চার্জিং ও স্টার্টিং পদ্ধতি- এই পাঠটি “অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং” বিষয়ের “চার্জিং ও স্টার্টিং পদ্ধতি” অধ্যায়ের একটি পাঠ।
চার্জিং ও স্টার্টিং পদ্ধতি
চার্জিং ও স্টার্টিং পদ্ধতি, আমরা জানি চুম্বকের দুইটি মেরু আছে। যেমন, দক্ষিণ মেরু ও উত্তর মেরু। পরীক্ষা করে দেখা গেছে এই মেরুদ্বয়ের মধ্যে বলরেখা বা (lines of force) আসা-যাওয়া করে। এই বলরেখার মধ্যে যদি একটি পরিবাহক (conductor—তামার পাত) ঘুরানো যায় তাহলে পরিবাহকের মধ্যে শক্তি উৎপন্ন হয়। মোটরযানে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় তা মূলত জেনারেটরের অথবা অল্টারনেটরের সাহায্যেই হয়।
জেনারেটর অথবা অল্টারনেটরের মধ্যে অনেকগুলি পরিবাহক মিলিত হয়ে একটি আর্মেচার বডি তৈরি করা হয়। এই আর্মেচার কোর বা বডি একটি শ্যাফটের উপর অবস্থিত থাকে। ঐ শ্যাফটের সঙ্গে পুলি লাগানো থাকে। এই পুলি এবং ক্র্যাঙ্কশ্যাফটের সঙ্গে ফ্যানবেল্ট লাগানো থাকে। ইঞ্জিন যখন ঘুরবে তখন আর্মেচারও ঘুরবে এবং এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে (৮.১ চিত্র দ্রষ্টব্য)। জেনারেটরে প্রথমে এ. সি. বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। কিন্তু গাড়ীতে ডি. সি.-বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয়।
কমুটেটর, স্লিপ রিং অথবা ডায়ডের সাহায্যে এ. সি-কে ডি. সি. করা হয়। মোটর গাড়ীর সব বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ডি. সি’র সাহায্যে চলে। ব্যাটারীর বিদ্যুৎ হতে ক্র্যাঙ্কিং মোটর চলে, বাতি জ্বলে এবং রেডিও বাজে অর্থাৎ সব কাজই সম্পন্ন হয়। সেজন্য ব্যাটারীর চার্জ কমে যায় বিধায় ব্যাটারীকে চার্জ করার জন্য মোটর গাড়ীতে চার্জিং পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। ব্যাটারী চার্জ করার জন্য গাড়ীতে জেনারেটর বা ডায়নামো অথবা অল্টারনেটর ব্যবহার করা হয়।
জেনারেটর বা ডায়নামো:
ব্যাটারী এবং বৈদ্যুতিক লাইন ১২ ভোল্টের হলেও জেনারেটর সাধারণত ১৪ বা ১৫ ভোল্টের হয়ে থাকে। ব্যাটারীকে ভালভাবে চার্জ করার জন্যেই জেনারেটর একটু বেশী ক্ষমতাসম্পন্ন হয়ে থাকে। বর্তমানে আমাদের দেশে ৬ ভোল্টের গাড়ী নেই বললেই চলে। একটি জেনারেটর বা ডায়নামো নিম্নলিখিত যন্ত্রাংশসমূহ নিয়ে গঠিত।
১। আর্মেচার কেসিং ১টি, ২। আর্মেচার ১ টি, ৩। আর্মেচার কোর ১টি, ৪। আর্মেচার শ্যাফট ১টি, ৫। কমুটেটর ১টি, ৬। ব্রাশ ২টি, ৭। ফিল্ড কয়েল ২টি, ৮। পুল-সু ২টি, ৯। বল বিয়ারিং ১টি, ১০। বিয়ারিং রিটেইনার ১টি, ১১। গ্যাসকেট ১টি, ১২। কমুটেটর এন্ড ফ্রেম ১টি, ১৩। ড্রাইভ এন্ড ফ্রেম ১টি, ১৪। থ্রো বোল্ট ২টি, ১৫। ফ্যান ১টি এবং ১৬। পুলি ১টি।
জেনারেটরের বিশেষ বিশেষ অংশের বিবরণ নিম্নে দেওয়া হলো ।
- (ক) ফিল্ড কয়েল : জেনারেটরের মধ্য দুইটি ফিল্ড কয়েল থাকে এবং কয়েল দুটি পোলপিসের গায়ে জড়ানো থাকে। পোলপিস জেনারেটর কেসিং (আর্মেচার কেসিং)-এর সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। ফিল্ড কয়েলের মধ্য দিয়ে যখন বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় তখন পোলপিস দুইটি শক্তিশালী চুম্বকে পরিণত হয়। পোলপিস দুইটিতে সাধারণত সামান্য চুম্বক থাকে। পালপিস দুইটি কেসিং- এর দুই প্রান্তে ভিতরের দিকে অবস্থিত।
- (খ) আর্মেচার : এটি একটি সুপার অ্যানামেল তারের কুন্ডলীবিশেষ। আর্মেচার কোর – বা কেসিং- এর মধ্যে বিশেষভাবে জড়ানো থাকে। তারের মাথাগুলি কমুটেটরের সাথে যুক্ত করা থাকে। আর্মেচার কোরের ভিতরে জেনারেটর শ্যাফট বিদ্যমান। এই শ্যাফটটি ঘুরলে আর্মেচারটিও ঘোরে। এই শ্যাফটটি ফ্যানবেল্টের সাহায্যে ক্র্যাঙ্ক শ্যাফট দ্বারা চালিত হয়। আর্মেচারটি ফিল্ড কয়েলদ্বয়ের মধ্য দিয়ে ঘোরে, ফলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়ে কমুটেটরে যায় সেখান থেকে ব্রাশের সাহায্যে কাটআউট হয়ে ব্যাটারীকে চার্জ করে।
- (গ) কমুটেটর : এটি সাধারণত তামার পাত দ্বারা তৈরি হয়। এটি অনেকগুলি সিগমেন্টের সমন্বয়ে গঠিত। একটি সিগমেন্ট হতে অপর সিগমেন্টেটি মাইকা ইনসুলেটর দ্বারা পৃথক করা থাকে। জেনারেটরের উৎপন্ন বিদ্যুৎ এ. সি-কে ডি. সি করার প্রধান মাধ্যম।
- (ঘ) ব্রাশ : কার্বন ব্রাশদ্বয় হাল্কা স্প্রিং-এর চাপে সবসময় কমুটেটরের সঙ্গে যুক্ত থাকে। ব্রাশ কমুটেটর থেকে বিদ্যুৎ টেনে নেয় এবং ব্যাটারীতে সরবরাহ করে । জেনারেটরের কার্যপ্রণালী : অনেকগুলি তামার তার (কন্ডাক্টর) ল্যামিনেটেড আয়রন কোর-এর মধ্যে ভালভাবে জড়ানো থাকে। এই তারগুলিকে সুপার অ্যানামেল তার (wire) বলে। এই তারগুলি একটি কমুটেটরের সাথে যুক্ত থাকে। এর সম্মিলিত অংশসমূহকে আর্মেচার বলে। আর্মেচারটি এর শ্যাফটের উপর ভর করে চালিত হয়। আর্মেচার যতবেশী বলরেখা কর্তন করতে পারে, ততবেশী বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়ে আর্মেচার শ্যাফটটি ইঞ্জিন দ্বারা চালিত হয়।
৮.৩ নং চিত্রের সাহায্যে কমুটেটরের সঙ্গে পরিবাহকের সংযোগ এবং বিদ্যুৎ প্রবাহ দেখানো হয়েছে। আর্মেচারের উৎপন্ন বিদ্যুৎ দুই ভাগে বিভক্ত হয়। অর্ধেক বিদ্যুৎ বা একসেট পরিবাহকে উৎপন্ন হয় এবং বাকি অর্ধেক বিদ্যুৎ অন্য একসেট পরিবাহকে উৎপন্ন হয়। কিন্তু জেনারেটরে উৎপন্ন সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ ব্রাশের মাধ্যমে সরবরাহ হয়। জেনারেটরের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা নির্ভর করে পরিবাহক প্রতি সেকেন্ডে কত বেশী বলরেখা কর্তন করতে পারে তার উপর।
আরও দেখুনঃ
- তাপ ইঞ্জিন
- গ্যারেজ এবং সার্ভিস স্টেশন
- ছোট বড় গোলাকার ছিদ্রের জন্য ড্রিলের ব্যবহার
- ধাতুনির্মিত পদার্থ কাটার জন্য হ্যাক-স এর ব্যবহার
- স্ক্রেপারের ধরন | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং
- মোটরগাড়ি শিল্প