাৎ যানবাহন চলার পূর্ণ অনুমতি বা অধিকার। বর্তমানে সিগনাল সুবিধাজনক সঙ্কেত। তাই চালকবৃন্দ সহজেই এটি বুঝতে সক্ষম।

(থ) চালককে গাড়ী চালনা করার সময় ড্রাইভিং লাইসেন্স সাথে রাখতে হবে। চালকের চোখে কোন ত্রুটি থাকলে গাড়ী চালানো মোটেই উচিত নয়। রাতে হেডলাইট, ইনডিকেটর, স্টপ লাইট ছাড়া গাড়ী চালানো উচিত নয়।

(দ) গাড়ী চালু অবস্থায় চালকের ধূমপান করা মোটেই সঙ্গত নয়।

 

আরও দেখুনঃ

 

Exit mobile version