তেল উত্তোলন নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং” বিভাগ এর “ফুয়েলস এন্ড লুব্রিক্যান্টস” বিষয়ের একটি পাঠ। খনন প্রক্রিয়া যখন তেলক্ষেত্রে পৌঁছে যায় তখন প্রচন্ড বেগে তেল ও গ্যাস খননকৃত কৃপ থেকে বেরিয়ে আসে। তেলক্ষেত্রের চাপ যত ব্যাপক হবে তেল তত জোরে দীর্ঘদিন যাবৎ উঠতে থাকবে। এমনকি কয়েক মাস ধরে উঠতে পারে। আমাদের দেশের হরিপুর তেলক্ষেত্র থেকে কৃত্রিম কোন চাপ প্রয়োগ ছাড়াই অবিরাম প্রায় ছয় মাস ধরে তেল উঠেছে। প্রাকৃতিক চাপ কমে গেলে তেল যখন আর ভূ-পৃষ্ঠে আসতে পারে না তখন তেল উত্তোলনের জন্য
তেল উত্তোলন
কৃত্রিম চাপ সৃষ্টি করা হয়। দুইভাবে এই চাপ বৃদ্ধি করা যায় : (ক) পাম্পের সাহায্যে কূপে গ্যাস সরবরাহ করে চাপ বৃদ্ধির সাহায্যে তেল উত্তোলন করা যায় : (খ) পাম্পের সাহায্যে কূপে পানি সরবরাহ করে তেল বের করে আনা যায়। এছাড়া কেবল মাত্র বহুস্তরবিশিষ্ট গভীর নলকূপ পাম্পের সাহায্যে কূপ থেকে তেল উত্তোলন করা সম্ভব।
বর্তমানে হরিপুর তেলক্ষেত্র থেকে স্বাভাবিক চাপে প্রতিদিন প্রায় ১২০০০ লিটার তেল উত্তোলন করা হচ্ছে। আশা করা যায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আরও বেশী তেল উত্তোলন সম্ভব হবে। আরও কূপ খনন করলে তেল উত্তোলনের পরিমাণ বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। এই তেল আমাদের নিজস্ব তেল শোধনাগারেই পরিশোধিত হচ্ছে।
কূপ থেকে তেল তোলার পরপরই পৃথকীকরণ যন্ত্রের সাহায্যে গ্যাস ও তেল পৃথক করা হয়। তারপর বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে তেল হতে ময়লা ও পানি দূরীভূত করা হয়। বিশেষ বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপরিশোধিত তেল হতে বিভিন্ন প্রকার জ্বলানি বস্তু এবং অন্যান্য দ্রব্য প্রস্ততের প্রক্রিয়া চিত্রে দেখানো হল।
কোন খনি থেকে যদি তেল উঠানো অর্থনৈতিক দিক থেকে আর লাভজনক না হয় তখন সেই তেলখনিকে বলে স্ট্রাইপার (stripper)। তবে খনির এই অবস্থায় শতকরা ৩০/৪০ ভাগ তেল পানি বন্যা সৃষ্টি করে উত্তোলন করা যায়। তেল খনি স্বল্পপরিসর এলাকা জুড়ে অথবা বিস্তর এলাকা জুড়ে গঠিত হতে পারে । তেলক্ষেত্র আবিষ্কারের পর তেলক্ষেত্র থেকে প্রভূত পরিমাণে তেল উত্তোলনের জন্য যে
সমস্ত কূপ খনন করা হয় সেগুলোকে বলে উন্নয়ন কূপ (Development_well)। তেলক্ষেত্রের সীমা নির্ধারণের জন্য যেসব কূপ খনন করা হয় সেগুলিকে বলা হয় স্টেপ-জাপ কূপ (Step up well)। তেলখনি আবিষ্কারের জন্য যেসব স্থানে কূপ খনন করা হয়নি সেসব স্থানের কূপকে ওয়াইল্ড ক্যাট (wild cats) বলা হয়। এভাবে নয়টি ওয়াইল্ড ক্যাট- এর যদি আটটিতে তেল না পাওয়া যায় তাহলে সে তেলখনি হতে বাণিজ্যিকভাবে তেল উত্তোলন করা হয় না। কোনো কোনো তেলখনিতে ঘনীভূত আকারে তেল পাওয়া যায়। এ সব খনির তেল ও গ্যাস তুলনামূলকভাবে বেশী।
তেলক্ষেত্র আবিষ্কৃত হওয়ার পর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং প্রাথমিক খননের পর খনিতে কি পরিমাণ তেল আছে তার একটি মোটামুটি হিসাব বের করা যায়। ভূ-গর্ভের চাপে ও তাপে অথবা প্রাকৃতিক পরিশোধনের (Natural refining) মাধ্যমে অপরিশোধিত তেল আলকাতরার ন্যায় ভারী, কাল ও আঠালো পদার্থের সৃষ্টি হয়। ইহাই অ্যাসফল্ট নামে (Asphalt) পরিচিত। তেল শোধনাগারে তেল পরিশোধনের পরে টাওয়ারের তলদেশে যে ওলানি জমে, তা থেকেও অ্যাসফল্ট উৎপন্ন হয়। অ্যাসফল্ট বহু শত বছর থেকেই রাস্তা ও দালানকোঠা নির্মাণে ব্যবহৃত হচ্ছে।
অপরিশোধিত তেলের খনি সাত ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন :
(১) প্যারাফিন শ্রেণী (Paraffin Base)
(২) প্যারাফিন মাধ্যমিক শ্রেণী (Paraffin Intermediate Base)
(৩), মাধ্যমিক প্যারাফিন শ্রেণী (Intermediate paraffin Base)
(৪) মাধ্যমিক শ্রেণী (Intermediate Base)
(৫) মাধ্যমিক ন্যাপথিন শ্রেণী (Intermediate Naphthene Base )
(৬) ন্যাপথিন মাধ্যমিক শ্রেণী (Naphthene Intermediate Base)
(৭) ন্যাপথিন শ্রেণী (Naphthene base) !
আরও দেখুনঃ
- ইঞ্জিন টিউন-আপ
- ফ্রন্ট এন্ড জিওমেট্রি
- পাওয়ার স্টিয়ারিং
- স্টিয়ারিং ব্যবস্থা
- ঝাঁকুনি বিশোষক
- মোটরগাড়ি শিল্প
2 thoughts on “তেল উত্তোলন”