স্পার্ক প্লাগ

স্পার্ক প্লাগ – এই পাঠটি “অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং” বিষয়ের “বৈদ্যুতিক পদ্ধতি” অধ্যায়ের একটি পাঠ।

স্পার্ক প্লাগ

 

স্পার্ক প্লাগ :

পেট্রোল ইঞ্জিনে দহনকার্য সম্পাদনের জন্য স্পার্ক প্লাগ একটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ। এই স্পার্ক প্লাগই উচ্চ ভোল্টেজ স্পার্ক সংঘটিত হয়। এটা দহন প্রকোষ্ঠের ছিদ্রপথে প্যাচের সাহায্যে লাগানো থাকে। এটি খুবই মজবুত করে তৈরী করা হয়। কারণ এই প্লাগকে ১৮০০০ হতে ২২০০০ হাজার ভোল্টেজ এবং ৪০০ হতে ৬০০ পাউন্‌ড প্রতি বর্গইঞ্চিতে চাপ সহ্য করতে হয়। স্পার্ক প্লাগ নিম্নলিখিত যন্ত্রাংশ নিয়ে গঠিত :

স্পার্ক প্লাগ | বৈদ্যুতিক পদ্ধতি | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

 

(১) টার্মিনাল, (২) কেন্দ্ৰীয় তাড়িত ভার, (central electrode), (৩) নিম্ন তাড়িত ভার, (৪) সেল সংযোগ, (৫) কোর অন্তরক (insulator) সংযোগ।

স্পার্ক প্লাগের অন্তরণ (insulation) সাধারণত চীনামাটি অথবা মাইকা দ্বারা তৈরী করা হয়ে থাকে। তাড়িত দ্বার চীনামাটি বা সাইকা দ্বারা আবৃত করা থাকে। কেন্দ্রীয় তাড়িত দ্বারের উপরের অংশে হাইটেনশন লিড সংযোগ করা হয় এবং নীচের অংশ নিম্ন তাড়িত দ্বারের খুব কাছাকাছি অবস্থানে থাকে। অর্থাৎ ০২৫” হতে ০৪০” ফাঁকে অবস্থান করে। নিম্ন তাড়িত দ্বার এল (L) আকৃতিবিশিষ্ট। এটি কমিয়ে বাড়িয়ে ফাঁক কমানো বাড়ানো হয়। ফিলার গেজের সাহায্যে ফাঁক সমন্বয় করা হয়। বিভিন্ন কোম্পানী বিভিন্ন ধরনের ইঞ্জিন তৈরী করে। এর ধরন ও বহন ক্ষমতাও বিভিন্ন ধরনের।

 

স্পার্ক প্লাগ | বৈদ্যুতিক পদ্ধতি | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

হিট রেঞ্চের উপর ভিত্তি করে স্পার্ক প্লাগকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন, (ক) গরম স্পার্ক প্লাগ, (খ) ঠাণ্ডা স্পার্ক প্লাগ। যেসব গাড়ীর ইঞ্জিন অতিরিক্ত সময় চলে এবং ভারী মাল বহন করে ও দ্রুত গতিতে চলে সেসব গাড়ীতে ঠাণ্ডা স্পার্ক প্লাগ ব্যবহৃত হয়। আবার যেসব গাড়ীর ইঞ্জিন অল্প সময় ও কম পথ চলে সেসব গাড়ীতে গরমস্পার্ক প্লাগ ব্যবহৃত হয়। গরম স্পার্ক প্লাগের উত্তাপ তাড়াতাড়ি বের হতে পারে না কিন্তু ঠাণ্ডা স্পার্ক প্লাগের উত্তাপ তাড়াতাড়ি বের হতে পারে।

 

 স্পার্ক প্লাগ পরিষ্কারকরণ :

১০০ ঘণ্টা বা ৩ হতে ৪ হাজার মাইল চলার পর ইঞ্জিন খুলে ভাল করে পরিষ্কার করে ফাঁক ঠিক করতে হয়। ইঞ্জিনের অবস্থা খারাপ দেখলে অবসর সময়ে স্পার্কপ্লাগ খুলে পরিষ্কার করা উচিত, তা না করলে চালু হবে না। স্পার্ক প্লাগ ক্লিনার দ্বারা এটি নিখুঁতভাবে পরিষ্কার করা যায়। ক্লিনারে প্লাগটি বসিয়ে প্রথমে স্যান্ড ব্লাস্ট করতে হয়। স্যান্ড ব্লাস্টের পরে এয়ার ব্লাস্ট করতে হয়। স্পার্ক প্লাগ ক্লিনার না থাকলে অ্যামারী পেপার, ছুরির মাথা ইত্যাদি দ্বারা প্লাগ থেকে কার্বন দূর করতে হয়। এর সাহায্যে প্লাগের স্পার্কের অবস্থাও নির্ণয় করা যায়। প্লাগের অবস্থা দেখে নিম্নরূপে ইঞ্জিনের অবস্থা নির্ণয় করা যায়।

  • ১। প্লাগ খোলার পর যদি দেখা যায় কেন্দ্রীয় তাড়িত দ্বার এবং নিম্ন তাড়িত দ্বার এবং এর চতুষ্পার্শে সাদা অথবা হাল্কা হলুদ রঙের পাউডার রয়েছে তাহলেই ইঞ্জিনের অবস্থা ভাল বলে বুঝতে হবে।
  • ২। প্লাগের মুখে যদি কালো কার্বন জমে থাকতে দেখা যায় তাহলে দহনকার্য সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হচ্ছে না। এরূপক্ষেত্রে কার্বুরেটর সমন্বয় করলে এবং ঠাণ্ডা স্পার্কপ্লাগের পরিবর্তে গরম স্পার্ক প্লাগ ব্যবহার করলে অবস্থার উন্নতি হতে পারে।
  • ৩। প্লাগের মুখে যদি ভিজা কার্বন অথবা লুব অয়েল দেখা যায় তবে বুঝতে হবে পিস্টন রিং ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। এর ফলে লুব অয়েল পিস্টনের উপরে উঠে আসে এবং দহনকার্য ভাল হয় না ও ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা কমে যায়।
  • ৪। যদি প্লাগের মুখে ছাই বা ধূসর বর্ণ দেখায় তাহলে মনে করতে হবে যে, ইঞ্জিন অত্যন্ত গরম অবস্থায় চলে অর্থাৎ ইঞ্জিন খুব গরম হয়। ইঞ্জিন গরম হওয়ার কারণ পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পরীক্ষা করে দেখা উচিত।

 

স্পার্ক প্লাগের হিট রেঞ্চ (তাপমাত্রা) :

বর্তমানে প্রায় সব স্পার্ক প্লাগে রোধক ব্যবহার করা হয়। এটা একদিকে প্লাগের জীবনকাল বাড়িয়ে দেয় ; অন্যদিকে গাড়ীতে যে রেডিও ও টেলিভিশন ব্যবহার করা হয় তাতে তরঙ্গ (wave) বা পর্যাবৃত্তিহারের (frequency) ব্যাঘাত সৃষ্টি করে না।

 

ধারক (condenser) :

ধারক সি. বি. বিন্দুর সঙ্গে সমান্তরাল সংযোগের মাধ্যমে ইগনিশন বর্তনীতে থাকে। যখন প্রাইমারী বর্তনী বন্ধ হয়ে যায় তখন সি. বি. বিন্দুতে স্পার্ক হয় অর্থাৎ ভোল্টেজ বেড়ে যায়। এই বর্ধিত ভোল্টেজ বা আর্ক (arc) ধারক মুহূর্তের মধ্যে গ্রহণ করে নেয় (চার্জ হয়)। ধারক সি. বি. বিন্দুকে জ্বলে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে এবং ছোট ছোট ক্ষত সৃষ্টির হাত থেকেও রক্ষা করে। রোধক চুম্বকের বল ক্ষেত্রকে (magnitic field) তড়িৎ গতিতে বন্ধ করে দিতে সাহায্য করে এবং সেকেন্ডারী উইন্ডিং-এ উচ্চ ভোল্টেজ সৃষ্টি করতে সহায়তা করে।

ধারক সাধারণত রূপা, টিন এবং সীসার পাত দ্বারা তৈরী হয়ে থাকে। এর মধ্যে কতকগুলি পরিবাহক (conductor) থাকে, আবার কতগুলি অপরিবাহক (non-conductor) থাকে। প্রথমে একটি ইনসুলেটর, তারপর একটি পরিবাহক এভাবে একের পর এক তৈরী করা হয়। ইনসুলেটরগুলিতে সাধারণত মাইকা অথবা বিশেষ ধরনের কাগজ ব্যবহার করা হয়। ধারকের সব পরিবাহক একত্রে সংযোগ করে একটিমাত্র তার বের করতে হয়। একে পিগটেইল (pigtail) বলে। এই পিগটেইল প্রাইমারী বর্তনীর সঙ্গে সংযোগ করা থাকে। অপরিবাহী বস্তুগুলি ভূমির সঙ্গে সংযোগ করা থাকে।

স্পার্ক প্লাগ | বৈদ্যুতিক পদ্ধতি | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

ধারকের ধারকত্ব (capacity):

নির্ভর করে পরিবাহকের আয়তন এবং পরিবাহক ও অপরিবাহকের প্লেটের মধ্যে দূরত্বের উপর। ধারক সবসময় উচ্চ শক্তিসম্পন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়। ধারক ছাড়া ইঞ্জিন চালু হবে না বা চালানো যাবে না। গাড়ীতে সাধারণত ২০ হতে ৩০ মাইক্রোফ্যারাড (microfards) ধারক ব্যবহার করা হয়। এটা মেরামত করা যায় না বরং পরিবর্তন করাই বাঞ্ছনীয় । ধারক বেশী ধারকত্ব সম্পন্ন হলে সি. বি. বিন্দুর উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। যেমন, সি. বি. বিন্দুর ভূমি বিন্দুর উপর মেটাল জমতে থাকে। কম ধারকত্বের হলে ব্রেকার আর্ম বিন্দুর উপর মেটাল জমতে থাকবে।

 

ইগনিশন সুইচ (Ignition switch) :

সর্বাধুনিক গাড়ীসমূহে ইগনিশন সুইচ স্টিয়ারিং কলামে অবস্থিত। এতে একটা বিশেষ সুবিধাও আছে। ইগনিশন সুইচ বন্ধ থাকলে স্টিয়ারিং বন্ধ থাকে অর্থাৎ স্টিয়ারিং এদিক-সেদিক নড়াচড়া করে না। ইগনিশন সুইচ যখন অন করা হয় তখন স্টিয়ারিং মুক্ত হয়ে যায় অর্থাৎ বাম ও ডান দিকে নড়াচড়া করানো যায় এবং সব বর্তনীতে বিদ্যুৎ যায়। সুইচের চাবি দ্বিতীয়বার নাড়ানোর সাথে সাথে ক্র্যাঙ্কিং মোটর ক্র্যাঙ্ক করে ইঞ্জিনকে চালু করে দেয়। ইঞ্জিন চালু হওয়ার সাথে সাথে সুইচের চাবি ছেড়ে দিতে হয় অর্থাৎ অন অবস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হয়। তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে না নিলে ক্র্যাঙ্কিং মোটর জ্বলে যাওয়ার খুবই সম্ভাবনা থাকে।

ইগনিশন সুইচ অন করলে এবং ইঞ্জিন চালু থাকলে জেনারেটর বা অল্টারনেটর ব্যাটারীকে চার্জ করতে থাকে। সুইচ বন্ধ করলে চার্জ দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ড্রাইভার যদি ভুল করে সুইচ অন করা অবস্থায় দরজা খুলে রাখে তখন বাজার (buzer) বেজে উঠে। ড্রাইভার যাতে বুঝতে পারে যে সুইচ অন করা আছে সেজন্য তা বন্ধ করতে হবে। গাড়ীর রেডিও, হিটার, টেলিভিশন ইত্যাদি ইগনিশন সুইচের সাথে সংযোগ করা থাকে। ফলে ড্রাইভারকে ঐ জিনিস বন্ধ করতে কোনই বেগ পেতে হয় না। ইঞ্জিন বন্ধ হলেই ঐগুলিও বন্ধ হয়ে যায়।

 

ফায়ারিং অর্ডার জানা না থাকলে বের করার নিয়ম :

ইঞ্জিন থেকে সব স্পার্ক প্লাগ এবং ইনজেক্টর খুলে ফেলতে হবে এবং ঐসব ছিদ্রপথ তুলা বা কাপড় দ্বারা ভালভাবে বন্ধ করে দিতে হবে। এমতাবস্থায় চালু করার জন্য ক্র্যাঙ্কিং করতে হবে। এখন লক্ষ্য রাখতে হবে যে, কোন্ সিলিন্ডার থেকে তুলা আগে ছুটে আসে।

যে সিলিন্ডার থেকে প্রথমে তুলা ছুটে আসবে সেই সিলিন্ডারটিই হবে ১নং সিলিন্ডার। তারপর যে সিলিন্ডারটি থেকে তুলা বের হবে সেটি হবে ৩নং অথবা ৪নং সিলিন্ডার (চার সিলিন্ডারবিশিষ্ট ইঞ্জিনের জন্য)। এভাবে পর পর বের হয়ে একটি ফায়ারিং অর্ডার নির্দিষ্ট করবে। সেটিই হবে ঐ ইঞ্জিনের ফায়ারিং অর্ডার।

 

ইঞ্জিনে ব্যাক ফায়ারিং:

ব্যাক ফায়ারের কারণসমূহ বর্ণিত হলো। যেমন, (১) হাইটেনশন লিড উল্টো ফিট হলে, (২) ইগনিশন টাইমিং ভুল হলে, (৩) ইঞ্জিন বেশী গরম হলে (৪) ইগনিশন টাইমিং বেশী অগ্রসর হলে, (৫) পিস্টন হেডে কার্বন জমলে এবং (৬) বাতাস জ্বালানি মিশ্রণ পাতলা হলে।

 

ইলেকট্রনিক ইগনিশন পদ্ধতি :

সর্বাধুনিক মোটরযানসমূহে ইলেকট্রনিক ইগনিশন পদ্ধতি দেখা যায়। এই পদ্ধতিতে সি. বি. বিন্দু ব্যবহার করা হয় না। এর পরিবর্তে ডিস্ট্রিবিউটরের মধ্যে চৌম্বক পিক আপ-কয়েল, অ্যামপ্লিফায়ার এবং ট্রানজিস্টর ব্যবহার করা হয়। ক্যাপের উপর থেকে দেখলে এই পদ্ধতি এবং সি. বি. বিন্দু ইগনিশন পদ্ধতির মধ্যে কোন পার্থক্য দেখা যায় না। কিন্তু ক্যাপ খুললে পার্থক্য দেখা যায়। এই পদ্ধতিতেও ভ্যাকিউয়াম এবং সেন্ট্রিফিউগল অ্যাডভান্স আছে। এই পদ্ধতিতে রোধক থাকে না কিন্তু ইগনিশন কয়েল থাকে। এখানে বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ট্রানজিস্টর, ধারক এবং ডায়ড অ্যামপ্লিফায়ার ব্যবহার করা হয়।

এই পদ্ধতিতে রোটরকে রিলাক্টর বা টাইমার কোর বলা হয়। এটা ব্রেকার আর্ম-এর পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়। সিলিন্ডার যতগুলি ইঞ্জিনে থাকে ততগুলি রিলাক্টর বা টাইমার কোর থাকে। রিলাক্টর এবং টাইমার কোরের সন্নিকটে একটি স্থায়ী চুম্বক এবং পিক-আপ কয়েল থাকে। ডিস্ট্রিবিউটর শ্যাফট ঘূর্ণায়নের ফলে চুম্বকের বল রেখায় শক্তি সৃষ্টি হয়। যদিও এই বিদ্যুৎ খুব কম কিন্তু কন্ট্রোল ইউনিটকে পরিচালনা করতে সক্ষম। কন্ট্রোল ইউনিটে ইলেকট্রনিক কৌশল ব্যবহার করা হয়। ভায়ড, ক্যাপাসিটর, ট্রানজিস্টর, অ্যামপ্লিফায়ার, যা বিদ্যুৎকে পরিবর্তন পরিবর্ধন ও নিয়মতান্ত্রিক সুবিধাজনক করণে সাহায্য করে থাকে।

 

স্পার্ক প্লাগ | বৈদ্যুতিক পদ্ধতি | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

বিদ্যুৎ-এর জলক যখন পিক-আপ কয়েল থেকে কন্ট্রোল ইউনিটে আসে তখন কন্ট্রোল ইউনিট বিদ্যুৎ-এর প্রবাহ (প্রাইমারী সার্কিট) বন্ধ করে দেয় ; ফলে কয়েলের মধ্যে চুম্বকের বল রেখা তৈরী বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সেকেন্ডারী কয়েলে হাই ভোল্টেজ সৃষ্টি হয় (সি. বি. বিন্দু ইগনিশন পদ্ধতির মত)। এই পদ্ধতিতে সমন্বয়ের প্রয়োজন হয় না। সব কিছু স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সম্পন্ন হয়। শুধুমাত্র ইগনিশন টাইমিং করতে হয়। এই পদ্ধতির গাড়ী আমাদের দেশে খুবই কম ।

 

ম্যাগনেটো ইগনিশন পদ্ধতি :

এই পদ্ধতিতে ইঞ্জিনের মধ্যে শক্তি উৎপন্ন করার জন্য ব্যাটারীর প্রয়োজন হয় না। এই পদ্ধতিতে চুম্বক (magnet) বিশেষ প্রক্রিয়ার সাহায্যে নিজেই বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারে। প্রথমে কম শক্তিসম্পন্ন বিদ্যুৎ, তারপর উচ্চ শক্তিসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে থাকে। এই পদ্ধতিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন,

(ক) লো-টেনশন ম্যাগনেটো ইগনিশন পদ্ধতি : ইগনিশন কয়েলের সাহায্যে এই পদ্ধতিতে চুম্বক নিজেই দুর্বল বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে তাকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করে।

(খ) হাইটেনশন ম্যাগনেটো ইগনিশন পদ্ধতি : এই পদ্ধতিতে কোন পৃথক ইগনিশন কয়েল ব্যবহার করা হয় না। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন চুম্বক নিজেই বিশেষ ব্যবস্থাধীনে উচ্চশক্তির বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে সিলিন্ডারে সরবরাহ করে থাকে। এই পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা নিম্নে প্রদান করা হলো।

 

সুবিধা :

(ক) এই পদ্ধতিতে বিদ্যুতের জন্য কোনো ব্যাটারীর প্রয়োজন হয় না, (খ) এতে গাড়ীর ওজন কম হয় এবং জায়গা কম লাগে, (গ) ইঞ্জিন চালু হওয়ার পর ভোল্টেজ কমে না এবং দ্রুতি বৃদ্ধির সাথে সাথে ভোল্টেজ বৃদ্ধি পায়, (ঘ) কোন প্রকার চার্জিং বর্তনীর প্রয়োজন হয় না এবং কোনো ইলেকট্রোলাইটের দরকার হয় না।

 

অসুবিধা :

(ক) এই পদ্ধতিতে ইঞ্জিন চালু করে রাখতে হলে ইঞ্জিনের দ্রুতি বেশী রাখতে হয়। তা না হলে দহনকার্য সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুতের অভাবে ইঞ্জিন চালু হওয়া বন্ধ হয়ে যায় (এটা এই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় দোষ), (খ) মোটরযানের বড় বড় ইঞ্জিনে এই পদ্ধতির প্রচলন নেই বললেই চলে।

 

ম্যাগনেটো ইগনিশন:

পদ্ধতির কার্যক্রম : স্থায়ী চুম্বকের মধ্যে ৭.২০ চিত্রানুসারে আর্মে চারটি ঘুরানো হয়। ফলে তা বল রেখা (lines of force) কর্তন করে প্রাথমিকভাবে কম শক্তিসম্পন্ন হলে প্রাইমারী কয়েল, কন্ডেন্সার এবং সি. বি. বিন্দু বন্ধ অবস্থা হতে খুলে যায়। ফলে প্রাইমারী কয়েলের বর্তনীকে ব্রেক করে কন্ডেন্সার হয়ে সেকেন্ডারী কয়েলে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে থাকে।

উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ স্লিপ রিং, প্রধান কার্বন, কলাম কার্বন (যা চিত্রে দেখানো হয়নি) হয়ে ডিস্ট্রিবিউটর রোটরে যায়। রোটর ঘুরে ঘুরে যখন সে সিগমেন্ট বিন্দুর সাথে স্পার্ক করে তখন সেই বিন্দুর হাইটেনশন তার হয়ে স্পার্ক প্লাগে যায় (ইঞ্জিনের ফায়ারিং অর্ডার অনুসারে) এবং সিলিন্ডারের মধ্যে স্পার্ক সংঘটিত করে শক্তি উৎপন্ন করে (প্লাগ হতে আর্থ হয়ে বর্তনী সুসম্পন্ন করে থাকে)।

ম্যাগনেটো ইগনিশন পদ্ধতিতে মাঝে মাঝে স্পার্কপ্লাগ, রোটর, সি.বি. বিন্দু, কন্ডেন্সার ইত্যাদির পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, মেরামত ও সমন্বয়ের প্রয়োজন হয়। স্পার্কপ্লাগ, হাইটেনশন লিড, সি.বি. বিন্দু এবং ইগনিশন টাইমিং-এর পরীক্ষা নিরীক্ষা ইত্যাদি ব্যাটারী ক্লয়েল ইগনিশন পদ্ধতির মতই প্রয়োগ করতে হয়।

স্পার্ক প্লাগ | বৈদ্যুতিক পদ্ধতি | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

 

স্পার্ক প্লাগ | বৈদ্যুতিক পদ্ধতি | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

স্পার্ক প্লাগ | বৈদ্যুতিক পদ্ধতি | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

স্পার্ক প্লাগ | বৈদ্যুতিক পদ্ধতি | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

স্পার্ক প্লাগ | বৈদ্যুতিক পদ্ধতি | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

আরও দেখুনঃ

 

1 thought on “স্পার্ক প্লাগ”

Leave a Comment