ইঞ্জিনে ব্যবহৃত লুব্রিকেন্ট

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ইঞ্জিনে ব্যবহৃত লুব্রিকেন্ট

ইঞ্জিনে ব্যবহৃত লুব্রিকেন্ট

ইঞ্জিন অরেল ও গিরার অয়েলের মধ্যে পার্থক্য

সাধারণত ইঞ্জিন অয়েল ও গিরার অয়েলের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

 

ইঞ্জিনে ব্যবহৃত লুব্রিকেন্ট

চিত্র : লুব্রিকেন্টের কাজ

ইঞ্জিন অয়েল

  • ইঞ্জিনের ক্র্যাংককেইসে যে পিচ্ছিলকরণ তেল | ব্যবহার হয়, তাকে ইঞ্জিন অয়েল বলে ।
  • ইঞ্জিন অয়েল গিয়ার অয়েল অপেক্ষা হালকা ও আঠালত্ব তুলনামূলকভাবে কম ।
  • এস এ ই (SAE)-৩০, এস এই (SAE) – ৪০, প্রভৃতি | মানের তেলই হচ্ছে ইঞ্জিন অয়েল
  • ইঞ্জিন অয়েলের ফ্লাশ পয়েন্ট পিয়ার অয়েল অপেক্ষা কম ।
  • ইঞ্জিন অয়েলের পোর পয়েন্ট গিয়ার অরেল অপেক্ষা কম ।
  • ইঞ্জিন चরেল খনিজ তেল থেকে অথবা খনি তেল ও ভেজিটেবল তেলের সংমিশ্রণে প্রস্তুত হয় ।

গিয়ার অয়েল

  • ট্রান্সমিশেন পিয়ার, ডিফারেন্সিয়াল পিয়ার | প্রভৃতিতে যে পিচ্ছিলকরণ তেল ব্যবহার হয়, তাকে পিয়ার অয়েল বলে।
  • গিয়ার অয়েল ইঞ্জিন অয়েল অপেক্ষা ভারী ও আঠালত্ব বেশি।
  • এস এই (SAE) – ৮০, এসএ (SAE) – ১৪০, এসএ ই (SAR) – ২৫০ প্রভৃতি মানের তেলই হচ্ছে গিরার অয়েল ।
  • গিয়ার অয়েলের ফ্লাশ পয়েন্ট ইঞ্জিন অয়েল অপেক্ষা বেশি।
  • গিয়ার অয়েলের পোর পরেন্ট ইঞ্জিন অয়েল অপেক্ষা বেশি।
  • সাধারণত খনিজ তেল থেকে পিয়ার অয়েল উৎপন্ন হয়।

তরল দুব্রিকেন্টের প্রেডিং

একটি নির্ধারিত তাপমাত্রার লুব্রিকেটিং অয়েলের আঠালত্বের উপর ভিত্তি করে তরল লুব্রিকেন্টের শ্রেণিবিভাগ দেখানো হয়ে থাকে। এটা সোসাইটি অব অটোমোটিভ ইঞ্জিনিয়ার (Society of Atomotive Engineers or SAE) কর্তৃক অনুমোদিত, একে ফল লুব্রিকেন্টের গ্রেডিং বলে। এই মানগুলোর ভিন্ন ভিন্ন অর্থ নিম্নরূপ-

 

ইঞ্জিনে ব্যবহৃত লুব্রিকেন্ট

চিত্র : ভিসকোসিটি টেষ্ট

১. শীতপ্রধান ও গ্রীষ্মপ্রধান দেশের জন্য আলাদা আলাদা মান বিশেষ্ট পিচ্ছিলকরণ তেল ব্যবহার হয়। যেমন শীতপ্রধান দেশের জন্য এস এই- ২০, এস এই-cow মানের পিচ্ছিলকারক বা লুব্রিকেটিং জেল ব্যবহার।

সুতরাং তেলের মানের সঙ্গে ডব্লিউ থাকলে বুঝতে হবে যে, এটা শীতপ্রধান দেশের লুব্রিকেন্টস । আর ডব্লিউবিহীন প্রকাশিত তেলের মানকে গ্রীষ্মপ্রধান দেশের তেলের মানকে বুঝায়। আমাদের দেশ নাতিশীতোষ্ণ বা গ্ৰীষ্মপ্রধান দেশের আওতাভুক্ত। সুতরাং এক্ষেত্রে ভেলের মান বুঝতে এস এই (SAB)- ৩০ যা শীতকালে এবং এস এই (SAR)- ৪০ বা গ্রীষ্মকালে ব্যবহার হয়।

২. এসএই আঠালত্বের নম্বর নির্ভর করে লুব্রিকেন্টের আঠালত্বের উপর, আবার আঠালত্ব নির্ভর করে তাপমাত্রার উপর। শীতকালে ব্যবহার উপযোগী হালকা সুব্রিকেন্টগুলো শূন্য ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় এবং গ্রীষ্মকালে ব্যবহার উপযোগী লুব্রিকেন্টগুলো সাধারণত ২১০° ফারেনহাইট তাপমাত্রায় গ্রেডে করা থাকে।

৩. ৬০ মিলিলিটার বা ৬০ সি.সি লুব্রিকেন্টস একটি নির্ধারিত তাপমাত্রায় (o°ফা. অথবা ২১০ ফা) ০১৭৬৫ সেন্টিমিটার ব্যাস বিশিষ্ট ছিদ্র যারা মাধ্যাকর্ষণ বলে ফোঁটা ফোঁটা করে পড়লে এবং ঐটুকু নিঃশেষ হতে বসি ২০ সেকেন্ড সময় লাগে, তাহলে এটার মান হবে এসাই-২০। আর যদি এটুকু নিঃশেষ হতে যদি ১০ সেকেণ্ড সময় লাগে, তাহলে এটার মান হবে এস এই-১০। তবে তাপমাত্রা শীতকালের জন্য হবে ০ ফা., সেক্ষেত্রে সুব্রিকেন্টের মান হবে এসএই -২০ডব্লিউ অথবা এস এই-১০ ডব্লিউ ।

৪. তরল লুব্রিকেন্টগুলো সার্ভিসের উপর ভিত্তি করেও বিভিন্নভাবে গ্রেড করা হয় এবং এই গ্রেডগুলো (API) অর্থাৎ জামেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউট কর্তৃক অনুমোদিত ।

 

(ক) এই প্রেডগুলো পেট্রোল ইঞ্জিনের লুব্রিকেন্টস এর জন্য, যা নিম্নরূপ-

১. এমএস (MS) বা Most Severe

২. মান (M.M) বা Moderate Move

৩. এমএল (ML) বা Light Move

(খ) এই গ্রেডগুলো ডিজেল ইঞ্জিনের লুব্রিকেন্টস- এর জন্যে, যা নিম্নরূপ-

১. সি (DS) বা Diesel Severe

২. ডিম (DM) বা Diesel Light Condition এর ক্ষেত্রে ব্যবহার উপযোগী।

গ্রিজের প্ররোগ ক্ষেত্রগুলোর তালিকা

ক্যালসিয়াম লোণ গ্রিজ :

এটি ব্যাপকভাবে প্লেন ৰিয়ায়‍ লুব্রিকেশনের জন্য, যে স্থানে তাপ এবং লোড খুব নয় সে স্থানে এটি ক্যাপ এবং প্রেসার গান গ্রিজ হিসেবে ব্যবহার হয়।

 

ইঞ্জিনে ব্যবহৃত লুব্রিকেন্ট

চিত্র : সোভিয়ান সোপ মিল

সেভিয়াম লোপ গ্রিজ :

এটি উচ্চ ভাগে ব্যবহার উপযোগী গ্রিজ। এদের ব্যবহারে প্রধান অসুবিধা হলো এরা পানিতে দ্রবণীয়। সুতরাং ‘আর্দ্রতার এদর ব্যবহার অনুচিত ।

অ্যালুমিনিয়াম সোপ গ্রিজ :

এই গ্রিজ খুবই খাটো আঁশযুক্ত যে স্থানের তাপমাত্রা ১৬০° ফা. এর উপরে সে স্থানে ব্যবহার উপযোগী নয়, কারণ এই তাপমাত্রা অতিক্রম করলে গ্রিজের অবস্থার পরিবর্তন ঘটে এবং কার্য সম্পাদনে ব্যর্থ হয়ে যায় । অ্যালুমিনিয়াম গ্রিজ খুবই আঠালো, তাই এ প্রিজ ক্যাম চেইন, অসিলেটিং সারফেস, যে স্থানে অন্যান্য গ্রিজ ব্যবহার করা যায় না সেই সকল স্থানে ব্যবহার হয়।

মিক্সড গ্রিজ :

একাধিক সোপের মিশ্রণে যে গ্রিজ তৈরি হয় তাই মিক্সড সোপ গ্রিল। সাধারণত ক্যালসিয়াম এবং সোডিয়াম সোপের মিশ্রণেই এই গ্রিজ তৈরি হয় । এই গ্রিজ সাধারণ চাহিদা পূরণ করে ।

বেরিয়াম সোপ গ্রিজ :

এই গ্রিজ মাল্টিপারপাস গ্রিজ রূপে কাজ করে। এটি পানিতে দ্রবণীয় নয় বরং পানিতে বাধা সৃষ্টি করে । ৩০° ফা. তাপমাত্রা পর্যন্ত এই গ্রিজ যথাযথভাবে কাজ করতে সক্ষম। ইঞ্জিন চেসিসে এবং এন্টিফ্রিকেশন বিয়ারিং- এ এই গ্রিজ সাধারণত ব্যবহার হয় ।

লিথিয়াম সোপ গ্রিজ:

অন্যান্য সোপ বেজ গ্রিজ হতে এই গ্রিজ উন্নতমানের । এটি মাল্টিপারপাস গ্রিজরূপে ব্যবহৃত হয়। এই গ্রিজ ১০০° ফা. হতে ৩০০° ফা. পর্যন্ত তাপমাত্রা বিশিষ্ট এলাকায় ব্যবহার করা হয়। এই গ্রিজ পানিতে দ্রবণীয় নয়। পানিতে প্রতিরোধক। চরম অবস্থায় সহজে ব্রেক ডাউন হয় না ।

সিলিকাজেল গ্রিজ :

অতি তাপমাত্রায় ভাত লুব্রিকেন্ট করতে ব্যবহার হয় । শিল্পক্ষেত্রেও এই গ্রিজের প্রয়োগ রয়েছে। তাছাড়া বল এবং রোলার বিয়ারিং লুব্রিকেন্ট করতেও ব্যবহার হয়। এই গ্রিজ সাধারণ সোপ বেজ প্রিজ নয় ।

রেনটন গ্রিজ :

এই গ্রিজ সাধারণ অটোমোটিভ লুব্রিকেন্ট হিসেবে ব্যবহার হয় এবং শিল্পক্ষেত্রেও অনেক স্থানে ব্যবহার হয়। টেক্সটাইল মিল এবং স্টিল মিলে এই গ্রিজের প্রয়োগ রয়েছে ।

 

ইঞ্জিনে ব্যবহৃত লুব্রিকেন্ট

চিত্র : ব্রীজ গান

খাঁটি পেউলিয়াম ব্রিজ :

পেট্রোলিয়াম রিফাইনারি পদ্ধতির সর্বশেষ প্রোডাক্ট অ্যাসফ্যান্ট পেট্রোলিয়াম গ্রিজ রূপে অভিহিত করা হয়। এটি অত্যাধিক আঠালো, তাই এটি ওপেন গিয়ার, স্টিলের দড়িতে পুব্রিকেন্ট হিসেবে ব্যবহার হয়।

প্রশ্নমালা – ৭

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১. ফ্রিক্সড লুব্রিকেন্ট কী ও কত প্রকার?

২. গ্রিজ কত প্রকার ও কি কি ?

৩. সলিড লুব্রিকেন্টের নাম লেখ । ৪. এস এই (SAE) মানে কী?

৫. এসএই ডব্লিড (SAE-W) মানে কী ?

৬. SAE – 10W বলতে কোন এজেন্ট হিসেবে কাজ করে?

৭. আমাদের দেশে সাধারণত কত গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল এবং গিয়ার অয়েল বৃবহার করা হয় । ?

৮. API কর্তৃক অনুমোদিত পেট্রোল ইঞ্জিনের নম্বরসমূহ কি কি ?

৯. API কর্তৃক অনুমোদিত ডিজেল ইঞ্জিনের নম্বরসমূহ কি কি ?

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১. ইঞ্জিন অয়েল ও গিয়ার অয়েল- এর মধ্যে পার্থক্য লেখ।

২. গ্রেডভিত্তিক তরল লুব্রিকেন্টেস প্রয়োগ ক্ষেত্র লেখ ।

রচনামূলক প্রশ্ন

১. তরল লুব্রিকেন্টের গ্রেডিং পদ্ধতি বর্ণনা বা ব্যাখ্যা কর ।

২. গ্রিজ প্রয়োগ ক্ষেত্রগুলোর তালিকা বর্ণনা কর ।

আরও দেখুন :

 

Leave a Comment