মোটরযানের অলটারনেটর

মোটরযানের অলটারনেটর – এই পাঠটি “অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং” বিষয়ের “চার্জিং ও স্টার্টিং পদ্ধতি” অধ্যায়ের একটি পাঠ।

 

মোটরযানের অলটারনেটর

অলটারনেটর বর্তমানে সারা বিশ্বের মোটরযানসমূহে বিশেষ সাফল্যের সাথে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি একটি এ. সি জেনারেটর। কিন্তু মোটরযানে ডি. সি বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। এ সি হতে ডি. সি করার জন্য অলটারনেটরে ডায়ড রেকটিফায়ার ব্যবহার করা হয়। ব্যাটারী চার্জ করার জন্য, ইগনিশন পদ্ধতির জন্য, লাইট এবং হর্ন পদ্ধতির জন্য ডি.সি বিদ্যুৎ প্রয়োজন। অলটারনেটর চার্জিং পদ্ধতিতে কাটআউট ব্যবহার করা হয়।

অলটারনেটরের সব সংযোগ সঠিক থাকলে ইঞ্জিন চালু করার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাটারীকে চার্জ দিতে শুরু করে। কিন্তু ইঞ্জিন বন্ধ অবস্থায় ব্যাটারী থেকে যদি বিদ্যুৎ অলটারনেটরে আসতে চায় তখন খুব উচ্চ রোধ সেখানে বাধা দেয়। অলটারনেটরের ফিল্ড বর্তনী সবসময়ই ব্যাটারীর বিদ্যুৎ দ্বারা উত্তেজিত করা হয়।

এটা ব্যাটারীর সাথে ইগনিশন সুইচের মাধ্যমে সংযোগ করা থাকে। ইগনিশন সুইচ বন্ধ হয়ে ইঞ্জিন বন্ধ হলে এই সংযোগও বন্ধ হয়ে যায়। ফিল্ড বিদ্যুৎ ভোল্টেজ রেগুলেটরের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়ে অলটারনেটরের আউটপুট হিসাবে ইগনিশন পদ্ধতি, লাইটিং পদ্ধতি, হিটার এবং হর্ন বর্তনীতে ব্যবহৃত হয়।

রোটর শ্যাফটের গায়ে যন্ত্রাংশগুলি সংযুক্ত থাকে। এখানে রোটর (ফিল্ড কয়েল) শ্যাফটের মধ্যস্থলে অবস্থান করে। এর উপরে স্ট্যাটর (আর্মেচার) সংযুক্ত থাকে। রোটর শ্যাফটের সঙ্গে ঘোরে কিন্তু আর্মেচার ঘোরে না। ইগনিশন সুইচ অন করার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটারী বিদ্যুতের সাহায্যে ফিল্ড কয়েল বা রোটর শক্তিশালী চুম্বকে পরিণত হয়। রোটর স্ট্যাটরের মধ্য দিয়ে ঘোরে বিধায় বলরেখা (lines of force) কর্তিত হয় ও বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়ে রেকটিফায়ারের মাধ্যমে এ. সি হতে ডি. সি হয়ে ব্যাটারীকে চার্জ করে। ফিল্ড বা রোটর বিদ্যুৎ স্লিপরিং এবং ব্রাশের মাধ্যমে ভোল্টেজ রেগুলেটরের সাহায্যে নিয়ন্ত্রিত হয়ে বর্তনীতে সরবরাহ হয়।

 

অলটারনেটর চার্জিং বর্তনী (Circuit) :

স্ট্যাটর উইন্ডিং-এ সাধারণত অথবা 4 (ডেলটা) সংযুক্ত থাকে। তিনটি উইন্ডিং-এর তিনটি মাথা প্রথমে পজেটিভ ডায়ড রেকটিফায়ারের সাথে যুক্ত হয়। ফলে পজেটিভ ইলেকট্রন ডায়ডের মধ্যে প্রবাহিত হয়ে

 

মোটরযানের অলটারনেটর | চার্জিং ও স্টার্টিং পদ্ধতি | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

ব্যাটারীতে যায় এবং নেগেটিভ ইলেকট্রনগুলি ডায়ডের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গ্রাউন্ড হয় এবং বর্তনী সম্পূর্ণ হয় (৮.৯ চিত্র)। রোটর হতে বিদ্যুৎ স্লিপরিং ভোল্টেজ রেগুলেটর হয়ে

 

মোটরযানের অলটারনেটর | চার্জিং ও স্টার্টিং পদ্ধতি | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

ডায়ড এন্ড ফ্রেমের সাথে মিলিত হয়। ভোল্টেজ রেগুলেটর থেকে অন্য একটি লাইন ফিউজ হয়ে ইগনিশন সুইচ এবং সুইচ থেকে একটি রোধ হয়ে ইগনিশন কয়েলে যায় (চিত্র দ্রষ্টব্য)।

 

মোটরযানের অলটারনেটর | চার্জিং ও স্টার্টিং পদ্ধতি | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

অলটারনেটর ওভারহলিং : অলটারনেটর খুলবার নিয়ম :

 

 (১) প্রথমে ইনসুলেটেড ব্রাশ খুলতে হবে এবং পরে সব স্ক্রু, ফ্লাট ওয়াশার, নায়লন ওয়াশার এবং ফিল্ড টার্মিনাল খুলতে হবে। ব্রাশ এবং স্প্রিং সংযোগও খুলতে হবে।

(২) এন্ড ফ্রেম থেকে গ্রাউন্ড ব্রাশ এবং রিটেইনিং স্ক্রু খুলতে হবে।

(৩) থ্রো-বোল্ট দুইটি খুলতে হবে। এরপর স্ট্যাটর এবং ড্রাইভ এন্ড ফ্রেমকে আলাদা করতে হবে ভাল স্ক্রু-ড্রাইভারের ব্লেড দ্বারা আস্তে আস্তে আঘাত দিয়ে। এ সময় খুব সতর্ক থাকতে হয় যাতে স্ট্যাটর লেমিনেশন নষ্ট না হয় ।

(৪) পুলি রোটর শ্যাফটের গায়ে সংযুক্ত থাকে। স্পেশাল পুলার দ্বারা পুলিটি খুলতে হয় । 

(৫) তিনটি নাট খুলে ড্রাইভ এন্ড হাউজিং রোটর হতে আলাদা করতে হবে। এখন প্লাস্টিক হাতুড়ি দ্বারা আঘাত করলে শ্যাফট হতে রোটর্ বের হয়ে আসবে ।

(৬)বল বিয়ারিংগুলিকে পুলারের সাহায্যে খুলতে হয়।

(৭) হিট শিঙ্ক হতে যদি রেকটিফায়ারগুলি খোলার প্রয়োজন হয় তাহলে প্রথমে ইনসুলেটর এবং সোল্ডারিং সরিয়ে ফেলতে হয়। (৮) রেকটিফায়ারগুলিকে আসন (seat) থেকে তুলে ফেলতে হবে। প্রয়োজনবোধে

সোল্ডারিং নষ্ট করে দিতে হবে। পরীক্ষা করে পুনরায় সোল্ডারিং করে লাগাতে হবে।

 

পরিষ্কার ও পরীক্ষাকরণ :

প্রথমে যন্ত্রাংশগুলিকে কেরোসিন অথবা পেট্রোলের ভিজা নেকড়া দ্বারা ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে। যন্ত্রাংশগুলিকে কেরোসিন অথবা পেট্রোলের মধ্যে মোটেই ভিজিয়ে রাখা যাবে না। এতে যন্ত্রাংশগুলির ক্ষতির কারণ হবে, তারের ইনসুলেশন উঠে যাবে। 

(১) রোটর সংযোগের বিভিন্ন অংশ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে, ঐগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে কিনা বা নষ্ট হয়েছে কিনা। বিয়ারিং ক্ষয়প্রাপ্ত হলে পরিবর্তন করতে হবে। স্লিপরিং অমসৃণ হলে লেদে টারনিং করা উচিত। ফ্যানের ব্লেড নষ্ট হলেও বদলানো প্রয়োজন।

(২) সিরিজ ল্যাম্প বা টেস্ট ল্যাম্প অথবা কন্টিনিউয়িটি টেস্টার দ্বারা রোটরের (ফিল্ড কয়েল) কন্টিনিউয়িটি, শট এবং গ্রাউন্ড পরীক্ষা করে দেখতে হবে। ফিল্ড কয়েল সাধারণত ২.৪০ হতে ২.৭৫ অ্যাম্পেয়ার গ্রহণ করে ১২ ভোল্টের বেলায়।

(৩) স্ট্যাটর বা আর্মেচার উইন্ডিং-এর কন্টিনিউয়িটি, শট এবং গ্রাউন্ড ইত্যাদি পরীক্ষা করতে হয়। জেনারেটর বা ডায়নামো যেভাবে পরীক্ষা করা হয় স্ট্যাটরও অনুরূপভাবে পরীক্ষা করতে হয়।

(৪) রেকটিফায়ার ওহম মিটার দ্বারা পরীক্ষা করতে হয়। পজেটিভ ডায়ডগুলি ৪.১০ ওহম দেখায় এবং নেগেটিভ ডায়ডগুলি অসীম (infinity) দেখাবে। রেকটিফায়ার শর্ট বা ওপেন (সার্কিট) হলে ধারকত্ব নষ্ট হয়ে যায় এবং ব্যাটারী চার্জ দেওয়া বন্ধ হয় অথবা উল্টা হয়ে যায় (কাজ করে)।

(৫) এমতাবস্থায় ধারক শর্ট কিনা দেখতে হয়। অভ্যন্তরীণ ধারকের ক্ষমতা সাধারণত .১৫৮ (MFD) এবং বহির্ভাগ ধারকের ০.৫ মাইক্রোফ্যারাড (MFD)। অলটারনেটরের দুই প্রান্তের দুইটি বিয়ারিং এবং ভাল-মন্দ অবস্থা দেখে দিতে হয়। দুই আঙ্গুল দ্বারা ছিদ্র ধরে ঘুরালে যদি মসৃণভাবে ঘোরে, কোন শব্দ না হয় বা বন্ধ না হয় তবে বিয়ারিং ভাল আছে মনে করতে হবে।

 

পুনঃসংযোজন (অলটারনেটর)

(১) নেগেটিভ ও পজিটিভ ডায়ড রেকটিফায়ারগুলিকে এদের স্বস্থানে সোল্ডারিং করে ভালভাবে বসিয়ে দিতে হবে এবং উভয় প্রকার ডায়ডের মধ্যে তার দ্বারা সংযোগ স্থাপন করতে হবে।

(২) রোটর শ্যাফটের নির্দিষ্ট স্থানে বসিয়ে দিতে হবে এবং বিয়ারিংসমূহ সংযুক্ত করতে হবে।

(৩) আউটপুট টার্মিনালের সকল যন্ত্রাংশ যথাযথভাবে বসাতে হবে।

(৪) সকল ওয়াশার, নাট-বোল্ট, হিট শিঙ্ক, ব্রাশ ইত্যাদিকে যথাযথ স্থানে রেখে রেকটিফায়ারসহ স্ট্যাটরকে রোটর শ্যাফটে স্থাপন করতে হবে এবং অপর দিক দিয়ে শ্যাফটের ড্রাইভ এন্ড ফ্রেমটির সংযোগ স্থাপন করতে হবে। স্ট্যাটর, এন্ড ফ্রেম ইত্যাদিকে তাদের স্বস্থানে বসাতে মৃদু আঘাত এবং চাপের প্রয়োজন হয়। এখানে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে যে কোনো অবস্থাতেই যেন কোন আঘাত স্ট্যাটর উইন্ডিং বা রোটর উইন্ডিং-এর উপর না পড়ে। এর ফলে এগুলি শর্ট হয়ে যেতে পারে।

(৫) সকল যন্ত্রাংশ যথাযথ স্থানে সঠিকভাবে আছে কিনা তা দেখতে হবে। তারপর থ্রো-বোল্ট এবং অন্যান্য নাট বোল্ট এবং ওয়াশার লাগিয়ে ভালভাবে এঁটে কার্য সমাধা করতে হবে।

(৬) এখন অলটারনেটর জোরে ঘুরিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হবে এটি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে কিনা।

 

আরও দেখুনঃ

 

1 thought on “মোটরযানের অলটারনেটর”

Leave a Comment