আজকের আলোচনার বিষয় গাড়ির ড্যাশবোর্ড প্যানেল। গাড়ির ড্যাশবোর্ড প্যানেল হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ কন্ট্রোল ও মনিটরিং ইউনিট, যা ড্রাইভারের সামনে স্থাপিত থাকে এবং গাড়ির বিভিন্ন যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিক সিস্টেমের তথ্য সরবরাহ করে। এতে থাকে:
স্পিডোমিটার
আরপিএম (RPM) মিটার
ফুয়েল লেভেল গেজ
ইঞ্জিন তাপমাত্রা গেজ
ব্যাটারি চার্জিং ইন্ডিকেটর
লুব্রিকেশন সতর্কীকরণ বাতি
ওডোমিটার ও ট্রিপ মিটার
এছাড়াও, ড্যাশবোর্ডে থাকে ইগনিশন সুইচ, উইন্ডশিল্ড উইপার সুইচ, লাইটিং কন্ট্রোল, এয়ার কন্ডিশন কন্ট্রোল এবং অডিও সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ প্যানেল।
কারিগরি শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা যানবাহনের বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ দেয়।
গাড়ির ড্যাশবোর্ড প্যানেল
গাড়ির ড্যাশবোর্ড
গাড়ির চালক গাড়ি দাঁড়ানো/চলতাবস্থায় তার নিজস্ব সিটে বসেই গাড়ির প্রত্যেকটি মুখ্য সিস্টেমের কার্যকারিতা জানার আবশ্যকীয়তা রয়েছে। তাই চালকের আসনের সামনে বা চোখের দৃষ্টির মধ্যে একটি ছেলোনো বোর্ড থাকে, যাতে বিভিন্ন ধরনের মিটার, গেল, সিগনাল লাইটের ন্যার ইন্সট্রুমেন্টের সংযোগ থাকে। এ বোডটিকে গাড়ির ড্যাশ বোর্ড প্যানেল/ইন্সট্রুমেন্ট প্যানেল বলা হয়ে থাকে।
চিত্র : ড্যাস বোর্ড প্যানেল
সার্বিকভাবে একখানা গাড়ির ড্যাশ বোর্ড প্যানেলের উদ্দেশ্য হল, গাড়ির চালককে সার্বক্ষণিকভাবে ইঞ্জিন ও এর সিস্টেমসমূহের কার্যকারিতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়া। যেমন গাড়ির গতি, ইঞ্জিনের ওয়ার্কিং টেম্পারেচার, লুব্রিকেটিং, চার্জিং ও ব্রেকিং সিস্টেমসমূহের কার্যকারিতা সম্পর্কে চালককে সর্বদায় নিশ্চিত থাকতে হবে।
এ ছাড়াও গাড়ির ট্যাংকে জ্বালানির সার্বক্ষণিক পরিমাণ সম্পর্কেও চালককে আনতে হয়। চালক গাড়ি থামিয়ে নিরীক্ষণ বা পরিমাপ করে এটা জানার বিড়ম্বনা হতে মুক্তি পাওয়ার জন্যই উল্লিখিত ড্যাশ বোর্ড প্যানেলে এ সকল সিস্টেম সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহকরণের জন্য বিভিন্ন ধরনের ইন্সট্রুমেন্ট রয়েে যা হতে চালক অনায়াসে যখন তখন যে কোন তথ্য জ্ঞাত হতে পারে ।
ড্যাশ বোর্ড ইন্সট্রুমেন্টের তালিকা
একটি আধুনিক মোটর গাড়ির ড্যাশ বোর্ড প্যানেলে কিছু সংখ্যক পেজ, মিটার, ইন্সট্রুমেন্ট ও সিগনাল লাইট নিয়ে শুধু পরিপূর্ণ নয়। এ ছাড়াও গাড়ির বাতি জ্বালানো হতে আরম্ভ করে গাড়ির বিলাসসামগ্রী পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের নিমিত্তে সুইচ ও কন্ট্রোলিং ডিভাইসসমূহ ও আজকাল এ ড্যাশ বোর্ডে যুক্ত থাকে।
সুতরাং একখানা আধুনিক গাড়ির ড্যাশ বোর্ডে মুখ্যত যে সকল ইন্সট্রুমেন্ট থাকে, তার একটি তালিকা নিম্নে প্রদান করে নেওয়া হলো:
অংশের নাম | কার্যকারিতা |
---|---|
ফুয়েল লেভেল গেজ/মিটার | গাড়ির ট্যাংকে থাকা জ্বালানির পরিমাণ দেখায়। |
ইঞ্জিন টেম্পারেচার গেজ | ইঞ্জিন কতটা গরম হয়েছে তা জানায়। |
ইঞ্জিন অয়েল প্রেসার গেজ বা লাইট | ইঞ্জিন অয়েলের চাপ কম হলে সতর্ক করে। |
স্পিডোমিটার | গাড়ির বর্তমান গতি কিলোমিটার/ঘণ্টায় দেখায়। |
আরপিএম মিটার (Tachometer) | ইঞ্জিনের ঘূর্ণনের হার প্রতি মিনিটে (RPM) দেখায়। |
অ্যামিটার | গাড়ির ইলেকট্রিক্যাল চার্জের প্রবাহ দেখায় (চার্জিং/ডিসচার্জিং)। |
অডোমিটার | গাড়ি চালিয়ে মোট কত কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে তা দেখায়। |
ট্রিপ অডোমিটার | নির্দিষ্ট যাত্রার জন্য আলাদা করে পথের পরিমাণ মাপা যায়। |
ভোল্ট মিটার | গাড়ির ব্যাটারির ভোল্টেজ বা বিদ্যুৎ চাপ দেখায়। |
ঘূর্ণনের দিক নির্দেশক বাতি | বাঁ/ডান মোড় নেয়ার সময় সিগনাল হিসেবে জ্বলে। |
ব্যাটারি চার্জিং ইন্ডিকেটর বাতি | ব্যাটারি ঠিকভাবে চার্জ হচ্ছে কিনা তা দেখায়; সমস্যা হলে জ্বলে। |
দরজা খোলা সতর্কীকরণ বাতি | কোনো দরজা খোলা থাকলে ড্যাশবোর্ডে বাতি জ্বলে ওঠে। |
লুব্রিকেটিং সিস্টেম সতর্কীকরণ বাতি | ইঞ্জিন অয়েল সিস্টেমে সমস্যা থাকলে সতর্ক করে। |
ফুয়েলের সর্বনিম্ন মাত্রা সতর্কীকরণ বাতি | জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে আগে থেকেই সাবধান করে। |
ড্যাশবোর্ড আলো সরবরাহ বাতি | রাতে ড্যাশবোর্ডের অংশগুলো আলো দিয়ে দৃশ্যমান করে। |
ইগনিশন সুইচ | গাড়ি স্টার্ট ও বন্ধ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। |
উইন্ডশীল্ড উইপার সুইচ | সামনের কাঁচ পরিষ্কারের জন্য উইপার চালু/বন্ধ করে। |
রেডিও কন্ট্রোলসমূহ | গাড়ির রেডিও চালু/বন্ধ ও চ্যানেল পরিবর্তন করতে ব্যবহৃত হয়। |
ক্যাসেট/সিডি/ডিভিডি প্লেয়ার কন্ট্রোল | মিডিয়া প্লেয়ার নিয়ন্ত্রণ করার সুইচ। |
এয়ার কন্ডিশন চালু/বন্ধ সুইচ | গাড়ির এসি চালু বা বন্ধ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। |
হট/কোল্ড এয়ার নিয়ন্ত্রণ লিভার | গাড়ির কেবিনে ঠান্ডা বা গরম বাতাসের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। |
সিগারেট লাইটার | গাড়ির অভ্যন্তরে সিগারেট ধরাতে ব্যবহৃত ইলেকট্রিক লাইটার। |
ঘড়ি ও ক্যাসেট | সময় দেখানোর ঘড়ি ও ক্যাসেট প্লেয়ারের অংশ। |
ডকুমেন্ট চেম্বার/ড্রয়ার | গাড়ির কাগজপত্র, পারমিট বা বুক রাখার জন্য ব্যবহৃত যায়গা। |
টেলিফোন/মোবাইল ফোন | কিছু গাড়িতে ইন-বিল্ট বা সংযুক্ত মোবাইল ব্যবস্থাও থাকে। |
লাইটিং সুইচ | হেডলাইট, ব্যাকলাইট বা পার্কিং লাইট চালু/বন্ধ করতে ব্যবহৃত হয়। |
ড্যাশ বোর্ড ইন্সট্রুমেন্টের প্রয়োজনীয় সতর্কতা
ড্যাশ বোর্ড প্যানেলের ইন্সট্রুমেন্ট সম্পর্কিত পালনীয় কিছু অত্যাবশ্যকীয় সতর্কতা:
-ব্যাটারির আর্থ সংযোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ব্যাটারির সংযোগ দিতে হয় অর্থাৎ নেগেটিভ আর্থিং গাড়ি হলে ব্যাটারি নেগেটিভ টার্মিনালকে আর্থিং করে সংযোগ দিতে হয় আবার পজেটিভ আর্থিং হলে পজেটিভ টার্মিনালকে আর্থের সংযোগ দিতে হয় ।
-ফুয়েল ট্যাংকের ট্যাংক ইউনিটের রোধের বৈদ্যুতিক সংযোগের প্রান্তটির সংযোগ সম্পর্কে নিশ্চিত থাকতে হয় । এ লাইটটি খোলা থাকলে স্পার্ক সংগঠিত হয়ে যে কোনো সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে ।
-কোনো কোনো চালক ইন্সট্রুমেন্ট প্যানেলে সতর্কীকরণ লাল বাতি জ্বলে উঠলেও তাকে কিছুটা অবহেলোা করে গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করেন। এ জাতীয় অবহেলো মারাত্মক বিপদের কারণ হতে পারে।
-বৈদ্যুতিক সার্কিটে গাড়ির মধ্যে আজকাল সহজ পরিমাণ ও পরিবর্তনযোগ্য কার্তুজ ফিউজ ব্যবহৃত হয়ে থাকে । সুতরাং প্রয়োজনে প্রত্যেকটি সার্কিটের জন্য নির্ধারিত পরিমাপের ফিউজ পরিবর্তন ও সংযোজন করতে হবে ।
-ড্যাশ বোর্ড ইন্সট্রুমেন্টের কোনো মিটার, গেজ বা ইন্ডিকেটিং লাইট অকেজো থাকলে প্রস্তুতকারকের সরবরাহকৃত সার্কিট ডায়াগ্রাম অনুসরণপূর্বক বিশেষজ্ঞ/ অটো ইলেকট্রিশিয়ান দ্বারা তা মেরামত করে তারপর ভ্রমণে বের হবে উচিত ।
-সর্বোপরি চালককে প্রত্যেকটি ইন্সট্রুমেন্টের প্রয়োজনীয়তা, কার্যকারিতা ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে হবে ।
ড্যাশবোর্ড ইন্সট্রুমেন্টের প্রতীকসমূহ জ্বলে ওঠার অর্থ
ড্যাশবোর্ডে মোটরযানের চালককে অবহিত করার জন্য ইন্সট্রুমেন্টের বিভিন্ন প্রতীক ব্যবহার করা হয় । ঐ সব প্রতীক জ্বলে ওঠার অর্থ নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
ড্যাশবোর্ড ইন্সট্রুমেন্টের প্রতীক
প্রশ্নমালা-২৪
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। ড্যাশবোর্ড প্যানেল কী?
গাড়ির নিয়ন্ত্রণ ও তথ্য প্রদানের ইউনিট।
২। ড্যাশবোর্ড প্যানেলে কি কি ইন্সট্রুমেন্ট থাকে?
স্পিডোমিটার, আরপিএম মিটার, ফুয়েল গেজ, তাপমাত্রা গেজ, ব্যাটারি ইন্ডিকেটর, ওডোমিটার, ট্রিপ মিটার ইত্যাদি।
৩। গাড়ির ড্যাশবোর্ড প্যানেলের মুখ্য উদ্দেশ্য কী?
ড্রাইভারকে গাড়ির অবস্থা সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করা।
৪। গাড়ির ড্যাশবোর্ড প্যানেল কোথায় অবস্থিত?
ড্রাইভারের সামনে।
৫। গাড়ির চালক যে কোনো তথ্য কোথা থেকে জানতে পারবে?
ড্যাশবোর্ড প্যানেল থেকে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। গাড়ির ড্যাশবোর্ড প্যানেলের ইন্সট্রুমেন্টের তালিকা দাও।
উত্তর:
গাড়ির ড্যাশবোর্ড প্যানেলের প্রধান ইন্সট্রুমেন্টগুলো হলো:
স্পিডোমিটার
আরপিএম (RPM) মিটার
ফুয়েল লেভেল গেজ
ইঞ্জিন তাপমাত্রা গেজ
ব্যাটারি চার্জিং ইন্ডিকেটর
লুব্রিকেশন সতর্কীকরণ বাতি
ওডোমিটার
ট্রিপ মিটার
রচনামূলক প্রশ্ন
১। গাড়ির ড্যাশবোর্ড ইন্সট্রুমেন্টের প্রয়োজনীয় সতর্কতার বিবরণ দাও।
উত্তর:
গাড়ির ড্যাশবোর্ড ইন্সট্রুমেন্টগুলো ড্রাইভারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে যা গাড়ির সুষ্ঠু ও নিরাপদ চলাচলের জন্য অত্যাবশ্যক। এই ইন্সট্রুমেন্টগুলি থেকে প্রাপ্ত সতর্কতাগুলো গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করা উচিত। যেমন:
- স্পিডোমিটার: গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং দ্রুত চালানোর ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমায়।
- আরপিএম মিটার: ইঞ্জিনের কার্যকারিতা ও চালানোর ধরন বুঝতে সাহায্য করে, অতিরিক্ত ঘূর্ণন এড়ানো জরুরি।
- ফুয়েল লেভেল গেজ: জ্বালানি পর্যাপ্ত আছে কিনা জানায়, হঠাৎ ফুয়েল ফুরিয়ে যাওয়া থেকে বাঁচায়।
- ইঞ্জিন তাপমাত্রা গেজ: ইঞ্জিন অতিরিক্ত গরম হলে সতর্ক করে, যাতে ইঞ্জিন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
- ব্যাটারি চার্জিং ইন্ডিকেটর: ব্যাটারি চার্জিং সমস্যা নির্দেশ করে, যা বিদ্যুৎ সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
- লুব্রিকেশন সতর্কীকরণ বাতি: ইঞ্জিন তেলের চাপ কমে গেলে সতর্ক করে, যা ইঞ্জিনের ক্ষতি এড়াতে সাহায্য করে।
সুতরাং, ড্যাশবোর্ডে প্রদর্শিত যে কোন সতর্ক সংকেতকে অবহেলা না করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
২। গাড়ির ড্যাশবোর্ড ইন্সট্রুমেন্টের বিভিন্ন প্রকার প্রতীক ও তার অর্থ সম্পর্কে বর্ণনা দাও।
উত্তর:
গাড়ির ড্যাশবোর্ডে বিভিন্ন প্রতীক থাকে যা গাড়ির অবস্থা সম্পর্কে দ্রুত এবং সহজে তথ্য দেয়। প্রধান প্রতীক ও তাদের অর্থ হলো:
- ইঞ্জিন চেক লাইট: ইঞ্জিনে কোনো সমস্যা বা ত্রুটি শনাক্ত হলে জ্বলে ওঠে।
- তেলের চাপ সতর্কীকরণ: ইঞ্জিন তেলের চাপ কমে গেলে সচেতন করে।
- ব্যাটারি চার্জিং সতর্কতা: ব্যাটারির চার্জিং সিস্টেমে সমস্যা হলে প্রদর্শিত হয়।
- ফুয়েল সতর্কীকরণ: জ্বালানি কমে আসলে এই বাতি জ্বলে।
- ব্রেক সিস্টেম সতর্কতা: ব্রেকে কোনো সমস্যা বা পার্কিং ব্রেক যুক্ত থাকলে নির্দেশ করে।
- টেম্পারেচার ওভারহিট সতর্কতা: ইঞ্জিন অতিরিক্ত গরম হলে সক্রিয় হয়।
- এয়ারব্যাগ সতর্কতা: সেফটি এয়ারব্যাগের সমস্যা নির্দেশ করে।
- টায়ার প্রেসার মনিটরিং: টায়ারের চাপ কমে গেলে এই লাইট জ্বলে।
এই প্রতীকগুলো চালকের জন্য জরুরি নির্দেশিকা সরবরাহ করে, যা গাড়ির সুরক্ষা ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণে সহায়ক।