হাইড্রোকার্বনের বিক্রিয়া নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং” বিভাগ এর “ফুয়েলস এন্ড লুব্রিক্যান্টস” বিষয়ের একটি পাঠ। তাপ ও চাপের উপর নির্ভর করে হাইড্রোকার্বনের বহুবিধ বিক্রিয়া ঘটতে পারে। নিম্নে এ সম্বন্ধে বর্ণনা করা হল।
হাইড্রোকার্বনের বিক্রিয়া
(ক) পলিমারাইজেশন (Polymerization) :
এটি এমন একটি পদ্ধতি যেখানে দুটি ক্ষুদ্র অসংপৃক্ত অণুর বিক্রিয়া ঘটিয়ে একটি বৃহৎ অসংপৃক্ত অণুর সৃষ্টি করে। যেমন :
C4H8+ C4H4 →CgH6
বা, C2H4 + C4Hg → C6H12
(খ) অ্যালকাইলেশন (Alkylation) :
এটি এমন একটি পদ্ধতি যেখানে অলিফিন এবং আইসো-প্যারাফিনের বিক্রিয়া সংঘটিত হওয়ার ফলে বৃহৎ প্যারাফিনের শাখা সৃষ্টি হয়।
যেমন :
C4H8 C4H10→→→→C8H18
(গ) হাইড্রোজিনেশন (Hydrogenation):
এই প্রক্রিয়াতে একটি অসংপৃক্ত হাইড্রোকার্বনের সাথে হাইড্রোজেনের বিক্রিয়ার ফলে একটি প্যারাফিনের সৃষ্টি হয় যেমন :
C8H16 + H2→→C8H18
(ঘ) ডি-হাইড্রোজিনেশন (Dehydrogenation) :
এই প্রক্রিয়াতে হাইড্রোকার্বন হতে হাইড্রোজেন বের করে দিয়ে একটি অসংপৃক্ত উপাদান সৃষ্টি করা হয়। যেমন :
C4H10 →→→→→ C4H8 → H2
(ঙ) আইসোমারাইজেশন (Isomerization) : এই প্রক্রিয়াতে হাইড্রোকার্বনের
অণুগুলির মধ্যে কার্বনের অণুগুলি আরও সুবিন্যস্ত হয় । যেমন :
CH3 CH2 CH2 CH3 → CH3CH CH 3 CH3
(এন-বুটেন) (আইসোবুটেন)
(চ) অ্যারোমেটাইজেশন ( Aromatization) :
এই প্রক্রিয়াতে সরল চেইন হাইড্রোকার্বনকে অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বনে রূপান্তরিত করা হয় : যুগপৎভাবে রিংকাঠামোর আওতায় হাইড্রোজেন বের করে দেওয়া হয়। যেমন :
C7H3 →→→ C5H5CH3 + 4H290
(ছ) ক্র্যাকিং (Cracking) :
এটি এমন একটি পদ্ধতি যেখানে হাইড্রোকার্বনের বড় অণুগুলিকে ভেঙ্গে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ও হাল্কা করা হয়। ফলে এই পদ্ধতিতে বেশী গ্যাসোলিন পাওয়া যায়। এই পদ্ধতিতে এক ব্যারেল অপরিশোধিত তেল থেকে ৮ হতে ১৮ গ্যালন উন্নতমানের জ্বালানি তেল পাওয়া সম্ভব। ক্র্যাকিং পদ্ধতির বিক্রিয়ার একটি উদাহরণ নিম্নে দেখানো হল :
C16H34 → C8H18 + . CH2 ক্র্যাকিং পদ্ধতি দুই প্রকার : (১) থার্মাল ক্র্যাকিং এবং (২) ক্যাটালাইটিক ক্র্যাকিং।
(১) থার্মাল ক্র্যাকিং (Thermal Cracking) :
থার্মাল ক্র্যাকিং মূলত তাপ প্রয়োগের উপর নির্ভরশীল। থার্মাল ক্র্যাকিংকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়; যেমন (ক) বাষ্প ফেজ ক্র্যাকিং (vapour phase cracking), (খ) তরল বা মিশ্র ফেজ ক্র্যাকিং (Liquid or mixed phase cracking)। তরল ফেজ ক্র্যাকিং-এর তুলনায় বাষ্প ফেজ ক্র্যাকিং পদ্ধতিতে বেশী তাপ প্রয়োগ করা হয় ও কম চাপ ব্যবহৃত হয় এবং বিক্রিয়ার জন্য সময়ও কম লাগে। উভয় ক্র্যাকিং পদ্ধতির একটি সাধারণ পার্থক্য নিম্নে দেখানো হল।
বাষ্প ফেজ ক্র্যাকিং ১০৫০-১২০০ ফাঃ এবং ৫০-৩০০ পাঃ চাপ। তরল ফেজ ক্র্যাকিং ৮৫০-৯৫০° ফাঃ এবং ১০০০-১৫০০ পাঃ চাপ। প্রথম ক্ষেত্রে বিক্রিয়া ঘটে কয়েক সেকেণ্ডে এবং দ্বিতীয় ক্ষেত্রে বিক্রিয়া ঘটে কয়েক মিনিটে ।বাষ্প ফেজ ক্র্যাকিং পদ্ধতিতে খুবই উচ্চ নম্বরযুক্ত গ্যাসোলিন পাওয়া যায়।
(২) ক্যাটালাইটিক ক্র্যাকিং পদ্ধতি (Catalytic cracking) :
ক্যাটালাইটিক ক্র্যাকিং পদ্ধতি মূলত ক্যাটালাইটের উপর নির্ভরশীল। এই পদ্ধতিতে বেনটোনাইট কাদা (Bentonite Clay) এবং সিলিকা অ্যালুমিনা (silica Alumina) ক্যাটালাইট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ক্যাটালাইট হচ্ছে এমন একটি পদার্থ যা নিজের ক্ষয় হয় না বা গলে যায় না, কিন্তু অন্য পদার্থ গলায়, ক্ষয় করে এবং উন্নত করতে সাহায্য করে।
তাই একটি ক্যাটালাইটকে বার বার ব্যবহার করা যায়। থার্মাল ক্র্যাকিং অপেক্ষা ক্যাটালাইটিক ক্র্যাকিং পদ্ধতি বেশী কার্যকর ও উন্নত। কারণ এই পদ্ধতি সবচেয়ে উন্নতমানের এবং বেশী পরিমাণে গ্যাসোলিন উৎপন্ন করা যায়। এই পদ্ধতির একটি অতিরিক্ত সুবিধা হচ্ছে এতে প্রচুর পরিমাণে হিটিং অয়েল পাওয়া যায়, যা গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতিতে প্রাপ্ত গ্যাসোলিনকে ক্র্যাকড গ্যাসোলিন (cracked gasoline) বলে এবং যে গ্যাস পাওয়া যায় তাকে ক্র্যাকড গ্যাস (cracked gases) বলা হয়।
আরও দেখুনঃ
- সঙ্গতিপূর্ণ ভাল্ভ | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং
- হাইড্রলিক ব্রেকের যন্ত্র পরিচিতি | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং
- ডুয়েল অথবা স্প্লিট ব্রেকিং পদ্ধতি | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং
- মাস্টার সিলিন্ডার খোলা এবং লাগানো | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং
- হুইল সিলিন্ডার লাগানোর নিয়ম | ব্রেক পদ্ধতি | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং
- মোটরগাড়ি শিল্প