ব্রেক পদ্ধতি- আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং” বিষয়ের একটি পাঠ। ব্রেক পদ্ধতি এমন একটি পদ্ধতি যার সাহায্যে কোন গতিশীল ঘূর্ণায়মান বা চলমান চাকা বা হুইলের গতি প্রয়োজনমত আস্তে আস্তে অথবা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা যায় (থামানো অথবা কমানো যায়) তাকেই ব্রেক পদ্ধতি বলে। গাড়ীকে প্রয়োজনের সময় থামিয়ে দেওয়াই এই পদ্ধতির উদ্দেশ্য।
ব্রেক পদ্ধতি
প্রকারভেদ
মোটরযানে বিভিন্ন প্রকার ব্রেক পদ্ধতি দেখতে পাওয়া যায়, যেমন :
(১) হাইড্রলিক ব্রেক (hydraulic brake)
(২) যান্ত্রিক ব্রেক (mechanical brake) বা পার্কিং ব্রেক (parking brake)
(৩) ডিস্ক ব্রেক (disc brake)
(৪) পাওয়ার ব্রেক (power brake)
(৫) এয়ার ব্রেক (air brake)
(৬) ইলেকট্রিক্যাল ব্রেক (electrical brake)
পৃথিবীর সকল দেশ সাধারণত মোটরযানে হাইড্রলিক ব্রেক বহুল পরিমাণে ব্যবহার করে থাকে।
হাইড্রলিক ব্রেক
নিম্নলিখিত যন্ত্রাংশের সমন্বয়ে হাইড্রলিক ব্রেক পদ্ধতি গঠিত ।
(১) ব্রেক অয়েল রিজারভার ট্যাঙ্ক (brake oil reserviour tank)
(২) মাস্টার সিলিন্ডার (master cylinder)
(৩) মাস্টার সিলিন্ডার পিস্টন (master cylinder piston)
(৪) মাস্টার সিলিন্ডার বাকেট (master cylinder bucket) (৫) মাস্টার সিলিন্ডার স্প্রিং (master cylinder spring)
(৬) চেক ভাল্ভ (check valve)
(৭) হেড নাট (head nut)
(৮) রাবার বুট (rubber boot)
(৯) পুশ রড (push rod)
(১০) প্যাডেল (pedal) (১১) ব্রেক হোজ পাইপ (brake house pipe)
(১২) হুইল সিলিন্ডার (wheel cylinder)
(১৩) হুইল সিলিন্ডার বাকেট (wheel cylinder bucket) (১৪) হুইল সিলিন্ডার পিস্টন (wheel cylinder piston)
(১৫) হুইল সিলিন্ডার স্প্রিং (wheel cylinder spring)
(১৬) ব্রেক-সু একচুয়েটিং পিন (brake shoe actuating pin) (১৭) ব্রেক-সু রিটার্নিং স্প্রিং (barke shoe returning spring)
(১৮) ব্রেক-সু লাইনিং (brake shoe lining)
(১৯) ব্রেক-সু এ্যাঙ্কর পিন (B.S. anchor pin)
(২০) ব্রেক-সু (brake shoe )
(২১) ব্রেক ড্রাম (brake drum )
(২২) ব্রেক-সু অ্যাডজাস্টিং স্ক্রু (brake shoe adjusting screw)
(২৩) এয়ার ব্লিডিং স্ক্রু (air bleeding screw) ।
হাইড্রলিক ব্রেক পদ্ধতির কার্যপ্রণালী
৬.১ (ক) চিত্রে হাইড্রলিক ব্রেক পদ্ধতির গঠন এবং কার্যপ্রণালী দেখানো হয়েছে। ইহাতে রিজার্ভ ট্যাঙ্ক ব্রেক অয়েল থাকে। সেখান থেকে ওয়েল ব্রিদার পোর্ট দ্বারা মাস্টার সিলিন্ডারে আসে। মাস্টার সিলিন্ডার থেকে হুইল সিলিন্ডার পর্যন্ত সব সময়ই ব্রেক অয়েল দ্বারা পূর্ণ থাকে। এমতাবস্থায় ব্রেক প্যাডেলে চাপ দিয়ে সেই চাপ লিংকেজ, পুশ রড হয়ে পিস্টনে আসে। পিস্টন সেই চাপকে মাস্টার সিলিন্ডার বাকেটের সাহায্যে ব্রেক অয়েলের উপর চাপ দেয়। ফলে ব্রেক অয়েল চেক ভাল্ভ হয়ে হুইল সিলিন্ডারে দ্রুত চাপ বাড়াতে থাকে।
ব্রেক প্যাডেলে চাপ দিলে প্রথমে ব্রিদার (ইনটেক) পোর্ট বন্ধ হয় এবং চাপ বাড়তে থাকে। অতিরিক্ত চাপ ক্ষতিপূরক দ্বার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় (ব্রেক অয়েল বের হয়ে রিজার্ভ ট্যাঙ্কে যায় বিধায়)। পিস্টন আরও কিছুটা অগ্রসর হয়ে যখন ক্ষতিপূরক দ্বারকে বন্ধ করে দেয়, তখন মাস্টার সিলিন্ডার থেকে হুইল সিলিন্ডার পর্যন্ত সম্পূর্ণ ব্রেক লাইনে বিশেষ করে হুইল সিলিন্ডারে তীব্র চাপের সৃষ্টি হয়।
ঐ তীব্র চাপে হুইল সিলিন্ডার বাকেটদ্বয় হুইল সিলিন্ডার পিস্টনদ্বয়কে ধাক্কা দেয়। পিস্টনের এই ধাক্কা সক্রিয় পিনের সাহায্যে ব্রেক সু-এর উপর বর্তায়। ফলে ব্রেক-সু ব্রেক লাইনিংকে ব্রেক ড্রামের সাথে সংযোগ ঘটায় ও ব্রেক হয় এবং গাড়ীর গতি কমে যায় বা থেমে যায়।
ব্রেক ড্রাম এবং ব্রেক-সু লোহার তৈরী, কিন্তু ব্রেক লাইনিং লোহার বা ধাতব পদার্থের নয় সাধারণত অ্যাসবেসটস কম্পাউন্ড (asbestos compound) দিয়ে তৈরী। ব্রেক লাইনিং ব্রেক ড্রাম এবং ব্রেক-সু-এর মধ্যে অবস্থান করে। ব্রেক লাইনিং ব্রেক সু-এর সাথে শক্তভাবে লাগানো থাকে। ব্রেক সু হুইল সিলিন্ডারের নীচে প্লেটের সাথে এ্যাঙ্কর পিন দ্বারা সংযুক্ত থাকে।
ব্রেক প্যাডেলে ১০ পাউন্ড চাপ প্রয়োগ করলে সাধারণত দেখা যায় উহা হুইল সিলিন্ডারের প্রতি বর্গইঞ্চিতে ১০০ পাউন্ড চাপ দেয়। ব্রেক প্যাডেল থেকে পা যখন তোলা হয় তখন হুইল সিলিন্ডারে কোন চাপ থাকে না। কারণ ব্রেক সু রিটার্নিং স্প্রিং-এর চাপে (টানে) ব্রেক—সু ও ব্রেক লাইনিংসহ তার স্বস্থানে ফিরে আসে।
ফলে ব্রেক ড্রাম চাপ মুক্ত হয় অর্থাৎ গাড়ীর চাকা মুক্তভাবে ঘুরতে পারে। ব্রেক প্যাডেলে চাপ দিলে ব্রেক-সু যখন প্রসারিত হয় তখন উহা ব্রেক—সু রিটার্নিং স্প্রিং-এর বিরুদ্ধে কাজ করে। অর্থাৎ স্প্রিং এর বিপরীত দিকে প্রসারিত হয়। যখন প্যাডেল থেকে চাপ সরে যায় তখন স্প্রিং এর চাপে ব্রেক-সু আবার তার পূর্ব স্থানে ফিরে আসে। মাস্টার ও হুইল সিলিন্ডারের যন্ত্রগুলি তাদের পূর্ব অবস্থায় ফিরে যায়। ইহাই হাইড্রলিক ব্রেকের কার্যপ্রণালী।
হাইড্রলিক ব্রেক পরিষ্কার ও মেরামতকরণ
হাইড্রলিক ব্রেক পদ্ধতিতে উন্নতমানের ব্রেক অয়েল ব্যবহার না করা হলে দ্রুত ব্রেক পদ্ধতির যন্ত্রগুলি নষ্ট হয়ে যেতে থাকে। কয়েক দিন পর পরই ব্রেক রিজার্ভ ট্যাঙ্কে তেল আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হয়। তেল কম থাকলে (ব্রেক অয়েল) রিজার্ভ ট্যাঙ্ক পূর্ণ করে দিতে হয়। ব্রেক সংযোগসমূহে মাঝে মাঝে গ্রীজ দিতে হয়।
মাস্টার সিলিন্ডারের বাকেটসমূহ, স্প্রিং এবং চেক ভাল্ভ প্রায়ই অকেজো হয়ে ব্রেক পদ্ধতির বিপদ ঘটায়। এগুলি মেরামত করার কোন সুযোগ নেই। বরং এগুলি পরিবর্তন করে ব্রেক পদ্ধতির নবজীবন দান করা যেতে পারে। কিছুদিন পরই যদি মাস্টার সিলিন্ডারের বাকেট নষ্ট হয়ে ব্রেক পদ্ধতির বিপদ ঘটায় তাহলে বুঝতে হবে মাস্টার সিলিন্ডার ওয়াল অমসৃণ হয়ে গেছে অথবা ব্রেক অয়েল নিম্নমানের।
এমতাবস্থায় মাস্টার সিলিন্ডার খুলে উহার ভিতরের ওয়াল ‘০০’ এমারী কাপড় দ্বারা খুব সতর্কতার সাথে ঘষে পরিষ্কার করতে হয়, যাতে সব ওয়াল মসৃণ হয়। বাকেট এবং পিস্টন ভালভাবে কাজ করতে পারে। ভাল কোম্পানীর (লকহীড) বাকেট ব্যবহার করতে হবে।
ব্রেক হোজ পাইপসমূহ ছিদ্র হলে অথবা ফেটে গেলে মেরামত করা যায় না। ইহা পরিবর্তন করতে হয়। ইহা ফেটে গেলে ব্রেক পদ্ধতি কয়েক মিনিটের মধ্যেই অকেজো হয়ে পড়ে। ব্রেক যন্ত্রাংশ ধোয়ার সময় খুব লক্ষ্য রাখতে হবে বাকেটসমূহ যেন পেট্রোল অথবা কেরোসিন তেল দ্বারা সিক্ত না হয়। তাহলে অচিরেই এগুলি কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে।
অনুরূপভাবে হুইল সিলিন্ডারের বাকেট, স্প্রিং এবং ব্রেক লাইনিং নষ্ট হয়ে গেলে মেরামত করা যায় না, বরং পরিবর্তন করে ব্রেক পদ্ধতিকে সবল করতে হয়। তবে ব্রেক লাইনিংসমূহে তেল, গ্রীজ অথবা মোবিল লাগলে ব্রেক হতে চায় না। এমতাবস্থায় পেট্রোল দ্বারা ব্রেক লাইনিং ধুয়ে দিলে রোদে অথবা অন্য কোন তাপে শুকিয়ে পুনরায় ব্যবহার করা যায়।
ব্রেক লাইনিং যদি ক্ষয়প্রাপ্ত হয় তাহলে ব্রেক ড্রামকেও নষ্ট করে। এমতাবস্থায় ব্রেক লাইনিং-এ বেশী দিন গাড়ী চালনা করলে ব্রেক ড্রাম এবং ব্রেক-সু প্রভূত পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ব্রেক ড্রাম গরম হবে, ব্রেক হবে না এবং অনেক শব্দ হবে। ব্রেক লাইনিং-এ এমন অবস্থা দেখা দিলে এই পদ্ধতির ওভারহোলিং করতে হয়। নূতন ব্রেক লাইনিং বাজার থেকে ক্রয় করে রিভেট দ্বারা ব্রেক-সু-এর সাথে সংযুক্ত করতে হবে। ব্রেক ড্রাম লেদ মেশিনে ঘুরাতে হবে। এরপর পুনরায় লাগিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
কোন কোন মোটরযানের ব্রেক পদ্ধতির গোলযোগে দীর্ঘদিন ধরে দেখা যায় না। কিন্তু হঠাৎ একদিন দেখা গেল ব্রেক আর কাজ করছে না। কারণ হিসাবে দেখা যায়, হুইল সিলিন্ডার পিস্টন, বাকেট, বাইসেকটর, পুশ রড ইত্যাদি বন্ধ হয়ে গেছে অর্থাৎ মরিচা ধরেছে। এমতাবস্থায় ঐগুলি খুলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে এবং বাকেট পরিবর্তন করে পুনরায় লাগিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হয়।
গাড়ী চালানোর পরই ব্রেক করার প্রয়োজন হয় ।ব্রেক করলে প্রতিবারই কিছু না কিছু ব্রেক লাইনিং ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এর ফলে কিছুদিন পর পর ব্রেক সমন্বয় করে দেওয়ার প্রয়োজন হয়। সুষ্ঠুভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করলে গাড়ীর আয়ু বৃদ্ধি পায়। মাঝে মাঝে ব্রেক পদ্ধতি ভালভাবে পরিষ্কার করতে হয়। ফ্লাশিং পদ্ধতি নিম্নে বর্ণনা করা হলো।
হাইড্রলিক ব্রেক পদ্ধতিতে এয়ারব্লিডিং করার নিয়ম
ব্রেক পদ্ধতি থেকে (মাস্টার সিলিন্ডার থেকে হুইল সিলিন্ডার পর্যন্ত) বাতাস বের করার পদ্ধতিকে এয়ার ব্লিডিং বলে। ব্রেক পদ্ধতিতে বাতাস থাকলে ভাল ব্রেক হয় না। যেহেতু বাতাস সঙ্কুচিত হয় সেহেতু ব্রেক করলে প্যাডেল স্পঞ্জের মত লাগে অথবা প্যাডেল বসে যায়। এমতাবস্থায় ব্রেক পদ্ধতির ব্লিডিং করা প্রয়োজন হয়। নিম্নলিখিতভাবে ব্লিডিং করা যায়, যেমন :
(ক) মাস্টার সিলিন্ডার রিজার্ভ ফিলার এর সাহায্যে প্রেসার ট্যাঙ্কের সাহায্যে
(গ) কেবলমাত্র ব্রেক প্যাডেলের সাহায্যে পাম্প করে (বা সর্বদা আমাদের দেশের প্রায় ওয়ার্কশপে করা হয়) এই পদ্ধতিতে কোন যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয় না।
ব্রেক প্যাডেলের সাহায্যে ব্লিডিং করার নিয়ম
১। প্রথমে মাস্টার সিলিন্ডার রিজার্ভ ট্যাঙ্ক ব্রেক অয়েল দ্বারা পূর্ণ করতে হবে ।
২। হুইল সিলিন্ডারের এয়ার ব্লিডিং স্ক্রু ঢিলা করে দিতে হবে।
৩। এমতাবস্থায় অন্য একজন লোক অথবা ড্রাইভার সিটে বসে ব্রেক প্যাডেল বারবার দাবাতে থাকবে অথবা পাম্প করবে। এর ফলে ব্রেক লাইনে চাপের সৃষ্টি হবে এবং ব্লিডিং স্কু দ্বারা বুদবুদ আকারে বাতাস এবং তেল বের হবে।
৪। এখন এয়ার ব্লিডিং ত্রুটিকে আবার শক্ত করে লাগাতে হবে এবং ব্রেক প্যাডেল দ্বারা তিন চারবার পাম্প করতে হবে। তারপর পুনরায় এয়ার ব্লিডিং ত্রুটিকে ঢিলা করে দিতে হবে। দেখা যাবে পূর্বের ন্যায় বুদবুদ আকারে বাতাস ও তেল বের হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া ৩/৪ বার প্রয়োগ করলে দেখা যাবে ব্রেক পদ্ধতি থেকে বাতাস সম্পূর্ণভাবে বের হয়ে গেছে।
৫। বাতাস সম্পূর্ণ বের হয়ে গেছে তখনই বোঝা যাবে যখন প্যাডেল চাপলে বুদবুদ আকারের বাতাস আর বের না হয়ে ফিনকি দিয়ে শুধুমাত্র তেল বের হয়।
৬। এই পদ্ধতির জন্য দুইজন মানুষ লাগে। একজন প্যাডেলে চাপ দেয়ার জন্য এবং অন্যজন ব্লিডিং স্ক্রু ঢিলা এবং শক্ত করে লাগানোর জন্য।
৭। এয়ার ব্লিডিং স্ক্রু আলগা করলে তা থেকে যে তেল পড়ে তা রক্ষা করার জন্য হুইল সিলিন্ডারের নীচে একটি পরিষ্কার পাত্র রাখতে হয়, যাতে তেল ঐ পাত্রে জমা হয়। পরে ঐ তেল আবার রিজার্ভ ট্যাঙ্কে পূর্ণ করা হয়। ইহা করা হয় তেলের অপচয় রোধ করার জন্য।
৮। উপরোক্ত প্রক্রিয়া দ্বারা গাড়ীর চার চাকার ব্লিডিং এর কার্য সমাধা করতে হয়। তবে যদি বোঝা যায় যে সম্মুখের অথবা পিছনের চাকায় ব্রেক কম ধরছে তাহলে শুধু সম্মুখের অথবা শুধু পিছনের চাকায় ব্লিডিং করলেই চলবে। ব্লিডিং করতে করতে যদি ব্রেক অয়েল শেষ হয়ে যায় তবে রিজার্ভ ট্যাঙ্কে পুনঃপুনঃ তেল দিতে হয়। কোন কোন সময় ২/৩ টিন ব্রেক অয়েল লেগে যায়।
৯। ব্লিডিং সম্পূর্ণ হওয়ার পর মাস্টার সিলিন্ডার রিজার্ভ ট্যাঙ্কের তেল পরিপূর্ণ করে দিতে হয় ।
১০। ব্লিডিং ঠিক হয়েছে কিনা এবং ব্রেক ঠিকমত হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্যে গাড়ী অটো লিফটে তুলে গিয়ারে দিয়ে চালনা করে ব্রেক করলে যদি চারটি চাকা একই সময় থেমে যায় তবে ব্রেক পদ্ধতির ব্লিডিং ঠিক হয়েছে বুঝতে হবে।
১১। যেখানে অটো লিফ্ট নেই সেখানে রাস্তা পরীক্ষা (road test) করাই শ্রেয় এবং সর্বোৎকৃষ্ট। বড় বড় কারখানায় ব্রেক প্যাডেল দাবালে চার চাকায় সমানভাবে ধরে কিনা বা ব্রেক হয় কিনা তা নির্ণয় করার জন্য ব্রেক পরীক্ষা করার যন্ত্র থাকে।
১২। যদি যন্ত্র না থাকে তাহলে রাস্তা পরীক্ষা করে ব্রেক ঠিক করাই ভাল। মোটামুটি ভাল রাস্তায় ৩০/৪০ মাইল বেগে গাড়ী চালিয়ে ব্রেক চাপলে গাড়ী যদি সোজাভাবে দাঁড়ায় তাহলে বুঝতে হবে ঢাকায় সমানভাবে ব্রেক হয়েছে অর্থাৎ চারটি চাকার ছাপ রাস্তায় সমভাবে পড়েছে বা অঙ্কিত হয়েছে। এতে বুঝতে হবে ব্রেক সমন্বয় ঠিক হয়েছে।
১৩। গাড়ী যদি ডানে অথবা বামে টানে (ব্রেক করলে) অথবা কোন চাকার কমবেশী ছাপ রাস্তায় অঙ্কিত হয় তাহলে বোঝা যাবে ব্রেক সমন্বয় ঠিক হয়নি। ডানে বেশী টানলে বুঝতে হবে ডান দিকের চাকায় বেশী ব্রেক হয় এবং বাম দিকে কম হয়। অতএব বাম দিকের চাকায় সমন্বয় করতে হবে। সমন্বয় করা অর্থ হলো ব্রেক-সু লাইনিং এবং ব্রেক ড্রামের মধ্যে ক্লিয়ারেন্স বা ফাঁক কমিয়ে দেওয়া। অনুরূপভাবে বাম দিকের চাকায় ব্রেক বেশী হলে ডান দিকের ঢাকায় সমন্বয় করতে হবে।
১৪। সম্মুখের চাকার তুলনায় যদি পিছনের চাকার ছাপ রাস্তায় বেশী অঙ্কিত হয় তাহলে বোঝা যাবে ব্রেক পিছনের চাকায় বেশী ধরেছে এবং সম্মুখের চাকায় কম ধরেছে। এমতাবস্থায় সম্মুখ প্রান্তের চাকাদ্বয়ে সমন্বয় করতে হবে।
হাইড্রলিক ব্রেক সমন্বয় করার পদ্ধতি
ব্রেক পদ্ধতির সব কিছু ঠিক থাকলেও অনেক সময় দেখা যায় যে ব্রেক ঠিকমত ধরছে না। এর দুটি কারণ হতে পারে। একটি হতে পারে রিজার্ভ ট্যাঙ্কে ব্রেক অয়েল কম আছে এবং অপরটি হতে পারে ব্রেক লাইনিং ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে (সামান্য পরিমাণে) বলে। ব্রেক লাইনিং-এর সামান্য ক্ষয়প্রাপ্ততার জন্য হলে শুধুমাত্র ব্রেক সমন্বয় করলেই ব্রেক পদ্ধতি ত্রুটিমুক্ত হবে।
সব গাড়ীর ব্রেক পদ্ধতি সমন্বয় এক রকম নয়। নির্মাতার দেয় নিয়ম অনুসারে সমন্বয় করাই শ্রেয়। বহু গাড়ী আছে ব্রেক পদ্ধতি। স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সমন্বয় হয়। যেমন ডিস্ক ব্রেক (disc brake)। নিম্নলিখিতভাবে হাইড্রলিক ব্রেক সমন্বয় করতে হয় ।
১। প্রথমে অটোলিফটের সাহায্যে গাড়ীটিকে ২/৩ ফুট পর্যন্ত উঁচু করতে হবে। যদি অটোলিফট না থাকে তবে হাইড্রলিক জ্যাক অথবা রাসায়নিক জ্যাকের সাহায্যে এক বা একাধিক চাকা এক সাথে উঁচু করতে হবে।
২। এমতাবস্থায় চাকা ঘুরিয়ে ব্রেক ড্রামটির কাটা জায়গা সমন্বয়কারী স্ক্রু বরাবর আনয়ন করতে হবে।
৩। এখন ঐ ড্রামের কাটা জায়গা দিয়ে সমন্বয়কারী টুল বা স্ক্রু-ড্রাইভার দ্বারা সমন্বয়কারী ত্রুটিকে নীচ থেকে উপরের দিকে চালনা করতে হবে। এতে ব্রেক-সুর সম্প্রসারণ ঘটবে এবং এক সময় ব্রেক ড্রামের সঙ্গে লেগে যাবে। ফলে ব্রেক ড্রাম আর ঘুরবে না। সমন্বয়কারী স্ক্রুর গায়ে কাটা দাঁত আছে। এখানে সমন্বয়কারী স্ক্রু বা স্ক্রু-ড্রাইভার সংযুক্ত হয়ে কাজ করে অর্থাৎ সমন্বয় করতে সাহায্য করে।
৪। এমতাবস্থায় সমন্বয়কারী স্ক্রু উল্টা দিকে ঘুরালে অর্থাৎ উপর দিক থেকে নীচের দিকে ঘুরালে ব্রেক-সু ব্রেক ড্রাম হতে ফাঁকা হবে। সমন্বয়কারী ত্রুটির এক প্যাচ অথবা দেড় প্যাচ খুলে দিয়ে চাকাটি হাত দ্বারা ঘুরালে যদি খুব সহজ ও সরলভাবে ঘোরে তাহলে ভাল। আর যদি না ঘোরে তবে আরও একটু খুলে দিতে হবে।
৫। এখন ড্রাইভারের সিটে বসে একজন কারিগর ব্রেক করার জন্য বসে থাকবে এবং অন্য একজন চাকাটিকে হাত দ্বারা জোরে ঘুরাবে। যখন ঘুরাবে তখন ব্রেক করতে হবে, এতে যদি দেখা যায় চাকাটি ততক্ষণাৎ থেমে গেছে তাহলে বুঝতে হবে ব্রেক সমন্বয় যথাযথ হয়েছে। এভাবে দুই তিনবার ঘুরাতে হবে এবং ব্রেক করে দেখতে হবে যে চাকাটিতে ব্রেক ঠিকমত হচ্ছে কিনা। যদি হয় তাহলে বুঝতে হবে সমন্বয় ঠিক হয়েছে।
৬। যদি দেখা যায় চাকাটিতে ব্রেক কম হচ্ছে তাহলে আর একটু সমন্বয় করে দিতে হবে অর্থাৎ সমন্বয়কারী ত্রুটিকে নীচু হতে উপরের দিকে সামান্য একটু ঘুরিয়ে দিতে হবে।
৭। উপরোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করে অন্যান্য চাকার সমন্বয় করতে হবে।
৮। ওয়ার্কশপে সমন্বয় করার পর রাস্তায় গাড়ী চালনা করে পরীক্ষা করা একান্ত কর্তব্য। একটু সমতল রাস্তায় চালনা করলে যদি দেখা যায় রাস্তায় চারটি চাকার ছাপ সমভাবে অঙ্কিত হয়েছে তাহলে বুঝতে হবে ব্রেকের সমন্বয় সঠিক হয়েছে।
৯। ব্রেক সমন্বয় করার ২/৪ দিন পর যদি দেখা যায় যে ব্রেক ভালভাবে ধরছে না তাহলে বুঝতে হবে যে ব্রেক লাইনিং-এর মধ্যে তেল, গ্রীজ বা মোবিল লেগেছে। ডিফারেনসিয়াল তেলের মাত্রা বেশী হলে এবং অ্যাক্সেল অয়েল নষ্ট হলে ব্রেকে তেল আসতে পারে।
আরও দেখুনঃ
- ট্যাপেট ক্লিয়ারেন্স
- বিভিন্ন যন্ত্রের ধাতুর পরিচয়
- ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশের পরিচিতি
- ভালভ টাইমিং | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং
- ডিজেল ফুয়েল পদ্ধতি
- মোটরগাড়ি শিল্প
2 thoughts on “ব্রেক পদ্ধতি”