অপরিশোধিত তেল পরিশোধনের অন্যান্য পদ্ধতি নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “ফুয়েলস এন্ড লুব্রিক্যান্টস” বিষয়ের “অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং” বিভাগের একটি পাঠ।
বর্তমান বিশ্বে পাতন এবং ক্র্যাকিং পদ্ধতি (Distillation & cracking process) ছাড়াও অন্যান্য পরিশোধন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
যেমন—
(ক) পলিমারাইজেশন (Polymerization),
(খ) অ্যালকাইলেশন (Alkylation),
(গ) আইসোমারাইজেশন (Isomerization),
(ঘ) হাইড্রোজিনেশন (Hydrogenation), এবং
(ঙ) রিফমিং (reforming) ইত্যাদি।
অপরিশোধিত তেল পরিশোধনের অন্যান্য পদ্ধতি
১৬.২০ চিত্রে পরিশোধন প্রক্রিয়ার আন্তঃসংযোগ ক্রিয়া সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে।
(ক) পলিমারাইজেশন :
এটি এমন একটি পদ্ধতি যার সাহায্যে তেল সোধনাগারের পাতন প্রক্রিয়া ও ক্র্যাকিং প্রক্রিয়া হতে প্রাপ্ত অসংপৃক্ত হাল্কা হাইডোকার্বন গ্যাসসমূহকে একত্র করা যায়। ক্যাটালাইটের সাহায্যে উক্ত গ্যাসসমূহের বৃহৎ অসংপৃক্ত অণুর সৃষ্টি করে এবং গ্যাসকে তরলে পরিণত করে। এতে তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং গুণগত মানও বৃদ্ধি পায়।
তেল শোধনাগারে উৎপন্ন প্রচুর গ্যাস এই পদ্ধতির মাধ্যমে কাজে লাগানো হয়। পলিমারাইজেশন দুই প্রকার, যথা : (ক) থার্মাল পলিমারাইজেশন এবং (খ) ক্যাটালাইটিক পলিমারাইজেশন। থার্মাল পলিমারাইজেশন সংঘটিত হয় ৯০০ হতে ১০০০° ফাঃ তাপমাত্রায় এবং ১৫০০ হতে ২০০০ পাঃ চাপ প্রতিবর্গ ইঞ্চিতে।
ক্যাটালাইটের পলিমারাইজেশন সংঘটিত হয় তুলনামূলকভাবে কম তাপে ও চাপে, যথা ৭০ হতে ৫০০° ফাঃ এবং ২০০ হতে ১২০০ পাউন্ড চাপ প্রতিবর্গ ইঞ্চিতে। ক্যাটালাইট হিসাবে ব্যবহার করা হয়। (ক) সালফিউরিক অ্যাসিড, (খ) সলিড ফসফোরিক অ্যাসিড, কপার পাইরোফসফেট এবং একটিভেটেড ক্লে। এই পদ্ধতি হতে প্রাপ্ত গ্যাসোলিনকে পলিমার গ্যাসোলিন বলে। এর অকটেন রেটিং ৮০ (প্রায়)।
(খ) অ্যালকাইলেশন (Akylation) :
এই পদ্ধতিতে বিসদৃশ পরমাণুগুলি ক্যাটালিস্টের উপস্থিতিতে সংঘটিত হয়ে থাকে। সাধারণত হাল্কা অলিফিল্ম গ্যাস এবং আইসো প্যারাফিন্স গ্যাসের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার ফলে বৃহৎ চেইন প্যারাফিনের সৃষ্টি হয় (তরল)। এদের অকটেন রেটিং ১০০ এর উপরে। এই জাতীয় গ্যাসোলিনকে ক্যাটালেট বলা হয়।
এটি উড়োজাহাজের জ্বালানি তৈরির বেন্ডিং উপাদান (Bending Compound) হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতিতে চাপ থাকে ৫০ পাউন্ড প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে এবং তাপমাত্রা থাকে ৫০° ফাঃ। সেজন্য এক্ষেত্রে রিফ্রিজারেশন যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয়। আইসো-অকটেন তৈরী হয় ক্যাটালাইটিক্যালী (Catalytically)। এতে ব্যবহার করা হয় সালফিউরিক অ্যাসিড এবং হাইড্রোফ্লোরিক অ্যাসিড (Hydrofluoric acid)।
(গ) আইসোমারাইজেশন (Isomerization) :
এটি এমন একটি পদ্ধতি যেখানে হাইড্রোকার্বনের মধ্যে কার্বনের অণুগুলি আরও সুবিন্যস্ত হয়। এর ফলে গ্যাসোলিনের গুণগত মান বৃদ্ধি পায় এবং তেলের অ্যান্টিনক (Anti-knock) ক্ষমতাও বেড়ে যায়। এই পদ্ধতিতে বুটেন অথবা পেনটেন উপাদানগুলিকে অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড ক্যাটালাইট দ্বারা প্রক্রিয়াজাত করলে এরা আইসোমারে রূপ ন্যায়।
বাষ্প ফেজ ক্র্যাকিং অথবা তরল ফেজ ক্র্যাকিং, যে কোন একটি পদ্ধতিতে ইহা সংঘটিত হতে পারে। ঐ সময় তাপমাত্রা ও চাপ যথাক্রমে ৩০০° ফাঃ এবং ২০০ পাঃ প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে রাখা হয়। প্রয়োজনে এই তাপমাত্রা ও চাপ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। আইসোটেন অ্যালকাইলেশন পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয়। অ্যাভিয়েশন গ্যাসের উদ্বায়িত্ব (Volatility) নিয়ন্ত্রণের জন্য আইসোপেনটেন বেল্ডিং পদার্থ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
(ঘ) হাইড্রোজিনেশন (Hydrogenation) :
এটি এমন একটি পদ্ধতি যেখানে অসংপৃক্ত হাইড্রোকার্বনের সাথে হাইড্রোজেন সংযোগ হওয়ার ফলে একটি প্যারাফিনের সৃষ্টি হয়।
যেমন :
C8H16 + H2 → C8H18
হাইড্রোজিনেশন দুই প্রকার যেমন— (১) অক্ষতিকর হাইড্রোজিনেশন (Nondestruc- tive Hydrogenation), (২) ক্ষতিকর হাইড্রোজিনেশন (Destructive Hydrogenation)। অক্ষতিকর হাইড্রোজিনেশন পদ্ধতিতে অসংপৃক্ত জ্বালানি যেমন- পলিমার গ্যাসোলিনকে সঙ্গতিপূর্ণ ক্যাটালাইট ব্যবহারের মাধ্যমে (৭০০° ফাঃ এবং ২০০ পাউণ্ড চাপ প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে) সংপৃক্ত জ্বালানিতে রূপান্তর করা যায়। এতে তেল থেকে সালফার অপসারিত হয়। এই জাতীয় জ্বালানির সাথে টেট্রাইথাইল লিড ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যায় । এই পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত করার সময় কিছুটা অকটেন নম্বরের বিচ্যুতি ঘটে।
ঙ) রিফর্মিং (Reforming) :
ন্যাপথা এক প্রকার হাইড্রোকার্বন যার প্রায় সম্পূর্ণ অংশ হচ্ছে গ্যাসোলিন। তাই ন্যাফথার ক্র্যাকিং পদ্ধতিকেই রিফর্মিং বলে। রিফর্মিং থার্মাল অথবা ক্যাটালাইটিক পদ্ধতিতে সংঘটিত হতে পারে। এতে তেলের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়, অকটেন রেটিং বেড়ে যায় এবং স্ফুটনাঙ্কের তাপমাত্রা কমে যায়। কিন্তু থার্মাল ক্র্যাকিং (রিফর্মিং) সংঘটিত হয় ৯০০° ফাঃ হতে ১০০০ ফাঃ তাপমাত্রায় এবং চাপ ২০০ হতে ১০০০ পাউন্ড প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে। বিভিন্ন পদ্ধতিতে তেলের গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য যে ব্যয় হয় (শোধনাগারের যন্ত্রপাতি) তার একটি নমুনা ১৬.২১ চিত্রে দেখানো হয়েছে।
আরও দেখুনঃ
- প্রেসার ট্যাঙ্কের সাহায্যে এয়ার ব্লিডিং পদ্ধতি
- ব্রেক পদ্ধতি | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং
- ডিফারেনসিয়াল খোলা এবং লাগানো
- প্রোপেলার শ্যাফট বা ড্রাইভ শ্যাফট
- স্বয়ংক্রিয় ট্রান্সমিশন পদ্ধতি
- মোটরগাড়ি শিল্প
2 thoughts on “অপরিশোধিত তেল পরিশোধনের অন্যান্য পদ্ধতি”