স্বয়ংক্রিয় ট্রান্সমিশন পদ্ধতি

স্বয়ংক্রিয় ট্রান্সমিশন পদ্ধতি নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং” বিষয়ের “গিয়ার বক্স বা ট্রান্সমিশন” বিভাগের একটি পাঠ।

স্বয়ংক্রিয় ট্রান্সমিশন পদ্ধতি

স্বয়ংক্রিয় ট্রান্সমিশন পদ্ধতি | গিয়ার বক্স বা ট্রান্সমিশন | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

একটি বিশেষ ধরনের পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে ড্রাইভারকে গিয়ার পরিবর্তন করতে হয় না। গাড়ীর দ্রুতি, ইঞ্জিনের দ্রুতি এবং মাল বোঝাই করার অবস্থার উপর নির্ভর করে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই গিয়ার নিয়ন্ত্রিত হয়। মেকানিক্যাল গভর্নরসমূহ, ইঞ্জিনের শূন্যতা দ্বারা পরিচালিত ভাল্ভসমূহ, অতিরিক্ত থ্রোটল লিংকেজ ইত্যাদি এই পদ্ধতিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত করতে সাহায্য করে।

 

কোন কোন মোটরযান গিয়ার পরিবর্তন করার জন্য ম্যানুয়াল (manual) কন্ট্রোললিভার ব্যবহার করা হয়। এই ম্যানুয়াল ভাল্ভ কন্ট্রোল লিভারটি স্টিয়ারিং কলাম অথবার গাড়ীর মেঝেতে লাগানো হয়, যাতে ড্রাইভার তাড়াতাড়ি উহা চালাতে পারে। ড্রাইভার তার ইচ্ছামত পার্ক, নিউট্রাল, রিভার্স, ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ ইত্যাদি অবস্থায় চালনা করতে পারে।

 

স্বয়ংক্রিয় ট্রান্সমিশন আসলে হাইড্রলিক তেলের চাপে পরিচালিত হয়। এতে প্রধানতঃ দুটি যন্ত্র আছে। যেমন, (ক) টর্ক কনভারটার ও ফ্লুইড কাপলিং এবং (খ) গিয়ার পদ্ধতি।

 

টক কনভারটার ইঞ্জিনের শক্তিকে আরও বৃদ্ধি করে গিয়ার পদ্ধতিতে পৌঁছিয়ে দেয়। তেলের চাপ গিয়ার পদ্ধতির উপর কাজে করে।

 

এই চাপের তারতম্য অনুসারেই গিয়ার পরিবর্তন হয়ে থাকে। চাপ বেশী হলে গাড়ীর দ্রুতি বেশী হয় এবং চাপ কম হলে গাড়ীর দ্রুতি কম হয়।

 

ফ্লুইড কাপলিং :

সাধারণত মোটরযানে ক্লাচ প্লেটের মাধ্যমে ইঞ্জিনের শক্তি গিয়ার বক্সে আসে। বহু গাড়ি আছে যেখানে ক্লাচের পরিবর্তে ফ্লুইড কাপলিং ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে তরল পদার্থের চাপের সাহায্যে ইঞ্জিনের শক্তি ট্রান্সমিশনে পাঠানো হয়। এই পদ্ধতিকে ফ্লুইড কাপলিং বলে।

 

স্বয়ংক্রিয় ট্রান্সমিশন পদ্ধতি | গিয়ার বক্স বা ট্রান্সমিশন | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

টর্ক কনভারটার বা ফ্লুইড কাপলিং :

টর্ক অর্থ পাকানো, মোচড়ানো, ঘোরানো (turning or twisting effort )। যে বস্তু টক বাড়ায় তাকে টক কনভারটার বলে। টক কনভারটার হচ্ছে একটি বিশেষ ধরনের ফ্লুইড কাপলিং। ইহা ক্র্যাঙ্কশ্যাফটের টর্ক বৃদ্ধি করে গিয়ার বক্সে সরবরাহ করে থাকে। এতে প্রোপেলার শ্যাফট ক্র্যাঙ্কশ্যাফটের তুলনায়  বেশী ঘূর্ণিত হয়। ফলে ইঞ্জিনের জ্বালানি কম খরচ হয় এবং ক্ষয়ক্ষতিও কম হয়। টর্ক কনভারটার ওভার ডাই-এর মত কাজ করে থাকে।

 

টক কনভারটীরের গঠন ফ্লুইড কাপলিং-এর মতই। টর্ক কনভারটার এবং ফ্লুইড কাপলিং একই কেসিং-এর মধ্যে অবস্থান করে। তবে এতে একটি অতিরিক্ত অংশ থাকে যা স্ট্যাটর বা থার্ড মেম্বার নামে অভিহিত। ইহা পাম্প এবং টারবাইনের মধ্যস্থানে অবস্থান করে। টর্ক কনভারটার এক বা একাধিক পর্যায়ের হয়। ৫.৪ চিত্রে টক কনভারটার, পাম্প, টারবাইন দেখানো হয়েছে।

 

ফ্লুইড কাপলিং দুটি অংশ নিয়ে গঠিত। একটি ড্রাইভিং মেম্বার এবং অপরটি ড্রিভেন মেম্বার। ড্রাইভিং মেম্বারের অংশকে পাম্প অথবা ইম্পেলার বলে। এই অংশ ক্র্যাঙ্কশ্যাফটের সাথে যুক্ত থাকে। ড্রিভেন মেম্বারের অংশকে টারবাইন বলে। ইহা গিয়ার বরের সাথে (ট্রান্সমিশনের) যুক্ত থাকে। ৫.৪ চিত্রে দেখানো হয়েছে।

 

ইঞ্জিন যখন চালু হয় তখন পাম্প অথবা ইম্পেলারও ইঞ্জিনের সাথে ঘুরতে থাকে। পাম্পের ব্লেডের চাপে হাইড্রলিক অয়েল টারবাইনের ব্লেডের উপর গিয়ে পড়ে। তেলের এই চাপে টারবাইন ঘূর্ণিত হয়। এভাবে পাম্প ( ড্রাইভিং মেম্বার) এবং টারবাইনের (ড্রিভেন মেম্বারের) মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হয়। একটির প্রভাবে অন্যটি চালিত হয়। প্রকৃতপক্ষে পাম্প ও টারবাইনের মধ্যে কোন প্রত্যক্ষ সংযোগ নেই। ইঞ্জিনের শক্তি পাম্পে আসে, পাম্প থেকে টারবাইনে আসে সেখান থেকে ডিফারেনসিয়ালে এবং তার পরে চাকায় যায়।

 

থার্ড মেম্বার বা স্ট্যাটর (Third member or stator) :

৫.৪ চিত্রে থার্ড মেম্বার দেখানো হয়েছে। পাম্প এবং টারবাইন যখন কর্মরত থাকে তখন টারবাইন থেকে কিছু কিছু তেল বের হয়ে আসে এবং পাম্পের ভেনগুলিকে উল্টাদিকে ঘুরাতে চেষ্টা করে। ফলে পাম্পের কার্যক্ষমতা কমে যায়। এই অসুবিধা দূর করার জন্যে এবং পাম্পের আউটপুট বৃদ্ধি করার জন্যে পাম্প এবং টারবাইনের মধ্যে স্ট্যাটর বা থার্ড মেম্বার বসানো হয়। স্ট্যাটরের অনেকগুলি বাকা ভেন থাকে। টারবাইন থেকে যে তেল বের হয়ে আসে তার গতি পরিবর্তন করে পাম্পের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করাই স্ট্যাটরের প্রধান কাজ।

 

সতর্কতা :

ইহা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে উৎপাদনকারী ট্রান্সমিশন বা ফ্লুইড কাপলিং-এর জন্যে যে ধরনের তেল ব্যবহার করা প্রয়োজন সেই ধরনের তেল ব্যবহার করাই বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় সমূহ বিপদের সম্ভাবনা থাকে। নিম্নমানের তেল ব্যবহারের দরুন ট্রান্সমিশন পদ্ধতিতে সাংঘাতিক গোলযোগ দেখা দিতে পারে।

 

স্বয়ংক্রিয় ট্রান্সমিশন পদ্ধতি | গিয়ার বক্স বা ট্রান্সমিশন | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

 

স্বয়ংক্রিয় ট্রান্সমিশন পদ্ধতি | গিয়ার বক্স বা ট্রান্সমিশন | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

 

স্বয়ংক্রিয় ট্রান্সমিশন পদ্ধতি | গিয়ার বক্স বা ট্রান্সমিশন | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

 

স্বয়ংক্রিয় ট্রান্সমিশন পদ্ধতি | গিয়ার বক্স বা ট্রান্সমিশন | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

আরও দেখুনঃ