আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ইঞ্জিন ওভারহলিং
ইঞ্জিন ওভারহলিং
ইঞ্জিন ওভার হলিং (Engine Overhauling) :
ইঞ্জিনের ডিকার্বনাইজিং বোরিং, হনিং, মেশিন কার্যাদি প্রয়োজন মাফিক সম্পন্ন করে এবং ইঞ্জিনের অকোজো, পুরানো ক্ষয়প্রাপ্ত যন্ত্রাংসমূহ পরিবর্তনপূর্বক, একে প্রায় নতুনের কাছাকাছি কার্যক্রম করে তোলাকে ইঞ্জিন ওভারহলিং বলে।
ইঞ্জিন ওভারহলিংয়ের উদ্দেশ্য (Purpose of engine overhauling) :
ইঞ্জিন ওভারহলিং এর মুখ্য উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ :
ক. বাজারে নতুন গাড়ির পাশাপাশি কিছুটা স্বল্প মূল্যে উন্নয়নশীল দেশসমূহে রিকন্ডিশানিং গাড়ির ভালো একটি বাজার রয়েছে। এ বাজারের চাহিদা মিটানোর জন্য উন্নতশীল দেশসমূহ, পুরাতন গাড়িকে ওভারহুলিং করে এ সকল চাহিদা মিটিয়ে থাকে। আমাদের দেশের ন্যায় গরিব ও উন্নয়নশীল দেশে অধিক হারে যে রিকন্ডিশনিং গাড়ি ব্যবহৃত হচ্ছে তা ইঞ্জিন-ওভারহলিংয়ের একটি অবদান ।
খ. প্রস্তুতকারকগণের বিনির্দেশ মোতাবেক একটি নির্দিষ্ট কিলোমিটার সময় চলার পর স্বাভাবিক কার্য হিসেবেই ইঞ্জিনের টপ/মেজর ওভারহলিং করতে হয়। সুতরাং ইঞ্জিন রিপেয়ার ও মেরামতের ক্ষেত্রে এটা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
গ. ইঞ্জিনের কালো ধোঁয়া নির্গমন, অস্বাভাবিক শব্দ, অতিরিক্ত লুব অয়েল খরচ, ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা কমে গেলে ও জ্বালানি খরচ বেড়ে গেলে নির্ধারিত সময়ের আগেও ইঞ্জিন-ওভারহলিং করে ইঞ্জিনকে কার্যক্ষম ও ত্রুটিমুক্ত করতে হয় ।
ধারাবাহিকভাবে ওভারহলিং পদ্ধতির বর্ণনা (Systematic procedure of engine overhauling):
ইঞ্জিন ওভারহলিংকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায় :
টপ ওভারহলিং (Top Overhauling) :
– ভালভ অপসরাণ; –
– ভাল্ভ ফেইস ৪৫° তে গ্রাইন্ডিং;
– ভাল্ভ সীচ ৪৬° তে কাটিং
-স্প্রিংয়ের টেনশন পরিমাপ ও প্রয়োজনে পরিবর্তন;
-ভাল্ভ গাইড, টেপেট/লিফটার নিরীক্ষণ ও প্রয়োজনে পরিবর্তন;
-ভাল্ভ লেপিংকরণ;
-ভাল্ভ হেডে পুনঃ স্থাপন ও লিংকেজ টেস্টিং;
– হেড গ্যাসকেট পরিবর্তন;
-হেড পুনঃ স্থাপন ও নির্ধারিত টর্কে টাইপকরণ ইত্যাদি ।
মেজর ওভারহলিং (Major Overhauling) :
ইঞ্জিনকে পূর্ণাঙ্গ বিযুক্ত করে, বোরিং, হুনিং, ক্র্যাংক শ্যাফট ও ক্যাম শ্যাফট গ্রাইন্ডিং করে, স্টান্ডার্ড পিস্টন, রিং, বিয়ারিং ব্যবহার করে এবং অনেক পুরাতন ও অকেজো যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করে, ইঞ্জিন/গাড়িকে নতুনের কাছাকাছি নিয়ে আসাকে মেজর ওভারহলিং বলে। মেজর ওভারহলিং ও টপ ওভারহলিংয়ের মাঝামাঝিও কিছু মেরামতের কাজ করা হয়ে থাকে যাকে অনেক ক্ষেত্রে মাইনর ওভারহলিংও বলা হয়ে থাকে । মাইনর ওভারহলিংয়ে নিম্নের কাজসমূহ অন্তর্ভুক্ত থাকে যেমন :
– সিলিন্ডার হেড ও ক্র্যাংককেইজ অপসরণ; পূর্বক পিস্টন ও রিং সেট পরিবর্তন;
– ইঞ্জিন ব্লকেই রেখে বোরিং কার্য সম্পন্ন; করে, নতুন পিস্টন ও রিং সেট পরিবর্তন ;
– চেসিসে রেখেই রিবোরিং, হনিং কার্য সম্পন্ন করে, নতুন পিস্টন, রিং ও বিয়ারিংঃ পরিবর্তন ইত্যাদি ।
চিত্র : ইঞ্জিন ব্লকে রেখে সিলিন্ডার বোরিং
ইঞ্জিন ওভারহলিংয়ের কখন প্রয়োজন হয় (When an engine requires overhauling) :
১. সাধারণত চলন্ত গাড়ির ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে ১,২৫,০০০-১,৬০,০০০ কিলোমিটার চলার পর মেজর ওভারহলিং করণের নির্দেশ থাকে ।
২. প্রথমত ইঞ্জিন-ওভারহলিংয়ের ক্ষেত্রে উল্লেখিত তালিকা অনুসরণপূর্বক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রস্তুতকারকগণও মোটামুটি উল্লেখিত তালিকা অনুসারে বিভিন্ন প্রকারের ওভারহলিংয়ের সময় নির্ধারণ করে থাকে ।
৩. স্টেশনারি ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে এর সময় হিসেবে বেঁধে দেওয়া থাকে। ইঞ্জিনের ব্যবহারিক ক্ষেত্র হিসেবে এর ভিন্নতা থাকে ।
৪. অস্বাভাবিক কার্যক্রমের জন্য নির্ধারিত সময়ের অনেকও আগেও যে কোনো ধরনের ওভার হলিংয়ের প্রয়োজন পড়ে ।
প্রশ্নমালা- ২৩
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। ইঞ্জিনে টপ বা মেজর ওভারহলিং কখন করতে হয়?
২। সাধারণত চলন্ত গাড়ির ক্ষেত্রে কত কিলোমিটার চলার পর ইঞ্জিনে ওভারহলিং করতে হয়?
৩। মাইনর ওভারহলিং কী?
৪ । হেড ও ব্লকের সারফেস ডিকার্বুরাইজিং করতে কি টুল ব্যবহৃত হয়?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। ওভারহলিং বলতে কী বোঝায়?
২। ওভারহলিং-এর উদ্দেশ্যসমূহ লেখ।
৩। ওভারহলিং কখন প্রয়োজন হয় ।
৪। টপ ওভারহলিং বলতে কী বোঝায়? এর পদ্ধতিসমূহ লেখ।
৫। মেজর ওভারহলিং বলতে কী বোঝায়?
৬। ইঞ্জিন-ওভারহলিং এর কাজসমূহ লেখ।
৭। মাইনর ওভারহলিং বলতে কী বোঝায়? এর কাজ কী?
৮ । ভালভ গ্রাইন্ডিং এর ধাপসমূহ লেখ।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। ইঞ্জিনের ডি কার্বুরাইজিং পদ্ধতিগুলো লেখ ।
২। ভাত সীট ও ভাল্ভ ফেস কাটিং চিত্রসহ বর্ণনা কর ।
৩। ইঞ্জিনের ভাল্ভ ল্যাপিং চিত্রসহ বর্ণনা কর ।
আরও দেখুন :