এলপিজি ব্যবহারের সুবিধা এবং অসুবিধা নিয়ে আজকের আলোচনা। “অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং” বিষয়ের “ফুয়েলস এন্ড লুব্রিক্যান্টস” বিভাগের একটি পাঠ। এল পি জি মূলত বিউটেন ও প্রোপেন এর সমন্বয়ে গঠিত হয়, অপরদিকে প্রাকৃতিক গ্যাসে থাকে লঘু ভরের মিথেন ও ইথেন। এল পি জি-নির্ভর ব্যবস্থা উদ্ভাবিত হচ্ছে যেখানে এস এন জি (সিনথেটিক ন্যাচারাল গ্যাস) বা প্রাকৃতিক গ্যাস এর একইসাথে স্থানীয় ভাবে মজুদ ও বিতরণ নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে শহরের ৫০০০ এর অধিক বাড়ীতে সেবা দেয়া যায়। এতে বিভিন্ন দূরবর্তী স্থানে পরিবহনের খরচ কমানো সম্ভব। এ প্রযুক্তি বর্তমানে জাপানের শহর ও গ্রামগুলোতে বহুল ব্যবহ্রত হচ্ছে।
এলপিজি ব্যবহারের সুবিধা এবং অসুবিধা
এল.পি.জি ব্যবহারের সুবিধা:
- (ক) এল.পি.জি খুবই পরিচ্ছন্নভাবে জ্বলে।
- (খ) এল.পি.জি. ব্যবহারে মিতব্যয়িতা বেশী।
- (গ) এল.পি.জি ব্যবহারে ইঞ্জিনের কার্বন কম পড়ে –
- (ঘ) এল.পি.জি ব্যবহারে ইঞ্জিনের ক্ষয় ও ক্ষতি কম হয় ।
- (ঙ) এল.পি.জি ব্যবহারে ইঞ্জিনের তলানি কম পড়ে
- (চ) এল.পি.জি ব্যবহারে ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ।
- (ছ) এল.পি.জি ব্যবহারে ইঞ্জিনের ধোঁয়া কম হয় । (জ এল.পি.জি ব্যবহারে ইঞ্জিনের ব্লো-বাই-নকিং ও ডিটোনেশন খুব কম হয়।
- (ঝ) এল.পি.জি ট্যাঙ্কের পাম্পে থাকে বল সিলিন্ডারে সরবরাহ করতে কোন পাম্পের দরকার হয় না।
- (ঞ) কয়লা এবং কাঠ অথবা কেরোসিন দিয়ে রান্নাবান্না করার চেয়ে এল.পি.জি দিয়ে রান্না করা অনেক ঝামেলামুক্ত ও নিরাপদ ।
- (ট) এল.পি.জি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এবং কম তাপমাত্রায় ব্যবহার করা যায়। (ঠ) সম্পূর্ণভাবে বাষ্পীভূত হয় এবং বাতাসের সাথে খুব দ্রুত মিশে যেতে পারে বলে ব্যবহারে খুব সুবিধা।
এল.পি.জি ব্যবহারের অসুবিধা:
- (ক) এল.পি.জি ব্যবহারের জন্য এক বা একাধিক ট্যাঙ্ক দরকার হয়। (খ) এল.পি.জি-এর ট্যাঙ্কের প্রাথমিক মূল্য বেশী।
- (ঘ) এল.পি.জি ধারণ ও বহন ব্যয় বেশী।
- (ঘ) এল.পি.জি মোটরযানে ব্যবহারের জন্য বাড়তি কিছু ব্যবস্থা এবং বিশেষ ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হয়। ট্যাঙ্ক প্রায় খালি হয়ে এলে জ্বালানি সঙ্কট দেখা দেয়। দূরযাত্রার জন্য অতিরিক্ত ট্যাঙ্ক ব্যবহার করতে হয়।
- (ঙ) আমাদের দেশে যেহেতু এল.পি.জি-র উৎপাদন ও ব্যবহার ব্যাপকতর হয় নি তাই এর বিতরণ ও ব্যবহার সীমিত। কারণ মোটরযানে ব্যবহারের জন্য প্রধান প্রধান দুই তিনটি শহর ছাড়া এল.পি.জি আর কোথাও বাজারজাত করা হয় না বিধায় ব্যাপকভাবে মোটরযানে ব্যবহার করা অসুবিধাজনক এবং গৃহস্থালিতে ব্যবহারেও অসুবিধা দেখা দেয়।
একজস্ট গ্যাস অ্যানালাইজার :
মোটরযানের পোড়া গ্যাস বিভিন্ন কারণে ও প্রয়োজনে বিশ্লেষণ করা হয়। যেমন : (ক) ইঞ্জিনে ব্যবহৃত জ্বালানির কত অংশ প্রজ্বলিত হয়ে কার্যক্ষমতায় রূপ পাচ্ছে, (খ) কত ভাগ জ্বালানি অপচয় হচ্ছে, (গ) ইঞ্জিনে লীন (Lean) অথবা রীচ (Rich) মিশ্রণ প্রবেশ করছে কিনা তাও নিরূপণ করা যায়।
পোড়া গ্যাস বিশ্লেষণ দুটি যন্ত্রের সাহায্যেই করা যায়। (১) (orsat) ওরসাট অ্যাপারেটাস এবং (২) বিদ্যুৎচালিত একজস্ট গ্যাস অ্যানালাইজার। ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষণের সুবিধার দিক বিবেচনা করে বর্তমানে বিদ্যুৎচালিত একজস্ট গ্যাস অ্যানালাইজার ব্যবহার করা হয়। উহার কার্যক্রম নিম্নে চিত্রের সাহায্যে বর্ণনা করা হল।
বিদ্যুৎচালিত গ্যাস বিশ্লেষণকারী যন্ত্র কিভাবে গাড়ির টেইল পাইপের সাথে সংযোগ করা হয় তা চিত্রের সাহায্যে দেখানো হয়েছে। গ্যাস বিশ্লেষণকারী যন্ত্রটি থার্মোকণ্ডাকটিভিটি পদ্ধতিতে কাজ করে থাকে। ইহা একজস্ট গ্যাসের দুটি মূল উপাদানের বিশ্লেষণ করে থাকে। এর একটি হাইড্রোজেন (H2) এবং অপরটি কার্বন ডাই-অক্সাইড। হাইড্রোজেন তাপের সুপরিবাহী। কিন্তু কার্বন ডাই-
অক্সাইড তাপের কুপরিবাহী। রোধক কয়েলে উহার ফলে তাপের তারতম্য ঘটে থাকে। গ্যাস বিশ্লেষণকারী যন্ত্রটি দুইটি অংশে বিভক্ত। একটি হচ্ছে সেল ইউনিট যা টেইল পাইপের সাথে লাগানো হয় এবং অপরটি গ্যালভানোমিটার। গ্যালভানোমিটারের ডায়ালের উপর দুর্বল (lean), সঠিক (correct) এবং অত্যধিক—এই তিনটি সঙ্কেত দেওয়া থাকে। ইঞ্জিনের জ্বালানি প্রজ্বলনে যা ঘটে তা ডায়ালে প্রদর্শিত হয় ।
সেল ইউনিটকে টেইল পাইপের সাথে সংযোগ দিয়ে এবং গ্যালভানোমিটারকে ব্যাটারীর সাথে সংযোগ সুসম্পন্ন করার পর ইঞ্জিন চালু করতে হয়। ইঞ্জিন কিছু সময় চালু রেখে পরীক্ষাটি সম্পন্ন করতে হয়। সেল ইউনিটে দুটি কয়েল রয়েছে। কয়েল দুটি N এবং N2 দ্বারা চিহ্নিত।
পোড়া গ্যাস যখন সেল ইউনিটে প্রবেশ করে তখন উহাতে যদি হাইড্রোজেনের পরিমাণ বেশী থাকে তাহলে N2 কয়েল বেশী উত্তপ্ত হয় এবং N, কয়েল কম উত্তপ্ত হয়। এমতাবস্থায় গ্যালভানোমিটার ডায়ালের উপর কাঁটাটি রীচ মিশ্রণ প্রদর্শন করে।
পোড়া গ্যাসে যদি কার্বন ডাই-অক্সাইড বেশী থাকে তবে পূর্বের রিডিং-এর সম্পূর্ণ বিপরীত রিডিং বা দুর্বল মিশ্রণ প্রদর্শিত হবে। গ্যাস অ্যানালাইজারের ডায়ালের উপর তিনটি রিডিং থাকে। যেমন (ক) লীন (দুর্বল) মিশ্রণ, (খ) সঠিক মিশ্রণ, (গ) রীচ বা সবল মিশ্রণ, কোন কোন মিটারে কম্বাশন রেশিও নির্দেশিত থাকে।
সাধারণত ১৪.৫ : ১ = শতকরা একশত ভাগ প্রজ্বলন নির্দেশ করে। আবার ১১ : ১ = শতকরা ৬৩ ভাগ প্রজ্বলন নির্দেশ করে। ইঞ্জিনের সঠিক অবস্থা জানার জন্য লিকেজ টেস্ট এবং কম্প্রেশন টেস্ট করাও একান্ত প্রয়োজন।
আরও দেখুনঃ
- টু-স্ট্রোক ডবল অ্যাকটিং স্টীম ইঞ্জিন
- বয়লারের আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি
- ব্যাবকক এবং উইলকক বয়লার
- লোকোমোটিভ বয়লার
- সুপার হিটার
- মোটরগাড়ি শিল্প
1 thought on “এলপিজি ব্যবহারের সুবিধা এবং অসুবিধা”