আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-ইলেকট্রোলাইটের ব্যবহার
ইলেকট্রোলাইটের ব্যবহার (Uses of Electrolyte )
৬২% পানির সাথে ৩৮% সালফিউরিক এসিড মিশিয়ে ইলেকট্রোলাইট তৈরি করা হয়। যা ব্যাটারিতে ব্যবহার করা হয় এবং নির্দিষ্ট সময় পর পর পুনঃ চার্জ করা হয়।
28.1 ইলেকট্রোলাইট
লিড এসিড স্টোরেজ ব্যাটারিতে সালফিউরিক এসিড ও ডিসটিল্ড ওয়াটার বা পানির যে সংমিশ্রণে ব্যবহৃত হয় তাকেই ইলেকট্রোলাইট বলে। সাধারণত এটা বোতল ভর্তি অবস্থায় সংমিশ্রিতভাবে সলিউশন বা এসিড নামে বাজারে পাওয়া যায়। ইলেকট্রোলাইট সলিউশনে শতকরা ৬২% ভাগ ডিসটিল্ড ওয়াটার ও ৩৮% ভাগ সালফিউরিক এসিড থাকে।
ইলেকট্রোলাইটের প্রস্তুতকৃত আপেক্ষিক গুরুত্ব থাকে ১.২৫০। চার্জ করতে থাকলে ইহা বাড়তে থাকে। আবার ডিজচার্জ হতে থাকলে ইহা কমতে থাকে। তাই ইলেকট্রোলাইটের আপেক্ষিক গুরুত্ব ১.২৮০ হতে ১.১৫০ এর মধ্যে ওঠা-নামা করে। সুতরাং হাইড্রোমিটার দ্বারা ইলেকট্রোলাইটের এ আপেক্ষিক গুরুত্ব পরিমাপপূর্বক ব্যাটারির চার্জের পরিমাণ জানা যায়।
ইলেকট্রোলাইটের স্বাভাবিক কার্যকারিতা পাওয়া যায় ৮০ ডিগ্রি ফা: হতে ১৫০ ডিগ্রি এর মধ্যে। তাপমাত্রা এর থেকে বেশি হলে ডিসটিল্ড ওয়াটার উবে যায়। অপরপক্ষে তাপমাত্রা কম হলে ইলেকট্রোলাইটের ঘনত্ব বেড়ে যায়। ব্যাটারির সেপারেটরের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ছিদ্র দিয়ে এর চলাচলের বিস্মতা ঘটে ও ব্যাটারির ক্ষমতা লোপ পায়।
ইলেকট্রোলাইটের প্রয়োজনীয়তা
ইলেকট্রোলাইটের সালফিউরিক এসিডের সংমিশ্রণ ব্যাটারির পজিটিভ লিড ও নেগেটিভ লিডের সঙ্গে রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া করে সঞ্চিত বৈদ্যুতিক শক্তি হতে প্রায় দুই ভোল্ট বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপাদন করে। তাই তা ব্যাটারির প্রত্যেকটি সেল ২ ভোল্ট শক্তি উৎপাদন করে।
এ হিসাবে ৬/১২/০৪ ভোল্ট ব্যাটারির জন্য যথাক্রমে ৩/৬/১২টি সেল সেল সিরিজে যুক্ত থেকে ব্যাটারি তৈরি হয়। ডিসচার্জ ব্যাটারি ডিসচার্জ হওয়াকালীন/কারেন্ট সরবরাহকালীন ব্যাটারি প্লেট এবং ইলেকট্রোলাইটের মধ্যে যে রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হয়, তা পাশের চিত্রে দেখানো হলো। ইলেকট্রোলাইটের H2SO4 এর H2 এবং SO4 এ বিভক্ত হয়ে পড়ে। তখন SO4 এর একটি অনু পজেটিভ প্লেট সহিত ও অপর একটি নেগেটিভ প্লেটের সঙ্গে যুক্ত হয়।
তখন উভয় প্লেট লিড সালফেট এ রূপান্তরিত হয়। এ প্রক্রিয়ায় পজেটিভ প্লেট হতে O2 ইলেকট্রলাইটে পড়ে এবং এ অক্সিজেন হাইড্রোজেনের সঙ্গে মিলিত হয়ে H20 ইলেকট্রলাইটে হয়ে যায় । যতক্ষণ পর্যন্ত লিড অক্সাইড সালফিউরিক এসিড ও প্লেটে ও ইলেকট্রোলাইটে বিদ্যমান থাকবে ।
ততক্ষণ পর্যন্ত পজেটিভ প্লেটে বৈদ্যুতিক সরবরাহ নেগেটিভ প্রবাহিত হবে এবং ব্যাটারি ও ক্রমাগতভাবে ডিসচার্জ হতে থাকবে ।চার্জ : আবার ব্যাটারি চার্জার/গাড়ির জেনারেটর কর্তৃক ব্যাটারিকে চার্জ করাকালীন সময়ে পানি হতে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন বিভক্ত হয়ে যায়। অক্সিজেন পজেটিভ প্লেটের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং উভয় প্লেট হতে তখন SO4 বিচ্ছিন্ন হয়ে আসে।
তারপর ইহা পুনরায় H2 এর সঙ্গে মিলিত হয়ে সালফিউরিক এসিড পুনঃগঠিত করে। এ প্রক্রিয়ার অব্যবহৃত থাকার জন্য ব্যাটারি লিড প্লেট হতে SO, সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হয়, তখন সংমিশ্রণে সালফিউরিক এসিডের পরিমাণ বাড়তে থাকে অর্থাৎ ইলেকট্রোলাইটের আপেক্ষিক গুরুত্ব বেড়ে ১.২৯০-এর কাছাকাছি এসে দাঁড়ায়। যাকে ব্যাটারির পূর্ণ চার্জ বলা হয়।
ইলেকট্রোলাইটের সাহায্য নিয়ে ব্যাটারি লিড প্লেট কর্তৃক এভাবে রাসায়নিক ক্রিয়া ও বিক্রিয়া সংঘটিত করে ব্যাটারিতে বৈদ্যুতিক শক্তি সঞ্চয় ও সরবরাহ করাই ইলেকট্রোলাইটের মুখ্য কাজ ২৪.৩ ইলেকট্রোলাইটের প্রস্তুত প্রণালি: কোন ব্যাটারির জন্য ইলেকট্রোলাইট প্রস্তুত করতে হলে প্রথমত এর পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।
তারপর ওজনের উপর ভিত্তি করে উক্ত পরিমাণের ৩৮% সালফিউরিক এসিড এবং ৬২% ডিসটিল্ড ওয়াটার নিতে হয়। পানির সমস্তটাই একটি কাচের পারে/ব্যাটারির খোলসে রেখে তারপর অল্প অল্প করে সালফিউরিক এসিড পানির সাথে মিশাতে হবে। মিশাবার সময় অবশ্যই লক্ষণীয় যে, আগে পাত্রে এসিড রেখে পরে পানি যেন মিশানো না হয়। এ দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
ইলেকট্রোলাইট প্রস্তুতকালীন সময়ে একপ্রকার গ্যাস নির্গমন হতে থাকে। এই গ্যাস মানুষের ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর। সুতরাং মুখোশ পরে ইলেকট্রোলাইট প্রস্তুত করা উত্তম । ইলেকট্রোলাইট প্রস্তুতকালে রাসায়নিক বিক্রিয়ার একপ্রকার তাপও উৎপন্ন হয়। সুতরাং এটা কিছুটা ঠাণ্ডা না হওয়া পর্যন্ত ব্যাটারির সেলে ঢালা উচিৎ নয়। মনে রাখতে হবে, এসিডের মধ্যে পানি ঢাললে বিস্ফোরণ হতে পারে এবং এসিড ও ইলেকট্রোলাইট দুটিই শরীরে ও পরিধানের কাপড়ের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
ইলেকট্রোলাইট পরীক্ষণ প্রণালি :
ব্যাটারির বিদ্যুৎ সরবরাহ ক্ষমতা নির্ভর করে ইলেকট্রলাইটে এসিডের উপস্থিতির উপর। যদি এসিত সালফেট আকারে ব্যাটারি প্লেটের সঙ্গে সঞ্চিত হয়ে থেকে যায় তখন ঐ ব্যাটারি আর বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে না। একটি পূর্ণচার্জ ব্যাটারিতে যেমনি ৩৮% এসিড ও ৬২% ডিস্টিল ওয়াটার থাকে, পক্ষান্তরে একটি সম্পূর্ণ ডিসচার্জ ব্যাটারিতে ১৫% এসিড ও ৮৫% পানি হয়ে যায়।
এ তথ্যের ভিত্তিতে ব্যাটারিতে চার্জের অবস্থা নিরূপণ করা সহজ হয়ে যায় ।সিডের আপেক্ষিক গুরুত্ব ১.৮৩৫ সংমিশ্রিত ইলেকট্রোলাইটের আপেক্ষিক ২৪.৫ ইলেকট্রোলাইট টেস্টিং,আমরা জানি ডিসটিল্ড ওয়াটারের আপেক্ষিক গুরুত্ব ১.০০ এবং সালফিউরিক গুরুত্ব তখন হয়ে দাঁড়ায় ১.২৫০ আবার ব্যাটারি চার্জের মাধ্যমে ইলেকট্রোলাইটে সালফিউরিক এসিড এর পরিমাণ যত বাড়বে, চার্জ তত বেশি হবে ও আপেক্ষিক গুরুত্বও তত বাড়বে।
আবার ডিচার্জের সময় অর্থাৎ ব্যাটারি কর্তৃক বিদ্যুৎ সরবরাহকালীন সময়ে সালফিউরিক লিড প্লেটের সাথে যুক্ত হতে থাকবে ও হাইড্রোজেনের পরিমাণ বাড়তে থাকে যাতে আপেক্ষিক গুরুত্ব কমতে থাকে। হাইড্রোমিটার নামক ইলেকট্রোলাইটের আপেক্ষিক গুরুত্বের পরিমাণপূর্বক ও নিম্নের ধনন্ত ছক অনুসরণ করে ব্যাটারির প্রত্যেকটি সেলের চার্জের অবস্থা সহজে পরিমাপ করা যায়।
হাইড্রোমিটারের ভাসমান ফোটে আপেক্ষিক গুরুত্ব লেখা থাকে অথবা লাল, হলুদ ও সবুজ রং প্রদান করা থাকে। হাইড্রোমিটার ইলেকট্রোলাইট শোষণ প্রক্রিয়ায় তুলে নিয়ে ফ্লোটের লেভেলের সঙ্গে আপেক্ষিক গুরুত্বের পরিমাণ অথবা রঙের অবস্থান নিরীক্ষণ করে ব্যাটারি চার্জের পরিমাণ সহজে পরিমাণ করা যায়। এ ক্ষেত্রে অবশ্য লক্ষ্য রাখতে হবে, প্লাস টিউবে হাইড্রোমিটারের ফ্লোটটি যেন পূর্ণাঙ্গ ভাসমান অবস্থায় থাকে।
ইলেকট্রোলাইট সম্পর্কিত সতর্কতাসমূহ
সালফিউরিক এসিড শরীরের পরিধেয় কাপড় ও যন্ত্রাংশের জন্য ক্ষতিকর। সুতরাং এটা হ্যান্ডেলিং করাকালীন সময়ে সতর্ক থাকতে হবে। এটা যেন উল্লিখিত জিনিসের সংস্পর্শে না আসে। ইলেকট্রলাইটে প্রায় ৩২% সালফিউরিক এসিড রয়েছে যা শরীর ও পরিধেয় বস্ত্র পুড়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট।
সুতরাং শরীর ও পরিধেয় বস্তুকে ও ইলেকট্রোলাইটের সংস্পর্শে মুক্ত রাখতে হবে। ইলেকট্রোলাইট তৈরি করতে পানিতে ধীরে ধীরে এসিড সংমিশ্রণ করতে হবে। ইলেকট্রোলাইট তৈরি কালে হ্যান্ড গ্লোভস ও মুখোশ পরিধান করে তৈরি করা উত্তম। কারণ ইহা হতে যে গ্যাস নির্গত হয় তা মানুষের জন্য ক্ষতিকর ।
ইলেকট্রোলাইট তৈরিকালে সলিউশন কিছু সময়ের জন্য রাসায়নিক বিক্রিয়াজনিত কারণে উত্তপ্ত হয়। সুতরাং কিছুটা ঠাণ্ডা হওয়ার পর তা ব্যাটারিতে ব্যবহার করা উত্তম। কোনো ধাতু নির্মিত পাত্রে ইলেকট্রোলাইট তৈরি করা উচিত নয়। কাচের পাত্রে অথবা পুরাতন ব্যাটারির খাঁচায় এ ইলেকট্রোলাইট তৈরি করতে হয়।
ইলেকট্রোলাইট একটি সহজ দাহ্য পদার্থ, সুতরাং এর পাশে কোনো লাইটার জ্বালানো উচিত নয়। হাইড্রোমিটার ব্যবহারকালীন সময়ে সতর্ক থাকতে হবে যেন শরীরের পরিধেয়তে না পড়ে।
প্রশ্নমালা- ২৪
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :
১. ইলেকট্রোলাইট কী?
২. ইলেকট্রোলাইটের উপাদানগুলো কী কী?
৩. ইলেকট্রোলাইটের উপাদানগুলোর হার কত?
৪. ইলেকট্রোলাইটের প্রস্তুতকৃত আপেক্ষিক গুরুত্ব কত?
৫. ইলেকট্রলাইটে কত অনুপাতে সালফিউরিক এসিড রয়েছে?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :
১. ইলেকট্রোলাইট বলতে কী বুঝায়?
২. ইলেকট্রোলাইটের উপাদানগুলোর হার উল্লেখ কর ।
৩. ব্যাটারি চার্জের পরিমাণ সহজে নিরূপণ প্রণালি লেখ ।
৪. ইলেকট্রোলাইট তৈরিকালে সলিউশন প্রস্তুত প্রণালি লেখ ।
রচনামূলক প্রশ্ন :
১.ইলেকট্রোলাইটের প্রস্তুত প্রণালি বর্ণনা কর ।
২. একটি অটোমোবাইলের সাপ্তাহিক রক্ষণাবেক্ষণগুলো বর্ণনা কর।
৩. একটি অটোমোবাইলের মাসিক রক্ষণাবেক্ষণগুলো বর্ণনা কর।
৪. একটি অটোমোবাইলের ত্রৈমাসিক রক্ষণাবেক্ষণগুলো বর্ণনা কর ।
আরও দেখুন :