আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-ইঞ্জিন ও ইঞ্জিনের শ্রেণিবিভাগ
ইঞ্জিন ও ইঞ্জিনের শ্রেণিবিভাগ Engine and its Classification
ইঞ্জিন (Engine ) :
ইঞ্জিন এমন এক প্রকার স্বয়ংক্রিয় সংগঠক যা কতকগুলো যন্ত্রাংশের সমন্বয়ে গঠিত থেকে ফুয়েলের রাসায়নিক শক্তিকে প্রথমে তাপ শক্তি এবং পরে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরের মাধ্যমে নিজে চালিত হয়ে অন্য যন্ত্র বা যন্ত্রাংশকে পরচালিত করে। ইঞ্জিনের প্রধান কাজ শক্তি উৎপাদন করা।
অটোমোবাইল ইঞ্জিন উৎপন্ন শক্তিকে ফ্লাই হুইল, ক্লাচ, ট্রান্সমিশন গিয়ার, প্রপেলার শ্যাফট, ডিকারেন্সিয়াল অ্যাক্সেল হয়ে সম্মুখ ও পিছনের চাকায় চালিত করে মোটর যানকে চালায় ।
ইঞ্জিনের প্রকারভেদ (Types of Engine )
ইঞ্জিন তার এ শক্তি রূপান্তর প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে দুইভাগে ভাগ করা যায় । যেমন : ক) বহির্দাহ ইঞ্জিন (External Combustion Engine ) খ) অন্তঃর্দাহ ইঞ্জিন (Internal Combustion Engine)।
স্ট্রোকভেদে ইঞ্জিনের প্রকারভেদ (Types of Engine Accesding to the Storke ) :
স্ট্রোকভেদে ইঞ্জিন প্রধানত ২ প্রকার । যথা- ১) টু স্ট্রোক ইঞ্জিন ২) ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিন
১। টু স্ট্রোক ইঞ্জিন।
যে ইঞ্জিনের ক্রিয়া চারটি চক্র অর্থাৎ সাকশান, কমেপ্রশন, পাওয়ার ও এগজাস্ট পিস্টনের দুই ঘাতে বা টু স্ট্রোক সম্পন্ন হয়, তাকে টু-স্ট্রোক বা দুই ঘাত বিশিষ্ট ইঞ্জিন বলে। এ দুই ঘাত সম্পন্ন করতে জাংক শ্যাফটের মাত্র এক ঘূর্ণনের একবার পাওয়ার পাওয়া যায় । টু-স্ট্রোক ইঞ্জিন আবার দুই প্রকার :
ক) ক্র্যাংককেইস স্ক্যাভেনজিং টাইপ (Crankesse scavongine type)
খ) ব্লোয়ার স্ক্যাভেনজিং টাইপ (Blower seavauging Tyupe)
ক) ক্র্যাংককেইস স্ক্যাভেনজিং টাইপ :
The basic components of a two-stroke engine
ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে মিকচার বা বাতাস ক্র্যাংককেইজস হয়ে সিলিন্ডারে প্রবেশ করে এবং সিলিন্ডারের পোড়া গ্যাস বের করে দিয়ে সিলিন্ডার পূর্ণ হয় ।
খ) রোয়ার স্ক্যাভেনজিং টাইপ :
এই ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে ইঞ্জিন সাকশান পথে রোয়ার স্থাপিত থাকে। এই রোয়ারই কিছুটা চাপযুক্ত বাতাস বা মিকচার ইঞ্জিন সিলিন্ডারে প্রেরণ করে । এই নতুন প্রবেশকৃত বাতাস বা চার্জই সিলিন্ডারের পোড়া গ্যাসকে সম্পূর্ণ রূপে বের করে দিতে সাহায্য করে । এই পদ্ধতিতে পোড়া গ্যাকে সম্পূর্ণ রূপে বের করে দেওয়াকেই স্ক্যাভেনজিং পদ্ধতি বলে । টু-স্ট্রোক টাইপ ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে একই আরপিএমএ ফোর ইঞ্জিনের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ পাওয়ার পাওয়া যায় বলে এই ইঞ্জিনগুলোর যথেষ্ট সুনাম রয়েছে ।
২) ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিন :
যে ইঞ্জিনের চারটি ক্রিয়াচক্র পিস্টনের চার ঘাতে সম্পন্ন হয়, তাকে ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিন বলে । এই চার খাত সম্পন্ন করতে ক্র্যাংক শ্যাফটের পূর্ণ দুই ঘূর্ণনের প্রয়োজন হয় অর্থাৎ এই ইঞ্জিনের প্রতি ৭২০ ডিগ্রি পরপর শক্তি পাওয়া যায়। অধিকাংশ পেট্রোল ইঞ্জিনগুলোই ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিন। ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিনের শব্দ ও ক্ষয় কম হয়, জ্বালানির অপচয় কম তা ছাড়া লুব অয়েল এর খরচও কম হয় ।
সিলিন্ডারের সংখ্যাভিত্তিক ইঞ্জিনের প্রকারভেদ (Types of Engine Recording to the no of cylinder and there arrangement)
সিলিন্ডারের সংখ্যা ও অ্যারেঞ্জমেন্টের উপর ভিত্তি করে ইঞ্জিনকে প্রধান নিম্নলিখিত দুই ভাগে ভাগ করা যায় । যথা-
১. এক সিলিন্ডার বিশিষ্ট ইঞ্জিন মোটর সাইকেল ইঞ্জিন, বেবী ট্যাক্সির ইঞ্জিন ও অন্যান্য ছোট ছোট ইঞ্জিনগুলো এক সিলিন্ডার বিশিষ্ট দেখা যায় এবং ছোট এক সিলিন্ডার বিশিষ্ট ইঞ্জিন অধিকাংশই পেট্রোল ইঞ্জিন । অবশ্য মাঝারি ধরনের কিছু ডিজেল ইঞ্জিন যেমন রাইস মিলও ইরিগেশন পাম্পের সঙ্গে ব্যবহৃত ইঞ্জিনগুলো এক সিলিন্ডার বিশিষ্ট।
একই অশ্ব শক্তিসম্পন্ন একটি বহু সিলিন্ডার বিশিষ্ট ইঞ্জিনের ফ্লাই হুইলের চেয়ে এক সিলিন্ডার বিশিষ্ট ইঞ্জিনের ফ্লাই হুইলের আকার বড় বা ভারী হয়, কারণ ইঞ্জিন ক্রিয়াচক্রের শুধু পাওয়ার স্ট্রোকেরই পিস্টন প্রজ্জ্বলিত জ্বালানির চাপে পরিচালিত এবং অন্য তিনটি স্ট্রোকে পিস্টনকে ফ্লাই হুইল পরিচালিত করে । তাই পাওয়ার স্ট্রোকের শক্তি ধারণ করে রাখতে বড় ফ্লাই হুইলের প্রয়োজন হয়।
২. বহু সিলিন্ডার বিশিষ্ট ইঞ্জিন : বহু সিলিন্ডার বিশিষ্ট ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে সাধারণত জোড় সংখ্যক সিলিন্ডার বিশিষ্ট ইঞ্জিনই বেশি। যেমন- দুই সিলিন্ডার, চার সিলিন্ডার হয় সিলিন্ডার বার সিলিন্ডার, ষোল সিলিন্ডার, বত্রিশ সিলিন্ডার বিশিষ্ট ইঞ্জিন। বহু সিলিন্ডার বিশিষ্ট ইঞ্জিনগুলোর সিলিন্ডার বিভিন্নভাবেই বিন্যাস করা থাকে যেমন :
ক) ইসলাইন : এই ক্ষেত্রে সিলিন্ডারগুলো খাড়া ও সোজাভাবে একই লাইনে পরপর অবস্থান করে।
খ) ডি-টাইপ : এই ইঞ্জিনের সিলিন্ডারগুলো দুটি সারিতে ‘ভি’ আকারে সাজানো থাকে। এসব ইঞ্জিনে প্রতি ক্র্যাংক পিনে দুটি করে পিস্টন বাধা থাকে ।
গ) হরাইজন্টাল অপোজত সিলিন্ডার : এসব ইঞ্জিনের সিলিন্ডারগুলো পরস্পর বিপরীত দিকে ব্লকে ৪০ (চল্লিশ ডিগ্রি) ব্যবধানে সাজানো থাকে ।
খ) অপোজড পিস্টন ইঞ্জিন : প্রতি সিলিন্ডারে দুটি পিল্টন পরস্পর বিপরীতমুখী হয়ে কাজ করে এই ক্ষেত্রে ইঞ্জিনের দুটি ক্র্যাংক শ্যাফট একই সঙ্গে কাজ করে থাকে ।
৩) রেডিয়াল ইঞ্জিন। এসব ইঞ্জিনের সিলিন্ডারগুলো একই বৃত্তে সমান কৌণিক দূরত্বে সাজানো থাকে। এ ক্ষেত্রে সবগুলো পিস্টনই একই ফ্ল্যাংক গিনে বাঁধা থাকে। এসব ইঞ্জিনে কম জায়গা দখল করে বলে এয়ার ক্রাফট ইঞ্জিন হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
জ্বালানিভিত্তিক ইঞ্জিনের প্রকারভেদ :
জ্বালানির উপর ভিত্তি করে ইঞ্জিনকে নিম্নলিখিত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—
১. পেট্রোল ইঞ্জিন (Petrol Engine) :
জ্বালানি হিসাবে এসব ইঞ্জিনে পেট্রোল ব্যবহার করা হয় এর দহন কার্য সিলিন্ডারের ভিতরে ঘটে। পেট্রোল ইঞ্জিনগুলো হাই স্পিড বিশিষ্ট হয়ে থাকে । এর কম্প্রেশন রেশিও কম।
২. ডিজেল ইঞ্জিন :
এ সব ইঞ্জিনে জ্বালানি হিসাবে ডিজেল- ফুয়েল ব্যবহার করা হয়। এটি সিআই বা কমপ্রেশন ইগনিশন ইঞ্জিনের অন্তর্ভুক্ত। এ ইঞ্জিনের কমপ্রেশন রেশিও বেশি হওয়ায় তুলনামূলকভাবে ভারী দেখায়।সমুদ্রগামী বড় বড় ইঞ্জিনগুলোর অধিকাংশই ডিজেল ইঞ্জিন। আজকাল পেট্রোল ইঞ্জিনের জায়গাও দিন দিন ডিজেল ইঞ্জিন দখল করছে। এর কারণ ডিজেল- ফুয়েল সস্তা ও তা ছাড়া এই ইঞ্জিনের ব্যবহারের দিক থেকেও কিছুটা সুবিধা রয়েছে ।
৩. গ্যাসীয় ইঞ্জিন:
এই গ্যাসীয় ইঞ্জিনকে আগে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- ক) সিএনজি ইঞ্জিন খ) এলপিজি ইঞ্জিন ।
ক) সিএনজি ইঞ্জিন।
সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস দ্বারা এই ইঞ্জিন চালিত হয় । এই ইঞ্জিন আকারে বড় ও স্বল্প গতি সম্পন্ন হয় । এই জ্বালানি পরিবেশ দূষণ ঘটায় না এবং দামেও সস্তা ।
খ) এলপিজি ইঞ্জিন :
তরল পেট্রোলিয়ান গ্যাস দ্বারা এই ইঞ্জিন চালিত হয় । এই ইঞ্জিন আকারে ছোট ও উচ্চ গতি সম্পন্ন । এই জ্বালানি পরিবেশ দূষণ ঘটায়। সেজন্য এতে নির্গত গ্যাস শোধনে কাটা লাইটিক কনভাটার ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের জ্বালানি বোতল আকারে সংরক্ষণ করা হয়।
প্রশ্নমালা-১৭
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :
১. ইঞ্জিন কী?
২. ইঞ্জিন প্ৰধানত কত প্রকার ও কী কী?
৩. ভেহিক্যাল কী?
৪. বহির্দাহ ইঞ্জিনকে কী বলে এবং কত সালে আবিষ্কার হয়?
৫. অটো-সাইকেল ইঞ্জিনকে কী বলে এবং কত সালে আবিষ্কার হয়?
৬. ডিজেল সাইকেল ইঞ্জিনকে কী বলে এবং কত সালে আবিষ্কার হয়?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :
১. বহির্দাহ ও অন্তর্দাহ ইঞ্জিন বলতে কী বোঝ?
২. অন্তর্দাহ ইঞ্জিনের শ্রেণিবিন্যাস কর ।
৩. স্ট্রোক কত প্রকার ও কী কী?
৪. দুই স্ট্রোক ইঞ্জিন কত ধাপে কাজ সম্পূর্ণ করে এবং কী কী ?
৫. চার স্ট্রোক ইঞ্জিন কত ধাপে কাজ সম্পন্ন করে এবং কী কী?
৬. সিলিন্ডারের সংখ্যা অনুসারে ইঞ্জিন কত প্রকার ও কী কী?
৭. জ্বালানি অনুসারে ইঞ্জিন কত প্রকার ও কী কী?
রচনামূলক প্রশ্ন :
১. ইঞ্জিন বলতে কী বোঝায়? এটি কত প্রকার ও কী কী? বহির্দাহ ইঞ্জিনের বিভিন্ন অংশের নাম লেখ ।
২. স্ট্রোকভেদে ইঞ্জিন কত প্রকার ও কী কী? বর্ণনা কর ।
৩. একক সিলিন্ডার বিশিষ্ট ইঞ্জিন কত প্রকার ও কী কী? বর্ণনা কর ।
৪. ব্যবহারের ভিত্তিতে ইঞ্জিন কত প্রকার ও কী কী? বর্ণনা কর ।
আরও দেখুন :