ব্যাটারী চার্জ করার পদ্ধতি নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং” বিষয়ের “বৈদ্যুতিক পদ্ধতি” বিভাগের একটি পাঠ।
ব্যাটারী চার্জ করার পদ্ধতি
ব্যাটারী দুইভাবে চার্জ করা যায়। যেমন :
(ক) সকল মোটরযানের ব্যাটারী সব সময় চার্জ করার জন্য ডায়নামো বা জেনারেটর অথবা অলটারনেটর থাকে। গাড়ীতে চার্জিং সার্কিট-এর মাধ্যমে ডায়নামো অথবা অলটারনেটর ব্যাটারীকে চার্জ করে থাকে। চার্জিং ব্যবস্থায় এসব বিশদভাবে আলোচনা করা হবে।
(খ) ব্যাটারী চার্জার দ্বারা ব্যাটারী চার্জ করা যায়। ডায়নামো অথবা অলটারনেটর চার্জ না দিলে, ব্যাটারীর পানি কমে গেলে এবং শর্টরান শর্টস্টপ এই নিয়মে গাড়ী চালনা করলে ব্যাটারীর চার্জ কমে যায়। ফলে ইঞ্জিন চালু করা যায় না এবং লাইট, হর্ন কোনটাই কাজ করে না। এমতাবস্থায় ব্যাটারী গাড়ী থেকে খুলে ব্যাটারী চার্জারের সাহায্যে চার্জ করতে হয়।
প্রথমে ব্যাটারীটি ডিস্টিল্ড ওয়াটার দ্বারা এর উপরের নির্ধারিত সীমারেখা পর্যন্ত পূর্ণ করে দিতে হয়। এমতাবস্থায় চার্জারের পজেটিভ মেরু (pole) ব্যাটারীর পজেটিভ পোস্টের সঙ্গে এবং চার্জারের নেগেটিভ মেরু ব্যাটারীর নেগেটিভ প্লেটের সঙ্গে যুক্ত করে অ্যাম্পেয়ারের সমতা রক্ষা করতে হয় (৪, ৫ অ্যাম্পেয়ার অর্থাৎ ৪, ৫ অ্যাম্পেয়ারে চার্জার ব্যাটারীকে চার্জ করবে)। যদি ১২ ভোল্ট ৬০. অ্যাম্পেয়ারের ব্যাটারী হয় তবে ৫ অ্যাম্পেয়ার করে চার্জ করলে পূর্ণ চার্জ করতে ১২ ঘণ্টা লাগবে। এমতাবস্থায় সুইচ অন করলেই চার্জার ব্যাটারীকে চার্জ করতে থাকবে ।
ব্যাটারী চার্জার এ. সি বিদ্যুতে ২২০ বা ২৩০ ভোল্টে চালিত হয়। ট্রান্সফরমারের সাহায্যে এটাকে ১২ অথবা ২৪ ভোল্ট করা হয়। এই ১২ অথবা ২৪ ভোল্টকে ডায়ড · র্যাকটিফায়ারের সাহায্যে অথবা স্লিপরিং এর সাহায্যে ডি.সি বিদ্যুতে পরিবর্তিত করে ব্যাটারীকে চার্জ করতে হয়।
একটি ১২ ভোল্ট চার্জারের সাহায্যে এক বা একাধিক ব্যাটারী এক সঙ্গে চার্জ করা যায়। বেশী ব্যাটারী এক সঙ্গে চার্জ করলে চার্জ করতে বেশী সময় লাগে। যত কম অ্যাম্পেয়ারে ব্যাটারী চার্জ করা যায় ব্যাটারীর পেট ও সেপারেটরের জন্য ততই মঙ্গল।
হাইড্রোমিটার :
এটি একটি বিশেষ ধরনের মিটার। এর সাহায্যে ব্যাটারীর ইলেকট্রোলাইটের আপেক্ষিক গুরুত্ব পরিমাপ করা যায়। আন্তর্জাতিক হিসাবে পানির ঘনত্ব ১,০০০ ধরা হয়। পানির তুলনায় অন্য তরল পদার্থ যত গুণ ভারী এর আপেক্ষিক গুরুত্ব তত বেশী। হাইড্রোমিটার চারটি অংশে বিভক্ত। যেমন : (১) গ্লাস টিউব (বডি), (২) ফোট, (৩) রাবার টিউব, (৪) রাবার বল। গ্লাস টিউবটির এক প্রান্ত মোটা। এই প্রান্তে রাবার বলটি লাগানো থাকে। গ্লাস টিউবটির অপর প্রান্ত তুলনামূলকভাবে সরু এবং এই প্রান্তে রাবার টিউব লাগানো থাকে। ফ্লোটটি গ্লাস টিউবের মধ্যে থাকে।
যখন ইলেকট্রোলাইটের আপেক্ষিক গুরুত্ব পরিমাপ করার প্রয়োজন হয় তখন হাইড্রোমিটারের রাবার টিউবটির ভেন্ট প্লাগ খুলে ব্যাটারীর মধ্যে প্রবেশ করানো হয় এবং রাবার বলটি তখন হাত দ্বারা চাপ প্রয়োগ করা হয় এবং পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। ফলে ব্যাটারী হতে ইলেকট্রোলাইট গ্লাস টিউবের মধ্যে আসবে এবং ফ্লোটটি তখন ভাসতে থাকবে। ফ্লোটের গায়ে দাগ কাটা থাকে (উপর থেকে নীচের দিকে) ১০০০, ১.১০০, ১,১১০, ১.১৫০, ১১৫, ১১৮০, ১১০, ১০০, ১২২৫, ১২৫০, ১.২৭৫, ১২৮০, ১২৯০, ১.৩০০, ১.৩২৫ আঃ গুরুত্ব। ইলেকট্রোলাইটের আপেক্ষিক গুরুত্ব যত পরিমাণ থাকে ফ্লোট ঐ পরিমাণ ভাসতে থাকে।
হাইড্রোমিটারের সাহায্যে আমরা ইলেকট্রোলাইটের আপেক্ষিক গুরুত্ব তথা ব্যাটারীতে কি পরিমাণ চার্জ আছে তা জানতে পারি। প্রতিটি সেলের অবস্থাও জানা যায়। কিন্তু হাইড্রোমিটার পরীক্ষা করে ব্যাটারীর অভ্যন্তরীণ কোন দোষত্রুটি জানা যায় না বা বুঝা যায় না। হাইড্রোমিটারে নিম্নলিখিত হারে ফ্লোটের রিডিং (reading) দেখা যায়।
অনেক সময় হাইড্রোমিটার দ্বারা পরীক্ষা করে দুইটি সেলের মধ্যে আপেক্ষিক গুরুত্ব কমবেশী দেখা যায়। এর কারণ হতে পারে যে, যে কোন একটি সেলে ইলেকট্রোলাইটের পরিমাণ কম অথবা সেপারেটর দুর্বল হয়ে ব্যাটারীর সেল আংশিক শর্ট (short) হয়েছে।
ব্যাটারীর অভ্যন্তরীণ শর্ট বের করার নিয়মাবলী:
(ক) ব্যাটারীর উপর লোড চাপিয়ে অর্থাৎ ব্যাটারী হতে উচ্চ হারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার সময় ব্যাটারী ভোল্টেজ যদি দ্রুত কমে ৯ অথবা ৮.৫০ ভোল্ট হয় (ভোল্টমিটার দ্বারা পরীক্ষা করে) তাহলে ব্যাটারীর মধ্যে অভ্যন্তরীণ শর্ট হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়।
(খ) ব্যাটারীর অভ্যন্তরীণ শর্ট চার্জার দ্বারা চার্জ করলে পূর্ণ চার্জ হয়। কয়েক দিন দিনের বেলায় গাড়ী বেশী ভালই চলে কিন্তু রাতে গাড়ী চালালে ব্যাটারী দ্রুত ডিসচার্জ হয়ে যায়। কারণ রাতে গাড়ী চালালে হেডলাইট ও ব্যাক লাইটসমূহ জ্বালাতে হয় ও হর্ন বাজাতে হয়। অর্থাৎ লোড বেশী হয় বিধায় (অভ্যন্তরীণ শর্ট) ব্যাটারী দ্রুত ডিসচার্জ হয়।
(গ) অভ্যন্তরীণ শর্ট পরীক্ষা করার জন্য নিম্নলিখিত উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। এই পরীক্ষা গাড়ীতে ব্যাটারী রেখেও করা যায়। ইগনিশন যাতে না হয় সেজন্য হাইটেনশন তারগুলি খুলে রাখতে হয়। এমতাবস্থায় ইঞ্জিন ১০, ১৫ সেকেন্ড ক্র্যাঙ্কিং (cranking) করা অবস্থায় ভোল্টমিটার দ্বারা প্রতি সেলের ভোল্টেজ পরীক্ষা করে দেখতে হবে অথবা ব্যাটারীর ভোল্টেজ পরীক্ষা করে দেখতে হবে। যদি প্রতি সেলের ভোল্ট ১.৫০ এর নীচে হয় অথবা ১২ ভোল্ট ব্যাটারীর চার্জ ৯ বা ৮.৫০ ভোল্ট হয়ে যায় তবে নিশ্চিত হওয়া যায় যে উক্ত ব্যাটারীটির অভ্যন্তরীণ শর্ট হয়েছে।
এই ধরনের ব্যাটারীর দুইটি সেলের মধ্যে যদি ২০ ভোল্ট ব্যবধান দেখা যায় তবে বুঝতে হবে যে সেলটি খারাপ। সেলটি পরিবর্তন করলেই ব্যাটারী ভাল হয়ে যাবে। এক বা একাধিক সেল নষ্ট হলে এবং সেলগুলি পরিবর্তন করলে ব্যাটারী পূর্ণ কার্যক্ষম হবে। বিদেশী ব্যাটারীগুলিতে সেল পরিবর্তন করার মত কোন ব্যবস্থা নেই।
ব্যাটারী লোড টেস্টার দ্বারা অভ্যন্তরীণ শর্ট বের করা যায়। এই টেস্টারটির মধ্যে একটি ভোল্টমিটার, একটি অ্যাম্পেয়ার মিটার এবং একটি রিওস্ট্যাট (অনেকগুলি রেজিস্ট্যান্স) থাকে। রিওস্ট্যাটের একটি নব থাকে। এর সাহায্যে রেজিস্ট্যান্স বা রোধ কমানো এবং বাড়ানো যায়। এই বিশেষ ধরনের টেস্টারটির একটি নেগেটিভ এবং একটি পজেটিভ টার্মিনাল থাকে। এগুলি ব্যাটারীর সঙ্গে সংযোগ করতে হয়। এই মিটারের সঙ্গে দুইটি টেস্ট এড থাকে। এই টেস্টের সময় ব্যাটারী ফুলচার্জ থাকা উচিত।
ব্যাটারী সংযোগের পর টেস্ট প্রড দুইটি ব্যাটারীর টার্মিনাল পোস্টসমূহে ধরলেই অ্যাম্পেয়ার মিটারে এবং ভোল্টমিটারে ভোল্ট দেখাবে। (১২ ভোল্ট ১৭ প্লেট ব্যাটারী হলে অ্যাম্পেয়ার মিটারে ১২০ অ্যাম্পেয়ার দেখা যাবে)। এমতাবস্থায় রিওস্ট্যাটে নবটি বেশী রোধের দিকে সরালে অর্থাৎ ১২০ অ্যাম্পেয়ার লোড চাপালে ভোল্টমিটারে যদি ৯ ভোল্টের নীচে ভোল্ট দেখা যায় তবে বুঝতে হবে যে ব্যাটারীটির অভ্যন্তরীণ শর্ট হয়েছে।
ড্রাই চার্জ ব্যাটারী:
এই জাতীয় ব্যাটারীর পজেটিভ ও নেগেটিভ প্লেটগুলিতে ড্রাই চার্জ করা থাকে কিন্তু তড়িদ্বিশ্লেষ্য (electrolyte) থাকে না। যখন প্রয়োজন পড়ে তখন তড়িৎ বিশ্লেষ্য দ্বারা ব্যাটারী কেসিং পূর্ণ করতে হয়। নতুন অবস্থায় এই ব্যাটারীগুলির ভেন্ট প্লাগে সীল করা থাকে যাতে বাতাস যেতে না পারে।
বাতাস ভিতরে গেলে রাসায়নিক ক্রিয়া সংঘটিত হবে। ফলে ব্যাটারীর কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবে। ভালভাবে সীল করা থাকলে ২/৩ বছর পর্যন্ত এই ব্যাটারী নতুন অবস্থায় রাখা যায়। এইসব ব্যাটারীতে ব্যবহারের জন্য তড়িবিশ্লেষ্য প্লাস্টিকের বোতলে পাওয়া যায় এবং ইচ্ছামত যখন তখন ব্যবহার করা যায়। তড়িবিশ্লেষ্য ব্যাটারীতে দেওয়ার পর অন্তত ২৫-৩০ মিনিট ব্যাটারী ঠাণ্ডা করে নেওয়া উচিত। তৈরী করা (হাতে তৈরী মিশ্রণ) তড়িবিশ্লেষ্যও ব্যবহার করা যায়।
আরও দেখুনঃ
- গিয়ার বক্স বা ট্রান্সমিশন
- পাওয়ার ট্রান্সমিশন পদ্ধতি
- তাপমাত্রা ইণ্ডিকেটর
- কুলিং এবং ট্রান্সমিশন পদ্ধতি
- ক্লাচের প্রকারভেদ
- মোটরগাড়ি শিল্প
3 thoughts on “ব্যাটারী চার্জ করার পদ্ধতি”