Site icon অটোমোটিভ গুরুকুল [ Automotive Gurukul ], GOLN

যন্ত্রাংশে রূপ দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত ফাইল

যন্ত্রাংশে রূপ দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত ফাইল – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর একটি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ।

 

যন্ত্রাংশে রূপ দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত ফাইল

 

ফাইল (File)

ইহা ধাতুর বিভিন্ন অংশ ঘষে-মেজে একটি সুনির্দিষ্ট যন্ত্রাংশে রূপ দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। নিচের চিত্রের সাহায্যে বিভিন্ন রকমের ফাইলের আকার ও আকৃতি দেখানো হলো।

 

ফাইল ব্যবহারের নিয়মাবলী (Methods of filing)

কাজের ধরন ও প্রকৃতির উপর নির্ভর করে ফাইল ব্যবহার করা শ্রেয়। ১.৫৫ চিত্রে সুষ্ঠু বা নিয়মমাফিক পদ্ধতি ও নিয়মবহির্ভূত পদ্ধতির ফাইলিং ব্যবস্থা দেখানো হয়েছে।

 

 

 

 

ফাইলিং করার সময় হাত, পা ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গ কিভাবে চালানো প্রয়োজনয়তা

চিত্রের সাহায্যে বুঝানো হলো।

ফাইল চালনা করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে, ফাইল সম্মুখ দিকে চালনার সময় বস্তুকে ক্ষয় করে। তাই এই সময় ফাইলের উপর চাপ দিতে হয়। কিন্তু পশ্চাৎ দিকে টানার সময় ফাইলের উপর চাপ দেওয়া উচিত নয়, কারণ এর ফলে ফাইলের দাতের তীক্ষ্ণতা বা ধার নষ্ট হয়। উপরন্তু পশ্চাৎ দিকে টানার সময় ফাইল বস্তুকে ক্ষয় করে না।

 

 

‘ক–খ’ সাধারণ কাজে এবং তাড়াতাড়ি ও বেশী করে ক্ষয় করার জন্য ‘রাফ’, ‘বাস্টার্ড’ বা সেকেন্ড কাট স্তরের বড় ফাইল বিশেষভাবে উপযোগী যা ১.৫৮ (ক) ও (খ) চিত্রে দেখানো হলো।

কাজের শেষে অল্প পরিমাণে ধাতু ক্ষয় করার জন্য ‘সেকেন্ড কাট’ বা উন্নতমানের ফাইল ব্যবহার করা হয় [১.৫৮ (ক) এর ৩নং চিত্র দ্রষ্টব্য]। দীর্ঘ উপরিভাগের উপর কম করে ক্ষয় করার দৃশ্য ১.৫৮ (ক) এর ৪নং চিত্রে দেখানো হলো। স্বল্প উপরিভাগের উপর কম পরিমাণে ক্ষয় করার জন্য ফাইলের ব্যবহার ১.৫৮ (খ) এর ৫নং চিত্রে দেখানো হলো।

পাতের কিনারার বন্ধুরতা দূর করার জন্য ফাইলের ব্যবহার ১.৫৮ (খ) এর ৬নং চিত্রে দেখানো হলো। গোল রড-এর প্রান্ত ক্ষয় করার জন্য ফাইলের ব্যবহার’ ১.৫৮ (খ)-এর ৭নং চিত্র দ্বারা দেখানো হলো। কাজের সূক্ষ্মতার জন্য ছোট ফাইল কিভাবে ধরতে হয় তা ১.৫৯ চিত্রে দেখানো হলো।

 

 

ডায়াগোনাল ও ক্রস ফাইলিং (Diagonal & cross filing)

ফাইলকে ভাইসের সাথে কোণাকুণিভাবে চালনা করাকে ডায়াগোনাল ফাইলিং বলে। প্রথমে এক কোণ হতে ডায়াগোনাল ফাইলিং করে পরে অন্য কোণে ডায়াগোনাল ফাইলিং করাকে ক্রস ফাইলিং বলে ( চিত্র দ্রষ্টব্য)। ধাতুকে দ্রুত ক্ষয় করতে অথবা প্রশান্ত স্থানকে সমতল করতে উপরিউক্ত পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।

 

 

 

 

ড্রফাইলিং (Draw filing) :

ফাইলকে প্রস্থের দিকে ধরে ক্রমাগত সম্মুখ দিতে টানাকে ড্র-ফাইলিং বলে। কম প্রস্থবিশিষ্ট উপরিভাগকে শীঘ্র ক্ষয় করতে ডু-ফাইলিং করা হয়। (১.৬১ চিত্র দ্রষ্টব্য)।

 

 

গোলাকার ফাইলিং (Round filing) :

কোন বস্তুর সকল কোণ অথবা কোন বস্তুকে গোলাকার করার জন্য প্রথমে একটি রাফ ফাইলের সাহায্যে ঐসব স্থানে একাধিক স্তর সৃষ্টি করতে হয়। তারপর ধীরে ধীরে মসৃণ ফাইলের সাহায্যে স্তরগুলির কোণ ক্ষয় করতে হয়। এর ফলে বস্তুটি ধীরে ধীরে গোলাকার রূপ নেয়। (ক) ও (খ) চিত্রে গোলাকার ফাইলিং পদ্ধতির একটি কার্যক্রম দেখানো হলো ।

 

 

লেদ মেশিনে ফাইলিং (Filing on a lathe) : 

লেদ মেশিনে কোন বস্তুকে টারনিং (turning) করে গোলাকার করার পর মসৃণ করার জন্য উন্নতমানের মসৃণ ফাইল ১.৬৩ চিত্র অনুযায়ী ব্যবহার করা হয়। লেদের উপর ঘূর্ণমান অবস্থায় ফাইল করা হয় বিধায় এই পদ্ধতিকে ‘লেদ ফাইলিং” বলা হয়।

এই পদ্ধতিতে ফাই-লিং করার জন্য কোন প্রকার পিচ্ছিলকরণ তেল ব্যবহার করা উচিত

নয়। কিন্তু অ্যালুমিনিয়াম ধাতুকে ফাই-লিং করার সময় কেরোসিন তেল ব্যবহার করা হয়। কারণ তেল ব্যবহারের ফলে ধাতুর চূর্ণগুলি ফাইলের দাঁতে জমতে পারে না এবং সহজে দাঁত হতে বের হয়ে আসে।

 

ফাইলের পরিচ্ছন্নতা :

১. ফাইলে তেল, গ্রীজ, পানি অথবা মোবিল যেন না লাগে সে দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে। ফাইলে পানি লাগলে মরিচা ধরে অচিরেই দাঁতগুলি নষ্ট হয়ে যায় এবং ফাইলের কার্যক্ষমতা লোপ পায়। তাছাড়া তেল বা গ্রীজ লাগলে ফাইলে তৈলাক্ত হয়ে যায় এবং ফাইলের কার্যক্ষমতা লোপ পায়।

২. নতুন অবস্থায় ফাইলের দাঁতগুলি খুব তীক্ষ্ণ থাকে। সেজন্য নতুন ফাইল দ্বারা কাস্ট আয়রণ (অথবা বালুকণাযুক্ত আকরিক লৌহ চূর্ণ অবস্থায়) ঘর্ষণ না করাই শ্রেয়। এতে দাঁতগুলি দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় এবং কাজের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এইসব কারণে নতুন ফাইল দ্বারা প্রথমে পিতল, তামা, কাঁসা ইত্যাদি নরম ধাতুর উপর কিছুদিন ব্যবহার করার পর ফাইলের তীক্ষ্ণতা যখন কিছুটা কমে আসে তখন ঐ ফাইল কাস্ট আয়রন বা শক্ত স্টীলের উপর ব্যবহার করা চলে।

৩. ফাইল দিয়ে কোন বস্তুর উপর হাতুড়ির মত আঘাত করা উচিত নয় অথবা কোন জিনিস উঠানোর জন্য চাপ দেওয়াও উচিত নয়; কারণ এতে ফাইল ভেঙ্গে যেতে পারে। লৌহপিণ্ডের উপর বালুকণাযুক্ত অংশবিশেষ পরিষ্কার করার জন্য ফাইল ব্যবহার করা উচিত নয়।

৪. একটি ফাইলের দাঁতের সাথে অপর ফাইলের দাঁতের সংঘর্ষ যাতে না হয় এবং অন্য

কোন ধারালো যন্ত্রের সাহায্যে ফাইলের দাঁতগুলি যেন কেটে কনা যায় সেদিকে তীক্ষ্ণ

দৃষ্টি রাখতে হবে।

৫. কাজের শেষে এবং গুদামে ফা-ইল রাখার সময় প্রতিটি ফা-ইল কাগজে জড়িয়ে পৃথক পৃথকভাবে রাখতে হয়। প্রয়োজনবোধে খড়িমাটি মাখিয়ে রাখতে হয়। ফা-ইল তৈলাক্ত হ’লেও খড়িমাটি মেখে কার্যোপযোগী করা যায়।

৬. কাজের সময় ফাইলের দাঁতে ধাতু-চূর্ণ আটকে যায়। ফলে ফাইলের কার্যক্ষমতা লোপ পায়। তামা, পিতল, কাঁসা ইত্যাদি ফা-ইল করার সময় দাঁতগুলি বেশি আটকে যায়। এই অবস্থা থেকে ফা-ইল মুক্ত করার জন্য সূক্ষ্ম তারের ব্রাসের সাহায্যে ১.৬৪ চিত্রানুরূপ ব্রাস করলে ধাতু-চূর্ণ ফা-ইল হতে বের করা যায়। চিত্রানুরূপ ‘ফা-ইল কার্ড ব্যবহার করে অর্থাৎ সরু পাত দ্বারা ফা-ইলের দাঁত পরিষ্কার করা যায়।

৭. ফাইলে হাতল না থাকলে হাতল লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে। হাতলবিহীন ফা-ইল ব্যবহার না করাই শ্রেয়। হাতলবিহীন ফা-ইলের ‘ট্যাং’ অংশ হাতে ফুটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৮. ফা-ইলিং করার সময় ধাতু-চূর্ণগুলি কখনও ফুঁ-দিয়ে উড়াতে নেই। এভাবে নিজের ও অন্য লোকের চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 

আরও দেখুনঃ

 

Exit mobile version