Site icon অটোমোটিভ গুরুকুল [ Automotive Gurukul ], GOLN

ইঞ্জিনের কাজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তথ্যসমূহ

ইঞ্জিনের কাজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তথ্যসমূহ

আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় হলো ইঞ্জিনের কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত তথ্যসমূহ। একটি ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে, তার কার্যপ্রণালী, বিভিন্ন অংশের ভূমিকা এবং শক্তি রূপান্তরের প্রক্রিয়া—এসবই এই আলোচনার মূল বিষয়বস্তু।

ইঞ্জিন হলো যান্ত্রিক শক্তি উৎপাদনের প্রধান উৎস, যা তাপীয় শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর করে যানবাহন, শিল্পযন্ত্র এবং অন্যান্য যান্ত্রিক সরঞ্জাম চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে। ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা, স্থায়িত্ব এবং দক্ষতা নির্ভর করে তার সঠিক নির্মাণ ও কার্যপ্রণালীর ওপর।

এই পাঠে আমরা ইঞ্জিনের কাজের মূল ধারণা, এর বিভিন্ন ধাপ, এবং কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ আলোচনা করব, যা ইঞ্জিন বুঝতে ও পরিচালনায় সহায়ক হবে।

ইঞ্জিনের কাজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তথ্যসমূহ (Related Information of Engine Work)

বোর ও স্ট্রোক :

১. বোর (Bore):
বোর বলতে বোঝায় ইঞ্জিন সিলিন্ডারের অভ্যন্তরীন ব্যাসার্ধ বা ব্যাসকে। অর্থাৎ, সিলিন্ডারের ভিতরের প্রস্থকে বোর বলা হয়। ইঞ্জিনের সিলিন্ডারের আকার প্রকাশ করতে সাধারণত বোর এবং স্ট্রোকের মাধ্যমে তার মাত্রা উল্লেখ করা হয়। এখানে প্রথমে বোরের মান এবং পরে স্ট্রোকের মান দেওয়া হয়।
উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি সিলিন্ডারের মাত্রা লেখা হয় ১০০ × ৮০ মিমি, তবে এর অর্থ হচ্ছে বোর ১০০ মিমি এবং স্ট্রোক ৮০ মিমি।

২. স্ট্রোক (Stroke):
স্ট্রোক বলতে পিস্টনের সিলিন্ডারের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থান (Top Dead Center – TDC) থেকে সর্বনিম্ন অবস্থান (Bottom Dead Center – BDC) পর্যন্ত যাওয়া দূরত্বকে বোঝায়। এটি পিস্টনের যান্ত্রিক গতির সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য। স্ট্রোক সাধারণত মিমি বা ইঞ্চিতে প্রকাশ করা হয়।

স্ট্রোকের মধ্যে পিস্টনের বিভিন্ন কার্যকলাপ থাকে, যেমন:

এই স্ট্রোকগুলি ইঞ্জিনের কাজের মূল ভিত্তি, যা শক্তির উৎপাদন ও শক্তি রূপান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

 

টিডিসি ও বিডিি:

১. টিডিসি (TDC) — টপ ডেড সেন্টার
টিডিসি বা টপ ডেড সেন্টার বলতে ইঞ্জিনের পিস্টনের সর্বোচ্চ অবস্থানকে বোঝানো হয়, যেখানে পিস্টন তার উর্ধ্বগমন শেষ করে এবং আর উপরের দিকে ওঠে না। অর্থাৎ, এই অবস্থায় পিস্টন সিলিন্ডারের উপরের সীমায় অবস্থান করে। টিডিসি অবস্থায় পিস্টনের সংকোচন বা কম্প্রেশন কাজ সমাপ্ত হয় এবং পিস্টন গতি পরিবর্তন করে নিম্নগমনের দিকে যায়।

২. বিডিসি (BDC) — বটম ডেড সেন্টার
বিডিসি বা বটম ডেড সেন্টার হলো পিস্টনের সর্বনিম্ন অবস্থান, যেখানে পিস্টন তার নিম্নগমন শেষ করে এবং আর নিচে নেমে যেতে পারে না। এই অবস্থায় পিস্টন সিলিন্ডারের নিচের সীমায় অবস্থান করে। টিডিসির মত, বিডিসি অবস্থাতেও পিস্টনের গতি পরিবর্তিত হয়ে উর্ধ্বগমনের দিকে পরিবর্তিত হয়।

ভলিউম সনাক্তকরণে চিত্রের ব্যবহার:

ইঞ্জিনের সিলিন্ডারে পিস্টনের অবস্থান অনুসারে ভলিউমের পরিবর্তন পরিমাপ করা হয়। এর মধ্যে দুটি প্রধান ভলিউম হলো:

এই ভলিউমগুলো ইঞ্জিনের ক্ষমতা, কম্প্রেশন রেশিও ও কর্মক্ষমতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

 

কম্প্রেশন রেশিওর ব্যাখ্যা :

কম্প্রেশন রেশিও হলো ইঞ্জিন সিলিন্ডারের সর্বোচ্চ ভলিউম (টোটাল ভলিউম) এবং সর্বনিম্ন ভলিউম (ক্লিয়ারেন্স ভলিউম) এর অনুপাত। এটি ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা ও দক্ষতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিমাপক।

গণনায় এটি প্রকাশ করা হয়:

কম্প্রেশন রেশিও = টোটাল ভলিউম / ক্লিয়ারেন্স ভলিউম
= (ক্লিয়ারেন্স ভলিউম + সুইপট ভলিউম) / ক্লিয়ারেন্স ভলিউম
= 1 + (সুইপট ভলিউম / ক্লিয়ারেন্স ভলিউম)

পেট্রোল ইঞ্জিনের কম্প্রেশন রেশিও সাধারণত ৬:১ থেকে ১২:১ এর মধ্যে থাকে, যেখানে ডিজেল ইঞ্জিনের কম্প্রেশন রেশিও থাকে ১২:১ থেকে ২২:১ এর মধ্যবর্তী।

ইঞ্জিনের কম্প্রেশন রেশিও যত বেশি হয়, তত বেশি তাপ ও চাপ উৎপন্ন হয়, যা ইঞ্জিনের পাওয়ার আউটপুট বাড়ায়। তবে অত্যধিক কম্প্রেশন রেশিও ইঞ্জিনের ক্ষতির কারণ হতে পারে, যেমন পিস্টন বা সিলিন্ডারে ক্ষয়-ক্ষতি, ইঞ্জিনে নকিং ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই কম্প্রেশন রেশিও যথাযথ মাত্রায় রাখা জরুরি।

 

 

 

প্রশ্নমালা-২০

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১. বোর কাকে বলে?

২. সিলিন্ডারের ব্যাস কত?

৩. টিডিসি-এর পূর্ণ নাম কী ?

৪. বিডিলি-এর পূর্ণ নাম কী?

৫. স্ট্রোক কাকে বলে?

 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১. বোর ও স্ট্রোক বলতে কী বোঝায় ?

২. টিডিসি ও বিডিসি বলতে কী বোঝায়?

৩. পেট্রো অয়েল পিচ্ছিলকরণ পদ্ধতি কোন ধরনের ইঞ্জিনে ব্যবহার করা হয়।

 

রচনামূলক প্রশ্ন

১. বোর ও স্ট্রোক সম্পর্কে যা জানো লেখ।

২. চিত্রসহ টিডিসি ও বিডিসি বিবৃত কর।

৩. চিত্রের সাহায্যে সুরেন্ট ভলিউম এবং ক্লিয়ারেন্স ভলিউম দেখাও।

Exit mobile version