ইঞ্জিন টিউন-আপ | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

ইঞ্জিন টিউন-আপ, ইঞ্জিন টিউন—আপ হচ্ছে এক বা একাধিক প্রক্রিয়া, যার সহায়তায় মোটরযানকে সহজ, সরল ও শান্তিপূর্ণভাবে চলাচলের নিশ্চয়তা দান করে। বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্নভাবে ইঞ্জিন টিউন— আপ এর অর্থ বা প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করেন। অনেকে মনে করেন বিভিন্ন পরীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা ইঞ্জিন পরীক্ষা করাকেই টিউন-আপ বুঝায়।

ইঞ্জিন টিউন-আপ | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

আবার কেউ কেউ মনে করেন কিছু কিছু ক্ষয়প্রাপ্ত বা নষ্ট যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করাই টিউন-আপ। মোটকথা ইঞ্জিন টিউন-আপ হচ্ছে কারবুরেটর টিউনিং সমন্বয় এবং আঁটানো, ব্রেক সার্ভিসিং ও সমন্বয়, স্পার্কপ্লাগ পরিষ্কার করা, সি.বি. বিন্দু পরিষ্কার করা ও সমন্বয় করা, ক্যাস্টার, ক্যাম্বর টো–ইন, টো-আউট সমন্বয়, লুব অয়েল বদলী, রেডিয়েটর ও ইঞ্জিন ফ্লাশিং, গিয়ার অয়েল বদলী, ক্লাচ সমন্বয়, এয়ার ক্লিনার, তেল ও জ্বালানি ছাঁকনি পরিবর্তন করা ইত্যাদিকে বুঝায়।

মোটরযান পরিদর্শন (inspection) বলতে সকল ব্যবস্থার পরীক্ষা, সমন্বয়, মেরামত ও পরিবর্তনকে বুঝায়। ইঞ্জিন টিউন-আপ এবং মোটরযান পরিদর্শন একই অর্থে বুঝায়। নিম্নলিখিতভাবে ইঞ্জিন টিউন-আপ করা হয়ে থাকে ।

(১) গাড়ীর ইঞ্জিন যদি ঠান্ডা থাকে তাহলে ১৫-২০ মিনিট প্রায় ১৪০০-১৫০০ আর.পি.এস.-এ চালিয়ে ইঞ্জিন গরম করতে হবে।

(২) ব্যাটারীর চার্জ পরীক্ষা করতে হবে। চার্জ না থাকলে চার্জ করতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে পানি (ডিস্টিল্ড ওয়াটার) দিতে হবে। ব্যাটারীর সকল সংযোগ পরীক্ষা করতে হবে।

(৩) সকল বৈদ্যুতিক সংযোগ পরীক্ষা করতে হবে। যেমন : ইগনিশন সুইচ, আলো ব্যবস্থা, হর্ন ব্যবস্থা, চালুকরণ পদ্ধতি (ক্র্যাঙ্কিং মোটর বা সেলফ স্টার্টার), চার্জিং, বর্তনী, নির্দেশক আলো, পরীক্ষণ আলো ইত্যাদি। সকল আলো টিপ্‌প্ রাখতে হবে।

(৪) স্পার্ক প্লাগ খুলে কার্বন পরিষ্কার করতে হবে, ফাঁক দেখতে হবে এবং স্পার্ক হয় কিনা তা সঠিকভাবে পরীক্ষা করতে হবে। যদি ভাল স্পার্ক না হয় তাহলে পরিবর্তন করতে হবে।

(৫) সি.বি.বিন্দু পরিষ্কার করে ফাঁক সমন্বয় করতে হবে। বিন্দুর অবস্থা খারাপ হলে (সি.বি.বিন্দু) বদলী করতে হবে।

(৬) কন্ডেন্সার ভালভাবে দেখা উচিত। কন্ডেন্সারের দোষে যদি স্পার্ক দুর্বল হয় তবে কন্ডেন্সার বদলী করতে হবে।

ইঞ্জিন টিউন-আপ | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

(৭) হাইটেনশন লিড পরীক্ষা করতে হবে। রোটর ও ডিস্ট্রিবিউটর ক্যাপও দেখতে হবে সেগুলি ঠিক আছে কিনা, না থাকলে পাল্টিয়ে দিতে হবে।

(৮) ইগনিশন কয়েল যদি গরম হয় তবে বদলী করে দেওয়া উত্তম।

(৯) ভ্যাকিউয়াম এবং সেন্ট্রিফিউগ্যাল অ্যাডভান্স যথাযথভাবে পরীক্ষা করতে হবে। ইগনিশন টাইমিং সঠিকভাবে দেখা উচিত।

(১০) ফ্যানবেল্ট ঢিলা কিনা তাও দেখতে হবে। যদি বেশী আঁটানো থাকে তবে পরিমিত .পরিমাণে ঢিলা করে দিতে হবে।

ইঞ্জিন টিউন-আপ | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

(১১) যদি থাকে তবে অসিলোস্কোপ (oscillosocope) দ্বারা ইগনিশন ব্যবস্থা পুনঃ পরীক্ষা করা যায়। যদি কোন ত্রুটি ধরা পড়ে তাহলে পুনরায় পরীক্ষা করে ত্রুটিমুক্ত করতে : হবে।

(১২) ইঞ্জিন অয়েল পরীক্ষা করতে হবে। লুব অয়েল পাতলা হয়ে গেলে এবং ময়লা হলে বদলী করে নতুন অয়েল দিতে হবে। এ সময় তেলের ফিল্টার বা ছাঁকনি বদলী করতে হবে।

(১৩) লুব অয়েল পাম্প কাজ করে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে। অয়েল প্রেসার ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে। যদি ঠিক না থাকে তবে ইঞ্জিন ফ্লাশিং করে উন্নতমানের অয়েল ব্যবহার করে দেখতে হবে অবস্থা কি দাঁড়ায়। যদি উন্নত না হয় তবে অয়েল পাম্প পরিবর্তন করতে হবে।

(১৪) জ্বালানি ব্যবস্থার দোষে যদি ইঞ্জিন বন্ধ হতে চায় তবে কারবুরেটর খুলে সকল বর্তনী পরিষ্কার করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সকল প্রকার সমন্বয় করতে হবে (আইডেলিং এবং ফ্লোট সমন্বয় এবং ফাস্ট আইডেলিং সমন্বয়)। প্রয়োজনে কারবুরেটর কীটস্ বদলী করতে হবে।

(১৫) জ্বালানি পাম্পের (এ.সি. পাম্প) চাপ পরীক্ষা করতে হবে। পাম্পের ডায়াফ্রাম ও

চেক ভাল্ভ ভালভাবে দেখতে হবে। প্রয়োজনে বদলী করতে হবে।

(১৬) এ.সি. পাম্প এবং কারবুরেটর যদি বেশী ময়লা জমতে দেখা যায় তাহলে জ্বালানি ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে হবে।

(১৭) জ্বালানি লাইন এবং জ্বালানি ছাঁকনি পরীক্ষা করতে হয়। প্রয়োজনে মেরামত বা বদলী করতে হয়।

(১৮) এয়ার ক্লিনার পরিষ্কার করতে হবে, প্রয়োজনে বদলী করতে হবে।

ইঞ্জিন টিউন-আপ | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

(১৯) থারমোস্টেটিভ ভাল্ভ কাজ করে কিনা তা লক্ষ্য করে দেখতে হবে। যদি কাজ না করে তবে পরিবর্তন করা উচিত।

(২০) কুলিং পদ্ধতি পরীক্ষা করতে হবে। যদি পানির সরবরাহ ভাল না হয় তবে ওয়াটার পাম্প দেখতে হবে। প্রয়োজনে ওয়াটার পাম্প কীটস বদলী করতে হবে। কীট্স অর্থ প্রয়োজনীয় খুচরা যন্ত্রাংশ যা বাজারে একটি প্যাকেটে ক্রয় করতে পাওয়া যায়। হোজ পাইপ ছিদ্র হলে বদলী করতে হবে। রেডিয়েটর ছিদ্র হলে ঝালাই করা যেতে পারে।

(২১) একজস্ট এবং ইনলেট মেনিফোল্ডের নাটসমূহ টায়রের নাটসমূহ, প্রোপেলার শ্যাফটের নাটসমূহ, ডায়ানামোর নাট, ক্র্যাঙ্কিং মোটরের নাট, ইঞ্জিন মাউটিং এর নাটসমূহেরট আঁটানো ভালভাবে পরীক্ষা করতে হবে। চাকার হাওয়া দেখে নেওয়া উচিত। 

(২২) গিয়ার বক্স এবং ডিফারেন্সিয়াল এবং তেলের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে ।

 

ইঞ্জিন টিউন-আপ | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

(২৩) ইউনিভারসেল জয়েন্ট, টাইরড-এন্ড, বল জয়েন্ট ইত্যাদি জায়গায় গ্রীজ দিতে হবে।

(২৪) ক্লাচ এবং ব্রেক প্যাডেলের সমন্বয় দেখে নিতে হবে।

(২৫) ব্রেক পদ্ধতিও দেখতে হবে। ভালভাবে ব্রেক হয় কিনা তা সঠিকভাবে দেখে নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে ব্রেক সমন্বয় করতে হবে। ব্রেক-সু লাইনিং খারাপ হলে বদলী করা বাঞ্ছনীয়। ব্রেক পদ্ধতিতে বাতাস ঢুকলে এয়ার ব্লিডিং করে বের করতে হবে।

(২৬) মাস্টার সিলিন্ডার ও হুইল সিলিন্ডারের বাকেটগুলি নষ্ট হলে বদলী করে দিতে হবে।

(২৭) ইঞ্জিন ট্যাপেটের সমন্বয় ঠিক না থাকলে তা যথাযথভাবে সমন্বয় করা উচিত।

 

ইঞ্জিন টিউন-আপ | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

(২৮) স্টিয়ারিং ব্যবস্থা পরীক্ষা করতে হবে যে, সহজ, সরলভাবে স্টিয়ারিং কাজ করে কিনা। যদি না করে তবে লুবরিকেটিং পরীক্ষা করতে হবে এবং ওয়ার্ম ও সেক্টর, গিয়ার সমন্বয় করতে হবে। স্টিয়ারিং কাপলিং নষ্ট হলে পরিবর্তন করা উচিত। কাপলিং নাটগুলি ঢিলা হলে ভালভাবে এঁটে দেওয়া প্রয়োজন ।

(২৯) টো–ইন, টো–আউট, ক্যাস্টার, ক্যাম্বারের কোণগুলি দেখতে হবে। এগুলি ঠিক না থাকলে সমন্বয় করতে হবে।

(৩০) কয়েল স্প্রিং, লীফ স্প্রিং, ঝাঁকুনি বিশোষক (shock absorber) দেখতে হবে । প্রয়োজনে বুশ ও শ্যাকেল স্প্রিং পরিবর্তন করা শ্রেয়।

(৩১) একজস্ট গ্যাস অ্যানালাইজার দ্বারা একজস্ট গ্যাস পরীক্ষা করে দিতে হবে। এই পরীক্ষায় যদি দেখা যায় যে মিশ্রণ ভালভাবে জ্বলে না তাহলে অন্যান্য পরীক্ষা ও সমন্বয় করে তা ত্রুটিমুক্ত করতে হবে।

(৩২) টেইল পাইপ ও মাফলার দেখা উচিত। যদি কার্বনে এগুলি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে পরিষ্কার কার উচিত অথবা পরিবর্তনযোগ্য।

আরও দেখুনঃ

 

2 thoughts on “ইঞ্জিন টিউন-আপ | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং”

Leave a Comment