সিলিণ্ডার রিকন্ডিশনিং

সিলিণ্ডার রিকন্ডিশনিং – এই পাঠটি “অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং” বিষয়ের “ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ, কারণ ও প্রতিকার” অধ্যায়ের একটি পাঠ।

সিলিণ্ডার রিকন্ডিশনিং

 

সিলিণ্ডার রিকন্ডিশনিং | ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ, কারণ ও প্রতিকার | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

ইঞ্জিনের সিলিন্ডার বিভিন্ন কারণে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। নিম্নে এর বিবরণ দেওয়া হলো : (ক) বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেখা গেছে যে, নতুন ইঞ্জিনের প্রথম ৫ হতে ১০ হাজার মাইল চলার পর সিলিন্ডার বেশী ক্ষয় হয়। কারণ নতুন অবস্থায় পিস্টন রিং এবং রিং-এর খাঁজের (groove) মধ্যে এবং সিলিন্ডারের সাথে খুব বেশী রিজ (ridge) থাকার জন্যই ঐরূপ হয়। রিজ যখন মুক্ত হয়ে যায় তখন সিলিন্ডারের ক্ষয়ের পরিমাণ কমে যায়। একটি ইঞ্জিন কি পরিমাণে ক্ষয় হয় তা নিম্নে দেওয়া হলো।

(খ) প্রায় সব সময়ই দেখা যায় যে, সকল সিলিন্ডারের ক্ষয়িষ্ণুতা একই রকম থাকে না। এটি বিভিন্ন কারণে হয়। যেমন : (১) বিভিন্ন সিলিন্ডারের তাপমাত্রা বিভিন্ন রকম হয় শীতলীকরণ প্রক্রিয়ার ত্রুটির জন্য। (২) সকল সিলিন্ডারে সমভাবে লুবরিকেশন না হওয়ার দরুন। (৩) ইনটেক মেনিফোল্ডের ডিজাইনই এমন যে, এখান থেকে সব সিলিন্ডারে সমভাবে এয়ার ফুয়েল মিশ্রণ প্রবেশ করে না।

ফলে সিলিন্ডারের চাপ ও তাপমাত্রা বিভিন্ন রকম হয়। এজন্য ক্ষয়ের পরিমাণও বিভিন্ন রকম হয়। নিম্নে একটি ক্ষয়প্রাপ্ত সিলিন্ডারের অবস্থা দেখানো হলো। এখানে দেখা যাচ্ছে দুই প্রান্তের দুইটি সিলিন্ডারের ক্ষয়িষ্ণুতা কম এবং মাঝের দুইটির ক্ষয়িষ্ণুতা সমান। 

 

সিলিণ্ডার রিকন্ডিশনিং | ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ, কারণ ও প্রতিকার | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

(গ) একটি সিলিন্ডারের বিভিন্ন অংশ বিভিন্নভাবে ক্ষয় হয়। পিস্টনের টি.ডি.সি. অবস্থানে সিলিন্ডার সব থেকে বেশি ক্ষয় হয়। কারণ ঐ স্থানে প্রজ্বলন সংগঠিত হয় এবং ধাক্কা বা ঝাঁকুনিও বেশী হয়। সিলিন্ডারের মধ্যভাগে ১/৩ অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং বি.ডি.সি-তে ১/৫ অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় । 

(ঘ) ইঞ্জিন চালানোর পর তাড়াতাড়ি উত্তপ্ত না হলে দহন প্রকোষ্ঠে এক প্রকার বিশেষ ক্ষতিকারক অ্যাসিড উৎপন্ন হয়। এই অ্যাসিড সিলিন্ডার ওয়ালকে দ্রুত ক্ষয় করতে সাহায্য করে। সেজন্য ইঞ্জিন চালানোর পরপরই একটু বেশী দ্রুতি (speed) রাখতে হয় যাতে ইঞ্জিন দ্রুত গরম হতে পারে এবং লুবরিকেশন ভালভাবে হতে পারে।

এখানে একটি কথা বিশেষভাবে মনে রাখা দরকার যে, বর্তমানে প্রায় সকল গাড়ীতে সিলিন্ডার লাইনার ব্যবহার করা হয়। লাইনারকে স্লিপও বলা হয়। সিলিন্ডারে লাইনার থাকলে সুবিধা এই যে, ক্ষয়প্রাপ্ত হলে লাইনার পরিবর্তন করে পুনরায় নতুন লাইনার বসানোযায়। এর ফলে মূল সিলিন্ডারটির আয়ুষ্কাল বহু গুণে বৃদ্ধি পায়, এমনকি মূল সিলিন্ডারটি মোটেই নষ্ট হয় না ।

সিলিন্ডার লাইনার সাধারণত দুই প্রকার। যেমন (ক) ভিজা লাইনার এবং (খ) শুষ্ক লাইনার। যে লাইনারের চারদিকে পানি থাকে তাকে ভিজা লাইনার বলে। ভিজা লাইনারের নীচে বাইরের দিকে একটি রাবার রিং থাকে, ফলে পানি ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না। কিন্তু শুষ্ক লাইনারে কোন রিং থাকে না।

 

সিলিণ্ডার রিকন্ডিশনিং | ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ, কারণ ও প্রতিকার | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

ক্ষয়প্রাপ্ত সিলিন্ডারের জন্য অস্থায়ী ব্যবস্থা : অনেক সময় সিলিন্ডার রিবোরিং না করে এবং পিস্টন পরিবর্তন না করে শুধুমাত্র পিস্টন রিং পরিবর্তন করে ইঞ্জিন আরও প্রায় ১০,০০০ মাইল পর্যন্ত চালানো যায়। সিলিন্ডার .০০৫ হতে .০০৭ পর্যন্ত ক্ষয়প্রাপ্ত হলে শুধু বিশেষ ধরনের বড় আকারের স্প্রিং, পিস্টন রিং ও অয়েল স্ক্রেপার রিং ব্যবহার করে চালানো যায়। এভাবে সিলিন্ডারের ব্রো-বাই এবং তেল বের হওয়া বন্ধ করা যায়। ইঞ্জিনের মেইন ও বিগ-এন্ড-বিয়ারিং এবং ক্র্যাঙ্কশ্যাফট ভাল থাকলে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। সব ইঞ্জিনের জন্য এই ব্যবস্থা নাও প্রযোজ্য হতে পারে। স্টীল পিস্টন রিং-এর মধ্যে একটি স্টীল স্প্রিং থাকে যা রিংগুলোকে সিলিন্ডারের সাথে যুক্ত থাকতে সহায়তা করে।

 

সিলিন্ডার রিবোরিং :

(Cylinder reboring) : পাঁচ প্রকার সিলিন্ডার রিবোরিং করা যায়। (ক) লেদ মেশিনের সাহায্যে, (খ) একপ্রকার বিশেষ মেশিন দ্বারা যা শুধুমাত্র রিবোরিং- এর কাজে লাগে, (গ) বোরিং মেশিনের সাহায্যে—এই মেশিন স্থানান্তর করা যায় এবং সিলিন্ডার ব্লকের সাথে আটকানো যায়, (ঘ) হোনিং মেশিন দ্বারা—এই মেশিন স্থায়ীভাবে বসানো থাকে অথবা স্থান পরিবর্তনযোগ্য। (ঙ) স্থায়ীভাবে বসানো অথবা পরিবর্তনযোগ্য রিসিং পদ্ধতির সাহায্যেও সিলিন্ডার রিবোরিং করা যায়। বোরিং বার মেশিন দ্বারা বোরিং করার নিয়ম : ১১.১২ চিত্রে একটি বোরিং মেশিনের গঠন ও কার্যক্রম দেখানো হয়েছে। এই মেশিনটি নিম্নলিখিত যন্ত্রাদি নিয়ে গঠিত।

 

সিলিণ্ডার রিকন্ডিশনিং | ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ, কারণ ও প্রতিকার | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

(ক) ১/২ হর্স পাওয়ার, ৩৪০০ আর.পি.এম. বৈদ্যুতিক মোটর, (খ) বোরিং বার ড্রাইভ শ্যাফট, (গ) র‍্যাক ও পিনিয়ন ফিড, (ঘ) গ্রাউন্ড কলাম, (ঙ) অটোমেটিক কন্ট্রোল, (চ) এ্যাঙ্কর ক্ল্যাম্প, (ছ) শূন্য অ্যাডজাসমেন্ট বিয়ারিং (জ) ক্যাটস পজ  সিলিন্ডার বোরিং বার দ্বারা কাজ করার পূর্বে নিম্নলিখিত বিষয়গুলির প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।

(ক) বোরিং বারটি সঠিকভাবে লাগানো আছে কিনা সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হয় । (খ) কাটিং টুল বিট ভাল আছে কিনা এবং ভাল ধার আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা উচিত। (গ) টুল বিট বা কাটার সহজে লাগানো যায় কিনা তা নিশ্চিত হওয়া দরকার। (ঘ) বোরিং বারটি যাতে সহজে চালানো যায় অর্থাৎ সিলিন্ডার যাতে ভালভাবে বোরিং করা যায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

(ঙ) বোরিং বারটি সিলিন্ডারের সাথে সঠিকভাবে সেন্টারিং করতে হবে যেন কাটারটি সিলিন্ডার ওয়ালের সাথে যথাযথভাবে স্পর্শ করে। (চ) সুবিধামত তিন চারটি কাটিং স্পীডে সিলিন্ডার বোরিং করা ভাল। তবে তাড়াতাড়ি এবং ভাল ফিনিশিং হওয়া বাঞ্ছনীয়। (ছ) বোরিং বারটি সিলিন্ডার ব্লকের সাথে যথাযথভাবে বাঁধতে হবে।

১১.১২ চিত্রে ভ্যান নরম্যান বোরিং মেশিনের গঠন দেখানো হয়েছে। এতে একটি মাত্র ট্যাংস্টেন কারবাইড কাটিং টুল ব্যবহার করা হয় যা স্ক্রু এবং নাট দিয়ে লাগাতে হয়। বোরিং বার এবং কাটার ভালভাবে সেন্টারিং করার জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থা আছে। এটি ক্যাটস পজ নামে অভিহিত। কাটার সমন্বয় ব্যবস্থা ১১.১৩ চিত্রে দেখানো হয়েছে ।

 

সিলিণ্ডার রিকন্ডিশনিং | ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ, কারণ ও প্রতিকার | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

মেশিন সেন্টারিং করার পর কম গতিতে চালিয়ে দেখতে হয় যে সিলিন্ডার ওয়ালের সাথে ভালভাবে স্পর্শ করেছে কিনা। স্পর্শ করলে ৩/৪টি কাটিং স্পীডে সিলিন্ডারটি বোরিং করতে হয়। প্রতিবার কাটিং-এর সময় .০০৭´ হতে ০.০১৫ এর বেশী কাটা উচিত নয়। চূড়ান্ত (final) কাটিং-এর সময় .০০১ হতে ০০৩” এর বেশী কাটা ঠিক নয়। যতটুকু সিলিন্ডার বোরিং করতে হবে তা থেকে ১/২ থাউ কম বোরিং করতে হয়।

কারণ বোরিং এবং ফিনিশিং-এর পর হোনিং ও ল্যাপিং করতে হয় এবং হোনিং ও ল্যাপিং করে ঐ ১/২ থাউ সরিয়ে ফেলা হয়। বোরিং মেশিন চলাকালীন সময় শীতলীকরণ পানি সরবরাহ করতে হয় যাতে কাটার ঠান্ডা হয় এবং ভালভাবে কাটতে পারে।

বোরিং মেশিন চলাকালে আরও লক্ষ্য রাখা দরকার যে কাটিং টুল-এর ধার ঠিক আছে কিনা। যদি ধার না থাকে তাহলে ভালভাবে ফিনিশিং হবে না। বোরিং মেশিন হাত দিয়ে চালানো (সিলিন্ডারের মধ্যে উঠা নামা করানো ) যায়। এটি স্বয়ংক্রিয় মেশিনেও চালানো যায়। হোনিং করার নিয়ম : ১১.১৪ চিত্রে একটি হোনিং মেশিনের গঠন ও যন্ত্রাংশ দেখান হয়েছে। বোরিং করার পর হোনিং করে সিলিন্ডার ওয়াল মসৃণ করতে হয়।

 

সিলিণ্ডার রিকন্ডিশনিং | ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ, কারণ ও প্রতিকার | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

 

হোনিং মেশিন বৈদ্যুতিক মোটরে চালানো যায়। হোনিং ইউনিটটি একটি বৈদ্যুতিক হ্যান্ড ডিলের সাথে বেঁধেও হোনিং করা যায়। এই ইউনিটে কয়েকটি হোনিং পাথর থাকে। হোনিং ইউনিটটি সিলিন্ডারের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে সুইচ অন করলে সাথে সাথে ঘুরতে থাকে। দুই এক মিনিট হোনিং করার পর দেখতে হয় ঠিকমত মসৃণ হয়েছে কিনা। এই প্রক্রিয়া সব সিলিন্ডারে প্রয়োগ করতে হয়। হোনিং স্টোন বিভিন্ন আকারের হয়। তবে সাধারণত ৩- –৭ ইঞ্চি হয়। এর বিভিন্ন স্তর আছে। যেমন— কর্কশ স্টোন, মসৃণ স্টোন ইত্যাদি।

সিলিন্ডার মসৃণকরণ : সিন্ডিারকে তিনভাবে মসৃণ করা যায়, যেমন (ক) ল্যাপিং (lapping), (খ) রোলিং (rolling) এবং (গ) সুপার ফাইনিং । ল্যাপিং হচ্ছে কারবুরেন্ডাম পাউডার লাগিয়ে হাত অথবা মেশিন দ্বারা পিস্টনকে সিলিন্ডারের মধ্যে প্রতি মিনিটে ১০০ হতে ৩০০ বার উঠানামা করানো। কারবুরেন্ডাম K-700-wp দ্বারা ল্যাপিং করলে সিলিন্ডার আয়নার মত মসৃণ হয়।

 

সিলিণ্ডার রিকন্ডিশনিং | ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ, কারণ ও প্রতিকার | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

(খ) এটি খুব শক্তভাবে পলিশ করা একটি রোলার যা সিলিন্ডারকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মসৃণ করে। একে সিলিন্ডার পলিশিং প্রক্রিয়াও বলা যায়।

(গ) সুপার ফাইনিং হচ্ছে হোনিং প্রক্রিয়ার একটি উন্নততর প্রক্রিয়া। এই হোনিং স্টোন খুবই উন্নত এবং অতীর- সূক্ষ্ম দ্বারা ঘর্ষণ করলে সিলিন্ডারগুলি অত্যন্ত মসৃণ হয় এবং আয়নার মত ঝকঝকে ও চকচকে হয় ।

 

পিস্টন রিং খোলা ও লাগানো :

১১.১৫ (ক ও খ) চিত্রে পিস্টন রিং খোলা ও লাগানোর পদ্ধতি দেখানো হয়েছে। পস্টন রিং খোলা এবং লাগানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। রিং 

 

সিলিণ্ডার রিকন্ডিশনিং | ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ, কারণ ও প্রতিকার | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

একটু বেশী প্রসারিত হলে ভেঙ্গে যায়। রিং খোলার জন্য রিং এক্সপান্ডার অথবা তিনটি ইস্পাতের পাত চিত্রানুসারে প্রয়োগ করে খোলা যায়। রিং-এর কাটা মুখে (ফাঁকা জায়গায়) রিং এক্সপান্ডার অথবা ইস্পাতের পাত ঢুকাতে হয়। একটি পাত ঢুকিয়ে রিং-এর ভিতরে সরিয়ে নিতে হয়, তারপর আরও দুইটি পাত রিং-এর মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে হয়। পাত তিনটি তিন স্থানে রাখতে হয়।

মতাবস্থায় রিং তার গর্ত হতে উঠে যায় এবং হাত দ্বারা উপরের দিকে টান দিলেই রিং পিস্টন হতে বের হয়ে আসে। এভাবে রিং ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। রিংটি লাগানোর জন্য প্রথমে অয়েল কম্প্রেশন রিংগুলি পিস্টনের উপর রেখে এর কাটা স্থানে ইস্পাতের পাতগুলি (তিনটি) একই প্রক্রিয়ায় পরিয়ে দিতে হয়। তারপর রিংগুলি চাপ দিলে নীচের দিকে যাবে এবং এর গর্ত বরাবর যাওয়া মাত্র

 

সিলিণ্ডার রিকন্ডিশনিং | ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ, কারণ ও প্রতিকার | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

পাতগুলি একটু উপরের দিকে টেনে নিলেই অয়েল রিংগুলি এদের জায়গায় বসে যাবে। এভাবেই রিংগুলি লাগানো হয়। সকল রিং লাগানো হলে, পিস্টন সিলিন্ডারে লাগানোর পূর্বে রিংগুলির মাথা একটি অপরটির বিপরীতমুখী করে দিতে হয়। তারপর রিং চাপানো যন্ত্র দিয়ে অথবা দুই তিনজন লোকে দুই তিনটি স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে চেপে ধরে ও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে রিংসহ পিস্টন সিলিন্ডারে ঢুকানো হয়। সকল সিলিন্ডার ও পিস্টনের জন্য এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।

ট্যাপেট সমন্বয় করার নিয়ম : ইঞ্জিন পুনঃসংযোগের পর ভাল্ভ টাইমিং করতে হয়। তারপর প্রাথমিকভাবে ট্যাপেট সমন্বয় করতে হয়। কয়েক ঘন্টা অথবা কিছু দিন চলার পর কম্প্রেশন স্ট্রোকে দুইটি ভাল্ভ যখন বন্ধ থাকে সেই সময় ভাল্ভ স্টেম বা রডের মাথায় এবং রকার আর্মের মধ্যে ফিলার গেজ দ্বারা ফাঁক নির্ণয় করা হয়। এই ফাঁক না থাকলে ভাল্ভসমূহ সব সময় খোলা থাকবে।

প্রয়োজনীয় চার্জ গ্রহণ ও বের করার জন্য এবং ভাল্ভসমূহকে এদের সিটে ভালভাবে বসানোর জন্য ট্যাপেট ক্লিয়ারেন্স রাখা একান্ত প্রয়োজন। ট্যাপেট জ্যাম থাকা অর্থই হলো ভাল্ভ খোলা। অনুরূপভাবে ট্যাপেট ফ্রি অর্থ ভাল্ভ বন্ধ। ইনলেট ভাল্ভ ট্যাপেট জ্যাম অর্থ হলো সাকশন স্ট্রোক। ইনলেট এবং একজস্ট ভাল্ভ ট্যাপেট ফ্রি অর্থ হচ্ছে কম্প্রেশন স্ট্রোক বা পাওয়ার স্ট্রোক। একজস্ট ভাল্ভ ট্যাপেট জ্যাম অর্থ হলো একজস্ট স্ট্রোক। একজস্ট এবং ইনলেট ভাল্ভ ট্যাপেট জ্যাম অর্থ হচ্ছে ভাল্ভদ্বয় (একজস্ট ও ইনলেট) ওভারল্যাপ অবস্থায় আছে।

 

সিলিণ্ডার রিকন্ডিশনিং | ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ, কারণ ও প্রতিকার | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

ট্যাপেট ক্লিয়ারেন্স কম বা বেশী থাকা দূষণীয়। এতে ইঞ্জিনের সাধারণ প্রক্রিয়ায় ব্যাহত হয়। খট্ খট্ শব্দ হয়, ইঞ্জিন গরম হয়, শক্তি কম উৎপন্ন হয় এবং কার্বন বেশী জমে। ট্যাপেট ক্লিয়ারেন্স সব ইঞ্জিনে সমান থাকে না। কোন কোন ইঞ্জিনের একজস্ট ভাল্ভে এবং ইনলেট ভালভে যথাক্রমে ১০ থাউ এবং ৮ থাউ ক্লিয়ারেন্স থাকে। আবার কোন কোন ইঞ্জিনের উভয় ভাল্ভের ট্যাপেট ক্লিয়ারেন্স সমান থাকে। বিভিন্ন নির্মাতা বিভিন্ন ক্লিয়ারেন্স দেন। নির্মাতার দেওয়া ক্লিয়ারেন্স অনুসারেই ট্যাপেট সমন্বয় করা উচিত। নিম্নলিখিতভাবে ট্যাপেট সমন্বয় করতে হয় ।

(ক) ক্র্যাঙ্কশ্যাফট ঘুরিয়ে ১নং সিলিন্ডারের পিস্টনকে কম্প্রেশন স্ট্রোকের টি.ডি.সি- তে আনয়ন করতে হবে।

(খ) এমতাবস্থায় উভয় ভাল্ভ বন্ধ থাকে। কিন্তু ট্যাপেট খোলা থাকে। এই সময় ফিলার গেজ দ্বারা ট্যাপেটের ক্লিয়ারেন্স (রকার আর্ম ও ভাল্ভ স্টেমের মধ্যে) পরিমাপ করতে হবে।

(গ) ক্লিয়ারেন্স কম বা বেশী থাকলে তা সমন্বয় করার জন্য লক নাট ঢিলা দিতে হয় এবং সমন্বয়কৃত স্ক্রু মোড়াতে হয় (ফিলার গেজটি ট্যাপেটের মধ্যে রাখা অবস্থায়) নির্দিষ্ট ক্লিয়ারেন্স না আসা পর্যন্ত ।

(ঘ) ফিলার গেজে নির্দিষ্ট ক্লিয়ারেন্স দেখা মাত্রই ক্রু-ড্রাইভার দ্বারা সমন্বয়কৃত ত্রুটি এক হাতে ধরে রাখতে হয় এবং অন্য হাত দ্বারা লক নাটটি আঁটাতে হয়। লক নাট আঁটানোর সময় খুব সতর্ক থাকতে হয়। যেন ঐ সময় স্ক্রুটি নড়ে না যায়। নড়াচড়া করলে ট্যাপেট সমন্বয় কম বেশী হয় এবং পুনরায় সমন্বয় করতে হয় ।

 

বিয়ারিং স্প্রেড (Bearing spread) :

বিগ এন্ড বিয়ারিং দুই অংশে বিভক্ত। এখানে শেল (shell) বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়। এই শেল বিয়ারিংগুলি যে ক্যাপ বোর-এর মধ্যে বসে তা অপেক্ষা কিছুটা বেশী ব্যাসার্ধে তৈরি করা হয় যেন লাগানোর সময় একটু চাপ দিলেই শেল বিয়ারিংগুলি একটু প্রসারিত হয়ে ক্যাপ বোরে বসে যায় এবং মোটামুটি শক্তভাবে লাগানো থাকে। ফলে ইঞ্জিন চলাচলের সময় স্বস্থানে বিয়ারিং নিরাপদে অবস্থান করে।

বিয়ারিং ক্র্যাশ (Bearing crash ) : বিগ এন্ড বিয়ারিং ক্যাপ অপেক্ষা শেল বিয়ারিংগুলি কিছু (.০০০২৫´) বেশী উঁচু করে তৈরী করা হয়। শেল বিয়ারিংগুলিতে কিছু ক্র্যাশ রাখা হয় যাতে শেল বিয়ারিং এদের ক্যাপে ভালভাবে এবং শক্তভাবে বসে থাকতে পারে।

 

সিলিণ্ডার রিকন্ডিশনিং | ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ, কারণ ও প্রতিকার | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

সবসময় মনে রাখতে হবে যে বিয়ারিং ক্র্যাশ কখনও ফাইল করে ফেলে দেওয়া উচিত নয়। শেল বিয়ারিং-এ ক্র্যাশ আছে কিনা তা দেখে লাগানো উচিত। ইঞ্জিনে লাগানোর সুবিধার জন্য শেল বিয়ারিং-এ কখনও তাপ দেওয়া উচিত নয়। সিলিন্ডার হেড ক্র্যাক : নিম্নলিখিত কারণে হেড ত্রুটিপূর্ণ হয়।

(ক)সিলিন্ডার হেড-এর নাটগুলি সমানভাবে না আঁটালে, (খ) বেশী গরম হলে (ইঞ্জিন), (গ) গরম ইঞ্জিনের উপর ঠান্ডা পানি দিলে অথবা পড়লে, (ঘ) পিস্টন সিলিন্ডার হেডের সাথে ধাক্কা লাগলে এবং (ঙ) মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হলে।

 

পিস্টন ক্র্যাক :

নিম্নলিখিত কারণে পিস্টনে ত্রুটি দেখা দিতে পারে।

(ক) ইঞ্জিন খুব বেশী গরম হলে, (খ) পিস্টন সিলিন্ডার হেডের সাথে ধাক্কা লাগলে এবং (গ) ভাল্ভ পিস্টন হেডে ধাক্কা মারলে ।

 

সিলিন্ডার ব্লক ক্র্যাক :

(ক) সিলিন্ডার হেড যেসব কারণে ক্র্যাক হয় সিলিন্ডার ব্লক ও সেইসব কারণে ক্র্যাক হয়।

নিম্নলিখিত কারণে লুব অয়েল পিস্টনের মাথায় উঠতে পারে :

(ক) অয়েল স্ক্রেপার রিং উল্টা লাগানো হলে,

(খ) অয়েল স্ক্রেপার রিং ভেঙ্গে গেলে,

(গ) অয়েল স্ক্রেপার রিং ক্ষয়প্রাপ্ত হলে,

(ঘ) অয়েল স্ক্রেপার রিং জ্যাম হলে,

(ঙ) লুব অয়েল খুব পাতলা হলে,

(চ)অয়েল সাম্পে লুব অয়েল বেশী হলে।

লুব অয়েল পিস্টনের মাথায় আসার আগে প্রথমে কম্প্রেশন রিং-এর গর্তে প্রবেশ করবে ; সেখানে লুব অয়েল জ্বলে কার্বন জমা হবে। ফলে কম্প্রেশন রিং জ্যাম হয়ে ভেঙ্গে যাবে। ডিজেল এবং পেট্রোল যে তাপমাত্রায় জ্বলে লুব অয়েল সেই তাপমাত্রা জ্বলে না। ফলে দহন প্রকোষ্ঠে, ভাল্ভসমূহে, পিস্টনের মাথায়, ইনজেক্টরের ফাঁক বা রন্ধ্রে (orifice) এবং স্পার্ক প্লাগে কার্বনজমা হবে। ফলে ইঞ্জিনের স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হবে।

 

আরও দেখুনঃ