ইঞ্জিন ওভারহলিং – এই পাঠটি “অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং” বিষয়ের “ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ, কারণ ও প্রতিকার” অধ্যায়ের একটি পাঠ।
ইঞ্জিন ওভারহলিং
ডি-কারবোনাইজিং : ডি—কারবোনাইজিং এমন একটি ব্যবস্থা যার সাহায্যে ইঞ্জিনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ থেকে কার্বন দূরীভূত করা হয়। বিশেষ করে দহন প্রকোষ্ঠ (combustion chamber), ,ইঞ্জিন হেড, ভাল্ভ, ভালভ গাইড, পিস্টন রিং ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে কার্বন জমা হয়। এই সকল যন্ত্রাংশে বেশী কার্বন জমা হলে মোটরযানের স্বাভাবিকচলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। যেমন, প্রিইগনিশন হয়,নকিং হয় এবং ইঞ্জিন বেশী গরম হয়।
বিভিন্ন নির্মাতা বিভিন্ন সময়ে কার্বন পরিষ্কার করার পরামর্শ দিয়েছেন। কেহ ৪,০০০ মাইল গাড়ী চলার পর, কেহ ৫,০০০ মাইল গাড়ী চলার পর, কেহ বা ১০,০০০ মাইল গাড়ী চলার পর ইঞ্জিন ডি–কারবোনাইজিং করার কথা বলেছেন।
গাড়ী ভাল রাস্তাতে চলাচল করলে, ভাল জ্বালানি এবং ভাল লুব অয়েল ব্যবহার করলে এবং সবসময় রক্ষণাবেক্ষণের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখলে সাধারণত ১০,০০০ মাইল চলার পর ডি-কারবোনাইজিং করলেই চলে। কিন্তু গাড়ী যদি খারাপ রাস্তায় চলাচল করে, নিম্নমানের ফুয়েল ব্যবহার করা হয় তবে নির্মাতার দেয় সময়ের অনেক পূর্বেই ডি-কারবোনাইজিং করতে হয়। একটি ইঞ্জিন ওভারহলিং করার পূর্বে দুই তিনবার ডি–কারবোনাইজিং করা যেতে পারে। ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ ডি-কারবোনাইজিং করা অল্প ওভারহলিং ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত ।
একটি ইঞ্জিন ডি-কারবোনাইজিং করার জন্য এর চেসিস থেকে নীচে নামাতে হয় না। কিন্তু ইঞ্জিন হেড খোলার জন্য ইঞ্জিন হেড হতে সকল বৈদ্যুতিক সংযোগ এবং তেলের লাইনের ও কুলিং ব্যবস্থার সকল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হয়।
ফ্যানবেল্ট খুলতে হবে, ইঞ্জিন হেড থেকে এবং পানির জ্যাকেট থেকে পানি বের করতে হবে সিলিন্ডার ড্রেন কর্কের সাহায্যে। ডিজেল ইঞ্জিন হলে ইনজেক্টর এবং উচ্চচাপ পাম্পের সংযোগ ছিন্ন করতে হবে। এমতাবস্থায় সিলিন্ডারের সকল হেড নাট খুলে ফেলা উচিত।
এখন ইঞ্জিন হেড ব্লক থেকে পৃথক করতে হবে। হেডটিকে কাঠের হাতুড়ি, ম্যালেট (Mallet) বা প্লাস্টিকের হাতুড়ি দ্বারা আঘাত দিতে হবে যাতে হেড সিলিন্ডার ব্লক হতে আলাদা হয়। ছোট ইঞ্জিন হলে এভাবেই খোলা হয়। বড় ইঞ্জিন হলে এবং হেড খুলতে বেশী অসুবিধা হলে সিলিন্ডার উত্তোলনে (lifting) টুলস ব্যবহার করা হয়।
উত্তোলন—টুলস-এর যে মাথায় প্যাচ আছে সেই মাথা স্পার্ক প্লাগের ছিদ্র পথে এঁটে দিতে হয় এবং অপর প্রান্ত হাতল দ্বারা টানতে হয় এবং কাঠের হাতুড়ি দ্বারা আঘাত করতে হয়। ফলে হেড ব্লক হতে পৃথক হয়ে যায়। ইঞ্জিন হেডকে দ্রুত থেকে পৃথক করার জন্য ‘কুইক ওয়ার্ক’ হ্যান্ড টুলস ব্যবহার করা হয় ।
সিলিন্ডার হেড পৃথক করার কাজে স্ক্রু-ড্রাইভার-এর সাহায্য না দেওয়াই উচিত। কারণ এতে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তবে আমাদের দেশের কারখানাগুলিতে অত্যাধুনিক টুলস-এর ব্যবহার খুবই কম দেখা যায়। তাই সিলিন্ডার হেড পৃথকীকরণ কার্যে অত্যন্ত সাবধানতার সাথে হেভী ডিউটি স্ক্রু-ড্রাইভার এবং হাতুড়ির সাহায্য নেওয়া হয়।
আরও দেখুনঃ
- গভর্নর এর ব্যবহার | পেট্রোল জ্বালানি ব্যবস্থা | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং
- ইনজেক্টর পরীক্ষা করার নিয়ম | পেট্রোল জ্বালানি ব্যবস্থা | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং
- উচ্চচাপ ফেসিং এবং ক্যালিব্রেশন | পেট্রোল জ্বালানি ব্যবস্থা | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং
- ইউনিট ইনজেক্টর জ্বালানি পাম্প | পেট্রোল জ্বালানি ব্যবস্থা | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং
- ইনজেকশন ব্যবস্থার উদ্দেশ্য | পেট্রোল জ্বালানি ব্যবস্থা | অটোমোবিল -ইঞ্জিনিয়ারিং
- বাংলাদেশের মোটরগাড়ি শিল্প
2 thoughts on “ইঞ্জিন ওভারহলিং”