অ্যাম্পিয়ার মিটার

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় অ্যাম্পিয়ার মিটার

অ্যাম্পিয়ার মিটার

গাড়ির অ্যাম্পিয়ার মিটারের প্রয়োজনীয়তা (Necessity of the ampere meter of the vehicle)

গাড়ির ড্যাশবোর্ড ইন্সট্রুমেন্টসমূহের মধ্যে গাড়ির অ্যাম্পিয়ার মিটার / চার্জিং ইন্ডিকেটর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইন্সট্রুমেন্ট।
নিম্নে এর উল্লেখযোগ্য কিছু প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হলো :

– ব্যাটারি জেনারেটর/অল্টারনেট হতে কী পরিমাণ চার্জ পাচ্ছে, তা এ অ্যাম্পিয়ার মিটার/চার্জিং ইন্ডিকেটর নির্দেশ করে ।

– আইডেলিং ও লো-স্পীছে সাধারণত জেনারেটর/অল্টারনেটর চার্জ করতে পারে না। এ সময় গাড়ির প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাটারিই পূরণ করে থাকে। এ পরিস্থিতিতে ব্যাটারি হতে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়, তা এ অ্যাম্পিয়ার মিটারই নির্দেশ করে থকে।

– ভোল্টেজ ও কারেন্ট রেগুলেটরে কোনো অ্যাডজাস্টমেন্টের প্রয়োজন পড়েছে কিনা, তা এ অ্যাম্পিয়ার মিটারের
রিডিং হতে সহজে শনাক্ত করা যায় ।

– গাড়ি নির্ধারিত স্পীডে ওঠার পর জেনারেটর/অল্টারনেটর চার্জিং করতে সক্ষম কিনা, তা এ অ্যাম্পিয়ার মিটার/ চার্জিং ইন্ডিকেটর নির্দেশ করে ।

– অনেক গাড়িতে অ্যাম্পিয়ার মিটার ও চার্জিং ইন্ডিকেটর হিসেবে লাল নিঙন লাইট থাকে। যদি উচ্চ গতিতে পৌঁছার পরও লাল নিওন লাইট অফ হয়ে না যায়, তাহলে সহজে চালক বুঝতে পারেন যে, চার্জিং সিস্টেম কাজ করছে না।

অ্যাম্পিয়ার মিটারের সংযোগ (Connection of Ampere Meter)

যে সার্কিটের কারেন্ট পরিমাপের জন্য অ্যাম্পিয়ার মিটার সংযোগ করা হয়, ঐ সার্কিটের সঙ্গে অ্যাম্পিয়ার মিটারকে বিধি মোতাবেক সিরিজে যুক্ত করতে হয়। অ্যাম্পিয়ার মিটারের ডায়াল চালকের দৃষ্টিগোচরে রাখার নিমিত্তে ড্যাশ-বোর্ড প্যানেলে বসানো থাকে। এর একটি সংযোগ পাশের চিত্রের ন্যায় রেগুলেটরের ব্যাটারি ((Battery) পয়েন্টের সাথে যুক্ত থাকে। অপর সংযোগটি ব্যাটারির পজেটিভ টার্মিনাল/সুবিধাজনক প্রাইমারি সার্কিটের কোনো সংযোগের সঙ্গে যুক্ত থাকে।

 

অ্যাম্পিয়ার মিটার

চিত্র : অ্যাম্পিয়ার মিটারে সংযোগ

ইঞ্জিন চালু করতে ব্যাটারি কত অ্যাম্পিয়ার সরবরাহ করে, ইঞ্জিন চালু হবার পর ব্যাটারি আইডেলিং স্পীডে কত অ্যাম্পিয়ার সরবরাহ করে এবং পরবর্তীতে হাই স্পীডে আবার জেনারেটর/ অল্টারনেটর কখন ও কত অ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি চার্জ করে, প্রয়োজনে পুরো তথ্যই এ অ্যাম্পিয়ার মিটার সরবরাহ করে থাকে।

চার্জ-ইন্ডিকেটরের প্রয়োজনীয়তা (Necessity of Charge Indicator)

ইগনিশন সুইচের পর এবং জেনারেটর/অল্টারনেটর চার্জিং লাইনের সঙ্গে একটি লাল বাতি অর্থাৎ নিওন লাইট সংযুক্ত থাকে । ব্যাটারিতে যখন কোনো চার্জিং অ্যাম্পিয়ার সরবরাহ হয় না, তখন এ লাল বাতিটি জ্বলতে থাকে । আবার যখন জেনারেটর হতে চার্জিং অ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি বা অন্যান্য সার্কিটে সরবরাহ হয়, তখন এ লাল বাতিটি জ্বলন্ত অবস্থা থেকে বন্ধ হয়ে যায়। অর্থাৎ নিওন লাইটটি বন্ধ হয়ে যার। সুতরাং এ লাল বাতিটি/নিওন লাইটটি চালককে সর্বসার নিম্নের তথ্যগুলো সরবরাহ করে :

ক. ৰাতি জ্বলন্ত থাকলে, ব্যাটারি অ্যাম্পিয়ার খরচ হয় ।

 

অ্যাম্পিয়ার মিটার

চিত্র : চার্জিং ইন্ডিকেটর

খ. বাতি জ্বলন্ত থাকলে, চার্জিং সিস্টেম তখনও যে কোনো কারেন্ট উৎপন্ন করছে না, তা নির্দেশ করে। সাধারণত এ অবস্থা আইডেলিং ও লো-স্পীডে স্বাভাবিক।

গ. ইঞ্জিনের গতি বৃদ্ধির সাথে সাথে এ লাল বাতি/নিওন লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক।

ঘ. ইঞ্জিনের গতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ লাল ৰাতি ৰন্ধ না হয়ে, জ্বলে থাকলে চার্জিং সিস্টেমের অকার্যকারিতা নির্দেশ করে ।

ঙ. এ লাল বাতি সর্বদা জ্বলে থাকলে বুঝতে হয়, ব্যাটারি কারেন্টে গাড়ি চলছে, কোনো চার্জ হচ্ছে না। ফলে স্বল্প সময়ের মধ্যে ব্যাটারি ডিচার্জ হয়ে যাবে ।

চ. লাল বাতি জ্বলে থাকলে চার্জিং সিস্টেম নিরীক্ষণ/সার্ভিসিং/ মেরামত অত্যাবশ্যক ।

অ্যাম্পিয়ারমিটার ও চার্জ-ইন্ডিকেটর ব্যবহারের সুবিধা-অসুবিধা (Advantages and Disadvantages of Using Ampere Meter and Charge Indicator):

অ্যামিটার ব্যবহারের সুবিধাসমূহ (Advantages of Using Ameter) :

১. জেনারেটর/অল্টারনেটর কর্তৃক চার্জিরের হার কমে গেলে অ্যামিটারে রিডিংয়ের মাধ্যমে সহজে ধরা পড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে রেগুলেটরকে অ্যাডজাস্ট করে, পুরো চার্জিং সিস্টেমকে অকেজো হয়ে যাওয়ার হাত হতে রক্ষা করা যায় ।

২. ব্যাটারি কী হারে জেনারেটর/অল্টারনেটর হতে চার্জ পায়, তা অ্যামিটারের মাধ্যমে সরাসরি প্রত্যক্ষ করা যায় । সুতরাং অ্যামিটার ব্যবহারে পাড়ির বৈদ্যুতিক চাহিদা সম্পর্কে নিশ্চিত থাকা যায় ।

৩. ব্যাটারি অধিক হারে চার্জ করতে থাকলে ব্যাটারি ওভার চার্জ হয়ে ব্যাটারি ও অন্যান্য যন্ত্রাংশের ক্ষতি হতে পারে। সুতরাং অ্যাম্পিয়ার মিটারে অধিক হারে চার্জিং দেখালে, রেগুলেটর অ্যাডজাস্ট করে চার্লিংকে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় রাখতে হয়। ফলে ব্যাটারি ও অন্যান্য যন্ত্রাংশের ক্ষতি রহিত হয় ।

অ্যামিটার ব্যবহারের অসুবিধা (Disadvantages in Using Ameter) :

১. অ্যামিটার খারাপ হলে পরিবর্তনে অর্থ ব্যয় হয় ।

২. অ্যামিটার গুরুত্বপূর্ণ ড্যাশ বোর্ডের কিছুটা জায়গা দখল করে ।

৩. অ্যামিটার ভুল রিডিং, ভুল অ্যাডজাস্টমেন্টের জন্য দায়ী হয় ।

৪. পরিবর্তিত অ্যামিটার পূর্বাবস্থানে স্থাপন করা সম্ভব না হলে, অন্য কোথাও বসালে সৌন্দর্যহানি ঘটে ।

চার্জ-ইন্ডিকেটরের সুবিধা (Advantages of Charge Indicator) :

১. নিয়ন ভাল্‌ভ ফিউজ হলেও স্বল্প খরচে পরিবর্তনযোগ্য।

২. এক নজরে/তাৎক্ষণিকভাবে চার্জিং কন্ডিশন বুঝা যায় ।

৩. সব সময় জ্বলে থাকলে চার্জিং সিস্টেমের অকার্যকারিতা নির্দেশ করে।

৪. চার্জিং সিস্টেমে অকার্যকারিতা ধরা পড়লে, তাৎক্ষণিক মেরামত বড় ধরনের ক্ষতি হতে সিস্টেমকে রক্ষা করে।

চার্জ-ইন্ডিকেটরের অসুবিধা (Disadvantages in Charge Indicator) :

১. জেনারেটর/অল্টারনেটর হতে ব্যাটারি চার্জ পাচ্ছে কিনা, তা বুঝা যায না, যদি চার্জ-ইন্ডিকেটর অকেজো থাকে ৷

২. কখন নিয়ন ভাল্‌ভ ফিউজ হয়, তা সহজে অনুমান করা সম্ভব হয় না। তাই ভাল্‌ভ না জ্বললে চার্জিং সার্কিটের অকার্যকারিতার জন্য জ্বলছে না, নাকি ভালভ ফিউজের জন্য জ্বলছে না, তা ভালভ খুলে দেখে বা টেস্ট করে নিশ্চিত হতে হয় ।

৩. নিয়ন ভাল্‌ভ ফিউজ হওয়ার হার বেশি ইত্যাদি ।

৪. রেগুলেটর অ্যাডজাস্টমেন্টের কোনো পূর্ব সংকেত প্রদান করতে পারে না ।

 

 

প্রশ্নমালা- ২৭

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১। ব্যাটারি জেনারেটর অল্টারনেটর হতে চার্জ হয়েছে তা কোন মিটারের মাধ্যমে জানা যায় ?

২। অ্যাম্পিয়ার মিটার কোন সার্কিটে সংযোগ থাকে?

৩। অ্যাম্পিয়ার মিটার কোথায় সংযুক্ত থাকে ?

৪ । নিয়ন লাইটের অপর নাম কী ?

৫। লাল বাতি কোথায় লাগানো হয়?

৬ । ইঞ্জিনের গতি বৃদ্ধি সাথে সাথে লাল বাতি কী অবস্থায় থাকে?

৭। লাল বাতি জ্বললে কী বুঝতে হবে?

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১। গাড়িতে অ্যাম্পিয়ার মিটারের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ কর ।

২। অ্যাম্পিয়ার মিটারের সংযোগ চিত্রসহ বর্ণনা কর ।

৩ । চার্জিং ইন্ডিকেটরের প্রয়োজনীয়তা বা তথ্যসমূহ কী কী ?

রচনামূলক প্রশ্ন

১। অ্যাম্পিয়ার মিটার ও চার্জিং ইন্ডিকেটর ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা লেখ।

আরও দেখুন :

 

Leave a Comment