আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ইঞ্জিন চলাকালীন সম্ভাব্য দোষ-ত্রুটি
ইঞ্জিন চলাকালীন সম্ভাব্য দোষ-ত্রুটি
ইঞ্জিন চলার সময় বিঘ্নতার সম্ভাক্ষ্য কারণ ও প্রতিকার (Possible causes of troubled and remedies during the running the engine):
– ইঞ্জিন চলার সময় নানা ধরণের বিঘ্নতা দেখা দিতে পারে। এর জন্য পূর্ব নির্ধারিত কোনো সুনির্দিষ্ট তালিকা প্রণয়ন যেমনি সম্ভব নয়, ঠিক তেমনি যুক্তিসংগতও নয় । একখানা ইঞ্জিন বিভিন্ন সিস্টেমের উপর নির্ভর করে কাজ করে, এ সকল সিস্টেমের যে কোনো যন্ত্রাংশে, যে কোনো সময়ে সমস্যা/বিঘ্নতা দেখা দিতে পারে ।
তবুও কিছু কিছু বিঘ্নতা বা সমস্যা পরিসংখ্যান অনুসারে সর্বাধিক হারে একটি ইঞ্জিন চলাকালে পরিলক্ষিত হয়। সাধারণত উদ্দেশ্যটিতে এ সকল সচরাচর ও সমস্যা তাদের উৎপত্তির কারণ ও সমাধান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে । নিম্নে এ সমস্যা /বিঘ্নতাসমূহের নাম উল্লেখ করা হলো :
১. ইঞ্জিন চলাকালীন সময়ে মাত্রাতিরিক্ত উত্তপ্ত হবে ।
২. ইঞ্জিনে মাত্রাতিরিক্ত ঝাঁকুনি পরিলক্ষিত হবে ।
৩. ইঞ্জিনে মাত্রাতিরিক্ত জ্বালানি খরচ হবে ।
৫. ইঞ্জিন চলাকালীন সময়ে অস্বাভাবিক আওয়াজ ইত্যাদি ।
উপরোক্ত পাঁচটি মৌলিক বিঘ্নতার কারণ ছাড়াও সিস্টেমওয়ারী নিম্নের বিঘ্নতাগুলো দেখা দিতে পারে । যেমন :-
– স্ট্যার্টিং সিস্টেমে বিঘ্নতা
– ইগনিশন/ ইনজেকশন সিস্টেমে বিঘ্নতা
– ফুয়েল সিস্টেমে গোলযোগ
– কম্প্রেশনজনিত গোলযোগ
– ইঞ্জিন টাইমিংজনিত গোলযোগ ইত্যাদি ।
এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, সিস্টেমজনিত গোলযোগগুলোর সম্ভাব্য ত্রুটির নাম, ত্রুটির কারণ ও তাদের সম্ভাব্য সমাধান স্ব স্ব সিস্টেমেই আলোচিত হয়েছে ।
ইঞ্জিনের ঝাঁকুনি পরিলক্ষিত হওয়ার কারণ ও প্রতিকার (Mention the causes of engine vibration)
ইঞ্জিনের ঝাঁকুনি পরিলক্ষিত হবের কারণসমূহ নিম্নে দেয়া হলো ।
– পুনঃ পুনঃ ঘটিত কম্বাশনজনিত চাপ এবং এ চাপের ক্র্যাংক শ্যাফটে টর্ক সরবরাহের জিয়াই নিয়মিত ইঞ্জিন ঝাঁকুনির একটি মুখ্য কারণ। যেহেতু ক্র্যাংক শ্যাফট এক দিকে ঘোরে এবং এ ঘূর্ণনের জন্য ইঞ্জিন বিভিন্ন দিকে সরে যেতে চায়। ফলে কম্পন সৃষ্টি হয় । এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ।
– স্বাভাবিক কার্যক্রমে গাড়ি ফ্রেম মাঝে মাঝে মোচড় খায়, এতেও ইঞ্জিনের কম্পন সৃষ্টি হয়। এর স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ।
চিত্র : অসিলিস্কোপ হতে প্রাপ্ত সি আই ও এস আই ইঞ্জিনের ডেটোসেশন জনিত ঝাঁকুনির থাফিক চিত্র
– ইঞ্জিনের দহন প্রক্রিয়া ডেটোনেশন বা অটো ইগনেশন সংঘটিত হলে ইঞ্জিনে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঝাঁকুনি উৎপন্ন হবে। সিজাই ইঞ্জিনে ডেটোনেশন দহন প্রক্রিয়ার প্রথমে উৎপন্ন হয়, অথচ এস আই ইঞ্জিনের ডেটোনেশন জনিত কম্পন সর্বাধিক চাপে পৌঁছার পরই আরম্ভ হয়। এসআই ইঞ্জিনের ডেটোনেশনজনিত কারণে ঝাঁকুনি বেশি
উৎপন্ন হয় যা গ্রাফিক চিত্রে দেখানো হলো।
– ইঞ্জিনে মেইন বিয়ারিং কানেকটিং রডের ছোট প্রান্তের বিয়ারিং, গজন পিন, থ্রাস্ট বিয়ারিং ইত্যাদি চলমান ও গতিশীল যন্ত্রাংশ ঢিলা হলে ইঞ্জিনের ঝাঁকুনি বৃদ্ধি পাবে ।
– ইঞ্জিনে ব্যবহৃত ভাইব্রেশন ডেম্পার ও কাউন্টার ওয়েট যদি তাদের কার্যকারিতা হারায়, তা হলেও ঝাঁকুনি বৃদ্ধি পাবে ।
– ইঞ্জিনের মাউন্টিং প্যাড যদি নষ্ট হয়ে পড়ে বা যদি এ জাতীয় প্যাডগুলো তাদের নমনীয়তা হারায়, তা হলেও ইঞ্জিনের ঝাঁকুনি বৃদ্ধি পাবে।
– গাড়ির ক্ষেত্রে তা অটোমোটিভ যানবাহনের ক্ষেত্রে যদি সাসপেনশন সিস্টেম তার কার্যকারিতা হারায় অর্থাৎ লিপ/কয়েল স্প্রিং ও শঅ্যাবজরবার যদি তাদের কার্যকারিতা হারায় তা হলেও পরোক্ষভাবে ইঞ্জিনের ঝাঁকুনি বৃদ্ধি পাবে ।
প্রতিকার : ইঞ্জিনের মাত্রাতিরিক্ত ঝাঁকুনি যেমন ইঞ্জিনের ক্ষতি করে, অপর পক্ষে গাড়ির ক্ষেত্রে যাত্রীগণের জন্য কষ্টদায়ক একটি কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং উল্লেখিত যে সকল অকেজো যন্ত্রাংশ ব্যবহারজনিত কারণে বা সার্ভিসিংয়ের অভাবে ঝাঁকুনি উৎপন্ন হয়, সে সকল যন্ত্রাংশ মেরামত/পরিবর্তন ও সময়মতো সার্ভিসিং করে ইঞ্জিনের এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঝাঁকুনি কমানো সম্ভব।
মাত্রাতিরিক্ত জ্বালানি খরচের লক্ষণ ও কারণগুলোর ব্যাখ্যা (Causes of excessive fuel consumption and their explanation)
১। ফুয়েল মাইলমিটার/কিলোমিটারের হিসেব ধরে কত মাইল বা কিলোমিটার চলতে কত লিটার জ্বালানি খরচ হচ্ছে তা নির্ণয় করা যায় । তবে এ হিসেব কয়েক দিনের, বিভিন্ন রোডে চলার গড় হিসাব ধরতে হবে । প্রস্তুতকারকগণের নির্ধারিত হিসাব হতে বেশি জ্বালানি খরচ হলে গাড়ির ক্ষেত্রে সহজেই এ অতিরিক্ত খরচের পরিমাণ নির্ণয় করা যায় ।
প্রতিকার : আবার স্টেশনারি ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে প্রতি ঘন্টার জ্বালানি খরচের হিসেব প্রস্তুতকারকগণ নির্দিষ্ট করে দিতে থাকেন । এর ক্ষেত্রে বেশি জ্বালানি প্রতি ঘণ্টায় খরচ হলে সহজেই অতিরিক্ত জ্বালানি খরচের পরিমাণ নির্ণয় করা যায় ।
২। ইঞ্জিনের কম্প্রেশন ও ভেকুয়ামের পরিমাণ টেস্টকরণের জন্য কম্প্রেশন ও ভেকুয়াম টেস্টিং গেজ রয়েছে। যদি এ টেস্টদ্বয়ের মাধ্যমে লো-কম্প্রেশন ও লো-ভেকুয়াম পাওয়া যায়, তাহলে নিশ্চিত হতে হবে যে, সিলিন্ডার হতে কম্প্রেশন লিক করছে এবং ভেকুয়াম সৃষ্টির ক্ষেত্রে বাহিরের বাতাস ভিতরে আসছে।
প্রতিকার : এ সকল পরিস্থিতিতে অবশ্যই জ্বালানি খরচের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। এ সকল পরিস্থিতিতে লিকের ক্ষেত্রসমূহ ত্রুটিমুক্তকরণ অত্যাবশ্যক ।
৩। সঠিক হিট রেঞ্জের এক সেট স্পার্ক প্লাগ ব্যবহার করে ১৫-২০ মিঃ ইঞ্জিন পরিচালনার পর প্রাগগুলো খুলে তাদের টার্মিনালে কার্বন জমার পরিমাণ নিরীক্ষণ করতে হবে। এমতাবস্থায় যদি কার্বন জমার চিহ্ন পাওয়া যায়, তাহলে মনে করতে হবে অপর্যাপ্ত দহন ক্রিয়াজনিত কারণে জ্বালানি খরচ বাড়ছে।
প্রতিকার : এক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত দহনক্রিয়ার কারণসমূহ শনাক্ত করে তা সংশোধন করা দরকার ।
৪। কালো ধোঁয়া, কাঁচা তেলের গন্ধ ইত্যাদি কারণ, মাত্রাতিরিক্ত রীচ মিক্সারের তৈরির লক্ষণ নির্দেশ করে। অপ্রয়োজনে মাত্রাতিরিক্ত রীচ-মিক্সার সরবরাহ অতিরিক্ত জ্বালানি খরচের কারণ চিহ্নিত করে তা সংশোধন অত্যাবশ্যক ।
ইঞ্জিন চলাকালীন অস্বাভাবিক আওরানের কারণ (Causes of abnormal knock during the engine running):
অস্বাভাবিক ও নিয়মিত টিক্টিক্ শব্দ (Regular and abnormal clicking noise) :
অতিরিক্ত টেপেট ক্লিয়ারেন্স/ত্রুটিপূর্ণ হাইড্রোলিক লিফটারের কার্যকারিতা এ জাতীয় টিটিক্ শব্দের মুখ্য কারণ হতে পারে। ইঞ্জিনের গতি বাড়লে এ টিটিক্ শব্দের হারও বাড়বে আবার টেপেট ক্লিয়ারেন্স ফিলার পেজ স্থাপন করে পরিচালনা করলে শব্দ কমবে।
এ ছাড়াও দুর্বল স্প্রিং ক্ষয়িত ভালভ লিফটার, অসম ক্যাম ইত্যাদি কারণেও এ শব্দ হতে পারে । অ্যাডজাস্টমেন্টসহ অকেজো ও ক্ষয়প্রাপ্ত যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করে এ জাতীয় অস্বাভাবিক শব্দ রহিত করা সম্ভব।
শিং/মক ( Pning / knock) :
অটোইগনেশন ও ভেটোনেশন জনিত কারণে যে অস্বাভিক দহন ক্রিয়া সৃষ্টি হয়, তখন এ জাতীর পিং বা নক জাতীয় শব্দের সৃষ্টি হয়।
এ জাতীর শব্দের সাথে ইঞ্জিনের ঝাঁকুনিও বৃদ্ধি পায় । এ ছাড়াও উঁচুতে উঠতে এ জাতীয় শব্দ বৃদ্ধি পায় । নিম্নমানের ফুয়েল, মাত্রাতিরিক্ত কার্বন জমা এবং মাত্রাতিরিক্ত অ্যাডডাল টাইমিং এর মূল কারণ হতে পারে ।
যথার্থ ফুয়েলের ব্যবহার, ডিকার্বনাইজিং ও টাইমিং যথার্থ অ্যাডভান্সে সেটকরণ এ জাতীয় সিং/নক পরিমিত পর্যারে রাখা সম্ভব। আজকাল এ মঞ্চের পরিমাণ, পরিমিত পর্যার রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা নিরীক্ষাকরণের জন্য চিত্রের ন্যায় নক পরিমাপের মিটার রয়েছে ।
চিত্র : ইঞ্জিনের অস্বাভাবিক নক পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত নক মিটার।
হালকা খট খট শব্দ (Light knock ) :
চিলা কানেকটিং রঙের জন্য এ জাতীয় শব্দ হতে পারে। যেমন গজন পিনের মাত্রাতিরিক্ত ক্ষর, বিপ-ইভ- বিয়ারিং টিলা/ক্ষয়, কানেকটিং রড মিস অ্যালাইড ও লুব্রিকেন্টের স্বল্পতাজনিত কারণে এ শব্দ হতে পারে। ত্রুটিযুক্ত যন্ত্রাংশের পরিবর্তন এ শব্দ রহিত করতে পারে।
জোড়ায় জোড়ার ধাতব শব্দ (Light metallic double knock) :
মাত্রাতিরিক্ত ক্ষয়প্রাপ্ত গতিশীল ও চলমান যন্ত্রাংশ, লুব্রিকেশনের স্বল্পতা বা স্থায়িত্বে অভাবে এ জাতীয় শব্দের উৎপত্তি হয়। আইডেলিংয়ে চলার সময় এ জাতীয় শব্দের স্পষ্টতা বেশি শোনা যার। এক্ষেত্রে ইঞ্জিন সার্ভিসিং ওভারহলিংই একমাত্র সমাধান ।
অ্যাকসিলারেশনে কিচিরমিচির শব্দ (Chattering / Rattling during acceleration) :
ক্ষরপ্রাপ্ত রিং, সিলিন্ডার ওরাল, কম টেনসনের রিং, ভাঙা রিং এ ধরনের শব্দ উৎপত্তির কারণ। ইঞ্জিন অ্যাকসিলারেশন করলে সাধারণত এ ধরনের শব্দের সৃষ্টি হয় এবং ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে । এমতাবস্থায় ত্রুটিযুক্ত যন্ত্রাংশসমূহের পরিবর্তন এ জাতীয় শব্দ উৎপত্তি রহিত করতে পারে।
ভিজা হাতে তালি দেওয়ার ন্যায় ফাঁকা শব্দ (Hollow muffled bell like sound) :
এটা পিস্টন স্লাপ জনিত শব্দ । ক্ষয়প্রাপ্ত পিস্টন ও ওয়ালের জন্য সিলিন্ডারের ভিতর পিস্টন অগ্র-পশ্চাৎ দোল খাওয়া। ইঞ্জিন ঠাণ্ডাবস্থায় এ শব্দ গ্রহণযোগ্য হলেও ইঞ্জিন ওয়ার্কিং তাপমাত্রায় আসার পরও এ শব্দ থাকলে তা ক্ষতিকর। রোরিং হুনিং প্রক্রিয়া শেষে ওভার সাইজের পিস্টন ও রিংয়ের ব্যবহার একে রহিত করতে পারে ।
প্রশ্নমালা- ২১
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। রেডিয়েটরে কূলেন্টের মাত্রা কম হলে কী হবে?
২। ইঞ্জিনে কম্পন কিভাবে সৃষ্টি হয়?
৩। সিআই ইঞ্জিনে ডেটোনেশন কিভাবে সৃষ্টি হয়?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। ইঞ্জিন চলার সময় বিঘ্নতার কারণসমূহ লেখ ।
২। ইঞ্জিনে ঝাঁকুনি পরিলক্ষিত হবার কারণ ও প্রতিকার লেখ ।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। ইঞ্জিন মাত্রাতিরিক্ত গরম হবার কারণসমূহ লেখ।
২। ইঞ্জিন চলাকালীন অস্বাভাবিক শব্দের কারণ ও প্রতিকার লেখ ।
৩। নতুন বা পুরাতন গাড়ি চালালে ছোট ছোট কারণগুলো লেখ ।
৪ । ইঞ্জিনে মাত্রাতিরিক্ত জ্বালানি খরচের কারণ ও প্রতিকার লেখ ।
৫। পিস্টন ও পিস্টন রিং-এ অতিরিক্ত লুব অয়েল খরচ হয় এর কারণ ও প্রতিকার লেখ।
৬ । বিয়ারিং ও ভাল্ভ সাইজের কারণ অতিরিক্ত লুব অয়েল খরচ হয় এর কারণ ও প্রতিকার লেখ।
৭। সিলিন্ডার ও ক্র্যাংককেইসে অতিরিক্ত লুব অয়েল খরচ হয় এর কারণ ও প্রতিকার লেখ ।
আরও দেখুন :