আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ব্রেক সিস্টেমের মৌলিক নীতি
ব্রেক সিস্টেমের মৌলিক নীতি
প্যাসকেলের সূত্র
কোন প্রবাহী ভর্তি পাত্রে যে চাপ অর্পিত হয় তা ঐ পাত্রের সর্বস্তরে সমভাবে বণ্টিত হয় এবং প্রত্যেক স্থানে একই চাপ পাওয়া যায়। এ অর্থের উপর ভিত্তি করে সিলিন্ডারের এক প্রান্তে প্রতি ইউনিট এলাকাতে একই চাপ পাওরা যায়।
অর্থাৎ সিলিন্ডার যদি ১ বর্গ সেঃ মিটার হয় এবং র্যাম যদি ১০ বর্গ সেঃ মিটার হয় তা হলে সিলিন্ডারের উপর যদি এক কেজি নিম্নমুখী চাপ প্রয়োগ করা হয়, তাহলে র্যাম ১০ কেজি উর্ধ্বমুখী চাপ পাওয়া যায়। আবার সিলিন্ডার এলাকার পিস্টন যখন ১০ সেঃ মিটার নিচে যায়, তখন র্যাম মাত্র ১ সেঃ মিটার উপরে ওঠে।
প্রবাহীর মাধ্যমে শক্তির হারকে এ প্রক্রিয়ার বৃদ্ধি করা প্যাচকেনের সূত্র অনুযায়ী হয়ে থাকে। প্যাসকলের সূত্র : কোন আবদ্ধ তরল বা বায়বীয় পদার্থের উপর চাপ প্রয়োগ করলে সেইচাপ কোন অংশে না কমে পাত্রের সব জায়গায় সমভাবে বঞ্চিত হয়।
চিত্র :প্যাসকেলের সুত্র
হাইড্রলিক ব্রেক সিস্টেমে প্যাচকেলের সূত্রটির কাজ
তরল পদার্থ দ্বারা চালিত ব্রেকে (হাইড্রোলিক ব্রেক-সিস্টেম) প্যাচকেলের সূত্র অনুসরণ করা হইয়াছে। যখন ব্রেক প্যাডেলকে চাপা হয়, মাস্টার সিলিন্ডার হতে তরল পদার্থ সমপরিমাণে ব্রেক ড্রামের অভ্যন্তরস্থ ডিস্ক প্লেটে অবস্থিত হুইল সিলিন্ডারে প্রবেশ করে এবং পিস্টন ও বাকেটকে সম্প্রসারিত করে ব্রেক-স্যু দুটিকে স্প্রিংয়ের বিপরীত দিকে ঘূর্ণায়মান ব্রেক ড্রামের দিকে আগাইয়া দেয়। ব্রেক-স্যু দুইটি ঘর্ষণের ফলে ব্রেক ড্রামকে আটকিয়ে ধরে এবং এতে গাড়ির ব্রেক হয় ।
আবার ব্রেক প্যাডেলকে ছেড়ে দিলে ফ্লুইড পাইপ যারা মাস্টার সিলিন্ডারের দিকে ফেরত আসার ফলে হুইল সিলিন্ডারের অভ্যন্তরীণ চাপ স্প্রিংরের টেনশন হইতে কম হবের স্প্রিংয়ের যারা ব্রেক-ও দুইট আগেকার স্থানে ফেরত আসে, এতে ব্রেক ড্রাম হইতে ব্রেক ও যুক্ত হয়।
গাড়িতে ব্রেক সিস্টেমের প্রয়োজনিয়তা
১. গাড়ীকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য যে কয়টি পদ্ধতি রয়েছে তন্মধ্যে ব্রেক-সিস্টেম একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেম। প্রত্যেকটি গাড়িতে এ গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক-সিস্টেমের সংযোগ থাকে ।
২. ইঞ্জিনের উৎপন্ন শক্তি পাওয়ার ট্রেনের ইউনিটসমূহের মাধ্যমে গাড়ির চাকাতে সরবরাহ হয়ে থাকে । ঢাকার আবর্তনের ফলে রাস্তার সহিত এদের সংঘর্ষ ঘটে। এ সংঘর্ষজনিত উৎপন্ন শক্তিতে পাড়ি অর্থ পশ্চাৎ চলতে সক্ষম হয় । গাড়ির এ গতিশীলতা নিয়ন্ত্রণ করা গাড়ির জন্য তখন অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে। আর এ ব্রেক-সিস্টেমের উল্লেখযোগ্য প্রয়োজনসমূহ হলো :
- চলন্ত গাড়ির গতি কমানো/নিয়ন্ত্রণ করা।
- চলন্ত গাড়িকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রেখে থামানো ।
- চলন্ত অবস্থায় গাড়ি যেন গড়িয়ে না যায়, তা হতে পাড়িকে রক্ষা করে।
- চলন্ত অবস্থার গতি কমিয়ে অপর গাড়িকে সাইড দেওয়া ।
- প্রয়োজনে গাড়ির গতি কমানোর জন্য ব্রেক করা।
- দূর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিলে, তাৎক্ষনাৎ ব্রেক করে গাড়ি ও যাত্রীকে রক্ষা করা ।
- রাস্তার প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে চলতে সাহায্য করা ইত্যাদি ।
ব্রেক সিস্টেমের প্রকারভেদ
গাড়িতে ব্যবহৃত ব্রেক সিস্টেমের প্রকারভেদসমূহ নিম্নে প্রদান করা হলো। কার্যনীতির উপর ভিত্তি করে ব্রেক সিস্টেমকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকলেও এগুলোর বিভিন্ন সরঞ্জাম ও সংযোগের ভিন্নতার উপর ভিত্তি করে প্রত্যেক প্রকার আবার কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। নিম্নে ব্রেক-সিস্টেমের প্রকারভেদ সমূহ উল্লেখ করা হলো:
যান্ত্রিক/মেকানিক্যাল/পার্কিং ব্রেক সিস্টেম:
ক) হস্তচালিত পার্কিং ব্রেক
-একখন্ড তার ও ইকুলাইজার টাইপ,
-সু খন্ড তার ও ঙ্ক অ্যাডজাষ্টিং টাইপ,
খ) পদ চালিত পার্কিং ব্রেক ইত্যাদি ।
হাইড্রলিক ব্রেক সিস্টেম :
ক) একক লাইন যুক্ত হাইড্রলিক ব্রেক
গ) দ্বৈত-লাইন যুক্ত হাইড্রলিক ব্রেক
গ) ড্রাম টাইপ হাইড্রলিক ব্রেক
ঘ) ডিল্ক টাইপ হাইড্রলিক ব্ৰেক
ঙ) গ্রাম ও ভিক্স যৌথ সমন্বয় হাইড্রলিক ব্রেক ইত্যাদি ।
পাওয়ার ব্রেক :
ক) সার্ভো-অ্যাসেসটেন্ডা টাইপ পাওয়ার-ব্রেক
খ) বোস্টার টাইপ পাওয়ার-ব্রেক ইত্যাদি ।
এয়ার ব্রেক :
ক) একক লাইন যুক্ত এয়ার ব্রেক
খ) দ্বৈত লাইন যুক্ত এয়ার ব্রেক,
গ) তিনটি লাইন যুক্ত এয়ার ব্রেক ইত্যাদি ।
চিত্র : পদচালিত ব্রেকসহ গাড়ি
প্রশ্নমালা-১০
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. ব্রেক পদ্ধতি কি?
২. মূল ব্রেক কোনটি?
৩. মোটরযানের ব্রেক-সিস্টেম কত প্রকার?
৪. পাওয়ার ব্রেক পদ্ধতি কত প্রকার ও কি কি ? ৫. হাইড্রলিক ব্রেক পদ্ধতি বলতে কী বোঝায়?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. গাড়ির ব্রেক-সিস্টেমের প্রয়োজনীয়তা লেখ।
২. প্যাসকেলের সূত্রটি বিবৃত কর ।
৩. হাইড্রলিক ব্রেক কত প্রকার ও কি কি ?
৪. এয়ার ব্রেক কত প্রকার ও কি কি?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. গাড়ির ব্রেক সিস্টেমের প্রকারভেদের নামসমূহ লেখ।
২. হাইড্রলিক ব্রেক সিস্টেমে প্যাচকেলের সূত্রটির কাজ উল্লেখ কর ।
৩. গাড়িতে ব্রেক সিস্টেমের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর ।
আরও দেখুন :