তেলের সান্দ্রতা পরীক্ষা আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং” বিভাগ এর “ফুয়েলস এন্ড লুব্রিক্যান্টস” বিষয়ের একটি পাঠ। জ্বালানি তেল এবং লুবরিকেটিং তেলের -সান্দ্রতা পরীক্ষা বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রের সাহায্যে করা যায় যেমন, রেড উড ভিসকোমিটার (Red Wood Viscometer), সেবোল্ট ভিসকোমিটার (Saybolt viscometer) এবং অ্যাংগলার ভিসকোমিটার (Engler Viscometer)। চিত্রে উক্ত তিনটি যন্ত্রের গঠনপ্রণালী, কার্যপ্রণালী এবং বিভিন্ন অংশের নাম দেখানো হয়েছে।
তেলের সান্দ্রতা পরীক্ষা
সব তেলেরই কম-বেশী সান্দ্রতা আছে। যেমন— পেট্রোল ও উন্নতমানের কোরোসিন ইত্যাদির সান্দ্রতা খুবই কম। তুলনামূলকভাবে নারিকেল তেল ও সয়াবিন তেলের- সান্দ্রতা একটু বেশী। আবার সরিষা এবং তিসির তেলের -সান্দ্রতা আরও একটু বেশী। ইঞ্জিনে ব্যবহৃত তেল অর্থাৎ লুব অয়েলের সান্দ্রতা আরও বেশী। মোটরযানের গিয়ার বক্সে এবং ডিফারেন্সিয়াল ব্যবহৃত তেল অর্থাৎ গিয়ার অয়েল-এর সান্দ্রতা সর্বাপেক্ষা বেশী। আমাদের দেশে সাধারণত এস.এ.ই-৩০ থেকে এস.এ.ই-৪০ লুবরিকেটিং তেল ইঞ্জিনে ব্যবহার করা
হয়। গিয়ার অয়েল সাধারণত এস.এ.ই-৯০ থেকে এস.এ.ই-১২০ ব্যবহার করা হয়। তাপমাত্রার সাথে তেলের -সান্দ্রতার সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ। তাপমাত্রা বাড়লে তেলের -সান্দ্রতা কমে এবং তাপমাত্রা কমলে সান্দ্রতা বাড়ে। তেলের -সান্দ্রতা দুই প্রকার, যেমন (ক) বডি (Body) এবং (খ) ফ্লুয়িডিটি (fluidity)।
বডি হচ্ছে তেলের এমন একটি গুণ যা কোন বস্তুর সাথে লেগে থাকার একটি বিশেষ প্রবণতা। এ কারণে তা অধিক ধাক্কা প্রদান এবং ভারী বোঝা বহনে যন্ত্রাংশকে সচল রাখতে সহায়তা করে থাকে। অর্থাৎ উন্নত অয়েল ফিল্ম হিসেবে কাজ করে। আর তেলের ফ্লুয়িডিটি হচ্ছে প্রবাহ—ক্ষমতা। এ কারণেই তেলকে অয়েল সাম্প থেকে সিলিণ্ডার, পিস্টন, ক্যামশ্যাফট পর্যন্ত পৌঁছানো যায়।
সকল তরল পদার্থই অসংখ্য অণু-পরমাণু নিয়ে গঠিত। তরল পদার্থ প্রবাহিত হওয়ার সময় তার মধ্যে অবস্থিত বিভিন্ন অণু-পরমাণুর আকর্ষণ বাধার সৃষ্টি করে যা সান্দ্রতা বা ভিসকোসিটি নামে পরিচিত। তরল পদার্থ প্রবাহের গতি এর সান্দ্রতার উপর নির্ভরশীল। সান্দ্রতা যত বেশী হবে প্রবাহের গতি তত কম হবে। কিন্তু সান্দ্রতা যত কম হবে তার গতি তত বেশী হবে, যেমন— পানি।
ডিজেলের সান্দ্রতা বেশী হলে অটোমাইজেশন ভাল হয় না। ফলে ইঞ্জিনের শক্তি উৎপাদন মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয় এবং পোড়া গ্যাস বেশী নির্গত হয়। তবে ডিজেল তেলে স্বাভাবিক সান্দ্রতা থাকা একান্ত বাঞ্ছনীয়। তা না হলে পাম্প ব্যারেল ও প্লাজার দ্রুত ক্ষয় হয়ে যাবে।
পরীক্ষা :
যে তেলের সান্দ্রতা নির্ণয় করা প্রয়োজন তার ৬০ মিলিলিটার পরিমাণ তেল ভিসকোমিটারের অয়েল টিউবে বা কাপে রাখা হয়। এর চতুষ্পার্শ্বের তাপমাত্রা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থির (constant) রাখা হয়। তাপমাত্রা সাধারণত ৭০ ফাঃ ১০০° ফাঃ, ১৩০° বা ২১২° ফাঃ অর্থাৎ যখন যা প্রয়োজন সেরূপ রাখা হয়।
নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পৌছানোর পর অরিফিসের মুখ খুলে দেওয়া হয়। সেই অরিফিস দিয়ে সম্পূর্ণ তেল নির্গত হতে কত সেকেন্ড সময় লাগে তা লিপিবদ্ধ করে রাখতে হয়। পরীক্ষা চলাকালীন তাপমাত্রায় প্রাপ্ত সান্দ্রতাকে সেবোল্ট ইউনিভারসেল সেকেন্ড (এস.ইউ.এস-SUS) হিসাবে প্রকাশ করা হয়।
সময় অর্থাৎ সেকেন্ড যত বেশী লাগবে তেলের সান্দ্রতা তত বেশী বুঝাবে এবং সময় যত কম লাগবে তেলের সান্দ্রতা তত কম বুঝাবে। তেলের সান্দ্রতা বেশী হলে বড় অরিফিস ব্যবহার করা হয়, যা ফিউরল (Furol) অরিফিস নামে পরিচিত। এর দ্বারা অন্য অরিফিস থেকে প্রায় দশগুণ বেশী পরিমাণ তেল নির্গত হতে পারে। ফিউরল অরিফিসের পরীক্ষা পদ্ধতি একই রকম। কেবল প্রাপ্ত সান্দ্রতাকে সেবোল্ট ফিউরল সেকেন্ড হিসেবে প্রকাশ করা হয় (SFS) ।
আরও দেখুনঃ
- ক্ষণস্থায়ী প্রজ্বলন বিন্দু বা ফ্লাশ পয়েন্ট
- পোর পয়েন্ট এবং ক্লাউড পয়েন্ট
- তরল পদার্থের বাষ্পীভবন
- জ্বালানির তাপমাত্রা নির্ণয়
- পেট্রোলজাত পদার্থের উদ্বায়িত্ব এবং তলানি পরীক্ষা
- মোটরগাড়ি শিল্প
4 thoughts on “তেলের সান্দ্রতা পরীক্ষা”