ড্রাইভিং ও বিআরটিএ আইন

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ড্রাইভিং ও বিআরটিএ আইন

ড্রাইভিং ও বিআরটিএ আইন

 

ড্রাইভিং ও বিআরটিএ আইন

 

ড্রাইভিং কলাকৌশল:

বর্তমান বিশ্বে সব ধরনের গাড়িতেই সাধারণত স্টার্টার মোটরের সাহায্যে ইঞ্জিনকে চালু করা হয় ড্রাইভিং সিটে বসে চালককে প্রথমে দেখতে হবে যে, গিয়ার লিভার নিউট্রাল অবস্থায় আছে কিনা। অতঃপর ব্রেক প্যাডেলের উপর চাপ দিয়ে প্রথম গিয়ারে গাড়িকে অল্পক্ষণ চালিয়ে গাড়ির গতি একটু বৃদ্ধি পেলেই ক্লাচ প্যাডেল সম্পূর্ণ চেপে ক্লাচকে বিযুক্ত করে প্রার্থীতা গিয়ারে শিফটিং করতে হবে।

নতুবা ইঞ্জিনের সঙ্গে ট্রান্সমিশনের ঘূর্ণন গতির সম্পর্ক থাকায় তাড়াতাড়ি গিয়ারের পিনিয়নের দাঁত ক্ষয় হয়ে নষ্ট হতে পারে । গিয়ার পরিবর্তনের সময় অ্যাক্সেলারেটর প্যাডেলের উপর থেকে চাপ কমাতে হবে। গিয়ার শিফটিং হয়ে গেলে ক্লাচ প্যাডেল ধীরে ধীরে ছেড়ে দিতে হবে এবং সে সঙ্গে অ্যাক্সেলারেটর প্যাডেলের উপর চাপ ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে ।

গাড়ি রাস্তায় চলার সময় ব্রেক করে গাড়ির গতি কমানোর পর বাড়াতে হলে ক্লাচ চেপে গিয়ার লিভারকে চালামন গতির চেয়ে নিম্নগতির শিফটিং করে গাড়ির গতিকে বাড়াতে হবে ।

রোড সিগন্যাল সমূহ:

মোটরযানের চালক দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলতে এবং মোটরযান সোজাভাবে চালাতে বামে ঘুরাতে, ডানে ঘুরাতে মোটরযান থামাতে, ওভারটেক করতে এবং ওভারটেক করতে দিতে প্রভৃতিতে যে সকল সংকেত ব্যবহৃত হয়, তাকে রোড সিগন্যাল বা ট্রাফিক সিগন্যাল বলে ।
রোড সিগন্যাল ৪ প্রকার, যথা-

(ক) ট্রাফিক পুলিশ কর্তৃক প্রদর্শিত সিগন্যাল ।

(খ) আলোর সিগন্যাল ।

(গ) মোটরযান চালকের হাত ও মোটরযানের আলোর সিগন্যাল ।

(ঘ) রাস্তার পাশে নিষ্ক্রিয় বা সাইনবোর্ডের সিগন্যাল ।

দিনের বেলায় ড্রাইভারের বিভিন্ন ধরনের সংকেত

সিগন্যাল-১ আমি গতি কমাবো বা থামাবো :

যদি চালক গাড়ির গতি কমাতে বা থামাতে চায় তাহলে পথে বাঁ দিকে গাড়ি নিয়ে হর্ন বাজাতে হবে। তারপর ডান হাত বের করে অল্প একটু নিচু করতে হবে।

সিগন্যাল- ২ আমি ডানে ঘোরাবো :

যদি গাড়ি চালাতে চালাতে চালক গাড়িকে ডানদিকে ঘুরিয়ে নিতে চায়, তাহলে তাকে ডান হাত সোজা বাহিরে করে প্রসারিত করতে হবে। এর অর্থ চালক সোজা না গিয়ে এবার ঘোরে ডান দিকের পথ দিয়ে যাবে।

সিগন্যাল- ৩ আমি বামে ঘুরাবো :

যদি চালক গাড়ি বাঁ দিকে ঘুরাতে চান, তাহলে গাড়িকে মোড়ের মাথায় বাঁ দিকে ঘেঁষে থামাতে হবে । তারপর ডান হাত বের করে হাতটা গোলভাবে ঘুরাতে হবে । তাহলেই পিছনের গাড়ি বা পুলিশে বুঝাবে যে, গাড়িটা বাঁ দিকে ঘুরবে । চালকের পাশে অন্য লোক, সে বাঁ দিক দিয়ে হাত বের করেও সংকেত দিতে পারে।

সিগন্যাল- ৪ আমাকে ওভারটের করতে পারেন :

যদি পিছনের অন্য গাড়ি আপনার গাড়িকে ওভারটেক করার জন্য ঘন ঘন হর্ন দিতে থাকে, তাহলে তাকে ওভারটেক করার নির্দেশ দেবেন। এর সংকেত হলো, ডান হাত বের করে হাতের কব্জি নিচের দিকে দিয়ে তা পিছনে ও সামনে দোলাতে হবে। তাহলে পিছনের চালক তখন ওভারটেক করবে। রাতের বেলা হাতের সিগন্যাল দেখা যায় না বলে গাড়ির পিছনের ব্যাক লাইট দ্বারা সিগন্যাল দেয়া হয়ে থাকে। সাধারণত লাইট দ্বারা তিনটি সিগন্যাল করা হয়ে থাকে ।

 

 

মাটরযান রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্তির পদ্ধতি

মোটরযান আমদানি কারক/ প্রস্তুত কারক অথবা এজেন্টদের কাছ থেকে নতুন গাড়ি কেনার পর উক্ত মোটরযানকে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য বি আর টি এ থেকে নির্ধারিত ফরম (এইচ-ফরম) নিয়ে যথাযথ পূরণ করে এবং সাথে নিম্নলিখিত কাগজপত্র ও জিনিস সহকারে আবেদন করতে হবে ।

১। বিল অফ এন্ট্রি (Bill of Entry )

২। বিল অফ ল্যাডিং (Bill of Lading )

৩। ইনভয়েস (Invoice )

৪। এল সি পেপার (LC Paper )

৫ । ক্যাশ মেমো (Cash Memo )

৬। সেল রিসিট (Sale Receipt)

৭। স্ট্যাম্প সাইজের দুই কপি ছবি

৮ । গাড়ি রেজিস্ট্রেশনের জন্য নির্ধারিত ফি

এক বছরের ট্যাক্স ও ফিটনেস ইত্যাদি পরিশোধ করতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, ড্রাইভার সহ ৯সিট পর্যন্ত অবাণিজ্যিক গাড়ির জন্য প্রস্তুতের বছর হতে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য ফিটনেস ফি প্রয়োজন হয় না । আর যদি ব্যক্তিগত উদ্যোগে কেউ নতুন গাড়ি আমদানি করে থাকে এবং সে গাড়ির ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশনের জন্য উপরোক্ত কাগজপত্র ছাড়াও আরও দুই ধরনের কাগজপত্র অতিরিক্ত দিতে হবে । কাগজগুলো হচ্ছে-

১। টি টি ও (T.TO) ফরম পূরণ করে সাথে দিতে হবে।

২। টি ও (TO) ফরম পূরণ করে সাথে জমা দিতে হবে ।

উপরোক্ত কাগজপত্রসহ আবেদন করার পর উক্ত গাড়িকে পরিদর্শনের জন্য বিআরটিএ এর ভেহিক্যাল ইন্সপেক্টরের সামনে উপস্থিত করতে হবে। প্রয়োজনীয় পরিদর্শন ও অফিসের কার্যক্রম সম্পাদনের পর গাড়ি রেজিস্ট্রেশন নম্বর পাওয়া যাবে । এই নম্বর সম্বলিত লাইসেন্সকে ব্লু-বুক ও বলে ।

অস্থায়ী রেজিস্ট্রেশন এর উদ্দেশ্য:

মোটরযান মালিক নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ সমীপে নির্ধারিত পন্থায় তার মোটরযান অস্থায়ী রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট ও রেজিস্ট্রেশন চিহ্ন প্রদানের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই রেজিস্ট্রেশন মাত্র এক মাস মেয়াদের জন্য বৈধ থাকবে এবং তা নবায়ন যোগ্য হবে না ।

তবে শর্ত থাকে যে, যেক্ষেত্রে রেজিস্ট্রিকৃত মোটরযান এমন একটি চেসিস, যার সাথে বডি সংযুক্ত হয়নি, এবং যা বডি সংযুক্ত করার জন্য এক মাসের অধিককাল যাবত কারখানায় আটক আছে, সেক্ষেত্রে আটক আছে, সেক্ষেত্রে নির্ধারিত ফিস প্রদান করা হলে, উক্ত রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ এমন পরিমাণে বর্ধিত করা যাবে যাতে অস্থায়ী রেজিস্ট্রেশন মোট মেয়াদ কোনো ক্রমেই চার মাসের অধিক না হয়।

ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়ন

ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির নিয়মাবলি ও যোগ্যতা : বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে। বি আর টি এ- এর নিয়ম অনুযায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য নিম্নে উল্লেখিত যোগ্যতা থাকতে হবে :

১। পেশাদার ড্রাইভারের জন্য বয়স কমপক্ষে ২০ বছর হতে হবে। অপেশাদার ড্রাইভারের জন্য বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে ।

২। শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি হতে হবে ।

৩। শারীরিক ও মানসিক ফিটনেস থাকতে হবে ।

উপরোক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন যে কোনো ব্যক্তি বিআরটিএ নির্ধারিত ফরমে প্রথমে লর্নোর (Larner) লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে এবং উক্ত ফরমের সাথে নিম্নলিখিত দলিলপত্র দিতে হবে।

১। রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত ডাক্তার কর্তৃক তার নির্ধারিত ফরমে শারীরিক ও মানসিক যোগ্যতার সার্টিফিকেট ও একই সাথে উক্ত ডাক্তার কর্তৃক ছবি সত্যায়িত করে উক্ত মেডিক্যাল ফিটনেস ফরমে লাগাতে হবে ।

২। ব্লাড গ্রুপের সার্টিফিকেট বা ল্যাবরেটরি রিপোর্টের সত্যায়িত কপি ।

৩। ৫/৬ কপি পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি ।

৪। নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে।

লারনার লাইসেন্স পাওয়ার পর উক্ত লাইসেন্সের উপর লিখিত পরীক্ষার তারিখ দেয়া থাকে। উক্ত পরীক্ষায় পাস করলে মৌখিক পরীক্ষার তারিখ দেয়া হবে। মৌখিক পরীক্ষায় পাস করার পর গাড়িতে

১ । জিগজ্যাগ (আঁকাবাকা) টেস্ট ।

২। র‍্যাম টেস্ট ও

৩। রোড টেস্ট দিয়ে পাস করলে মূল ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করা হয় ।

পেশাদার লাইসেন্সের ক্ষেত্রে লাইসেন্স গ্রহণের পূর্বে নিজ থানা থেকে পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট আসতে হবে । আর লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রথমে হালকা লাইসেন্স পাওয়া যাবে। তার তিন বছর পর মাঝারি লাইসেন্স পরীক্ষার মাধ্যমে পাওয়া যাবে। তার তিন বছর পর পরীক্ষার মাধ্যমে ভারি লাইসেন্স পাওয়া যাবে। কোনো অবস্থাতে সরাসরি মাঝারি বা ভারি লাইসেন্স পাওয়া যাবে না।

 

 

প্রশ্নমালা ২৯

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর :

১। ড্রাইভিং কলাকৌশলের বর্ণনা কর ।

২। রোড সিগন্যাল বলতে কী বুঝায়? সেগুলো কত প্রকার ও কী

৩। ট্রাফিক পুলিশ কর্তৃক প্রদর্শিত সিগন্যালসমূহ লেখ।

৪ । গাড়ি রেজিস্ট্রেশন বা ব্লু বুক কী?

৫। গাড়ি রেজিস্ট্রেশনের উদ্দেশ্যসমূহ লেখ ।

৬। মোটরযান রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্তির পদ্ধতিসমূহ কি কি ?

 

ড্রাইভিং ও বিআরটিএ আইন

 

‘অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

১। রোড সিগন্যাল কী?

২। রোড সিগন্যাল কত প্রকার ও কি কি?

৩। রোড সিগন্যালের বাতির রংগুলোর নাম লেখ ?

৪ । লাল ও হলুদ বাতি নিভে গলে কী বুঝাতে হবে ।

৫। BRTA এর পূর্ণ নাম লেখ ।

রচনামূলক প্রশ্নোত্তর :

১ । ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহণও নবায়ন পদ্ধতি উল্লেখ কর ।

২। ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন পদ্ধতিগুলো লেখ ।

৩। গাড়ি রেজিস্ট্রেশন পরীক্ষন পদ্ধতিগুলো নিম্নরূপ ।

আরও দেখুন :

 

Leave a Comment