Site icon অটোমোটিভ গুরুকুল [ Automotive Gurukul ], GOLN

বৈদ্যুতিক পদ্ধতি

বৈদ্যুতিক পদ্ধতি – এই পাঠটি “অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং” বিষয়ের “বৈদ্যুতিক পদ্ধতি” অধ্যায়ের একটি পাঠ।

বৈদ্যুতিক পদ্ধতি

 

একটি গাড়ীর বৈদ্যুতিক পদ্ধতিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:

(ক) ইগনিশন পদ্ধতি (ignition system) (খ) চার্জিং পদ্ধতি (charging system)

(গ) লাইটিং পদ্ধতি (lighting system)

(ঘ) হর্ন পদ্ধতি (horn system) (ঙ) স্টার্টিং পদ্ধতি (starting system)

আধুনিক মোটরযানসমূহে বিদ্যুৎ বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন ফ্যান, লাইট, হর্ন, হিটার, ফুয়েল গেজ, অয়েল গেজ, সেলফ-স্টার্টার, সিগনাল, উইপার, রেডিও, টেম্পারেচার গেজ, ফগ (fog) লাইট, পর্দা (screen) ওয়াশার, ফুয়েল পাম্প, বৈদ্যুতিক ব্রেক ইত্যাদি। গাড়ীতে সাধারণত ডি.সি (direct current) ব্যবহার করা হয়। প্রয়োজনবোধে বিদ্যুৎ জমা করে রাখা হয়। ডি.সি অ্যাকুমুলেটর বা ব্যাটারীর সাহায্যে রাসায়নিক প্রক্রিয়া জমা করে রাখা যায়। ড্রাইসেল ব্যাটারীর মাধ্যমেও জমা রাখা যায়। এর স্থায়িত্বকাল কম কিন্তু এ.সি (alternating current) জমা করে রাখা যায় না।

মোটর গাড়ীতে যেহেতু বিদ্যুতের ব্যবহার ব্যাপক সেজন্য শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে সম্যক জ্ঞান থাকা বাঞ্ছনীয়। গ্রীক দার্শনিক থ্যালেস আবিষ্কার করেন যে, পাইন গাছের আঠা শক্ত অবস্থায় রেশমী কাপড় দ্বারা খুব জোরে জোরে ঘর্ষণ করলে চুম্বকত্বের সৃষ্টি হয় বা আকর্ষণ শক্তি উৎপন্ন হয়। পাইন গাছের আঠাকে অ্যাম্বার বলা হয়। গ্রীক ভাষায় একে ইলেকট্রন বলা হয়। ঘর্ষণের ফলে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় তাকে স্থির বিদ্যুৎ (static electricity) বলে। তারের মধ্য দিয়ে যে বিদ্যুৎ চলাচল করে তাকে প্রবহমান বা চলমান বিদ্যুৎ বলে।

 

ভোন্ট (Volt) :

বিদ্যুৎ প্রবাহের চাপের একককে ভোল্ট বলে। ভোল্টমিটার দ্বারা ডায়নামো এবং ব্যাটারীর ভোল্ট মাপা যায়। ভোল্টমিটার সমান্তরাল সংযোগ (parallel connection) দ্বারা লাইনে সংযোগ করতে হয় অর্থাৎ নেগেটিভ এবং পজেটিভ লাইনের সঙ্গে সংযোগ করতে হয়। ৭.১ চিত্রে ভোল্টমিটার পদ্ধতি দেখানো হয়েছে। যদি কোন পরিবাহীর এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত এক কুলম্ব পরিমাণ বিদ্যুৎ সঞ্চালিত হয় সেই পরিবাহীর বৈদ্যুতিক চাপকে এক ভোল্ট বলে।

 

অ্যাম্পেয়ার (Ampere):

তারের ভিতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহের তীব্রতাকে অ্যাম্পেয়ার বলে। প্রবাহ মাপার একককে অ্যাম্পেয়ার বলে। অ্যাম্পেয়ার মিটার (amperemeter) দ্বারা অ্যাম্পেয়ার পরিমাপ করা যায়। অ্যাম্পেয়ার মিটার সিরিজে কানেকশন দিতে হয় অর্থাৎ মিটারের দুইটি তারই পজেটিভ অথবা নেগেটিভ লাইনের সাথে কানেকশন দিতে হয়।

 

 

 

এক ভোল্ট এবং এক ওহম রেজিস্ট্যান্স ৬ ফুট (৩৬ নং) তামার তারের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হলে সেই বিদ্যুৎ প্রবাহের তীব্রতাকে এক অ্যাম্পেয়ার বলে।

 

রেজিস্ট্যান্স (Resistance) :

বিদ্যুৎ প্রবাহের বাধাকে রোধক বা রেজিস্ট্যান্স বলে। রোধক মাপার একককে ওহম (ohm) বলে। ওহম মিটার দ্বারা ওম বা রেজিস্ট্যান্স মাপা যায়। যে বস্তু যত সু পরিবাহী (good conductor) সেই বস্তুর রোধ তত কম। কিন্তু একই ব্যাস এবং বিস্তারে (cross section) যে বস্তু অপরিবাহী (bad conductor) সে বস্তুর রোধ বেশী। সকল দ্রব্যই অল্পবিস্তর বিদ্যুতের গতির সাথে বাধা বা রোধ সৃষ্টি করে থাকে।

ব্যাস এবং বিস্তার যত অধিক হবে রোধ তত কম হবে। ব্যাস এবং বিস্তার একই রূপ হলে বা তারের দৈর্ঘ্য বাড়লে রোধও বাড়বে। তার যত মোটা হবে রোধ তত কমবে, তার যত পাতলা বা সরু হবে রোধ তত বাড়বে। উত্তাপের উপরও রোধের তারতম্য হয়ে থাকে। উত্তাপ বাড়লে রোধও বাড়ে।

 

বৈদ্যুতিক ক্ষমতা (Electric power) :

একক সময়ে যে কাজ করতে বৈদ্যুতিক শক্তি খরচ হয় তাকে বৈদ্যুতিক ক্ষমতা বলে। এই ক্ষমতা পরিমাপের একককে ওয়াট (watt) বলে। ভোল্ট x অ্যাম্পেয়ার = ওয়াট (watt)। ওয়াট খুবই ক্ষুদ্র ইউনিট। কিলোওয়াট এবং মেগাওয়াট বড় একক (unit)।

১০০০ ওয়াট = ১ কিলোওয়াট

১০০০ কিলোওয়াট = ১ মেগাওয়াট।

 

ওম-এর সূত্র (Ohm’s law) :

পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে একটি বর্তনীর (circuit) মধ্য দিয়ে যে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় তা নির্ভর করে চাপ এবং রেজিস্ট্যান্স (voltage and resistance)-এর উপর। ভোল্টেজ, বিদ্যুৎ এবং রেজিস্ট্যান্স-এর মধ্যে যে সম্পর্ক বিরাজমান তাকে ও-এর সূত্র বলে। নিম্নলিখিতভাবে তা প্রকাশ করা যায়। যেমন,

 

 

উদাহরণ : ১

১২ ভোল্ট হেডলাইট ভালভে ২ অ্যাম্পেয়ার বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে রেজিস্ট্যান্স কত?

 

 

উদাহরণ ২ : একটি বর্তনীতে ৪ অ্যাম্পেয়ার বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় এবং রেজিস্ট্যান্স ৬ ওহম হলে ভোল্টেজ কত ? 

 

আমরা জানি, V = 1 x R = 4 ×6= 24 volt.

 

উদাহরণ ৩ : একটি বর্তনীতে ৬ ভোল্ট এবং ২ ওহম থাকলে ঐ বর্তনীতে কত বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে ?

 

আমরা জানি, I = V / R = 6 / 2 = 3 amp.

 

বৈদ্যুতিক বর্তনীতে বিদ্যুৎ কমলে রোধ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ভোল্ট কমলে বিদ্যুৎত্ত কমে যায়। আবার ভোল্ট বাড়লে বিদ্যুৎত্ত বাড়ে।

উদাহরণ ৪ : একটি গাড়ীতে ১২ ভোল্ট বৈদ্যুতিক বর্তনী আছে। ঐ গাড়ীতে ৩৬ ওয়াটের দু’টি হেডলাইট আছে এবং দুইটি সাইড লাইট আছে। প্রতিটি লাইট ৬ ওয়াটের হলে ঐ বর্তনীতে কত বিদ্যুৎ খরচ হবে।

 

 

উদাহরণ ৫ : একটি সেলফ স্টার্টার গাড়ী চালানোর সময় ৫০ অ্যাম্পেয়ার গ্রহণ করে। যদি টার্মিনাল ভোল্টেজ ১২ থাকে, তাহলে ঐ সেলফ স্টার্টারের অশ্বক্ষমতা (H. P) কত হবে ?

 

আমরা জানি,             ওয়াট (W) = ভোল্ট × বিদ্যুৎ

                                 অথবা W = V× I = 12 x 50 = ওয়াট

 

বৈদ্যুতিক অশ্বক্ষমতা = ভোল্ট X অ্যাম্পেয়ার / 746

ওয়ার্ট / 746

600 / 746  = .80

প্রায় ১ অশ্বক্ষমতা মোটর লাগবে।

 

 

উদাহরণ ৬ : সিরিজ বর্তনীতে প্রতিটি রেজিস্ট্যান্স ভোল্টেজ কমে যায়। নিম্নে তা প্রমাণ করে দেখানো হলো।

 

 

 

 

এখন প্রতিটি রোধ ভোল্টমিটার দ্বারা মেপে দেখলে উপরোক্ত ভোল্টই প্রমাণ করবে। অতএব দেখা যায় যে, সিরিজ বর্তনীতে ভোল্টেজ ভাগ হয়ে যায়। কিন্তু অ্যাম্পেয়ার ঠিক (সমান) থাকে। 

 

 

 

উদাহরণ ৭ : এই বর্তনীতে ভোল্টেজ ঠিক থাকে কিন্তু প্রতিটি রোধে বিদ্যুৎ ভাগ হয়ে যায়।

৩, ১ এবং ২ রোধ একটি সমান্তরাল বর্তনীতে সংযোগ করা হয়েছে।

 

 

 

 

মোটর গাড়ীতে যেসব যন্ত্রাংশ সিরিজ এবং সমান্তরাল বর্তনীতে (circuit) সংযোগ করা হয় তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো : 

সিরিজ : সুইচ, অ্যাম্পেয়ার মিটার এবং ফিউজগুলি সিরিজ বর্তনীতে সংযোগ করা হয়। সমান্তরাল : লাইট, হর্ন, ইগনিশন, রেডিও, হিটার ইত্যাদি সমান্তরাল বর্তনীতে সংযোগ করা হয়।

আরও দেখুনঃ

 

Exit mobile version