জ্বালানির তাপমাত্রা নির্ণয়

জ্বালানির তাপমাত্রা নির্ণয় নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং” বিভাগ এর “ফুয়েলস এন্ড লুব্রিক্যান্টস” বিষয়ের একটি পাঠ। কোন নির্দিষ্ট ওজনবিশিষ্ট জ্বালানি প্রজ্বলনের ফলে যে পরিমাণ তাপশক্তি নির্গত হয় (পাওয়া যায়) তাকে ঐ জ্বালানি তাপ-মান (Heating value) বলে।

জ্বালানির তাপমাত্রা নির্ণয়

ক্যালরিমিটার যন্ত্রের সাহায্যে জ্বালানির তাপমাত্রা নির্ণয় করা যায়। ইহা দুই প্রকার। যেমন- (ক) অক্সিজেন বম্ব (স্থির আয়তন) ক্যালরিমিটার [Oxygen-bomb (Constant volume) Calorimeter ] । এই জাতীয় তাপ-মান যন্ত্রের সাহায্যে কঠিন ও তরল জ্বালানির তাপমাত্রা নির্ণয় করা যায়।

(খ) অবিরাম প্রবাহ স্থির (স্থির চাপ)

ক্যালরিমিটার [ Continuous-flow (constant pressure) Calorimeter ] । এই জাতীয় তাপমান যন্ত্রের সাহায্যে গ্যাস জাতীয় জ্বালানির তাপমাত্রা নির্ণয় করা হয়। ১৬.২৪ চিত্রে অক্সিজেন বম্ব ক্যালরিমিটার এবং ১৬.২৫ চিত্রে অবিরাম প্রবাহ ক্যালরিমিটারের গঠনপ্রণালী ও কার্যক্রম অতি সহজ ও সরলভাবে দেখানো হয়েছে। উভয় ক্যালরিমিটারের পার্থক্য এবং বৈসাদৃশ্য চিত্রের সাহায্যে দেখানো হয়েছে।

অক্সিজেন বম্ব ক্যালরিমিটার :

বম্ব পাত্রটি খুবই মজবুত করে তৈরী করা হয় যাতে তা জ্বালানি প্রজ্বলনের সময় সৃষ্ট উচ্চ চাপ ও তাপ সহ্য করতে পারে। এটি সাধারণত স্টেইনলেস স্টীল দিয়ে তৈরি করা হয়। ইহা ক্ষয়রোধকও বটে। বম্ব পাত্রটিতে অক্সিজেন প্রবেশ করানোর জন্য, ইগনিশন পদ্ধতি চালু করার জন্য এবং নমুনা তেল বা জ্বালানি রাখার পাত্রের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকে। বম্ব পাত্রটির মধ্যে জ্বালানি রাখার পাত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ

 

জ্বালানির তাপমাত্রা নির্ণয় | ফুয়েলস এন্ড লুব্রিক্যান্টস | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

জ্বালানি রাখা হয়। ইগনিশন পদ্ধতির সমস্ত সংযোগ সঠিক ব্যাটারীর সাথে দেওয়া হয়, বন্ধ পাত্রের আকার অনুসারে ২০ হতে ৩০ বায়ুমণ্ডলের চাপে অক্সিজেন বম্বপাত্রে পূর্ণ করা হয়। তারপর বম্বপাত্রটি ভালভাবে আবদ্ধ করে দেওয়া হয়। এমতাবস্থায় বম্বপাত্রটি ক্যালরিসিটারের বাকেটে রক্ষিত নির্দিষ্ট পানিতে ডুবিয়ে দিতে হয় (১৬.২৫ চিত্র দ্রষ্টব্য)।

বাকেটের পানি নাড়ানোর জন্য একটি বিশেষ যন্ত্র আছে যা বৈদ্যুতিক মোটর দ্বারা পরিচালিত হয়। ইগনিশন সুইচ অন করার পূর্বে বাকেটের পানি কমপক্ষে দুই মিনিট ধরে নাড়তে হয়। অতঃপর ইগনিশন সুইচ অন করা হয়। এতে বম্ব পাত্রে রক্ষিত ইগনিশন তারটি (wire) পুড়ে যায়, ফলে জ্বালানিও প্রজ্বলিত হয়। এতে বম্ব পাত্রটি এবং পানি গরম হতে থাকে। 

 

জ্বালানির তাপমাত্রা নির্ণয় | ফুয়েলস এন্ড লুব্রিক্যান্টস | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

পানিতে স্থাপিত বিশেষ থার্মোমিটারের সাহায্যে পানির তাপমাত্রা দেখা যায়। জ্বালানি যতক্ষণ জ্বলতে থাকে ততক্ষণই তাপমাত্রত্ব প্রদর্শিত হতে থাকে (চিত্র দ্রষ্টব্য)। জ্বালানি প্রজ্বলনের পূর্বের পানির তাপমাত্রা এবং পরের পানির তাপমাত্রার পার্থক্যই হচ্ছে জ্বালানির তাপ-মান (Heating value)। বম্ব ক্যালরিমিটারের সাহায্যে তাপমান নির্ণয়ের জন্য নিম্নবর্ণিত সূত্র কাজে লাগানো হয় ।

তাপ নির্গত (Heat released) জ্বালানির তাপমাত্রা x        = থার্মোমিটারে প্রাপ্ত তাপমাত্রা x

জ্বালানির ওজন + সালফিউরিক অ্যাসিড ও নাইট্রিক          পানির ওজন + ক্যালরি-.

অ্যাসিড হতে প্রাপ্ত অতিরিক্ত তাপ + ইগনিশন তার হতে প্রাপ্ত তাপ ।

নিম্নের সূত্রটিও কাজে লাগানো যায় : 

জ্বালানির তাপমাত্রা = পানির ওজন × জ্বালানির সুনির্দিষ্ট তাপমাত্রা × তাপমাত্রা বৃদ্ধি / জ্বালানির ওজন

 

General Maintenance | Beginner's Auto Maintenance & Repair | Jeff Crawford

 

জ্বালানির একটি প্রধান উপাদান হচ্ছে হাইড্রোজেন। এটি পোড়ালে যে সকল বস্তুর সৃষ্টি হয় তার মধ্যে পানি অন্যতম। জ্বালানির মধ্যে পানি বিভিন্ন অবস্থায় বিরাজ করতে পারে যেমন, তরল, বাষ্প এবং তরল ও বাষ্পের মিশ্রণ হিসেবে। জ্বালানি ‘প্রজ্বলনের সময় হাইড্রোজেন জ্বলবার ফলে যে পানির সৃষ্টি হয় তা যদি বাষ্পীয় অবস্থায় না থেকে তরল অবস্থায় পরিবর্তিত হয় তা হলে ক্যালরিমিটারে বেশী পরিমাণে তাপমাত্রা পাওয়া যায়।

এটি জ্বালানির উচ্চ তাপমান (Higher heating value) বা গ্রস হিটিং ভ্যালু নামে পরিচিত (Gross heating value) পক্ষান্তরে জ্বালানি প্রজ্বলনের ফলে সৃষ্ট জলীয়বাষ্পের সম্পূর্ণ অংশ বাষ্পাকারে থেকে গেলে তুলনামূলকভাবে কম তাপ পাওয়া যায়। একে নিম্ন তাপমান বা লোয়ার হিটিং ভ্যালু (Lower heating value) বলে ।

 

আরও দেখুনঃ

 

1 thought on “জ্বালানির তাপমাত্রা নির্ণয়”

Leave a Comment