আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় অটোমোটিভ জ্বালানি
অটোমোটিভ জ্বালানি
অটোমোটিভ জ্বালানিসমূহের নাম
জ্বালানি :
এটা এমন একটি পদার্থ যাতে রাসায়নিক ও আণবিক শক্তি বিদ্যমান থাকে। নিয়ন্ত্রিত হারে এ সকল পদার্থ হতে তাপশক্তি পাওয়া যেতে পারে। যে সকল বস্তুতে রাসায়নিক শক্তি বিদ্যমান, তার দহনযোগ্য অংশ অক্সিজেনের সাথে মিলিত হয়, অক্সিজেনের সাহায্যে নিজে পুড়ে তাপশক্তি উৎপাদন করে। সকল প্রকার দহন যোগ্য জ্বালানি হাইড্রোকার্বন কম্পাউণ্ডের সংমিশ্রণে উৎপন্ন হয়ে থাকে।
হাইড্রোজেন ও কার্বন নিজে জ্বলে । অক্সিজেন, কার্বন এবং ক্ষেত্রবিশেষে সালফার পুড়ে তাপশক্তি উৎপন্ন করে। সুতরাং এ কম্পাউণ্ডসমূহ দ্বারা সংগঠিত বস্তুকে জ্বালানি বলে। উপরোক্ত পদ্ধতিতে আজকাল আণবিক শক্তির ক্ষেত্রে তাপশক্তি উৎপাদনের জন্য অতি মূল্যবান ইউরেনিয়াম ও থোরিয়াম ব্যবহৃত হচ্ছে।
অটোমোটিভ জ্বালাি :
অয়েল/অপরিশোধিত তেল শোধন পূর্বক যে সকল জ্বালানি পাওয়া যায়, তার অংশ বিশেষ অটোমোটিভ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো:
– গ্যাসোলিন / পেট্রোল -অটেम/ডিজেল
– কেরোসিন
-লিকুপাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস /এলপিজি উল্লেখিত জ্বালানি সমূহ ক্রন্ত অয়েল হতে হাইড্রোকার্বন কম্পাউন্ডের তৈরি এবং আইসি ইঞ্জিনের সিলিন্ডারের মধ্যে প্রাশন প্রক্রিয়ার এগুলোর দহন ঘটিয়ে শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। উল্লেখিত জ্বালানিসমূহের মধ্যে পেট্রোল ডিজেলকে আইসি ইঞ্জিনের মুখ্য জ্বালানির উপর ভিত্তি করে পেট্রোল ও ডিজেল ইঞ্জিন নামকরন করা হয়েছে।
উৎপন্ন বিষার এগুলোকে পেট্রোলিয়াম প্রডাক্টসও বলে। এটাও এটা ছাড়াও ইঞ্জিনে ব্যবহৃত অন্যান্য তৈলাক্তকরণ উপকরণ যথা লুব্রিকেটিং অয়েল, পিয়ার অয়েল গ্রিজ ইত্যাদিও অপরিশোধিত তেল হতে পরিশোধন প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত হয়ে থাকে ।এগুলো জ্বললেও পাড়ির ইঞ্জিনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার না করে তৈলাক্তকরণের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে ।
মনে রাখতে হবে গাড়িতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত তেল হচ্ছে অপরিশোধিত ব্রুড অরেল হতে উৎপন্ন ভেল/জ্বালানি । নিম্নে এ জাতীয় অপরিশোধিত তেলের পরিশোধন প্রক্রিয়ার একটি ফ্লো চার্ট প্রদান করা হলো।
পেট্রোল জ্বালানির বৈশিষ্ট্য
পেট্রোল জ্বালানির নিম্মোক্ত বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত। জ্বালানির যথাযথ বৈশিষ্ট্য থাকলে, এটা ইঞ্জিনকে ত্রুটিমুক্ত, ঝুঁকিমুক্ত ও স্মুথ অপারেশনে সাহায্য করে ।
এন্ট্রিনক বৈশিষ্ট্য :
পেট্রোল ইঞ্জিন এরূপ থাকা উচিত যেন এটা প্রজ্বালনে কোনো ঝাঁকুনীর উৎপত্তি না হয় । আইসো অকটেন ও নরমাল হেপ্টেনের ন্যায় অনু এ প্রজ্বালন নিয়ন্ত্রণ করে। পেট্রোলে যত বেশি আইসো অকটেন থাকে এর নাম্বারও বেশি হয় । এক শত ভাগ অকটেনকে সম্পূর্ণ এন্ট্রিনক বৈশিষ্ট্য যুক্ত পেট্রোল হিসাবে গণ্য হয় ।
স্টার্টিং বৈশিষ্ট্য :
পেট্রোল ফুয়েল এরূপ হওয়া দরকার যেন স্বাভাবিক তাপমাত্রায়ই যথার্থ সংমিশ্রণ তৈরি করতে পারে ও প্রজ্বালন ঘটিয়ে তড়িৎ ইঞ্জিনকে স্টার্ট করতে পারে। এ বৈশিষ্ট্য সংরক্ষনের জন্য এর অধিক উদীয়তা ও কম বয়েলিং পয়েন্ট থাকে ।
ভ্যাপার লক বৈশিষ্ট্য:
সর্বাধিক উদীয়তার / ভোলাটিলিটির জন্য অনেক ক্ষেত্রে পেট্রোল ইঞ্জিনের কার্যকারী তাপমাত্রায়ই লাইনে পেট্রোল গ্যাসে পরিণত হয়ে পেট্রোল সরবরাহের বিঘ্নতা ঘটায়। এ জাতীয় সমস্যা হতে ইঞ্জিনকে রক্ষা করতে হলে অবশ্যই নির্ধারিত মাত্রার ভোলাটিলিটির পেট্রোল থাকা উচিত ।
ক্র্যাংক কেইজ ডাইলুশন:
ইঞ্জিন সিলিন্ডারে ফুয়েল যদি সম্পূর্ণ রূপে বাষ্পে পরিণত/রূপান্তরিত না হয় তবে সে তরল আকারে সিলিন্ডারের গা ঘেঁষে ক্র্যাংক কেইজে প্রবেশ করে। তারপর এ পেট্রোল ইঞ্জিন অয়েলের সঙ্গে মিশে ইঞ্জিন অয়েলকে পাতলা করে দেয়। যাতে ক্র্যাংক কেইজ ডাইলুশন বলে। এরূপ ক্র্যাংক কেইজ ডাইলুশন রোধ করণের নিমিত্তে অধিক ভোলাটিলিটি সম্পন্ন ফুয়েলের প্রয়োজন ।
গাম এবং ভার্নিশ :
পেট্রোল ফুয়েল এমন হওয়া উচিত যেন এটা পুড়ে যাওয়ার পর ইঞ্জিন যন্ত্রাংশে কোনো গাম এবং ভার্নিশ না জমে । উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ যথাযথভাবে সংরক্ষণের নিমিত্তে পেট্রোলের নিম্নের গুণসমূহ থাকা অত্যাবশ্যক
হায়ার অকটেন নাম্বার :
হায়ার অকটেন নাম্বার ইঞ্জিনের ঝাঁকুনি প্রতিরোধকরণের কাজে সাহায্য করে । অধিক হিটিং ভেলু : পেট্রোলের হিটিং ভ্যালু যত বেশি হবে এটির প্রজ্বোলনের পর তাপশক্তিও বেশি উৎপন্ন হয়। যার ফলে যান্ত্রিক শক্তি বেশি উৎপন্ন হয় ।
ভোলাটিলিটি :
একে পেট্রোলের উড়ে যাওয়ার ক্ষমতা ধরা হয়। এটি একদিকে বেশি হলে সহজ স্টার্টিং এন্টিনকিং ভ্যালু, হায়ার অকটেন রেটিং ও অধিক হিটিং ভ্যালুর ন্যায় বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ করতে সাহায্য করেও ভোপার লক হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আবার কম ভোলাটিলিটির পেট্রোল হলে এটা ক্র্যাংকেইজ ডাইলুশন সালফার ও গাম জমা করে । তাই পেট্রোলের ক্ষেত্রে পরীক্ষিত মিক্সড ভোলাটিলিটি এর ফুয়েল ব্যবহৃত হয়ে আসছে ।
ভিসকোসিটি :
পেট্রোল ফুয়েলের ভিসকোসিটি মোটেই থাকা উচিত নয়।
ফ্লাশ পয়েন্ট :
পেট্রোল জ্বালানির ফ্লাশ পয়েন্ট কম হওয়াই বাঞ্ছনীয়। কারণ কম ফ্লাশ পয়েন্ট বিশিষ্ট জ্বালানি সহজেই পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রায় দাহ্য মিকচার তৈরি করতে সাহায্য করে ।
গোর পয়েন্ট :
পেট্রোল জ্বালানির পোর পয়েন্ট কম থাকা বাঞ্ছনীয় । যাতে কম তাপমাত্রা বিশিষ্ট এলাকায় ও গাড়ি চালনা সম্ভব হয় । অন্যথায় ঠাণ্ডা এলাকায় সিস্টেমের ভিতর দিয়ে ফুয়েল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে ।
কার্বন রেসিডিউ :
পেট্রোল জ্বালানির প্রজ্বালনের পর মোটেই কারন রেসিডিউ সৃষ্টি হবে না। অবশ্য প্রজ্বালনকালীন প্রয়োজনের তুলনায় অক্সিজেন কম পাওয়ার ফলেও ইঞ্জিনের ভিতর কার্বন সঞ্চিত হয়।
পানি ও তলানি :
পেট্রোল জ্বালানিতে পানি এবং সোডিয়ামের উপস্থিতি মোটেই বাঞ্ছনীয় নয় । তলানি এবং পানির উপস্থিতিতে ইঞ্জিনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পার্টস ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে অকেজো হয়ে পড়ে ।
গাম :
গাম তৈরি করতে সহায়তা করে এরূপ বস্তু পেট্রোল জ্বালানিতে থাকা উচিত নয়। এটা উপস্থিত থাকলে ইঞ্জিন অংশসমূহ আঠালো হয়ে স্বাভাবিক চলায় বিঘ্ন ঘটায় ।
সালফার :
পেট্রোল জ্বালানিতে সালফারের উপস্থিতি মোটেই বাঞ্ছনীয় নয় । কারণ এটা ক্ষয়কারক ।
প্রশ্নমালা-২৫
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১ । অটোমোটিভ জ্বালানি কী ?
২। জ্বালানি কী?
৩। অটোমোটিভ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় এমন দুইটি পদার্থের নাম লেখ ।
৪ । পেট্রোলিয়াম প্রোডাক্ট কাকে বলে ।
৫। আইসি ইঞ্জিনের মুখ্য জ্বালানিগুলি কি কি ?
৬। ভিসকোসিটি কী?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। অটোমোটিভ জ্বালানি বলতে কী বোঝায়?
২। ৫টি কঠিন জ্বালানির নাম লেখ ।
৩। ভোলাটিলিটি বলতে কী বোঝায় ।
৪ । পোর পয়েন্ট বলতে কী বোঝায়।
৫। অটোমোটিভ জ্বালানির শ্রেণিভেদ আলোচনা কর ।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। ডিজেল জ্বালানির বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর ।
২। পেট্রোল জ্বালানির বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর ।
আরও দেখুন :