ইঞ্জিন পুনঃ একত্রকরণ

ইঞ্জিন পুনঃ একত্রকরণ – এই পাঠটি “অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং” বিষয়ের “ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ, কারণ ও প্রতিকার” অধ্যায়ের একটি পাঠ।

cropped AutomotiveGOLN.com Logo 512x512 1 1 ইঞ্জিন পুনঃ একত্রকরণ

ইঞ্জিন পুনঃ একত্রকরণ

 

প্রথমে পিস্টন রিংগুলি পিস্টনে লাগাতে হবে। তারপর রিং কম্প্রেসর দ্বারা রিংগুলিকে সঙ্কুচিত করে পিস্টনের উপরের দিকে হতে সিলিন্ডারে প্রবেশ করানো হয়। প্রয়োজনবোধে আস্তে আস্তে পিস্টনের উপর প্লাষ্টিক হাতুড়ির সাহায্যে আঘাত দিতে হয়। 

ইঞ্জিন পুনঃ একত্রকরণ | ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ, কারণ ও প্রতিকার | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

ফলে পিস্টন সিলিন্ডারে ঢুকে যায়। এরপর ফ্র্যাঙ্কশ্যাফটকে ক্র্যাঙ্ককেসের সঙ্গে মেইন বিয়ারিং দ্বারা বাধা হয়। বাধার পর ক্র্যাঙ্কশ্যাফট বারবার ঘুরিয়ে দেখতে হয় এটি সহজ-সরলভাবে ঘুরে আসে কিনা। যদি শক্ত মনে হয় তাহলে মেইন বিয়ারিং খুলে দেখতে হবে যে, কোন্ কোন্ জারনালে দাগ পড়েছে। যে জারনালগুলিতে দাগ পড়বে ঐ গুলিকে এমারী কাপড় এবং নারিকেলের রশি দ্বারা ভালভাবে গ্রাইন্ডিং করতে হবে। সব দিকে যাতে সমানভাবে গ্রাইন্ডিং হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত।

কিছু সময় গ্রাইন্ডিং করার পর ক্র্যাঙ্কশ্যাফট পুনরায় বেঁধে পরীক্ষা করতে হবে এবং দেখতে হবে এটি লাগানো ঠিক হয়েছে কিনা বা সহজে ঘুরে আসে কিনা অথবা লাগানো শক্ত হয়েছে কিনা। ইঞ্জিনে সংযোগের পূর্বে কানেকটিং রডের বিগ এন্ড (big end) বিয়ারিং। ক্র্যাঙ্ক পিন- এর সাথে লাগিয়ে দেখতে হবে যে, এটি হাত দ্বারা ঘুরাতে শক্ত লাগে না সহজে ঘোরে।

ইঞ্জিন পুনঃ একত্রকরণ | ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ, কারণ ও প্রতিকার | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

পিস্টন রিং পিস্টনে লাগানোর পূর্বে সিলিন্ডার বোরের মধ্যে ঢুকিয়ে দেখতে হবে যে পিস্টন রিং-এর ক্লিয়ারেন্স কত আছে। যদি কম থাকে তবে রিং-এর মুখ ফাইল দ্বারা ঘর্ষণ করে ফাঁক বাড়িয়ে দিতে হবে। তারপর রিং পিস্টনে লাগিয়ে সিলিন্ডারে পিস্টন লাগাতে হবে।

 

ইঞ্জিন পুনঃ একত্রকরণ | ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ, কারণ ও প্রতিকার | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

মেইন বিয়ারিংসহ সাধারণত ৭৫ হতে ৯০ ফুট পাউন্ডে আঁটানো হয়। বিয়ারিং সাধারণত ৫০ হতে ৭৫ ফুট পাউন্ডে আঁটানো হয়। ইঞ্জিন বাঁধার সময় (মেইন বিয়ারিং, বিগ এন্ড বিয়ারিং, পিস্টন রিং, পিস্টন ইত্যাদি লাগানোর সময়) লুব অয়েল ব্যবহার করা হয় সহজভাবে ঘোরার জন্য এবং পিচ্ছিল হওয়ার জন্য। ক্যামশ্যাফট, অয়েল পাম্প, ছাঁকনি ইত্যাদি সুবিধামত সময়ে লাগিয়ে দিতে হয়। এরপর গ্যাসকেটসহ অয়েল পাম্প লাগাতে হবে।

ইঞ্জিন পুনঃ একত্রকরণ | ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ, কারণ ও প্রতিকার | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

পিস্টন রিংসহ পিস্টন সিলিন্ডারে ঢুকানোর সহজ পদ্ধতি হচ্ছে চাপযুক্ত পিস্টন রিং-এর সাহায্য নেওয়া। আমাদের দেশের বেশীর ভাগ কারখানায় রিং কম্প্রেসর নেই। এখানে পিস্টনটিকে সিলিন্ডারের উপর বসিয়ে রিং-এর দুই মুখ স্ক্রু-ড্রাইভার এর সাহায্যে দুইজন জোরে চেপে ধরবে এবং রিং এর মধ্যবর্তী স্থানে অন্য একজন স্ক্রু ড্রাইভার দ্বারা জোরে চেপে ধরবে। এর ফলে রিংটি তার খাঁজের মধ্যে বসে যাবে এবং পিস্টনের উপর একটু আঘাত দিলেই তা সিলিন্ডারে ঢুকে যাবে। এভাবে সকল পিস্টন সিলিন্ডারে ঢুকানো হয়।

(খ) ইঞ্জিনটি এখন খাড়া করে হেড লাগাতে হবে। হেড লাগানোর আগে এতে সকল ভাল্ভ কম্প্রেসরের সাহায্যে লাগাতে হবে। ভাল্ভ লাগানোর পর হেড গ্যাসকেট যথাযথভাবে সিলিন্ডার ব্লকের উপর গ্যাসকেট সিমেন্ট দ্বারা বসিয়ে দিতে হবে। টর্ক রেঞ্জের সাহায্যে হেডের নাটগুলি নিয়মমাফিক আঁটাতে হবে। হেডের নাট সাধারণত ৩০ হতে ৮৫ ফুট পাউন্ডে আঁটানো হয়। অবশ্য সব ইঞ্জিনে সমান নয়। নির্মাতার নির্দেশ অনুসারে আঁটানোই উত্তম। রকার আর্মসহ রকার শ্যাফট এই সময়ই লাগনো উচিত।

ইঞ্জিন পুনঃ একত্রকরণ | ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ, কারণ ও প্রতিকার | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

(গ) ক্যাম ও ফ্যাঙ্কশ্যাফট লাগিয়ে ভাল্ভ টাইমিং করতে হয়। ক্র্যাঙ্কশ্যাফটের সাথে ফ্লাইহুইল এবং ক্লাচ ইউনিট যথাযথভাবে লাগাতে হয়। ক্লাচ ইউনিট সংযোজনের সময় মেইন শ্যাফট দ্বারা ক্লাচ হাব এর মধ্যে ঢুকিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হয় যে ক্লাচ ঠিকমত লেগেছে কিনা । 

(ঘ) এমতাবস্থায় ইঞ্জিনটিকে রশি বা চেইন দ্বারা খুব ভালভাবে বেঁধে ক্রেন বা বাঁশের সাহায্যে

ইঞ্জিন পুনঃ একত্রকরণ | ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ, কারণ ও প্রতিকার | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

চেসিসে পুনঃস্থাপন করতে হবে এবং ইঞ্জিন মাউন্টিং বোল্টগুলি ভালভাবে এঁটে দিতে হবে। এখন একজস্ট, ইনলেট মেনিফোল্ড, কার্বুরেটর এ.সি. পাম্প, নিম্নচাপ পাম্প, বুস্টার, ফ্যান্টবেল্ট ইত্যাদি যন্ত্রগুলি তাদের স্বস্থানে যথাযথভাবে স্থাপন করতে হবে।

(ঙ) ইগনিশন টাইমিং করতে হবে এবং ট্যাপেট সমন্বয় করতে হবে। ইঞ্জিনের মধ্যে লুব অয়েল দিতে হবে। রেডিয়েটর পুনঃস্থাপন করে পানি দ্বারা পূর্ণ করতে হবে।

 

(চ) এমতাবস্থায় ইঞ্জিনটি চালানোর জন্য জ্বালানি ট্যাঙ্কে জ্বালানি সরবরাহ করতে হবে। সেলফ স্টার্টারের সাহায্যে ইঞ্জিনটি চালু করতে হবে। ডিজেল ইঞ্জিন হলে চালু করার

ইঞ্জিন পুনঃ একত্রকরণ | ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ, কারণ ও প্রতিকার | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

পূর্বে এয়ার ব্লিডিং করতে হবে। কিছুদিন চলার পর আইডেলিং ও ট্যাপেট সমন্বয় করতে হয়। ওভারহলিং করার পর ইঞ্জিন ৮/১০ ঘন্টা আইডেলিং অবস্থায় (no load condition) চালনা করতে হয় এবং রেডিয়েটর ড্রেন কর্ক খুলে রাখতে হয়। এজন্য রেডিয়েটরে সর্বদা পানি সরবরাহ করতে হয়। বেশ কয়েক ঘন্টা চালানোর পর রেডিয়েটর ড্রেন কর্কটি বন্ধ করে দিতে হয়। এভাবেই একটি ইঞ্জিন ওভারহলিং করতে হয়।

ইঞ্জিন পুনঃ একত্রকরণ | ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ, কারণ ও প্রতিকার | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

সব নাটবোল্ট সমভাবে আঁটানোর জন্য টর্ক রেঞ্জের ব্যবহার করা হয়। বিগ এন্ড ইঞ্জিন ওভারহলিং হওয়ার পর মোটরযানটিতে বেশী পিক-আপ দিতে নেই। এতে পিস্টন রিং ও সিলিন্ডার ওয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ওভারহলিং-এর পর ইঞ্জিন ২৫/৩০ মাইলের বেশী বেগে চালনা করা উচিত নয়।

ইঞ্জিন ৫০০/৬০০ মাইল চালিত হলে পিস্টন রিং পিস্টন ও সিলিন্ডারের মধ্যে পাকাপোক্তভাবে সেট হয় এবং মেইন ও বিগ এন্ড বিয়ারিং পূর্ণভাবে বাঁধা মুক্ত হয়ে উচ্চগতিতে চলাচলের জন্য উপযুক্ততা লাভ করে। এমতাবস্থায় ইঞ্জিন উচ্চগতিতে চালনা করা যায়। ইঞ্জিন ও ওভারহলিং করার পর এবং ৫০০/৬০০ মাইল চলাচলের পর পুনরায় ট্যাপেট সমন্বয়, লুব অয়েল পরিবর্তন, কার্বুরেটর টিউনিং, ব্রেক সমন্বয় ইত্যাদি সুসম্পন্ন করা বাঞ্ছনীয়।

আরও দেখুনঃ