আজকের আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যপ্রাসঙ্গিক— “ইঞ্জিন ও ইঞ্জিনের শ্রেণিবিভাগ”। আধুনিক যান্ত্রিক প্রযুক্তি ও ইঞ্জিনিয়ারিং-এর জগতে ইঞ্জিন একটি অপরিহার্য উপাদান। পরিবহন, কৃষি, শিল্প, নির্মাণ এবং দৈনন্দিন জীবনের নানা ক্ষেত্রে ইঞ্জিনের ব্যবহার আমাদের জীবনকে করেছে গতিশীল, সহজ এবং কার্যকর।
ইঞ্জিন বলতে বোঝায় এমন একটি যন্ত্র, যা জ্বালানিকে কাজে পরিণত করে বিভিন্ন ধরনের শক্তি উৎপন্ন করতে সক্ষম। এটি তাপ শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর করে, যা মেশিন বা যন্ত্রপাতি পরিচালনায় ব্যবহৃত হয়। ইঞ্জিনের ধরন, কাঠামো, জ্বালানি ব্যবহার ও কাজের পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে বিভিন্নভাবে শ্রেণিবিভাগ করা হয়।
এই আলোচনায় আমরা ইঞ্জিন কী, এটি কীভাবে কাজ করে এবং কোন কোন ভিত্তিতে ইঞ্জিনগুলোকে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়— তা বিস্তারিতভাবে জানতে পারব। চলুন, এবার আমরা মূল আলোচনায় প্রবেশ করি।
ইঞ্জিন ও ইঞ্জিনের শ্রেণিবিভাগ (Engine and its Classification)
ইঞ্জিন (Engine) :
ইঞ্জিন হলো একটি স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক সংগঠক যা বিভিন্ন যন্ত্রাংশের সমন্বয়ে গঠিত। এটি ফুয়েল বা জ্বালানির মধ্যে থাকা রাসায়নিক শক্তিকে ধাপে ধাপে তাপ শক্তি এবং পরবর্তীতে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর করে। এই যান্ত্রিক শক্তির মাধ্যমেই ইঞ্জিন নিজে চালিত হয় এবং অন্য যন্ত্র বা যন্ত্রাংশকে পরচালিত করে। সংক্ষেপে, ইঞ্জিনের প্রধান কাজ হলো শক্তি উৎপাদন ও তা ব্যবহারযোগ্য রূপে রূপান্তর করা।
ইঞ্জিন আধুনিক প্রযুক্তির একটি মৌলিক ও অপরিহার্য উপাদান, যা ছোট আকারের গৃহস্থালী যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে বিশাল আকারের পরিবহন ও শিল্পযন্ত্রে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে অটোমোবাইল ইঞ্জিন বা যানবাহনে ব্যবহৃত ইঞ্জিন জ্বালানি পোড়ানোর মাধ্যমে শক্তি উৎপাদন করে যা ফ্লাই হুইল, ক্লাচ, ট্রান্সমিশন গিয়ার, প্রপেলার শ্যাফট, ডিফারেনশিয়াল এবং অ্যাক্সেলের মাধ্যমে সম্মুখ ও পশ্চাৎ চাকার গতি সৃষ্টি করে মোটরযানকে চালিত করে।
এই প্রক্রিয়ায় ইঞ্জিন যান্ত্রিক গতিশক্তি সৃষ্টি করে, যা যানবাহনের পাশাপাশি নৌযান, বিমান, জেনারেটর, ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিন ও কৃষিযন্ত্রেও ব্যবহারযোগ্য করে তোলে। ইঞ্জিনের ধরন ও কার্যপদ্ধতি তার ব্যবহারের ক্ষেত্র ও কাঠামোর ওপর নির্ভর করে বিভিন্নভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়ে থাকে, যা আমরা পরবর্তী পর্যায়ে বিশদভাবে আলোচনা করব।
ইঞ্জিনের প্রকারভেদ (Types of Engine )
ইঞ্জিন এমন একটি যন্ত্র যা তাপশক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর করে। শক্তি রূপান্তর প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে ইঞ্জিনকে প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত করা যায়:
১. বহির্দাহ ইঞ্জিন (External Combustion Engine):
এই ধরনের ইঞ্জিনে জ্বালানি ইঞ্জিনের বাইরে পোড়ানো হয় এবং সৃষ্ট তাপ দ্বারা কর্মক্ষম তরল বা বাষ্প তৈরি করে তা ইঞ্জিনে প্রবাহিত করে শক্তি উৎপন্ন করা হয়। উদাহরণস্বরূপ: স্টিম ইঞ্জিন।
২. অন্তর্দাহ ইঞ্জিন (Internal Combustion Engine):
এই ইঞ্জিনে জ্বালানি ও বায়ুর মিশ্রণ ইঞ্জিনের অভ্যন্তরে সরাসরি দাহ হয় এবং সেখান থেকেই শক্তি উৎপন্ন হয়। গাড়ির পেট্রোল ও ডিজেল ইঞ্জিন এ ধরনের ইঞ্জিন।
স্ট্রোকভেদে ইঞ্জিনের প্রকারভেদ (Types of Engine According to the Stroke):
পিস্টনের কার্যচক্র বা স্ট্রোকের ভিত্তিতে ইঞ্জিনকে প্রধানত দুইভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়:
১. টু-স্ট্রোক ইঞ্জিন (Two-Stroke Engine)
যে ইঞ্জিনে চারটি কার্যক্রম— সাকশন, কম্প্রেশন, পাওয়ার ও এগজস্ট— পিস্টনের মাত্র দুইটি গমন বা স্ট্রোকে (একবার উপরে এবং একবার নিচে যাওয়া) সম্পন্ন হয়, তাকে টু-স্ট্রোক ইঞ্জিন বলা হয়। এক্ষেত্রে ক্র্যাংক শ্যাফটের প্রতি ঘূর্ণনে একবার শক্তি উৎপন্ন হয়, ফলে একই আরপিএম-এ ফোর-স্ট্রোক ইঞ্জিনের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ শক্তি পাওয়া যায়।
টু-স্ট্রোক ইঞ্জিন আবার দুই ধরনের হতে পারে:
ক) ক্র্যাংককেস স্ক্যাভেনজিং টাইপ (Crankcase Scavenging Type):
এই ধরনের ইঞ্জিনে বায়ু বা জ্বালানি-বায়ু মিশ্রণ ক্র্যাংককেস (crankcase)-এর মাধ্যমে সিলিন্ডারে প্রবেশ করে এবং পোড়া গ্যাসকে সিলিন্ডার থেকে বাইরে ঠেলে দেয়। এতে সিলিন্ডার পূর্ণ হয় এবং নতুন চার্জ প্রবেশ করে।
খ) ব্লোয়ার স্ক্যাভেনজিং টাইপ (Blower Scavenging Type):
এই ইঞ্জিনে এক্সট্রা ব্লোয়ার ব্যবহার করে চাপযুক্ত বায়ু বা জ্বালানি-বায়ু মিশ্রণ সিলিন্ডারে প্রবেশ করানো হয়। এই উচ্চচাপযুক্ত চার্জ সিলিন্ডারের পোড়া গ্যাসকে বাইরে বের করে দেয়— এই প্রক্রিয়াকেই স্ক্যাভেনজিং (Scavenging) বলা হয়। এই পদ্ধতি পোড়া গ্যাস পুরোপুরি বের করে দিতে বেশি কার্যকর।
বিশেষত্ব:
টু-স্ট্রোক ইঞ্জিন সাধারণত হালকা যানবাহন, ছোট ইঞ্জিন ও দু-চাকার যানবাহনে ব্যবহৃত হয়। এগুলো তুলনামূলকভাবে হালকা, কম জটিল এবং অধিক শক্তি উৎপাদনে সক্ষম হলেও জ্বালানি খরচ বেশি এবং ক্ষয়ও দ্রুত ঘটে।
২) ফোর-স্ট্রোক ইঞ্জিন (Four-Stroke Engine) :
ফোর-স্ট্রোক ইঞ্জিনে চারটি কার্যচক্র— সাকশন, কম্প্রেশন, পাওয়ার ও এগজস্ট— পিস্টনের চারটি স্ট্রোকে সম্পন্ন হয়। এতে ক্র্যাংক শ্যাফটের দুটি পূর্ণ ঘূর্ণন (৭২০ ডিগ্রি) সম্পন্ন হলে একবার শক্তি উৎপন্ন হয়।
ফোর-স্ট্রোক ইঞ্জিনের বৈশিষ্ট্য:
-
অধিকাংশ পেট্রোল ও ডিজেল চালিত যানবাহনে ফোর-স্ট্রোক ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়।
-
শব্দ কম, তাপ উৎপাদন কম এবং জ্বালানির অপচয় অপেক্ষাকৃত কম।
-
লুব্রিকেন্ট অয়েল বা লুব-অয়েলের খরচও কম হয়।
-
ইঞ্জিনের আয়ু বেশি এবং রক্ষণাবেক্ষণ তুলনামূলকভাবে সহজ।
সিলিন্ডারের সংখ্যাভিত্তিক ইঞ্জিনের প্রকারভেদ (Types of Engines According to the Number and Arrangement of Cylinders):
১. এক সিলিন্ডারবিশিষ্ট ইঞ্জিন (Single Cylinder Engine)
এই ধরনের ইঞ্জিনে কেবল একটি সিলিন্ডার থাকে। সাধারণত ছোট যানবাহন ও যন্ত্রপাতিতে এক সিলিন্ডারবিশিষ্ট ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়। যেমন:
- মোটরসাইকেল
- বেবি ট্যাক্সি
- ছোট কৃষিযন্ত্র বা পাম্পসেট
- রাইস মিল ও সেচ পাম্পের ইঞ্জিন
এক সিলিন্ডার ইঞ্জিনে সাধারণত পেট্রোল ব্যবহৃত হয়, তবে মাঝারি ধরনের কিছু ডিজেলচালিত ইঞ্জিনেও এক সিলিন্ডার দেখা যায়।
ফ্লাই হুইলের ভূমিকা:
এক সিলিন্ডার ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে প্রতিবার শুধুমাত্র একটি স্ট্রোক (পাওয়ার স্ট্রোক) সরাসরি জ্বালানির বিস্ফোরণ দ্বারা চালিত হয় এবং বাকি তিনটি স্ট্রোক (ইনটেক, কম্প্রেশন ও এক্সহস্ট) ফ্লাই হুইলের জড়তা দ্বারা পরিচালিত হয়। ফলে এই ধরনের ইঞ্জিনে একটি ভারী ও বড় আকারের ফ্লাই হুইল ব্যবহারের প্রয়োজন হয়, যাতে শক্তি ধরে রাখা যায় এবং ইঞ্জিনের চলাচলে ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।
২. বহু সিলিন্ডারবিশিষ্ট ইঞ্জিন (Multi Cylinder Engine)
এই ধরনের ইঞ্জিনে একাধিক সিলিন্ডার থাকে, যা সমন্বিতভাবে কাজ করে। সাধারণত এই ইঞ্জিনগুলোতে জোড় সংখ্যক সিলিন্ডার ব্যবহৃত হয়, যেমন:
২, ৪, ৬, ৮, ১২, ১৬ বা ৩২ সিলিন্ডারবিশিষ্ট ইঞ্জিন।
বহু সিলিন্ডারবিশিষ্ট ইঞ্জিন অধিকতর শক্তিশালী, মসৃণভাবে চলে এবং ভারসাম্য বজায় রাখে। সিলিন্ডারগুলোর বিন্যাস বা অ্যারেঞ্জমেন্ট অনুসারে এই ইঞ্জিনগুলোকে আরও কিছু ভাগে বিভক্ত করা যায়:
ক) ইনলাইন ইঞ্জিন (Inline Engine)
এই বিন্যাসে সিলিন্ডারগুলো খাড়া এবং সোজাসুজিভাবে এক লাইনে পরপর সাজানো থাকে। এটি সবচেয়ে প্রচলিত বিন্যাস এবং সাধারণত গাড়ির ইঞ্জিনে দেখা যায়।
খ) ভি টাইপ ইঞ্জিন (V-Type Engine)
এই বিন্যাসে সিলিন্ডারগুলো দুটি সারিতে ‘V’ আকারে বিন্যস্ত থাকে। প্রতিটি ক্র্যাঙ্ক পিনে দুটি পিস্টন যুক্ত থাকে। কম জায়গায় অধিক সিলিন্ডার ফিট করার সুবিধায় এটি ব্যবহৃত হয়।
গ) হরাইজন্টালি অপোজড ইঞ্জিন (Horizontally Opposed Engine)
এই ধরনের ইঞ্জিনে সিলিন্ডারগুলো পরস্পরের বিপরীত দিকে এবং অনুভূমিকভাবে সাজানো থাকে। এতে কম্পন কম হয় এবং গাড়ির ভারসাম্য ভালো থাকে। এটি “বক্সার ইঞ্জিন” নামেও পরিচিত।
ঘ) অপোজড পিস্টন ইঞ্জিন (Opposed Piston Engine)
এতে প্রতিটি সিলিন্ডারের দুই প্রান্তে দুটি পিস্টন থাকে, যেগুলো বিপরীতমুখীভাবে কাজ করে। এই ব্যবস্থায় দুটি ক্র্যাংকশ্যাফট একত্রে সমন্বিতভাবে চলে, যার ফলে শক্তি উৎপাদনের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
৩. রেডিয়াল ইঞ্জিন (Radial Engine)
এই ইঞ্জিনের সিলিন্ডারগুলো একটি কেন্দ্রীয় বিন্দুর চারপাশে একটি বৃত্তে সমান কৌণিক দূরত্বে সাজানো থাকে। সব পিস্টন একই ফ্লাই হুইলে যুক্ত থাকে এবং ঘূর্ণন সঞ্চালন করে।
বৈশিষ্ট্য:
- কম জায়গা দখল করে
- উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন
- সাধারণত বিমান ও হেলিকপ্টারে ব্যবহৃত হয়
জ্বালানিভিত্তিক ইঞ্জিনের প্রকারভেদ :
ইঞ্জিনের শ্রেণিবিভাগ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হলো ব্যবহৃত জ্বালানি। জ্বালানির ধরন অনুযায়ী ইঞ্জিনকে সাধারণত তিন প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়, যা হলো:
১. পেট্রোল ইঞ্জিন (Petrol Engine)
পেট্রোল ইঞ্জিনে জ্বালানি হিসেবে পেট্রোল ব্যবহার করা হয় এবং এর দহন ক্রিয়া ঘটে সিলিন্ডারের ভিতরে। এই ধরনের ইঞ্জিন সাধারণত স্পার্ক ইগনিশন (Spark Ignition) পদ্ধতি অনুসরণ করে, অর্থাৎ একটি স্পার্ক প্লাগের মাধ্যমে জ্বালানি ও বায়ুর মিশ্রণের স্ফুলিঙ্গে দহন শুরু হয়।
পেট্রোল ইঞ্জিনের বৈশিষ্ট্যসমূহ:
- উচ্চ গতি সম্পন্ন (High Speed)
- কম কম্প্রেশন রেশিও (Compression Ratio) থাকে, সাধারণত ৬:১ থেকে ১০:১ এর মধ্যে
- হালকা ও তুলনামূলক ছোট আকারের
- সাধারণত লাইট যানবাহন ও ছোট যন্ত্রপাতিতে ব্যবহৃত
২. ডিজেল ইঞ্জিন (Diesel Engine)
ডিজেল ইঞ্জিনে জ্বালানি হিসেবে ডিজেল বা হেভি ফুয়েল ব্যবহার করা হয়। এটি কমপ্রেশন ইগনিশন (Compression Ignition) পদ্ধতিতে কাজ করে, যেখানে ইঞ্জিনের সিলিন্ডারে উচ্চ কম্প্রেশনের কারণে বায়ুর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং ডিজেল জ্বালানি সেই তাপমাত্রায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে জ্বলতে শুরু করে।
ডিজেল ইঞ্জিনের বৈশিষ্ট্যসমূহ:
- উচ্চ কম্প্রেশন রেশিও, সাধারণত ১৪:১ থেকে ٢0:১ এর মধ্যে
- বড় ও ভারী ওজনের
- অধিক কার্যক্ষম ও জ্বালানি সাশ্রয়ী
- প্রধানত ভারী যানবাহন, নৌযান, কৃষি ও শিল্প মেশিনে ব্যবহৃত
- সাম্প্রতিককালে ডিজেল ইঞ্জিন পেট্রোল ইঞ্জিনের অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিস্থাপন করছে, কারণ ডিজেল জ্বালানি তুলনামূলক সস্তা এবং টেকসই
৩. গ্যাসীয় ইঞ্জিন (Gas Engine)
গ্যাসীয় ইঞ্জিন জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করে এবং এগুলো প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত:
ক) সিএনজি ইঞ্জিন (Compressed Natural Gas Engine)
- সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস (CNG) দ্বারা চালিত
- তুলনামূলক বড় আকারের এবং স্বল্প গতি সম্পন্ন
- পরিবেশবান্ধব, কারণ এতে নির্গত দূষণ কম
- জ্বালানি হিসেবে সস্তা ও সহজলভ্য
- সাধারণত পরিবহন এবং শিল্পখাতে ব্যবহার হয়
খ) এলপিজি ইঞ্জিন (Liquefied Petroleum Gas Engine)
- তরল পেট্রোলিয়ান গ্যাস (LPG) দ্বারা চালিত
- আকারে ছোট ও উচ্চ গতি সম্পন্ন
- জ্বালানি হিসেবে তুলনামূলক দাম সস্তা
- কিন্তু এলপিজি ইঞ্জিন থেকে নির্গত গ্যাস কিছুটা পরিবেশ দূষণ সৃষ্টি করে, তাই এতে নির্গত গ্যাস শোধনের জন্য ক্যাটালিটিক কনভার্টার (Catalytic Converter) ব্যবহার করা হয়
- এলপিজি জ্বালানি সাধারণত বোতল আকারে সংরক্ষণ করা হয়, যা সহজে বহন ও ব্যবহারযোগ্য
প্রশ্নমালা-১৭
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :
১. ইঞ্জিন কী?
ইঞ্জিন হলো একটি যান্ত্রিক যন্ত্র যা জ্বালানির শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে কোনো কাজ সম্পাদন করে।
২. ইঞ্জিন প্রধানত কত প্রকার ও কী কী?
ইঞ্জিন প্রধানত দুই প্রকার:
- বহির্দাহ (External Combustion) ইঞ্জিন
- অন্তর্দাহ (Internal Combustion) ইঞ্জিন
৩. ভেহিক্যাল কী?
ভেহিক্যাল (Vehicle) হলো কোনো ধরনের যানবাহন যা মানুষ বা মালামাল পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
৪. বহির্দাহ ইঞ্জিনকে কী বলে এবং কত সালে আবিষ্কার হয়?
বহির্দাহ ইঞ্জিনকে সাধারণত বাষ্প ইঞ্জিন (Steam Engine) বলা হয়। এটি ১৭৬৯ সালে আবিষ্কার করেন জেমস ওয়াট।
৫. অটো–সাইকেল ইঞ্জিনকে কী বলে এবং কত সালে আবিষ্কার হয়?
অটো-সাইকেল ইঞ্জিনকে বলা হয় স্পার্ক ইগনিশন ইঞ্জিন (Spark Ignition Engine) বা সাধারণত পেট্রোল ইঞ্জিন। এটি প্রথম আবিষ্কার হয় ১৮৭৬ সালে কার্ল বেন্জের মাধ্যমে।
৬. ডিজেল সাইকেল ইঞ্জিনকে কী বলে এবং কত সালে আবিষ্কার হয়?
ডিজেল সাইকেল ইঞ্জিন হলো কমপ্রেশন ইগনিশন ইঞ্জিন (Compression Ignition Engine)। এটি আবিষ্কার করেন রুডলফ ডিজেল ১৮৯২ সালে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :
১. বহির্দাহ ও অন্তর্দাহ ইঞ্জিন বলতে কী বোঝ?
- বহির্দাহ ইঞ্জিন (External Combustion Engine): এমন ইঞ্জিন যেখানে জ্বালানি ইঞ্জিনের বাইরের অংশে জ্বালানো হয় এবং সৃষ্ট তাপ ইঞ্জিনের ভেতরে স্থানান্তরিত হয়। যেমন: বাষ্প ইঞ্জিন।
- অন্তর্দাহ ইঞ্জিন (Internal Combustion Engine): এমন ইঞ্জিন যেখানে জ্বালানি ও বায়ুর মিশ্রণের দহন সরাসরি সিলিন্ডারের ভিতরে ঘটে।
২. অন্তর্দাহ ইঞ্জিনের শ্রেণিবিন্যাস কর।
- স্পার্ক ইগনিশন ইঞ্জিন (Spark Ignition Engine): যেমন পেট্রোল ইঞ্জিন।
- কমপ্রেশন ইগনিশন ইঞ্জিন (Compression Ignition Engine): যেমন ডিজেল ইঞ্জিন।
৩. স্ট্রোক কত প্রকার ও কী কী?
স্ট্রোক প্রধানত দুই প্রকার:
- ইনটেক স্ট্রোক: সিলিন্ডারে এয়ার বা মিশ্রণ প্রবেশ।
- কম্প্রেশন স্ট্রোক: এয়ার বা মিশ্রণ সংকুচিত।
- পাওয়ার স্ট্রোক: দহন ও বিস্তার।
- এক্সহস্ট স্ট্রোক: দহনোৎপন্ন গ্যাস বের হওয়া।
(সাধারণত চার স্ট্রোক ইঞ্জিনে উপরের চারটি স্ট্রোক থাকে। দুই স্ট্রোক ইঞ্জিনে কম সংখ্যক স্ট্রোক থাকে।)
৪. দুই স্ট্রোক ইঞ্জিন কত ধাপে কাজ সম্পূর্ণ করে এবং কী কী?
দুই স্ট্রোক ইঞ্জিন এক সম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করে দুটি স্ট্রোকে:
- প্রথম স্ট্রোক: কম্প্রেশন ও শক্তি উৎপাদন (Compression & Power)
- দ্বিতীয় স্ট্রোক: এক্সহস্ট ও ইনটেক (Exhaust & Intake)
৫. চার স্ট্রোক ইঞ্জিন কত ধাপে কাজ সম্পন্ন করে এবং কী কী?
চার স্ট্রোক ইঞ্জিন এক সম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করে চারটি স্ট্রোকে:
১. ইনটেক স্ট্রোক (Intake Stroke)
২. কম্প্রেশন স্ট্রোক (Compression Stroke)
৩. পাওয়ার স্ট্রোক (Power Stroke)
৪. এক্সহস্ট স্ট্রোক (Exhaust Stroke)
৬. সিলিন্ডারের সংখ্যা অনুসারে ইঞ্জিন কত প্রকার ও কী কী?
সিলিন্ডারের সংখ্যা অনুসারে ইঞ্জিন সাধারণত:
- সিঙ্গেল সিলিন্ডার ইঞ্জিন (একটি সিলিন্ডার)
- মাল্টি সিলিন্ডার ইঞ্জিন (একাধিক সিলিন্ডার), যেমন ডুয়েল সিলিন্ডার, তিন-সিলিন্ডার, চার-সিলিন্ডার ইত্যাদি
৭. জ্বালানি অনুসারে ইঞ্জিন কত প্রকার ও কী কী?
জ্বালানির ভিত্তিতে ইঞ্জিন সাধারণত তিন প্রকার:
- পেট্রোল ইঞ্জিন (Petrol Engine)
- ডিজেল ইঞ্জিন (Diesel Engine)
- গ্যাস ইঞ্জিন (Gas Engine), যেমন সিএনজি ও এলপিজি ইঞ্জিন
রচনামূলক প্রশ্ন :
১. ইঞ্জিন বলতে কী বোঝায়? এটি কত প্রকার ও কী কী? বহির্দাহ ইঞ্জিনের বিভিন্ন অংশের নাম লেখ।
ইঞ্জিন হলো এমন একটি যান্ত্রিক যন্ত্র যা জ্বালানির শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর করে কোনো কাজ সম্পাদন করে। ইঞ্জিনের মাধ্যমে গাড়ি, ট্রাক, নৌকা, বিমানসহ নানা ধরনের যন্ত্রপাতি চালানো হয়।
ইঞ্জিন প্রধানত দুই প্রকার:
- বহির্দাহ ইঞ্জিন (External Combustion Engine): যেখানে দহন (combustion) ইঞ্জিনের বাইরের কোনো স্থানে হয় এবং তাপ শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। উদাহরণ: বাষ্প ইঞ্জিন।
- অন্তর্দাহ ইঞ্জিন (Internal Combustion Engine): যেখানে দহন সিলিন্ডারের ভিতরেই ঘটে এবং সরাসরি পিস্টনের মাধ্যমে যান্ত্রিক শক্তি উৎপন্ন হয়। উদাহরণ: পেট্রোল ইঞ্জিন, ডিজেল ইঞ্জিন।
বহির্দাহ ইঞ্জিনের প্রধান অংশসমূহ:
- বয়লার (Boiler)
- সিলিন্ডার (Cylinder)
- পিস্টন (Piston)
- ক্র্যাঙ্ক শ্যাফট (Crank Shaft)
- ইঞ্জিন হেড (Engine Head)
- কনেক্টিং রড (Connecting Rod)
- স্লাইডিং ভ্যালভ (Sliding Valve)
- ক্যামেরা (Steam Chest)
- ফ্লাইহুইল (Flywheel)
২. স্ট্রোকভেদে ইঞ্জিন কত প্রকার ও কী কী? বর্ণনা কর।
স্ট্রোক বা পিস্টনের যান্ত্রিক চলনের ওপর ভিত্তি করে ইঞ্জিনকে প্রধানত দুই প্রকারে ভাগ করা হয়:
- দুই স্ট্রোক ইঞ্জিন (Two-Stroke Engine):
এক পূর্ণ চক্র সম্পন্ন করতে পিস্টন দুইবার (উপর থেকে নিচে এবং নিচ থেকে উপরে) গতি করে। এই ইঞ্জিনের ডিজাইন সরল, ওজন কম এবং ক্ষমতা বেশি। সাধারণত ছোট আকারের যন্ত্রপাতি, মোটরসাইকেল, ছোট নৌকা ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়। - চার স্ট্রোক ইঞ্জিন (Four-Stroke Engine):
এক পূর্ণ চক্র সম্পন্ন করতে পিস্টন চারবার গতি করে (ইনটেক, কম্প্রেশন, পাওয়ার ও এক্সহস্ট স্ট্রোক)। এটি তুলনামূলক বেশি জ্বালানি দক্ষ ও পরিবেশবান্ধব, সাধারণত গাড়ি ও বড় যানবাহনে ব্যবহৃত হয়।
৩. একক সিলিন্ডার বিশিষ্ট ইঞ্জিন কত প্রকার ও কী কী? বর্ণনা কর।
একক সিলিন্ডার বিশিষ্ট ইঞ্জিন প্রধানত দুই প্রকার:
- দুই স্ট্রোক একক সিলিন্ডার ইঞ্জিন:
এক স্ট্রোকে ইনটেক ও এক্সহস্ট পদ্ধতি সম্পন্ন হয়, পিস্টনের দুই গতি চক্রে সম্পূর্ণ কার্যক্রম শেষ হয়। এটি সাধারণত ছোট ও হালকা যন্ত্রপাতিতে ব্যবহৃত হয়। - চার স্ট্রোক একক সিলিন্ডার ইঞ্জিন:
এটি চারটি পৃথক স্ট্রোকের মাধ্যমে কাজ করে, যা ইনটেক, কম্প্রেশন, পাওয়ার ও এক্সহস্ট স্ট্রোক। অধিকাংশ গাড়ি ও যন্ত্রপাতিতে ব্যবহৃত।
৪. ব্যবহারের ভিত্তিতে ইঞ্জিন কত প্রকার ও কী কী? বর্ণনা কর।
ব্যবহারের ভিত্তিতে ইঞ্জিনকে প্রধানত তিন প্রকারে ভাগ করা হয়:
- যানবাহন ইঞ্জিন (Vehicular Engine):
যা গাড়ি, বাস, মোটরসাইকেল, ট্রাক, ইত্যাদির জন্য ব্যবহৃত হয়। সাধারণত পেট্রোল বা ডিজেল চালিত। - কৃষি ও শিল্প ইঞ্জিন (Agricultural and Industrial Engine):
যা কৃষি মেশিন, পাম্প, জেনারেটর, কারখানার যন্ত্রপাতিতে ব্যবহৃত হয়। এরা সাধারণত ডিজেল বা গ্যাস চালিত। - স্থাবর ইঞ্জিন (Stationary Engine):
যা কোনো একটি স্থানে স্থাপন করে চালানো হয়, যেমন গেনারেটর, পানি পাম্প ইত্যাদি।