হাইড্রলিক ব্রেকের যন্ত্র পরিচিতি নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং” বিষয়ের “ব্রেক সিস্টেম” বিভাগের একটি পাঠ।
হাইড্রলিক ব্রেকের যন্ত্র পরিচিতি
১। রাবার বুট (Rubber boot) :
এটি রাবারের তৈরী একটি ঢাকনা বিশেষ। এটি মাস্টার সিলিন্ডার এবং হুইল সিলিন্ডারের যন্ত্রাদি ঢেকে রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়, যেন ধুলা-বালিতে হুইল সিলিণ্ডার এবং মাস্টার সিলিণ্ডারের যন্ত্রগুলি নষ্ট না হয়। পুশ রড এবং অ্যাকচুয়েটিং পিন যেখানে থাকে সেখানে রাবার বুট অবস্থান করে।
২। ব্রেক ড্রাম (Brake drums) :
এটি কাস্ট আয়রন, ইস্পাত অথবা অ্যালুমিনিয়াম দ্বারা তৈরী। কারণ এই পদার্থগুলি তাড়াতাড়ি তাপ বিকিরণ করে ঠাণ্ডা হতে পারে। ব্রেক ড্রাম হুইল বোল্ট বা স্ট্যাট দ্বারা চাকার সাথে যুক্ত হয়ে ঘোরে। যখন ব্রেক চাপা হয় তখন ব্রেক-সু লাইনিং ড্রামের সাথে ঘর্ষণ খায়। এর ফলে ব্রেক ড্রাম উত্তপ্ত হয়। তাই ব্রেক ড্রাম ঠাণ্ডা করার জন্য আধুনিক গাড়ীসমূহে ব্রেক ড্রামের উপর কুলিং ফিন্স (cooling fins) কাস্টিং করা থাকে। ড্রাম চাকার সাথে ঘুরলে ফিস-এর সাহায্যে বাতাস উৎপন্ন হয় এবং ড্রাম ঠাণ্ডা হয়।
৩। ব্রেক-সু (Brake-shoe) :
ব্রেক-সু ইস্পাতের তৈরী। এই সু-এর সাথে ব্রেক লাইনিং শক্ত করে লাগানো থাকে। ব্রেক চাপলে এই লাইনিংসহ ড্রামের সাথে লেগে ড্রামকে থামায়। এই সু হুইল সিলিন্ডারের নিকটে থাকে কিন্তু মাস্টার সিলিন্ডারে থাকে না। ব্রেক- সুতে অনেকগুলি ছিদ্র থাকে যার মধ্যে ব্রেক-সু রিটার্নিং স্প্রিং, রিটেইনার স্প্রিং এবং কখনও কখনও অ্যাঙ্কর পিন থাকে।
৪। ব্রেক লাইনিং (Brake lining) :
ব্রেক লাইনিং ধাতুর তৈরী হয় না বরং এটা বিশেষ ধরনের অ্যাসবেসটস মণ্ড (asbestos compound) দ্বারা তৈরী। এটি ব্রেক-সু-এর সাথে রিভিট-এর সাহায্যে সংযুক্ত হয়ে থাকে। ব্রেক ড্রাম এবং ব্রেক-সু-এর মধ্যবর্তী স্থানে এর অবস্থান।
যখন ব্রেক প্যাডেলে চাপ প্রয়োগ করা হয় তখন ব্রেক-সু লাইনিং আচমকাভাবে ড্রামের সাথে খুব শক্তভাবে মিলিত হয় এবং ব্রেক ড্রামকে ঘূর্ণনে বাধা দেয় এবং থামিয়ে দেয়। ব্রেক লাইনিং বহু চাপ ও তাপ সহ্য করতে পারে। ব্রেক যখন খুব জোরে করা হয় তখন সর্বোচ্চ চাপ ১০০০ পাউন্ড প্রতি বর্গইঞ্চিতে এবং তাপ সর্বোচ্চ ৫০০° ফাঃ পর্যন্ত হতে পারে। তাপমাত্রা দ্রুত কমানোর জন্য ব্রেক ড্রামে কুলিং ফিন্স ব্যবহার করা হয়।
৫। রিটার্নিং স্প্রিং (Returning spring) :
হুইল সিলিন্ডার এবং মাস্টার সিলিন্ডারে রিটার্নিং স্প্রিং ব্যবহার করা হয়। হুইল সিলিন্ডারের রিটার্নিং স্প্রিংগুলি মজবুত এবং মোটা। এর তুলনায় মাস্টার সিলিন্ডারের স্প্রিংগুলি তত মজবুত ও মোটা নয়। ব্রেক যখন চাপা হয় তখন মাস্টার সিলিন্ডার চাপ (বাকেট) এবং পিস্টন স্বস্থান থেকে কিছু দূরে সরে যায়। কিন্তু ব্রেক প্যাডেল থেকে যখন চাপ ছেড়ে দেওয়া হয় তখন তাদের পূর্বস্থানে ফিরে যেতে এই স্প্রিং সাহায্য করে থাকে। তদ্রূপ ব্রেক-সু লাইনিংকে ব্রেক ড্রাম হতে তার স্বস্থানে যেতে সাহায্য করে থাকে। কারণ রিটার্নিং স্প্রিং-এর ব্রেকিং কাজ হয়। স্প্রিং-এর ধর্মই হচ্ছে বর্ধিত হলে পুনরায় স্বস্থানে ফিরে আসে।
৬। মাস্টার সিলিন্ডার ( Master cylinder) :
মাস্টার সিলিন্ডার মেকানিক্যাল প্রেসারকে হাইড্রোলিক প্রেসারে রূপান্তর করে থাকে। ইঞ্জিনের কাছেই এর অবস্থান। যান্ত্রিক সংযোগের মাধ্যমে এটি ব্রেক প্যাডেলের সাথে সম্পর্কযুক্ত থাকে। মাস্টার সিলিন্ডার রিজার্ভ ট্যাঙ্কের সাথে একত্রে কাস্টিং করা থাকে। রিজার্ভার ট্যাঙ্কে ব্রেক ফ্লুইড জমা রাখা হয়। পিস্টন, চেক ভালভ, প্রাইমারী কাপ (বাকেট), সেকেন্ডারী কাপ, সীল এবং রিটার্নিং স্প্রিং মাস্টার সিলিন্ডারের মধ্যে অবস্থান করে।
রিজার্ভার ট্যাঙ্ক হতে ইনলেট এবং বাইপাস পোর্ট অথবা কমপেনসেটিং পোর্ট দ্বারা ব্রেক ফ্লুইড এসে মাস্টার সিলিন্ডার পূর্ণ হয়। রিজার্ভ ট্যাঙ্কের ফিলার ক্যাপ আছে। এই ক্যাপের সাহায্যে রিজার্ভারে ব্রেক ফ্লুইড দেওয়া হয়। ফিলার ক্যাপের উপর একটি ছিদ্র থাকে (এয়ার ভেল্ট) যার সাহায্যে বাতাসের চাপে রিজার্ভার নিয়ন্ত্রিত হয়।
মাস্টার সিলিন্ডারের প্রাইমারী ক্যাপ (বাকেট) উক্ত সিলিন্ডারের পিস্টনের অগ্রভাগে থাকে। পিস্টন যখন ব্রেক হওয়ার জন্যে অগ্রসর হয় তখন উক্ত ক্যাপ ফ্লুইড লিক হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। যদি ফ্লুইড লিক করে তাহলে ব্রেক ভাল হবে না। সেকেন্ডারী ক্যাপ পিস্টনের পিছনের দিকে লাগানো থাকে। এটি পিস্টন এবং
সিলিন্ডারের মধ্যে সীল হিসাবে কাজ করে এবং ফ্লুইড লিক করার হাত থেকে রক্ষা করে।
৭। চেক ভাল্ভ (Check valve) :
এটি মাস্টার সিলিন্ডারের বহির্মুখে পিস্টন এবং ব্রেক লাইনের মধ্যে অবস্থিত। এটি ৬ হতে ৮ পাউন্ড প্রতি বর্গইঞ্চিতে চাপ সহ্য করতে পারে। এই প্রেসার হুইল সিলিন্ডারের ক্যাপগুলিকে প্রসারিত করতে সহায়তা করে এবং লিক হওয়া থেকে রক্ষা করে।
এটি দ্বিমুখী ভাল্ভ হিসাবে কাজ করে। এতে কয়েকটি ছিদ্র আছে এবং দেখতে অনেকটা ক্যাপের মত। একটি পিতল খণ্ডের ভিতরের দিকে রাবার বসানো থাকে। ভাল্ভটি যখন চাপের সম্মুখীন হয় তখন রাবারটি স্থানচ্যুত হয়ে ব্রেক ফ্লুইডকে লাইনে যেতে সাহায্য করে।
ব্রেক প্যাডেল চাপমুক্ত হওয়া মাত্রই ব্রেক-সু রিটারনিং স্প্রিং-এর প্রবল চাপে চেক ভাল্ভ তার স্বস্থান ত্যাগ করে চাপযুক্ত ব্রেক ফ্লুইডকে লাইন হতে মাস্টার সিলিন্ডারে ফিরে যেতে সহায়তা করে। যখন ব্রেক লাইনের চাপ মাস্টার সিলিন্ডার রিটারনিং স্প্রিং-এর সমান অথবা কম হয় তখন পুনরায় চেক ভাল্ভ স্বস্থানে বসে যায়।
৮। ফিলার ক্যাপ ভেন্ট (Filler cap vent) :
মাস্টার সিলিন্ডারে রিজার্ভ ট্যাঙ্কফিলার ক্যাপের মধ্যে একটি ছিদ্র থাকে, তাকেই ফিলার ক্যাপ ভেন্ট বলে। এর সাহায্যে বায়ুমণ্ডলের স্বাভাবিক চাপমাত্রা বজায় থাকে (রিজার্ভ ট্যাঙ্কে)। ফিলার ক্যাপে এই ছিদ্র না থাকলে ব্রেক পদ্ধতি স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারত না।
ব্রেকিং কাজ শেষ হওয়ার পরে ব্রেক ফ্লুইড যখন ব্রেক লাইন হতে রিজার্ভ ট্যাঙ্কে ফেরত আসে তখন ঐ ছিদ্র (ভেন্ট) দিয়ে রিজার্ভ ট্যাঙ্কের বাতাস বের হয়ে যায় এবং ট্যাঙ্কে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হওয়া থেকে রক্ষা করে। ফিলার ক্যাপে ভেন্ট বন্ধ থাকলে ব্রেক করার পর ব্রেক প্যাডেল ছেড়ে দিলেও ব্রেক প্যাডেল ফেরত আসবে না।
অনেক গাড়ীতে দেখা যায় পিছনের চাকার তুলনায় সম্মুখের চাকার হুইল সিলিন্ডার বড়। কারণ, গাড়ী যখন ব্রেক করা হয় তখন গাড়ী পিছনের তুলনায় সম্মুখে বেশী ঝুঁকে যায় তাই, পিছনের তুলনায় সম্মুখের চাকায় বেশী শক্তিশালী ব্রেক হওয়া প্রয়োজন। এই কারণে সম্মুখের হুইল সিলিন্ডার বড় করে তৈরী করা হয়।
যান্ত্রিক ব্রেক (Mechanical brake):
যান্ত্রিক ব্রেককে হ্যান্ড ব্রেক অথবা পার্কিং ব্রেকও বলা হয়। পূর্বে এই ব্রেক মেইন ব্রেক হিসাবে ব্যবহার করা হতো। আধুনিক বিশ্বে এই ব্রেক হ্যান্ড ব্রেক বা পার্কিং ব্রেক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। ড্রাইভারের বাম হাতের কাছেই এই ব্রেকের হ্যান্ড লিভারটির অবস্থান।
যান্ত্রিক ব্রেক যখন পার্কিং ব্রেক হিসাবে কাজ করে তখন ঐ লিভার টেনে একটু উপর দিকে উঠালের ব্রেক হয়ে যায়। কোন কোন গাড়ীতে এই রেকটি প্রোপেলার শ্যাফটে লক হয়। গাড়ী যখন কোন নির্দিষ্ট স্থানে পার্কিং করা হয় বা রাখা হয় (অফিস, আদালত, মার্কেট ইত্যাদি স্থানে) তখন এই ব্রেক-লিভারটি টেনে রাখতে হয়। গাড়ী চালানোর পূর্বে এই রেকের লিভারতি নীচের দিকে নামাতে হয়। অর্থাৎ হ্যান্ড ব্রেক মুক্ত করে দিতে হয়।
এই ব্রেক বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। যেমন, (ক) ব্রেক ফেল করলে গাড়ীটিকে দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য, (খ) রাস্তার ধারে, নদীর বা সাগরের কিনারায় গাড়ী পার্ক করলে, (গ) পাহাড়ীয়া এলাকায় গাড়ী চালনার ক্ষেত্রে, (ঘ) ফেরী পারাপারের সময়
সাধারণ অবস্থায় এই ব্রেকের লিভারটি বডির সাথে লাগানো থাকে। যখন ব্রেক করার প্রয়োজন হয় তখন লিভারটি টেনে খাড়া করা হয়। এই লিভারটির সাথে একটি ক্যাবল (cable) যুক্ত থাকে। এই ক্যাবল ব্রেক প্যাডের (pad) সাথেও যুক্ত থাকে। এই ব্রেক পদ্ধতিতে দুই জায়গায় ব্রেক হতে পারে। যেমন— প্রোপেলার শ্যাফটে এবং ড্রামে। প্রোপেলার শ্যাফটের সাথে দুইটি প্যাড থাকে। যখন ব্রেক-লিভারটি টানা হয় তখন এ প্যাড দুটি প্রার শ্যাফটকে জোরে চেপে ধরে। ফলে প্রোপেলার শ্যাফট আর ঘুরতে পারে না, অর্থাৎ ব্রেক হয় ।
লিভার যখন টানা হয় তখন ক্যাবলের মাধ্যমে ঐ টানের প্রভাব বা সম্প্রসারিত হয়। ফলে ব্রেক-সুও সম্প্রসারিত হয়, অর্থাৎ ব্রেক হয় (ব্রেক-সুজানার ব্রেক ডানের সাথে মিশে যায়)। নিম্নলিখিত যন্ত্রাদি নিয়ে যান্ত্রিক ব্রেক গঠিত হয়। যেমন, (ক) ব্রেক প্যাডেল, (খ) ব্রেক লিঙ্কেত, (গ) ক্যাম, (ঘ) ব্রেক ড্রাম, (ঙ) ব্রেক সু, (চ) ব্রেক-সু লাইনিং, (ছ) ব্রেক-সু রিটারনিং স্প্রিং, (জ) ব্রেক-সু রিটেইনার, (ঝ) অ্যাঙ্কর পিন, (ঞ) ব্যাকিং প্লেট। এই ব্রেক পদ্ধতিতে কোন প্রকার ফ্লুইডের প্রয়োজন হয় না। শুধুমাত্র যান্ত্রিক সংযোগের মাধ্যমে ব্রেক সংযোগের মাধ্যমে ব্রেক পরিচালনার কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে।
ব্রেক প্যাডেলে যখন চাপ প্রয়োগ করা হয় তখন সেই চাপে ক্যাম সম্প্রসারিত হয়। এই ক্যামের সঙ্গে ব্রেক-সু’র টো-গুলির (toe) সংযোগ করানো থাকে। ফলে ব্রেক-সু-সমূহ ক্যামের সাথে সাথে সম্প্রসারিত হয়ে ব্রেক ড্রামের সাথে সজোরে মিলিত হয়। অর্থাৎ ব্রেক ড্রামকে আর ঘুরতে দেয় না।
ব্রেক-সু-এর সাথে ব্রেক লাইনিং শক্ত করে লাগানো থাকে। এই ব্রেক যখন গাড়ীতে মূল ব্রেক হিসাবে কাজ করে তখন এই ব্রেকের কার্যপ্রণালী এরকম হয়। বর্তমানে বহু রেলগাড়ীতে যান্ত্রিক ব্রেকের ব্যবহার দেখা যায়। বর্তমানে বহু গাড়ীতে ফাঁকা (vacuum) পার্কিং ব্রেক দেখা যায়। এই ধরনের ব্রেকে ইঞ্জিনের শূন্যতা যত বেশী হবে ব্রেক ততবেশী মুক্ত থাকবে। ইঞ্জিন যখন বন্ধ হয়ে যায় অথবা স্পীড কম হয় তখন পূর্ণ ব্রেক হয় ।
ডিস্ক ব্রেক (Disc brake):
এটি একটি বিশেষ ধরনের হাইড্রলিক ব্রেক। এই ব্রেক পদ্ধতিতে বিশেষ ধরনের ব্রেক ড্রাম ব্যবহার করা হয়। এতে তাড়াতাড়ি তাপ বিকিরণ হতে পারে। এর ফলে ব্রেক লাইনিং বিবর্ণও (fade) কম হয়। এই ব্রেক নিম্নলিখিত যন্ত্রাদি নিয়ে গঠিত হয়।
- ১। রোটেটিং ডিস্ক (rotating disc)
- ২। স্থায়ী ক্যালিপার সংযোগ (fixed caliper assemble )
- ৩। স্প্লাশ শিল্ড (splash shield)
- ৪। ফ্রিকশনাল প্যাড (frictional pad) ৫। মাস্টার সিলিন্ডার (master cylinder)
- ৬। ব্রেক হোজ পাইপ ইত্যাদি।
ব্রেক প্যাডেলে চাপ দিলে মাস্টার সিলিন্ডার থেকে ব্রেক ফ্লুইড ব্রেক লাইনের মাধ্যমে হুইলের সিলিন্ডারের পিস্টনের উপর চাপ প্রয়োগ করে থাকে। পিস্টন তখন ফ্রিকশনাল প্যাডকে রোটেটিং ডিস্কের সাথে সংযোগ ঘটায়, ফলে ব্রেক হয়। যখন ব্রেক প্যাডেলের উপর থেকে চাপ ছেড়ে দেওয়া হয় তখন পিস্টনের প্যাড তাদের স্বস্থানে ফিরে যায়। এই ব্রেকে সমন্বয় করার কোন ব্যবস্থা নেই। এই ব্রেক স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সমন্বিত হয়ে থাকে। মাজদা ৮০৮ গাড়ীতে এই ধরনের ব্রেক আছে। বর্তমানে বহু গাড়ীতে ডিস্ক ব্রেক দেখতে পাওয়া যায়।
পাওয়ার ব্রেক (Power brake):
পাওয়ার ব্রেক উন্নত ধরনের হাইড্রলিক ব্রেক। এই ব্রেক পদ্ধতিতে প্যাডেলের চাপকে বহু গুণে বৃদ্ধি করার বিশেষ ব্যবস্থা আছে। ইনটেক মেনিফোল্ড শূন্যতা অথবা সঙ্কোচন বাতাসের সাহায্যে মাস্টার সিলিন্ডারে বেশী চাপ প্রয়োগের বিশেষ ব্যবস্থা আছে।
নিম্নলিখিত অংশসমূহ নিয়ে পাওয়ার ব্রেক গঠিত হয়।
- (ক) পাওয়ার সিলিন্ডার (power cylinder)
- (খ) পাওয়ার পিস্টন (power piston
- (গ) পাওয়ার ডায়াফ্রাম (power diaphragm)
- (ঘ) ভ্যাকুয়াম চেক ভাল্ভ
- (ঙ) মাস্টার সিলিন্ডার।
শক্তিশালী ব্রেকের জন্য বর্তমানে বহু বাস এবং ট্রামে এই জাতীয় ব্রেক ব্যবহার করা হয়। এই ব্রেক ব্যবহারের জন্য ব্রেক প্যাডেলে জোরে চাপ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। শক্তিশালী ব্রেকের জন্য এই পদ্ধতিতে একটি ভ্যাকুয়াম ইউনিট (যাতে একটি পাওয়ার পিস্টন, একটি পাওয়ার ডায়াফ্রাম থাকে) পাওয়ার সিলিন্ডার থাকে যার একপ্রান্ত ইঞ্জিন ইনটেক মেনিফোল্ড-এর সাথে এবং অন্য প্রান্ত বায়ুমণ্ডলের সাথে যুক্ত থাকে।
এখানে শূন্য চাপকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি কন্ট্রোল ভাল্ভ ব্যবহার করা হয়। ড্রাইভার যখন ব্রেক প্যাডেলে চাপ দেয় তখন কন্ট্রোল ভাল্ভ খুলে যায় এবং ইনটেক মেনিফোল্ডের শূন্যতার টানে পাওয়ার পিস্টন মাস্টার সিলিন্ডারের দিকে অগ্রসর হয়। তখন বায়ুমণ্ডলের সাধারণ চাপে পপেট ভাল্ভগুলি খুলে যায় এবং বাতাসের চাপে পাওয়ার পিস্টন শূন্যতার দিকে অর্থাৎ মাস্টার সিলিন্ডারের দিকে অগ্রসর হয়।
এখানে দেখা যাচ্ছে যে ব্রেক প্যাডেলের উপর ড্রাইভারের পায়ের চাপ, শূন্য চাপ এবং বাতাসের চাপ (এই তিনটি চাপ) একত্র হয়ে মাস্টার সিলিন্ডারের উপর বর্তায়। সম্মিলিত এই বিপুল চাপ হুইল সিলিন্ডারে প্রভাব বিস্তার করে খুবই শক্তিশালী ব্রেকের সৃষ্টি করে।
প্রকৃতপক্ষে এই ব্রেক হাইড্রলিক ব্রেকের মত কাজ করে। শক্তিশালী করার জন্য কয়েকটি নতুন সহযোগী ইউনিট হাইড্রলিক ব্রেক পদ্ধতির সাথে সংযোগ করা হয়। যেমন, ভ্যাকুয়াম ইউনিট, কম্প্রেসর বা বুস্টার, এয়ার রিজার্ভার ট্যাঙ্ক কন্ট্রোল ভাল্ভ ইত্যাদি। হুইল সিলিন্ডারে শক্তিশালী দ্বিখণ্ডক (bisector) ব্যবহার করা হয়। ব্রেক প্যাডেল থেকে পা তুলে নিলে সব যন্ত্র স্ব-স্ব স্থানে, ফিরে যায়, অর্থাৎ ব্রেকিং কৰ্ম (action) নষ্ট হয়ে যায়।
এয়ার ব্রেক বা হাওয়া ব্রেক (Air brake):
বর্তমানে বিভিন্ন গাড়ীতে এয়ার ব্রেকের ব্যবহার দেখা যায়। এই ব্রেক পদ্ধতিতে শুধুমাত্র সঙ্কুচিত বাতাসের চাপে লিঙ্কেজের সাহায্যে ব্রেক হয়ে থাকে। এই ব্রেক স্বাভাবিকভাবেই একটু শক্ত (hard) হয়ে থাকে। তাই যাত্রীদেরকে একটু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। নিম্নলিখিত যন্ত্রাদি নিয়ে হাওয়া ব্রেক পদ্ধতি গঠিত হয় ।
- (ক) এয়ার কম্প্রেসর (air compressor)
- (খ) রিজার্ভার ট্রাঙ্ক (reservoir tank) (গ) কন্ট্রোল ভাল্ভ (control valve)
- (ঘ) ব্রেক—সু (brake shoe )
- (ঙ) ব্রেক-সু লাইনিং (brake shoe lining)
- (চ) ডায়াফ্রাম (diaphragm)
- (ছ) ব্রেক লিঙ্কেজ (brake linkage)
- (জ) এয়ার হোজ পাইপ (air hose pipe) ইত্যাদি।
এই ব্রেক পদ্ধতিতে কোন ব্রেক অয়েল ব্যবহার করা হয় না। তবে কোন কোন গাড়ীতে পাওয়ার ব্রেকের সাথে এই ব্রেকের কম্প্রেসর বা রিজার্ভার সংযোগ করে ব্রেক করানোর ব্যবস্থা দেখা যায়। এই ব্রেক পদ্ধতিতে কম্প্রেসরটি ইঞ্জিন দ্বারা চালিত হয় এবং তা বাতাস তৈরীর কাজ করে এবং ঐ বাতাস রিজার্ভ ট্যাঙ্কে জমা থাকে।
ড্রাইভার যখন ব্রেক প্যাডেলে চাপ দেয় তখনই কন্ট্রোল ভাল্ভ খুলে যায় এবং এয়ার রিজার্ভ ট্যাংক হতে বাতাস ডায়াফ্রাম প্রকোষ্ঠে যেয়ে ডায়াফ্রামকে জোরে চাপ দেয়। এই চাপ পুশ রড বা লিকেজের মাধ্যমে ঢাকার ক্যামকে সম্প্রসারিত করে। ফলে ব্রেক-সু সম্প্রসারিত হয়ে ব্রেক ড্রামের সাথে দ্রুত মিলিত হয়, অর্থাৎ ব্রেক হয় (গাড়ী থেমে যায়)।
ড্রাইভার যখন ব্রেক প্যাডেল থেকে তুলে নেয় তখন কন্ট্রোল ভাল্ভ বন্ধ হয়ে যায়, ফলে রিজার্ভ ট্যাঙ্কের বাতাস আর ডায়াফ্রাম প্রকোষ্ঠে যেতে পারে না। ব্রেক করার সময় ডায়াফ্রাম প্রকোষ্ঠে যে বাতাস ছিল, ব্রেক প্যাডেল মুক্ত করার সাথে সাথে ঐ বাতাস বায়ুমণ্ডলে বিলীন হয়ে যায়। ব্রেক-সু রিটার্নিং স্প্রিং-এর সাহায্যে পুনরায় তার স্বস্থানে ফিরে আসে। এভাবে এয়ার ব্রেক কাজ করে থাকে।
আরও দেখুনঃ
- স্বয়ংক্রিয় ট্রান্সমিশন পদ্ধতি
- পাওয়ার ট্রান্সমিশন পদ্ধতি
- তাপমাত্রা ইণ্ডিকেটর
- কুলিং এবং ট্রান্সমিশন পদ্ধতি
- ক্লাচের প্রকারভেদ
- মোটরগাড়ি শিল্প
4 thoughts on “হাইড্রলিক ব্রেকের যন্ত্র পরিচিতি”