ফোর-স্ট্রোক পেট্রোল ইঞ্জিনের কার্যপ্রণালী

আজকের আলোচনার বিষয় হলো ফোর-স্ট্রোক পেট্রোল ইঞ্জিনের কার্যপ্রণালী। এটি “অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং” বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মূলতত্ত্বপূর্ণ অধ্যায়।

ফোর-স্ট্রোক ইঞ্জিন প্রযুক্তি আধুনিক যানবাহনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং এটি ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা ও দক্ষতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই পাঠে আমরা ফোর-স্ট্রোক পেট্রোল ইঞ্জিনের প্রতিটি স্ট্রোকের কাজ, তার কার্যপ্রণালী ও সংশ্লিষ্ট যান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করব।

চলুন, আধুনিক অটোমোবাইল ইঞ্জিনের এই গুরুত্বপূর্ণ পাঠটি বিস্তারিতভাবে জানার মাধ্যমে আমাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করি।

 

ফোর-স্ট্রোক পেট্রোল ইঞ্জিনের কার্যপ্রণালী

 

ফোর-স্ট্রোক পেট্রোল ইঞ্জিনের কার্যপ্রণালী | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

২.৫ নং চিত্রের সাহায্যে ফোর-স্ট্রোক পেট্রোল ইঞ্জিনের কার্যপ্রণালী এবং ফুয়েল সরবরাহ পদ্ধতি বিশদভাবে প্রদর্শিত হয়েছে।

প্রথমে পেট্রোল ফিল্টারের মাধ্যমে পরিশোধিত হয়ে এ.সি. পাম্পে প্রবেশ করে। এ সময়, এ.সি. পাম্পের ডায়াফ্রাম নীচের দিকে অবস্থান করে এবং চেক ভাল্ভ (১) খোলা থাকে, ফলে পেট্রোল সহজেই এ.সি. পাম্পে প্রবাহিত হয়।

যখন ডায়াফ্রাম উপরের দিকে উঠে যায়, তখন তেলের চাপের কারণে চেক ভাল্ভ (১) বন্ধ হয়ে যায় এবং অন্যদিকে ২ নম্বর চেক ভাল্ভ খুলে যায়। এর ফলে তেল এ.সি. পাম্প থেকে ফ্লোট প্রকোষ্ঠে প্রবাহিত হয়।

এ.সি. পাম্পটি ক্যামশ্যাফটের কেন্দ্রাপসারী (Eccentric) দ্বারা পরিচালিত হয়।

কেন্দ্রাপসারীর উচ্চ অংশ যখন রকার আর্মকে স্পর্শ করে, তখন পুল এন্ড পুশ রডের সাহায্যে ডায়াফ্রাম নীচের দিকে নামতে থাকে। এই অবস্থায় পাম্পে শোষণ (সাকশন) সৃষ্টি হয়, ফলে তেল ট্যাঙ্ক থেকে এ.সি. পাম্পে প্রবাহিত হয়।

অপরদিকে, যখন কেন্দ্রাপসারীর নিম্নাংশ রকার আর্মকে স্পর্শ করে, তখন পুল এন্ড পুশ রড ও স্প্রিংয়ের সহায়তায় ডায়াফ্রাম উপরের দিকে উঠে আসে। ফলে তেল পাম্প হয়ে কার্বুরেটরের ফ্লোট প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করে।

ফ্লোট প্রকোষ্ঠ থেকে তেল মেইন জেটের মাধ্যমে স্প্রে হয়ে বাতাসের সঙ্গে মিশে ইনটেক ম্যানিফোল্ডে প্রবেশ করে। এরপর ইনটেক ভাল্ভের মাধ্যমে এটি সিলিন্ডারে প্রবাহিত হয়।

এই পুরো প্রক্রিয়া সঠিক ও সুষম ফুয়েল সরবরাহ নিশ্চিত করে, যা ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা এবং কর্মদক্ষতা বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সাকশন স্ট্রোক :

ফোর-স্ট্রোক পেট্রোল ইঞ্জিনের প্রথম ধাপ হলো সাকশন স্ট্রোক। এই স্ট্রোকের সময় ইনটেক ভাল্ভ খোলা থাকে এবং একজস্ট ভাল্ভ বন্ধ থাকে। পিস্টন সিলিন্ডারের ভিতরে নিচের দিকে নামতে থাকে, যার ফলে সিলিন্ডারের অভ্যন্তরে একটি শূন্যতা বা নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়।

এ কারণে বায়ুমণ্ডলের স্বাভাবিক চাপ অনুসারে বাতাস ও পেট্রোলের সংমিশ্রণ সিলিন্ডারে প্রবাহিত হয়। বাতাস ও পেট্রোলের এই মিশ্রণ সিলিন্ডারে ঢোকার পথ হয় কারবুরেটর, ইনটেক ম্যানিফোল্ড এবং ইনটেক ভাল্ভ এর মাধ্যমে।

কারবুরেটর হলো একটি বিশেষ মিশ্রণ আবিষ্কার যন্ত্র (Mixing Device), যেখানে ইঞ্জিনের চাহিদা অনুযায়ী বাতাস ও তেল সঠিক অনুপাতে মিশ্রিত হয়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ভেনচুরী (Venturi), যা কারবুরেটরের একটি সংকুচিত ও সরু পথ।

ভেনচুরীর মাধ্যমে বাতাসের চাপ কমে যায় কিন্তু গতি বৃদ্ধি পায়। এই গতি বৃদ্ধির ফলে বাতাস ও পেট্রোলের সংমিশ্রণ আরও ভালভাবে মিশে যায় এবং সিলিন্ডারে প্রবেশের জন্য প্রস্তুত হয়। ভেনচুরীর উপস্থিতিই কারবুরেটরে উচ্চমানের মিশ্রণ তৈরিতে সহায়ক, যা ইঞ্জিনের কর্মদক্ষতা বাড়ায়।

সুতরাং, সাকশন স্ট্রোকের সময় পিস্টনের নিচে নামার প্রক্রিয়ায় সিলিন্ডারে পর্যাপ্ত পরিমাণে পেট্রোল-আবদ্ধ বাতাস প্রবেশ করে, যা পরবর্তী দহন স্ট্রোকের জন্য অত্যাবশ্যকীয়।

 

কম্প্রেশন স্ট্রোক :

কম্প্রেশন স্ট্রোক হল ফোর-স্ট্রোক ইঞ্জিনের গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ, যেখানে পিস্টন নিচের মরা অবস্থান (B.D.C) থেকে উপরের মরা অবস্থান (T.D.C) পর্যন্ত উঠে। এই সময় ইনটেক ও এক্সহস্ট ভালভ দুটি বন্ধ থাকে, ফলে সিলিন্ডারের ভেতর বাতাস এবং পেট্রোলের মিশ্রণ সংকুচিত হতে শুরু করে।

মিশ্রণটি সংকুচিত হওয়ার কারণে সিলিন্ডারের ভিতরে চাপ এবং তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়, যা সাধারণত ৬৬ থেকে ২১০ পাউন্ড/বর্গ ইঞ্চি (P.S.I.) পর্যন্ত যেতে পারে। এই পর্যায়কে বলা হয় কম্প্রেশন স্ট্রোক

কম্প্রেশন স্ট্রোকের শেষ মুহূর্তে, স্পার্ক প্লাগে উচ্চ ভোল্টেজের মাধ্যমে (সাধারণত ১১,০০০ থেকে ১৮,০০০ ভোল্ট) একটি বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গ সৃষ্ট হয়। এই স্ফুলিঙ্গের ফলে পেট্রোল-এয়ার মিশ্রণ আগুন ধরে দ্রুত বিস্ফোরিত হয়, যার ফলে সিলিন্ডারের চাপ আরো বৃদ্ধি পেয়ে পৌঁছে ২০০ থেকে ৫০০ পাউন্ড/বর্গ ইঞ্চি (P.S.I.) এবং তাপমাত্রা বাড়ে প্রায় ১৫০০° থেকে ২০০০° ফারেনহাইট পর্যন্ত।

এই উচ্চ চাপ ও তাপমাত্রার সৃষ্ট শক্তিই ইঞ্জিনের পিস্টনকে নিচ থেকে উপরে ঠেলে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়, যা ইঞ্জিনের কাজের মূল চালিকা শক্তি।

 

পাওয়ার স্ট্রোক :

ফোর-স্ট্রোক পেট্রোল ইঞ্জিনের পাওয়ার স্ট্রোক হলো ইঞ্জিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এই স্ট্রোক শুরু হয় কম্প্রেশন স্ট্রোকের শেষে, যখন সিলিন্ডারের ভিতরে পিস্টন উপরের শেষ অবস্থানে এসে পৌঁছায় এবং জ্বলন চেম্বারে বাতাস ও পেট্রোলের মিশ্রণে উচ্চ ভোল্টেজের বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গ উৎপন্ন হয়।

এই স্ফুলিঙ্গের কারণে মিশ্রণটি দ্রুত দহন শুরু করে, যা প্রচণ্ড তাপ এবং চাপ সৃষ্টি করে। এই অত্যধিক চাপের প্রভাবে পিস্টন প্রবল শক্তি নিয়ে দ্রুত নিচের দিকে নেমে আসে।

পিস্টনের এই জোরালো গতিবেগ কানেকটিং রডের মাধ্যমে ক্র্যাঙ্কশ্যাফটে সরবরাহ করা হয়, যার ফলে ক্র্যাঙ্কশ্যাফট ঘূর্ণায়মান হয়। এই ঘূর্ণন শক্তিই গাড়ির চাকাগুলোকে চালাতে সাহায্য করে এবং গাড়িকে রাস্তায় অগ্রসর করে।

এই স্ট্রোক চলাকালীন সিলিন্ডারের উভয় ভাল্ভ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে, যার ফলে গ্যাস সিলিন্ডারের ভিতরে আটকে থাকে এবং সর্বোচ্চ চাপ তৈরি হয়।

সুতরাং, পাওয়ার স্ট্রোক হলো সেই ধাপ যেখানে ইঞ্জিনের জ্বালানি শক্তিকে সরাসরি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর করা হয়, যা ইঞ্জিনকে চলমান রাখতে সক্ষম করে।

একজস্ট স্ট্রোক :

ফোর-স্ট্রোক ইঞ্জিনের একজস্ট স্ট্রোকে, পিস্টন নিচের অবস্থান (BDC – Bottom Dead Center) থেকে উপরের অবস্থান (TDC – Top Dead Center) এর দিকে সরতে থাকে। এই সময়ে একজস্ট ভাল্ভ খোলা থাকে, যার মাধ্যমে আগের স্ট্রোকে দহন হয়ে যাওয়া গ্যাসগুলো সিলিন্ডার থেকে বের হয়ে যায়। অন্যদিকে, ইনটেক ভাল্ভ বন্ধ থাকে, কারণ ভাল্ভ টাইমিং অনুযায়ী এই সময় ইঞ্জিনে নতুন জ্বালানি প্রবেশ বন্ধ থাকে।

একজস্ট স্ট্রোকের শেষে ইনটেক ভাল্ভ আবার খুলে যায় এবং সিলিন্ডারে নতুন করে বাতাস ও পেট্রোলের মিশ্রণ প্রবেশ শুরু হয়। এভাবেই চারটি স্ট্রোক ক্রমান্বয়ে ঘটতে থাকে, ফলে ইঞ্জিন চলতে থাকে। এই ধারাবাহিক প্রক্রিয়াই ফোর-স্ট্রোক পেট্রোল ইঞ্জিনের মূল কার্যপ্রণালী।

ফ্লোট প্রকোষ্ঠ (Float Chamber)

ফ্লোট প্রকোষ্ঠ হলো কারবুরেটরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে সবসময় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পেট্রোল জমা থাকে। এই প্রকোষ্ঠের মধ্যে একটি ফ্লোট থাকে, যা পেট্রোলের উপর ভাসে। ফ্লোটটি একটি পিভট পিন দ্বারা নিডল ভাল্ভের সাথে সংযুক্ত থাকে।

পাম্প থেকে তেল ফ্লোট প্রকোষ্ঠে আসার পথে একটি নিডল ভাল্ভ থাকে, যা ফ্লোটের অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে তেলের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। যখন ফ্লোটের উচ্চতা কমে, নিডল ভাল্ভ খুলে যায় এবং তেল প্রবাহিত হতে থাকে। আবার যখন ফ্লোট প্রকোষ্ঠে পর্যাপ্ত তেল জমে, নিডল ভাল্ভ বন্ধ হয়ে যায় এবং তেল প্রবাহ বন্ধ থাকে।

ফ্লোট প্রকোষ্ঠে থাকা তেল নির্দিষ্ট মাত্রায় রাখা হয়, যাতে মেইন জেট সবসময় ৩২ ইঞ্চি উপরে থাকে, ফলে তেল ফোঁটা ফোঁটা গড়ে নির্দিষ্ট পরিমাণে সরবরাহ হয়।

 

. সি. পাম্প (Automatic Control Pump)

এ. সি. পাম্প ফ্লোট প্রকোষ্ঠের তেল সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে। যখন ফ্লোট প্রকোষ্ঠে পর্যাপ্ত তেল থাকে, নিডল ভাল্ভ বন্ধ থাকায় পাম্প থেকে তেল প্রবাহ বন্ধ থাকে। ফলে ফ্লোট প্রকোষ্ঠ থেকে পাম্প পর্যন্ত জ্বালানি পথের মধ্যে চাপ সৃষ্টি হয়, যা পাম্পের ডায়াফ্রামে প্রভাব ফেলে।

ডায়াফ্রাম পুল করে পুশ রডকে নিচের দিকে ধাক্কা দিয়ে রকার আর্মের অবস্থান পরিবর্তন করে, যা ক্যামসেনট্রিকের ধাক্কা কমিয়ে দেয়। এর ফলে অল্প সময়ের জন্য এ. সি. পাম্পে চাপ কমে যায় এবং তেল সরবরাহ কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে।

যখন ফ্লোট প্রকোষ্ঠ থেকে তেল কমতে থাকে, নিডল ভাল্ভ পুনরায় খুলে যায় এবং পাম্প থেকে ফ্লোট প্রকোষ্ঠে তেল প্রবাহ শুরু হয়। এই নিয়মিত ও স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াকে অটোমেটিক কন্ট্রোল পাম্প বলা হয়।

সাধারণত এই পাম্পের চাপ ২ থেকে ৭.৫ পাউন্ড প্রতি বর্গ ইঞ্চি হয়। এর গঠন ও কাজের প্রক্রিয়া “২.৫ চিত্র”-এ বিস্তারিত প্রদর্শিত হয়েছে।

 

ফোর স্ট্রোক বা চার ঘাত ডিজেল ইঞ্জিনের কার্যপ্রণালী :

২৬ নম্বর ক, খ, গ চিত্রে ডিজেল ইঞ্জিনের বিভিন্ন অংশ, গঠন ও জ্বালানি সরবরাহ পদ্ধতি প্রদর্শিত হয়েছে। ফোর-স্ট্রোক পেট্রোল ইঞ্জিনের মতই, চার ঘাত ডিজেল ইঞ্জিনেও ক্ষমতা অর্জনের জন্য পিস্টনকে চারবার উঠানামা করতে হয়। ডিজেল ইঞ্জিন সাধারণত ১, ৪, ৬, ৮ অথবা ১২ সিলিন্ডার বিশিষ্ট হয়।

ডিজেল ইঞ্জিনের কার্যপ্রণালীকে চারটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়:
(ক) সাকশন স্ট্রোক, (খ) কম্প্রেশন স্ট্রোক, (গ) পাওয়ার স্ট্রোক, (ঘ) একজস্ট স্ট্রোক।

ফোর-স্ট্রোক পেট্রোল ইঞ্জিনের কার্যপ্রণালী | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

ডিজেল ইঞ্জিনের বিশেষত্ব

ডিজেল ইঞ্জিনে কার্বুরেটর ব্যবহৃত হয় না, কারণ এতে সাকশন স্ট্রোকে শুধুমাত্র শুধুমাত্র বাতাস সিলিন্ডারে প্রবেশ করে। পেট্রোল ইঞ্জিনের মতো মিশ্রণের জন্য বৈদ্যুতিক স্পার্কের প্রয়োজন না হয়ে, ডিজেল ইঞ্জিনে দহন সম্পাদনের জন্য হাই-প্রেশার পাম্প ও ইনজেকটর ব্যবহৃত হয়, যা ডিজেল জ্বালানি সিলিন্ডারে উচ্চচাপে স্প্রে করে।

 

ফোর-স্ট্রোক পেট্রোল ইঞ্জিনের কার্যপ্রণালী | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

কার্যপ্রণালীর ধাপসমূহ

ক. সাকশন স্ট্রোক:

এই স্ট্রোকের সময় পিস্টন উপরের মৃতকেন্দ্র (T.D.C – Top Dead Center) থেকে নিচের মৃতকেন্দ্র (B.D.C – Bottom Dead Center) এর দিকে নেমে আসে। ইনটেক ভাল্ভ খোলা থাকে এবং একজস্ট ভাল্ভ বন্ধ থাকে। এই সময়ে কেবলমাত্র বাতাস ইনটেক ভাল্ভের মাধ্যমে সিলিন্ডারে প্রবেশ করে।

খ. কম্প্রেশন স্ট্রোক:

এই স্ট্রোকে উভয় ভাল্ভ বন্ধ থাকে। পিস্টন B.D.C থেকে T.D.C এর দিকে উঠে বাতাসকে সংকুচিত করে। সংকোচনের ফলে চাপ ও তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। চাপ প্রায় ৪৫০ থেকে ৫৫০ পাউন্ড প্রতি বর্গ ইঞ্চি (PSI) এবং তাপমাত্রা প্রায় ৯০০° থেকে ১১০০° ফারেনহাইটে পৌঁছায়।

গ. পাওয়ার স্ট্রোক:

এই সময়ও উভয় ভাল্ভ বন্ধ থাকে। পিস্টন T.D.C থেকে B.D.C এর দিকে দ্রুত নেমে আসে। কম্প্রেশন স্ট্রোক শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই, হাই-প্রেশার পাম্প ইনজেকটরের মাধ্যমে ডিজেল জ্বালানি ১৫০০ থেকে ৩৫০০ পাউন্ড প্রতি বর্গ ইঞ্চি চাপ দিয়ে সিলিন্ডারে স্প্রে করে। ফলে দহন (ফায়ারিং) হয় এবং চাপ বেড়ে ৫০০ থেকে ৭৫০ PSI ও তাপমাত্রা ২০০০° থেকে ২৫০০° ফারেনহাইট পর্যন্ত পৌঁছায়। এই উচ্চ চাপ পিস্টনকে প্রবল গতিতে নিচের দিকে ঠেলে দেয়, যা ক্র্যাংক শ্যাফটকে ঘুরিয়ে ইঞ্জিনের যান্ত্রিক শক্তি উৎপন্ন করে।

ঘ. একজস্ট স্ট্রোক:

এই স্ট্রোকে পিস্টন B.D.C থেকে T.D.C এর দিকে উঠে। ইনটেক ভাল্ভ বন্ধ থাকে, কিন্তু একজস্ট ভাল্ভ খোলা থাকে। পোড়া গ্যাস সিলিন্ডার থেকে একজস্ট ভাল্ভের মাধ্যমে একজস্ট ম্যানিফোল্ডে বের হয়ে যায়। এরপর আবার ইনটেক ভাল্ভ খুলে নতুন বাতাস সিলিন্ডারে প্রবেশ করে। এই প্রক্রিয়া পরপর চলতে থাকে, যার ফলে ইঞ্জিন নিয়মিত ও নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করতে পারে।