কার্বুরেটরের সার্কিট পরীক্ষা

কার্বুরেটরের সার্কিট পরীক্ষা – এই পাঠটি “অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং” বিষয়ের “পেট্রোল জ্বালানি ব্যবস্থা” অধ্যায়ের একটি পাঠ।

Table of Contents

কার্বুরেটরের সার্কিট পরীক্ষা

 

(১) ফ্লোট সার্কিট :

ফ্লোট সার্কিট ত্রুটিপূর্ণ থাকলে ইঞ্জিন চলে না। কারণ প্রায় সবসময় কার্বুরেটর অতিরিক্ত তেলে পরিপূর্ণ (flooded) হয়ে যায়। ইঞ্জিন এই অতিরিক্ত তেল জ্বালাতে পারে না। এ কারণে ইঞ্জিন চলে না। এমতাবস্থায় ইঞ্জিন ক্র্যাঙ্কিং না করে কিছু সময় অপেক্ষা করে পুনরায় ক্র্যাঙ্ক করলে ইঞ্জিন চালু হয়। কিন্তু যদি ফ্লোট সার্কিটের নিল ভাল্ভ খারাপ থাকে তবে যখনই চালু করা হোক না কেন ইঞ্জিন অতি সহজেই তেলে প্লাবিত (over flooded) হয়ে বন্ধ হয়ে যাবে।

এমতাবস্থায় নিড়ল ভাল্ভ এবং নিড়ল ভাল্ভ সিট ‘০০’ এমারী পেপার দ্বারা হাল্কা চাপে হাতের সাহায্যে ঘর্ষণ করে দিতে হবে এবং স্থাপন করে পরীক্ষা করতে হবে যে পূর্বের মত অতিরিক্ত তেল আসে কিনা। যদি ঠিক না হয় তবে নিড্‌ল ভাল্ভ পরিবর্তন করতে হবে।

অনেক সময় ফ্লোটের সমতলত্ব (level) কম বেশী হলে ইঞ্জিন সাধারণত পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটে। ফ্লোটের যে অংশটি নিড্‌ল ভাল্ভকে নিয়ন্ত্রণ করে তাকে ফ্লোট ট্রিগার বলে। এর উচ্চতা কম বা বেশী করলে অতিরিক্ত তেল আসা বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য এটিকে ফ্লোট সমন্বয় বলে । ইঞ্জিন আইডেলিং ও লো স্পীডে কিছু সময় চালিয়ে যদি দেখা যায় কার্বুরেটরের মেইন জেট ভিজা ভিজা তাহলে বুঝতে হবে ফ্লোট সার্কিট ত্রুটিপূর্ণ।

 

(২) আইডেলিং ও লো স্পীড সার্কিট :

এই সার্কিট যদি সুষ্ঠুভাবে কাজ না করে তবে ইঞ্জিন কম্পনরত অবস্থায় চলবে এবং বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে। মাঝে মাঝে জোরে জোরে ঝাঁকুনি দেবে। অনেক সময় দেখা যায় দ্রুতবেগে ভাল চলে কিন্তু কম বেগে বন্ধ হয়ে যায়। আইডেলিং সমন্বয় ঠিক না থাকায় এরূপ হয়। আইডেলিং স্ক্রু সমন্বয় করলেই ঐ অবস্থার উন্নতি হতে পারে।

 

(৩) অ্যাকসেলারেটিং পাম্প সার্কিট :

ইঞ্জিন চালু করে বাতাস পরিষ্কারক (air cleaner) খুলে মাঝে মাঝে হঠাৎ অ্যাকসেলারেটর প্যাডেলের উপর পা দ্বারা দিলে যদি ইঞ্জিন সহসা উত্তেজিত হয়ে উঠে এবং অ্যাকসেলারেটিং পাম্প সার্কিট চাপ দ্বারা অতিরিক্ত তেল কার্বুরেটরে সরবরাহ হতে দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে যে এই সার্কিট সঠিক আছে। উক্ত সার্কিট যদি ভাল না থাকে তবে অ্যাকসেলারেটর প্যাডেলে চাপ দিলেও ইঞ্জিন গতিশীল হবে না অথবা উক্ত সার্কিট দিয়ে অতিরিক্ত তেলও কার্বুরেটরে সরবরাহ হবে না।

 

(৪) হাই স্পীড সার্কিট :

এই সার্কিট পরীক্ষা করা খুব সহজ। ইঞ্জিন চালিয়ে কম বেগে কিছুটা চলন্ত অবস্থায় রেখে কার্বুরেটরের এয়ার হর্ন যদি হাত দ্বারা বা অন্য কোন বস্তু ৩ দ্বারা – অংশ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং ইঞ্জিনের গতি যদি বৃদ্ধি পায় তাহলে বুঝতে হবে হাই 8 স্পীড সার্কিট ভাল আছে। আর যদি ইঞ্জিনের গতি বৃদ্ধি না পায় তাহলে বুঝতে হবে উক্ত সার্কিট ত্রুটিপূর্ণ।

 

এন্টিপারকোলেটর (Antipercolator):

গ্রীষ্মকালে যখন খুব বেশী গরম পড়ে এবং ইঞ্জিন খুব বেশী গরম হলে পেট্রোল ইঞ্জিনে জ্বালানি বাষ্প হয়ে জ্বালানি লাইনে, জ্বালানি পাম্পে অথবা কার্বুরেটরে সাধারণ জ্বালানি প্রবাহে বাধা দেয় বা বন্ধ করে দেয়। এজন্য একে ভ্যাপার লক (vapour lock) বলে। জ্বালানি লাইনের এই প্রতিবন্ধকতা দূর করার পদ্ধতিকে এন্টি পারকোলেটর বলা হয়। এই প্রতিবন্ধকতা দুই প্রকারে দূর করা যায়। প্রথমত ভেন্টটিউবের সাহায্যে এবং দ্বিতীয়ত রচিসটরের (vent tube and rochester) সাহায্যে।

ভেন্ট টিউবটির একপ্রান্ত থাকে ফোট প্রকোষ্ঠের (chamber) মধ্যে এবং অন্য প্রান্ত থাকে কার্বুরেটরের এয়ার হর্ন-এর মধ্যে। জ্বালানি লাইনে অথবা ফ্লোট প্রকোষ্ঠে বাষ্প উৎপন্ন হয় এবং তখন ভেন্ট টিউব পথে এটি এয়ার হর্নে চলে আসে। এয়ার হর্ন হতে এটি বাতাসের প্রবাহে ইনটেকমেনিফোল্ড হয়ে সিলিন্ডারে চলে যায়। ফলে জ্বালানি লাইনে ভ্যাপার লক হতে পারে না। এই ভেন্ট টিউবটি আরও একটি কাজ করে।

অর্থাৎ যখন এয়ার ক্লিনার ময়লায় বন্ধ হয় তখন ভেনচুরীতে বেশী ভ্যাকিউয়াম সৃষ্টি হয়। যার ফলে ঐ সময় বেশী জ্বালানি টানে কিন্তু ভেন্ট টিউব সমতা রক্ষার মাধ্যমে বেশী জ্বালানি যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। দ্বিতীয়ত এই ব্যবস্থায় কার্বুরেটরের মেইনজেটের সঙ্গে ছিদ্রপথে এর সংযোগ থাকে। জ্বালানি লাইনে বাষ্প দেখা গেলে অথবা কার্বুরেটরে বাষ্প থাকলে এই পথে বের হয়ে যায়।

 

কার্বুরেটরের সার্কিট পরীক্ষা | পেট্রোল জ্বালানি ব্যবস্থা | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

এন্টি-আইসিং (Anti-icing) :

এর অর্থ হচ্ছে কার্বুরেটর সার্কিটসমূহে বরফ জমতে না দেওয়া। কার্বুরেটরে যাতে বরফ জমতে না পারে তার ব্যবস্থা করাকেই এন্টি-আইসিং বলে। পেট্রোল যখন বাষ্পে রূপ নেয় তখন ইহা বিভিন্ন যন্ত্রাংশ থেকে তাপ গ্রহণ করে। বাতাসের আর্দ্রতা যদি খুব বেশী থাকে কিন্তু তাপমাত্রা যদি হিমাঙ্কে নেমে আসে তাহলে কার্বুরেটরে বরফ জমতে পারে (কার্বুরেটরে জ্বালানি বাষ্পীভূত হওয়ার জন্য)।

কার্বুরেটরের এই বরফ জমার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বিশেষ ধরনের সরু পথ কার্বুরেটরের চারদিকে রাখতে হয়। ঐ ছিদ্র পথে একজস্ট গ্যাস প্রবাহিত হবে। ফলে কার্বুরেটরে আর বরফ জমতে পারবে না। কার্বুরেটরে ওয়াটার জ্যাকেটের ব্যবস্থা রাখলে এবং ঐ জ্যাকেটগুলি শীতলকরণ পদ্ধতির সঙ্গে যুক্ত করলেও কার্বুরেটরে আর বরফ জমবে না।

শীতপ্রধান দেশে সাধারণত এরূপ করার প্রয়োজন হয়। শুধুমাত্র প্রচণ্ড শীতের সময় এই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। আমাদের দেশে এরূপ ব্যবস্থার কোন প্রয়োজন হয় না। যদি বায়বীয় উষ্ণতা কম হয় বা ফ্রিজিং পয়েন্টের কিছু উপরে থাকে এবং আর্দ্রতা বেশী হয় তাহলে কার্বুরেটরের ভেনচুরি ক্রিয়ার জন্য কার্বুরেটরের মধ্যে উষ্ণতা আরও কমে বাতাসের জলীয় বাষ্প বরফে পরিণত হয় এবং এই বরফ মিশ্রণ সরবরাহের পথ বন্ধ করে দেয়। এর ফলে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। আজকাল পেট্রোলের সাথে এন্টি-আইসার ব্যবহার করা হয়। এজন্য কার্বুরেটরে বরফ জমতে পারে না।

 

ডুয়েল কার্বুরেটর :

যেসব কার্বুরেটরে ইনটেক মেনিফোল্ড বাষ্প জ্বালানি মিশ্রণ (air fuel mixture) সরবরাহ করার জন্য দুইটি বহির্গমন পথ (out let port) থাকে তাকে ডুয়েল কার্বুরেটর বলে। একে টু-থ্রোট (throat) কার্বুরেটর বলে। একটি ইউনিটের মধ্যে দুইটি কার্বুরেটর থাকে। এতে সাধারণত দুইটি আইডেলিং সার্কিট, দুইটি হাই স্পীড সার্কিট, দুইটি অ্যাকসেলারেটিং সার্কিট, দুইটি থ্রোটল ভাল্ভ, দুইটি চোক এবং একটিমাত্র ফ্লোট প্রকোষ্ঠ (chamber) থাকে।

এই কার্বুরেটরে প্রতিটি বহির্গমন পথ হতে জ্বালানি ক্রম (firing order) অনুসারে মিশ্রণ সরবরাহ হয়। যেমন একটি ব্যারেল বা বহির্গমন পথে ১-৩–২ নং সিলিন্ডারে মিশ্রণ সরবরাহ হয় এবং অন্য ব্যারেল বা বহির্গমন পথে ৫-৬ এবং ৪নং সিলিন্ডারে মিশ্রণ সরবরাহ হয়। কার্বুরেটর বিন্যাস বা সমন্বয়ের জন্য যেসব যন্ত্রের সমন্বয়ের প্রয়োজন হয় তা হলো :

(১) আইডেলিং, (২) ফ্লোট, (৩) অ্যাকসেলারেটিং, (৪) থ্রোটল, (৫) চোক এবং (৬) ফাস্ট আইডেল থ্রোটল লিঙ্কেজ ।

 

কার্বুরেটরের সার্কিট পরীক্ষা | পেট্রোল জ্বালানি ব্যবস্থা | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

ফাস্ট আইডেল সমন্বয় ::

এই সমন্বয়ের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ইঞ্জিন যখন প্রথম চালু হয় – তখন আইডেলিং গতিতে ইঞ্জিন বেশী গতিসম্পন্ন রাখার জন্যে থ্রোটল ভাল্ভটিকে সম্পূর্ণ বন্ধ না রেখে সামান্য খুলে রাখার ব্যবস্থা করা। এভাবে ইঞ্জিন তাড়াতাড়ি গরম হতে পারে এবং পূর্ণ কার্যক্ষম হয়। কার্বুরেটর চোক ভাল্ভের সাথে একটি সংযোগ থাকে এবং এর একপ্রান্ত ফাস্ট আইডেলার ক্যামের সঙ্গে যুক্ত থাকে। থ্রোটল ভাল্ভ আপারেটিং সংযোগ ফাস্ট আইডেল সমন্বয় স্ক্রুর ফাস্ট আইডেলার ক্যামের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ অবস্থান করানোকেই ফাস্ট আইডেলিং সমন্বয় বলা হয়। সমন্বয় স্ক্রু কমবেশী করে যথাযথভাবে এই সমন্বয় করতে হয় ।

 

কারবুরেটর ওভারহোলিং:

নতুন গাড়ীর কার্বুরেটরে সাধারণত ২/৩ বছরের মধ্যে কোন বড় রকমের গোলযোগ দেখা দেয় না। মাঝে মধ্যে টিউনিং ও সমন্বয় করার প্রয়োজন হয়। ইঞ্জিন যখন কম বেগে চলবে তখন এর শব্দ ধীর স্থির হবে কিন্তু পূর্ণ ক্ষমতায় চলবে। টিউনিং এর সময় অবশ্য স্পার্ক প্লাগ এবং সি. বি. বিন্দুর ফাঁক এবং কার্বনের অবস্থাও দেখা দরকার। কার্বুরেটর মাঝে মধ্যে তেল দেয়। তবে কখনও কম অথবা কখনও বেশী তেল সরবরাহ করে অথবা মিশ্রণ খুবই দুর্বল হয়। কার্বুরেটর থেকে শোঁ শোঁ শব্দ হয়।

 

কার্বুরেটর খোলার নিয়ম:

১। প্রথমে কার্বুরেটরের সঙ্গে জ্বালানি সংযোগ লাইন (এ.সি-পাম্প হতে যে লাইন আসে) বিচ্ছিন্ন করতে হবে।

২। বাতাস পরিষ্কারক (air cleaner) বিচ্ছিন্ন করতে হবে এবং অ্যাকসেলারেটিং সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে।

৩। কার্বুরেটর ইনটেক মেনিফোল্ডের উপর দুইটি বোল্টের সাহায্যে অবস্থান করে। ঐ বোল্ট দুইটি খুলে কার্বুরেটরটিকে ইঞ্জিন হতে বিচ্ছিন্ন করতে হয়।

৪। এমতাবস্থায় কার্বুরেটরটিকে একটি পাত্রে নিয়ে পরিষ্কার পদার্থ অথবা পেট্রোল দ্বারা উপরের সব ধুলা-ময়লা পরিষ্কার করতে হয়।

৫। এখন স্ক্রু-ড্রাইভার দ্বারা ফ্লোট প্রকোষ্ঠের ঢাকনির স্ক্রুগুলি খুলে ঢাকনি বিচ্ছিন্ন করতে হবে। এই ঢাকনির সাথে নিড়ল ভাল্ভ এবং ফ্লোট একই সঙ্গে বের হয়ে আসবে।

৬। ফ্লোট প্রকোষ্ঠের তলায় যদি বেশী ময়লা জমে থাকতে দেখা যায় তাহলে কার্বুরেটরের বিভিন্ন সার্কিটের পথ (passege) জ্বালানি লাইন এবং জ্বালানি ট্যাঙ্ক ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে। একবার কার্বুরেটর ওভারহোলিং করলে বহু দিন আর করতে হয় না।

৭। এখন বিভিন্ন জেট, নিড়ল ভাল্ভ এবং পাম্প খুলে ফেলতে হবে এবং ভালভাবে . পরিষ্কার করার তরল পদার্থ বা পেট্রোল দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে। তবে সবসময় মনে রাখতে হবে, যেসব যন্ত্রাংশ রাবার জাতীয় সেগুলি কখনও পেট্রোল বা জ্বলে পুড়ে যায় এমন পদার্থ দ্বারা ধৌত করার উচিত নয়।

৮। ধৌত করার পর সকল যন্ত্রাংশ এবং সার্কিটের ছিদ্রগুলি সঙ্কুচিত বাতাস দ্বারা খুব ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে এবং পরীক্ষা করতে হবে।

৯। অতঃপর নিড়ল ভাল্ভ এবং সিট ভালভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে এগুলি চলবে কিনা। ত্রুটিপূর্ণ মনে হলে বদলী করা উচিত। জেটসমূহের অবস্থা অবলোকন করতে হবে যে ক্ষুদ্র মুখাকার ফাঁক বা রন্ধ্রগুলি (orifice) ক্ষয়ে গিয়ে বড় আকার ধারণ করেছে কিনা। বড় হলে তা পরিবর্তন করা উচিত।

১০। কার্বুরেটর ওভারহোলিং করলে কার্বুরেটর ওভারহোলিং ঝোলা (kit) ব্যবহার করা একান্ত বাঞ্ছনীয়। এই ঝোলার মধ্যে থাকে গ্যাসকেট, নিড়ল ভাল্ভ, ডায়াফ্রাম, মিটারিং জেট, মেইনজেট, আইডেলিং সমন্বয় স্ক্রু, স্প্রিং এবং অন্যান্য ওয়াশার।

১১। ফ্লোট পিভটেড পিন খুলে ফ্লোটটি পেট্রোল অথবা গরম পানিতে ডুবিয়ে রেখে দেখতে হবে যে ফ্লোটে ছিদ্র আছে কিনা। যদি থাকে তবে মেরামত বা বদলী করতে হবে।

 

কার্বুরেটর লাগানোর নিয়ম:

(১) নিড়ল ভাল্ভ, ফ্লোট, আইডেলিং সমন্বয় স্ক্রু. জেটসমূহ, ডায়াফ্রাম, মিটারিং জেট ইত্যাদি যন্ত্রাংশ যথাস্থানে লাগাতে হবে।

(২) ফ্লোট প্রকোষ্ঠে কিছু পেট্রোল ঢেলে দিতে হবে এবং ফ্লোট প্রকোষ্ঠের ঢাকনি ও অ্যাকসেলারেটিং পাম্প লাগাতে হবে। পাম্প লিঙ্কেজের মাধ্যমে পাম্প চালনা করে দেখতে হবে যে, অ্যাকসেলারেটিং জেট দ্বারা পেট্রোল আসে কিনা। পেট্রোল ঠিক মত আসলে কার্বুরেটরের স্ক্রুগুলি শক্ত করে আঁটাতে হবে এবং মাউন্টিং গ্যাসকেট বসিয়ে কার্বুরেটরটিকে ইনটেক মেনিফোল্ডের উপর স্থাপন করতে হবে এবং নাটদ্বয় এঁটে দিতে হবে।

(৩) বাতাস পরিষ্কারক (air cleaner.), থোটল, লিঙ্কেজ এবং ফাঁকা স্থান কার্বুরেটরের সাথে সংযুক্ত করতে হবে।

(৪) অতঃপর ইঞ্জিন চালিয়ে আইডেলিং সমন্বয় করতে হবে।

 

পেট্রোলের ফ্লাশ বিন্দু এবং বার্নিং বিন্দু :

পরীক্ষাগারে নিরীক্ষণের পর দেখা গেছে যে পেট্রোলের ফ্লাশ বিন্দু সাধারণত ৩৫° ফারেনহাইট হতে ৪০° ফারেনহাইটের মধ্যে (১.৬° সেঃ হতে ২.৭° সেঃ)। পেট্রোলের বার্নিং বিন্দু ৫০° ফারেনহাইট হতে ৬০° ফারেনহাইট (১০° সেঃ হতে ১৫° সেঃ)।

 

কার্বুরেটরের সার্কিট পরীক্ষা

 

কার্বুরেটরের অভিযোগ, কারণ ও প্রতিকার

অভিযোগ— ১ : কার্বুরেটর সাধারণত যথাযথভাবে কাজ করছে না।

কারণ

১। কার্বুরেটরে বাতাস টানে।

২। বায়ু পরিষ্কারক যন্ত্র বন্ধ বা ময়লাযুক্ত।
৩। জ্বালানি লাইন বন্ধ।
৪। জ্বালানি পাম্পের চাপ কম।
৫। জ্বালানি ছাঁকনি (filter) বন্ধ।
৬। স্বয়ংক্রিয় চোক সঠিকভাবে লাগানো হয়নি।
৭। কার্বুরেটরের জেটসমূহে ময়লা।
৮। অ্যাকসেলারেটিং পাম্প যথাযথভাবে কাজ করে না।
৯। প্রধান মিটার জেট নষ্ট অথবা ক্ষয়প্রাপ্ত।
১০। ভ্যাকিউয়াম লাইন ছিদ্র হতে পারে।

প্রতিকার

১। কার্বুরেটরের গ্যাসকেট এবং কার্বুরেটর মাউন্টিং গ্যাসকেট বদলী করতে হবে।
২। পরিষ্কার করা উচিত অথবা বদলী করতে হবে।

৩। জ্বালানি লাইন বাতাসের চাপের সাহায্যে পরিষ্কার করতে হবে।
৪। জ্বালানি পাম্পের ডায়াফ্রাম, এ.সি. ভাল্ভ স্প্রিং ইত্যাদি পরীক্ষা করতে হবে। এগুলি ঠিক না থাকলে বদলী করতে হবে।
৫। ছাকনি পরিবর্তন করা উচিত।
৬। সঠিকভাবে লাগানো প্রয়োজন।
৭। ভালভাবে ধুয়ে সঙ্কুচিত বাতাসের সাহায্যে পরিষ্কার করতে হবে।
৮। সংযোগ ছিন্ন অথবা ক্ষয়প্রাপ্ত হতে পারে। এজন্য সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা করে দেখা উচিত।
৯। নষ্ট হলে পরিবর্তন করা উচিত।
১০। লাইনটি মেরামত অথবা বদলী করতে হবে।

অভিযোগ ২: আইডেলিং খুব কম

দুর্বল আইডেলিং এর জন্য ইগনিশন পদ্ধতি, ইঞ্জিন ভাল্ভ ছিদ্র এবং অত্যধিক চাপ ইত্যাদি কারণে হতে পারে। তবে কার্বুরেটরের মধ্যে নিম্নলিখিত কারণ দেখা দিতে পারে।

কারণ

১। নিড়ল ভাল্ভ নিষ্ক্রিয়।
২। ফ্লোট লেভেল ঠিক নেই।
৩। আইডেলিং স্ক্রু নষ্ট।
৪। কার্বুরেটর মাউন্টিং গ্যাসকেট নষ্ট।
৫। কার্বুরেটর মাউন্টিং বোল্ট ঢিলা।
৬। ইনটেক মেনিফোল্ড নাট ঢিলা।
৭। আইডেলিং দ্বার বা পথ আংশিক বন্ধ।
৮। স্বয়ংক্রিয় চোক কাজ না করলে।
৯। কার্বুরেটরের জেটসমূহ ঢিলা হলে।
১০। ফাকা পাইপ ছিদ্র হলে।
১১। প্রধান মিটার জেট ক্ষয়প্রাপ্ত হলে।

প্রতিকার

১। পরিবর্তন করতে হবে।
২। ফ্লোট লেভেল সমন্বয় করতে হবে।
৩। আইডেলিং স্ক্রু বদলী করতে হবে।
৪। গ্যাসকেট পরিবর্তন করা উচিত।
৫। মাউন্টিং বোল্ট শক্ত করে এঁটে দিতে হবে।
৬। নাট আঁটাতে হবে।
৭। পরিষ্কার করতে হবে।
৮। বদলানো উচিত।
৯। জেটসমূহ শক্ত করে লাগানো উচিত।
১০। পাইপ বদলী করতে হবে।
১১। মেইনজেট বদলী করতে হবে।

অভিযোগ-৩ : ইঞ্জিন চালু হয় না

বিভিন্ন কারণে চালু করতে অসুবিধা হতে পারে। যেমন, লুব অয়েল খুব গাঢ় হলে, ইগনিশন পদ্ধতি ত্রুটিপূর্ণ হলে, চাপ কম হলে, ব্যাটারীতে চার্জ না থাকলে, সেলফ স্টার্টার ত্রুটিপূর্ণ থাকলে, মেইন এবং বিগ এণ্ড বিয়ারিং ফিটিং ক্লিয়ারেন্স খুব কম থাকলে, পিস্টন রিং ক্লিয়ারেন্স খুব কম থাকলে, ইত্যাদি কারণসহ নিম্নলিখিত কারণের জন্যও ইঞ্জিন চালু হয় না।

কারণ

১। ঢোক ভাল্ভ নষ্ট।
২। ফ্লোট লেভেল ঠিক নেই।
৩। জ্বালানি পাম্প (এ.সি পাম্প) পূর্ণ চাপ দিতে পারে না।
৪। নিড়ল ভাল্ভ ত্রুটিপূর্ণ হলে।
৫। ট্যাঙ্কে তেল কম থাকলে।

প্রতিকার

১। বদলী করতে হবে।
২। ফ্লোট সমন্বয় করতে হবে।
৩। পাম্প মেরামত করতে হবে।
৪। নিড়ল ভাল্ভ বদলী করতে হবে।
৫। ট্যাঙ্ক তেলে পূর্ণ করতে হবে।

অভিযোগ—৪ : কার্বুরেটর তেলে ভেসে যায়

কারণ

১। জ্বালানি পাম্পের চাপ বেশী।
২। কার্বুরেটর বডি ফেটে গেলে।
৩। নিড্‌ল ভাল্ভ একস্থানে বন্ধ হলে।
৪। জ্বালানি মাত্রা খুব বেশী উঁচু হলে।

প্রতিকার

১। ৩ হতে ৬ পাঃ/O” এর মধ্যে এ. সি. পাম্পের চাপ রাখতে হবে।
২। কার্বুরেটর বডি অথবা পূর্ণ কার্বুরেটর বদলী করতে হবে।
৩। নিড়ল ভাল্ভ বদলী করতে হবে।
৪। জ্বালানি মাত্রা পরিমাণ মত রাখা উচিত।

অভিযোগ—৫ : জ্বালানি খরচ বেশী হয়

নানাবিধ কারণে জ্বালানি খরচ বেশী হতে পারে, যেমন—চাপ কম হলে, ইঞ্জিনে ঘর্ষণ (friction) বেশী হলে, ব্রেকে ত্রুটি থাকলে, হুইল সমভাবে না থাকলে, মাফলার বন্ধ হলে, ইগনিশন ত্রুটিপূর্ণ থাকলে, ঘন ঘন ইঞ্জিন চালু করলে এবং দ্রুতবেগে গাড়ী চালালে বেশী তেল খরচ হয়। এছাড়া কার্বুরেটরের বিভিন্ন দোষেও বেশী তেল খরচ হয়। নিম্নে এগুলি উল্লেখ করা হলো।

কারণ

১। আইডেলিং সমন্বয় ঠিক না থাকলে।
২। জ্বালানি লাইনে অথবা কার্বুরেটরে ছিদ্র হলে।
৩। বায়ু পরিষ্কারক যন্ত্র বন্ধ হয়ে গেলে।
৪। ইকোনমাইজার ত্রুটিপূর্ণ থাকলে।
৫। মেনিফোল্ডের তাপ নিয়ন্ত্রণ ভালভ ত্রুটিপূর্ণ থাকলে।
৬। কার্বুরেটর গ্যাসকেট খারাপ থাকলে।
৭। মেনিফোল্ড গ্যাসকেট নষ্ট হলে।
৮। তেলের চাপ বেশী হলে।
৯। নিড়ল ভাল্ভ অকেজো।
১০। জ্বালানি মাত্রা বেশী হলে।

প্রতিকার

১। সঠিকভাবে সমন্বিত করা উচিত।
২। সঙ্গে সঙ্গে ছিদ্র বন্ধ করা উচিত।
৩। পরিষ্কার অথবা পরিবর্তন করা বাঞ্ছনীয়।
৪। পরিবর্তন করা শ্রেয়।
৫। পরিবর্তন করা উচিত।
৬। গ্যাসকেট বদলানো বাঞ্ছনীয়।
৭। পরিবর্তন করা অপরিহার্য।
৮। নিয়ন্ত্রণ করা আবশ্যক।
৯। ভাল্ভ পরিবর্তন করা অপরিহার্য।
১০। জ্বালানি মাত্রা নির্মাতার দেওয়া পরিমাণ মত রাখতে হবে।

আরও দেখুনঃ