Site icon অটোমোটিভ গুরুকুল [ Automotive Gurukul ], GOLN

ইলেকট্রোলাইটের ব্যবহার

ইলেকট্রোলাইটের ব্যবহার

আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় হলো ইলেকট্রোলাইটের ব্যবহার। ইলেকট্রোলাইট একটি গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক পদার্থ, যা বিদ্যুৎ পরিবাহিত করার ক্ষমতা রাখে এবং বিভিন্ন প্রযুক্তি ও শিল্পক্ষেত্রে এর বহুল ব্যবহার রয়েছে।

বিদ্যুৎ রসায়নের (Electrochemistry) অন্যতম মৌলিক উপাদান হিসেবে ইলেকট্রোলাইট আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, ব্যাটারি, ইলেকট্রোপ্লেটিং, ইলেকট্রোলাইসিস, চিকিৎসা বিজ্ঞান ও শিল্প কারখানার নানা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এই পাঠে আমরা জানব, ইলেকট্রোলাইট কী, এটি কীভাবে কাজ করে এবং বাস্তব জীবনে এর ব্যবহার কোথায় কোথায় দেখা যায়। চলুন, ইলেকট্রোলাইটের চমৎকার ও কার্যকরী জগতে প্রবেশ করি।

ইলেকট্রোলাইটের ব্যবহার (Uses of Electrolyte )

ইলেকট্রোলাইট হলো এমন একটি রাসায়নিক দ্রবণ, যা বিদ্যুৎ পরিবাহিত করতে সক্ষম এবং বৈদ্যুতিক বিভবের প্রভাবে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আয়নে বিভক্ত হয়। এটি লিড-অ্যাসিড স্টোরেজ ব্যাটারির একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

লিড অ্যাসিড ব্যাটারিতে ব্যবহৃত ইলেকট্রোলাইট সাধারণত ডিস্টিল্ড ওয়াটার (Distilled Water)সালফিউরিক অ্যাসিড (H₂SO₄) এর নির্দিষ্ট অনুপাতে সংমিশ্রণে তৈরি করা হয়। সাধারণ অনুপাতে এতে থাকে
৬২% বিশুদ্ধ পানি৩৮% সালফিউরিক অ্যাসিড। এই দ্রবণই বাজারে সাধারণত “ব্যাটারির এসিড” বা “এসিড সলিউশন” নামে বোতলজাত আকারে পাওয়া যায়।

আপেক্ষিক গুরুত্ব (Specific Gravity):

ইলেকট্রোলাইটের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এর আপেক্ষিক গুরুত্ব (Specific Gravity)। সাধারণত প্রস্তুতকৃত ইলেকট্রোলাইটের আপেক্ষিক গুরুত্ব থাকে ১.২৫০

এই গুরুত্ব পরিমাপ করার জন্য হাইড্রোমিটার ব্যবহার করা হয়, যার সাহায্যে ব্যাটারির চার্জের অবস্থা সহজেই নির্ধারণ করা যায়।

তাপমাত্রার প্রভাব:

ইলেকট্রোলাইট সর্বোত্তম কার্যকারিতা প্রদান করে ৮০°F থেকে ১৫০°F (প্রায় ২৭°C থেকে ৬৫°C) তাপমাত্রার মধ্যে।

 

 

ইলেকট্রোলাইটের প্রয়োজনীয়তা:

ইলেকট্রোলাইট, বিশেষত সালফিউরিক অ্যাসিড (H₂SO₄) এবং ডিস্টিল্ড পানির মিশ্রণ, একটি ব্যাটারির অন্যতম প্রধান উপাদান। এটি ব্যাটারির অভ্যন্তরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

একটি সাধারণ লিড-অ্যাসিড ব্যাটারিতে, সালফিউরিক অ্যাসিড পজিটিভ ও নেগেটিভ প্লেটের (lead plates) সঙ্গে রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে প্রতিটি সেলে প্রায় ২ ভোল্ট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। এইভাবে, একটি ৬ ভোল্ট ব্যাটারিতে ৩টি, ১২ ভোল্ট ব্যাটারিতে ৬টি এবং ২৪ ভোল্ট ব্যাটারিতে ১২টি সেল সিরিজে সংযুক্ত থাকে।

ডিসচার্জ অবস্থায় ইলেকট্রোলাইটের ভূমিকা:

ব্যাটারির ডিসচার্জ (বিদ্যুৎ সরবরাহ) অবস্থায়, ব্যাটারির অভ্যন্তরে নিম্নোক্ত রাসায়নিক প্রক্রিয়া ঘটে:

চার্জ অবস্থায় ইলেকট্রোলাইটের কাজ:

ব্যাটারি পুনরায় চার্জ হওয়ার সময়, ব্যাটারি চার্জার বা যানবাহনের জেনারেটর থেকে সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ দ্বারা:

 

ইলেকট্রোলাইট প্রস্তুত প্রণালি:

যখন ব্যাটারির জন্য ইলেকট্রোলাইট তৈরি করতে হয়, তখন নিম্নোক্ত নিয়মগুলো অনুসরণ করতে হবে:

মনে রাখতে হবে—সালফিউরিক অ্যাসিড বা ইলেকট্রোলাইট শরীর, চোখ ও কাপড়ের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই প্রস্তুত ও ব্যবহারকালে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

 

ইলেকট্রোলাইট পরীক্ষণ প্রণালি :

ব্যাটারির বিদ্যুৎ সরবরাহ ক্ষমতা মূলত নির্ভর করে ইলেকট্রোলাইটে বিদ্যমান সালফিউরিক অ্যাসিডের ঘনত্বের উপর। একটি কার্যকর ও সক্রিয় ব্যাটারিতে সঠিক মাত্রার অ্যাসিড ও পানি থাকতে হয়, যা ব্যাটারির চার্জ বা ডিসচার্জ অবস্থার নির্দেশক হিসেবে কাজ করে।

একটি পূর্ণচার্জ ব্যাটারিতে সাধারণত ৩৮% সালফিউরিক অ্যাসিড এবং ৬২% ডিস্টিল্ড ওয়াটার থাকে। অন্যদিকে, সম্পূর্ণ ডিসচার্জ অবস্থায় ব্যাটারিতে অ্যাসিডের পরিমাণ কমে গিয়ে ১৫% অ্যাসিড এবং ৮৫% পানি হয়ে যায়। অর্থাৎ, ব্যাটারির চার্জ অবস্থা বুঝতে গেলে ইলেকট্রোলাইটের মধ্যে অ্যাসিডের আপেক্ষিক গুরুত্ব (Specific Gravity) পরিমাপ করতে হবে।

পরীক্ষণ পদ্ধতি:

এই পরিমাপের জন্য ব্যবহার করা হয় হাইড্রোমিটার (Hydrometer) নামক একটি বিশেষ যন্ত্র।

হাইড্রোমিটারের ব্যবহার পদ্ধতি:

পরীক্ষার সময় হাইড্রোমিটার ইলেকট্রোলাইটে চুবিয়ে কিছু তরল টেনে নেওয়া হয়। তারপর ফ্লোটের স্তর অনুযায়ী আপেক্ষিক গুরুত্বের মান নির্ণয় করা হয়।

এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্যণীয়, হাইড্রোমিটারের ফ্লোট যেন সম্পূর্ণভাবে তরলের মধ্যে ভাসমান অবস্থায় থাকে, নইলে ফলাফল ভুল হতে পারে।

এইভাবে সহজেই ব্যাটারির প্রত্যেকটি সেলের চার্জ অবস্থা জানা যায়, এবং প্রয়োজন অনুযায়ী চার্জ দেওয়া বা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।

 

 

ইলেকট্রোলাইট সম্পর্কিত সতর্কতাসমূহ:

সালফিউরিক এসিড শরীরের পরিধেয় কাপড় ও যন্ত্রাংশের জন্য ক্ষতিকর। সুতরাং এটা হ্যান্ডেলিং করাকালীন সময়ে সতর্ক থাকতে হবে। এটা যেন উল্লিখিত জিনিসের সংস্পর্শে না আসে। ইলেকট্রলাইটে প্রায় ৩২% সালফিউরিক এসিড রয়েছে যা শরীর ও পরিধেয় বস্ত্র পুড়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট।

সুতরাং শরীর ও পরিধেয় বস্তুকে ও ইলেকট্রোলাইটের সংস্পর্শে মুক্ত রাখতে হবে। ইলেকট্রোলাইট তৈরি করতে পানিতে ধীরে ধীরে এসিড সংমিশ্রণ করতে হবে। ইলেকট্রোলাইট তৈরি কালে হ্যান্ড গ্লোভস ও মুখোশ পরিধান করে তৈরি করা উত্তম। কারণ ইহা হতে যে গ্যাস নির্গত হয় তা মানুষের জন্য ক্ষতিকর ।

ইলেকট্রোলাইট তৈরিকালে সলিউশন কিছু সময়ের জন্য রাসায়নিক বিক্রিয়াজনিত কারণে উত্তপ্ত হয়। সুতরাং কিছুটা ঠাণ্ডা হওয়ার পর তা ব্যাটারিতে ব্যবহার করা উত্তম। কোনো ধাতু নির্মিত পাত্রে ইলেকট্রোলাইট তৈরি করা উচিত নয়। কাচের পাত্রে অথবা পুরাতন ব্যাটারির খাঁচায় এ ইলেকট্রোলাইট তৈরি করতে হয়।

ইলেকট্রোলাইট একটি সহজ দাহ্য পদার্থ, সুতরাং এর পাশে কোনো লাইটার জ্বালানো উচিত নয়। হাইড্রোমিটার ব্যবহারকালীন সময়ে সতর্ক থাকতে হবে যেন শরীরের পরিধেয়তে না পড়ে।

 

 

প্রশ্নমালা- ২৪

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :

১. ইলেকট্রোলাইট কী?

২. ইলেকট্রোলাইটের উপাদানগুলো কী কী?

৩. ইলেকট্রোলাইটের উপাদানগুলোর হার কত?

৪. ইলেকট্রোলাইটের প্রস্তুতকৃত আপেক্ষিক গুরুত্ব কত?

৫. ইলেকট্রলাইটে কত অনুপাতে সালফিউরিক এসিড রয়েছে?

 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :

১. ইলেকট্রোলাইট বলতে কী বুঝায়?

২. ইলেকট্রোলাইটের উপাদানগুলোর হার উল্লেখ কর ।

৩. ব্যাটারি চার্জের পরিমাণ সহজে নিরূপণ প্রণালি লেখ ।

৪. ইলেকট্রোলাইট তৈরিকালে সলিউশন প্রস্তুত প্রণালি লেখ ।

 

রচনামূলক প্রশ্ন :

১.ইলেকট্রোলাইটের প্রস্তুত প্রণালি বর্ণনা কর ।

২. একটি অটোমোবাইলের সাপ্তাহিক রক্ষণাবেক্ষণগুলো বর্ণনা কর।

৩. একটি অটোমোবাইলের মাসিক রক্ষণাবেক্ষণগুলো বর্ণনা কর।

৪. একটি অটোমোবাইলের ত্রৈমাসিক রক্ষণাবেক্ষণগুলো বর্ণনা কর ।

Exit mobile version