তাপমাত্রা ইণ্ডিকেটর – এই পাঠটি “অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং” বিষয়ের “কুলিং এবং ট্রান্সমিশন পদ্ধতি” অধ্যায়ের একটি পাঠ।
তাপমাত্রা ইণ্ডিকেটর
গাড়ীর চালকের সব সময়ই দরকার যে রেডিয়েটরের পানির উষ্ণতা কত আছে। এর জন্যই গাড়ীতে তাপমাত্রা ইনডিকেটর ব্যবহার করা হয়। কোন কারণবশতঃ ইঞ্জিন অতিরিক্ত গরম হলে কুলিং পদ্ধতির পানিও অতিরিক্ত গরম হবে। এতে ইঞ্জিনের ক্ষতি হয়। ইঞ্জিনের এই দুরবস্থার ব্যাপার চালক যাতে তাড়াতাড়ি জানতে পারে তার জন্যই ইন্ডিকেটর ব্যবহার করা হয়।
ইঞ্জিনের এই অবস্থা দেখার সাথে সাথেই চালককে ইঞ্জিন বন্ধ করে দেওয়া উচিত হবে। তাপমাত্রা ইন্ডিকেটর সাধারণত তিন ধরনের। যেমন—
- (১) বাষ্প-চাপ ইন্ডিকেটর (vapour-pressure indicator)
- (২) বৈদ্যুতিক ইন্ডিকেটর (electric indicator)
- (৩) ইন্ডিকেটর লাইট (indictator light)।
থারমোস্টেটিভ ভাল্ভ ভাল আছে কিনা পরীক্ষা কারর নিয়ম : স্বাভাবিক মাত্রায় ভাল্ভটির দৈর্ঘ্য পরিমাপ করে রাখতে হয়। এমতাবস্থায় ভাল্ভটিকে একটি পাত্রে পানির মধ্যে ডুবিয়ে রাখতে হবে এবং ঐ পানির পাত্রটিকে তাপ প্রয়োগ করতে হবে ১৮৫° ফাঃ হতে ১৯০° ফাঃ পর্যন্ত।
পানির উত্তাপে ভাল্ভটির দৈর্ঘ্য পূর্বের দৈর্ঘ্যের তুলনায় বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। পুনরায় ভাল্ভটিকে মেপে দেখতে হবে দৈর্ঘ্য কি পরিমাণ হয়েছে। যদি পূর্বের নেওয়া দৈর্ঘ্যের সমান হয় তবে ভাল্ভটি ভাল নয় মনে করতে হবে। আর যদি পূর্বের দৈর্ঘ্য অপেক্ষা মাপে বেশী হয় তাহলে ভাল্ভটি সঠিক মনে করতে হবে।
রেডিয়েটর ফ্লাশিং (Radiator flashing) :
রেডিয়েটরকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার নামই রেডিয়েটর ফ্লাশিং। ফ্লাশিং গান এবং ইঞ্জিন অপারেটিং তাপমাত্রা এই দুইভাবে রেডিয়েটর এবং সম্পূর্ণ কুলিং পদ্ধতিতে ফ্লাশিং করা যায়। ফ্লাশিং গান দ্বারা রেডিয়েটর পরিষ্কার করতে হলে প্রথমে নীচের হোজ সংযোগের সঙ্গে ফ্লাশিং গান এককের সংযোগ করতে হয়।
ফিলার ক্যাপ বন্ধ রাখতে এবং আপার হোজ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখতে হয়। ফ্লাশিং এককে দুইটি লাইন থাকে—একটি গরম পানির এবং অপরটি বাতাসের গরম পানির সাথে পরিষ্কার দ্রবণ, সোডা অথবা মিউরেটিক এসিড (১০ঃ১ অনুপাতে) মিশানো থাকে এবং বাতাসের চাপ ২০ পাঃ প্রতি বর্গইঞ্চির বেশী রাখা হয় না। বাতাসের চাপ বেশী হলে রেডিয়েটর কোর নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
ফ্লাশিং গানে দুইটি অপারেটিং নব (knob) থাকে। একটি গরম বা ঠাণ্ডা পানির জন্য এবং অপরটি বাতাসের জন্য। প্রথমে পরিষ্কার দ্রবণ মিশ্রিত গরম পানি রেডিয়েটরে প্রবেশ করানো হয়। নীচের হোজ পাইপ দিয়ে প্রবেশ করিয়ে উপরের হোজ পাইপ দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়া ১৫/২০ মিনিট পরিচালনা করা হয়। এরপর বাতাস দ্বারা পরিষ্কার করা হয়। ফ্লাশিং গান দ্বারা এভাবে রেডিয়েটর পরিষ্কার করা হয়ে থাকে।
৪.৩ চিত্রে ফ্লাশিং গানের সাহায্যে রেডিয়েটর ফ্লাশিং দেখানো হয়েছে। রেডিয়েটর ফ্লাশিং উল্টাভাবেও করা যায়। পূর্বে বর্ণিত পদ্ধতিটির উল্টা প্রয়োগই হচ্ছে রিভার্স রেডিয়েটর ফ্লাশিং অর্থাৎ ফ্লাশিং গান রেডিয়েটরের উপরের হোজ পাইপের সঙ্গে সংযোগ দিতে হবে।
ইঞ্জিন অপারেটিং তাপমাত্রার সাহায্যে রেডিয়েটর ফ্লাশিং প্রক্রিয়া :
এই প্রক্রিয়াতে অন্য কোন যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয় না। ইঞ্জিন নিজেই এই ফ্লাশিং প্রক্রিয়া চালাতে পারে এবং সম্পূর্ণ কুলিং পদ্ধতিকে (রেডিয়েটর এবং ওয়াটার জ্যাকেট) পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন করতে পারে। প্রথমে পানি দ্বারা সম্পূর্ণ কুলিং পদ্ধতিকে পূর্ণ করে দিতে হবে।
এমতাবস্থায় ইঞ্জিন চালিয়ে পানি গরম করতে হবে ১১৫° ফাঃ—১৭০° ফাঃ পর্যন্ত। পানির এই উষ্ণতায় সোডা, মিউরেটিক এসিড অথবা রেডিয়েটর পরিষ্কারকরণ দ্রবণ মিশ্রিত করতে হবে। এমতাবস্থায় ফিলার ক্যাপ শক্ত করে লাগাতে হবে এবং ইঞ্জিন আরও ১০/১৫ মিনিট চালাতে হবে।
তারপর ড্রেন প্লাগ এবং সিলিন্ডার ড্রেন প্লাগ খুলে দিতে হবে। ঐ পথ দিয়ে সব ময়লা পানি বের হয়ে যাবে। সম্পূর্ণ ময়লা পানি বের করে পুনরায় পরিষ্কার পানি দ্বারা রেডিয়েটর ও পানির জ্যাকেট পূর্ণ করতে হবে এবং পূর্ব প্রক্রিয়া পুনরায় সুসম্পন্ন করতে হবে। এভাবে উক্ত প্রক্রিয়া তিন চারবার সম্পন্ন করলেই সম্পূর্ণ কুলিং পদ্ধতি (রেডিয়েটর এবং ওয়াটার জ্যাকেট) পরিষ্কার হয়ে যাবে।
কুলিং পদ্ধতির অভিযোগ, কারণ এবং প্রতিকার
১. অভিযোগ : কুলিং পদ্ধতিতে রেডিয়েটর থেকে পানি নির্গত হয়
কারণ
১। রেডিয়েটরের উপরের অথবা নীচের ট্যাঙ্ক ছিল।
২। রেডিয়েটর কোর বা টিউব ছিদ্র হতে- পারে।
৩। উপরের এবং নীচের হোজ পাইপ ছিদ্র অথবা সংযোগ ঢিলা হতে পারে।
৪| ছেন প্রাণ লিক অথবা নষ্ট হতে পারে।
৫। রেডিয়েটর ক্যাপ নষ্ট হলে অথবা না থাকলে।
প্রতিকার
১| সোল্ডারিং করতে হবে।
২। কোর বা টিউবসমূহ মেরামত বা সোল্ডারিং করতে হবে।
৩। উপরের এবং নীচের হোজ পাইপ পরিবর্তন করতে হবে অথবা সংযোগ শক্ত করতে হবে।
৪। ড্রেন প্লাগ মেরামত অথবা পরিবর্তনা, করতে হবে।
৫। নূতন ক্যাপ লাগাতে হবে অথবা মেরামত করতে হবে।
২. পাম্প হতে পানি পড়ে, শব্দ হয়, পানি সরবরাহ হয় না
কারণ
১. পাম্পের গ্যাসকেট ছিল।
২। পাম্পের ওয়াটার সীল নষ্ট হতে পারে।
৩। পাম্পের শ্যাফট ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যেতে পারে।
৪। পাম্পে কেসিং ভেঙ্গে অথবা ফেটে যেতে পারে।
৫। পাম্পের হোজ সংযোগ ঢিলা হতে
৬। পাম্পের বাইপাস লাইনের সংযোগ নষ্ট অথবা ঢিলা হতে পারে।
৭। পাম্পের বিয়ারিং নষ্ট হতে পারে।
৮। পাম্পের বুশ নষ্ট হতে পারে।
৯। পাম্পের ব্লেড অথবা ইম্পেলার ভেঙ্গে যেতে পারে অথবা নষ্ট হতে পারে।
১০। পাম্পের খুচরা যন্ত্রাংশ নষ্ট হতে পারে।
১১। পাম্পের পুলি ঢিলা অথবা নষ্ট হতে পারে।
১২। ফ্যানবেন্ট ঢিলা অথবা ছিঁড়ে গেছে।-
১৩। পাম্পের পুলি এবং ক্র্যাঙ্কশ্যাফটের পুলির এলাইনমেন্ট ঠিক না থাকলে।
১৪। থার্মোস্টেটিভ ভাল কাজ না করলে অথবা নষ্ট হয়ে গেলে।
১৫। রেডিয়েটর কোর বা নলসমূহ নষ্ট অথবা ময়লা দ্বারা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
১৬। রেডিয়েটর কোর এবং পানির জ্যাকেটে স্কেল এবং ময়লা পড়লে পানি সরবরাহ কম হতে পারে।
প্রতিকার
১। পাম্পের গ্যাসকেট পরিবর্তন করতে হবে।
২। পাম্পের পানির সীল পরিবর্তন করতে হবে।
৩। পাম্পের শ্যাফট পরিবর্তন করতে হবে।
৪। পাম্প কেসিং মেরামত অথবা পরিবর্তন করতে হবে।
৫। হোজ সংযোগ ভালভাবে শক্ত করে দিতে হবে।
৬। মেরামত করতে হবে অথবা শক্ত করে আঁটাতে হবে।
৭। বিয়ারিং পরিবর্তন করতে হবে।
৮। নূতন বুশ লাগাতে হবে।
৯। ইম্পেলার মেরামত অথবা নূতন লগাতে হবে।
১০। পানির পাম্পের সম্পূর্ণ পানি পাম্প কিট পরিবর্তন করতে হবে।
১১। পাম্পের পুলি মেরামত অথবা পরিবর্তন করতে হবে।
১২। ফ্যানবেন্ট মজবুত করতে হবে অথবা পরিবর্তন করতে হবে।
১৩। উভয় পুলির মধ্যে এলাইনমেন্ট ঠিক করতে হবে যাতে উভয় পুলি (সমানভাবে চলে) সরলরেখায় অবস্থান করে।
১৪। থামোস্টেটিভ ভালভ পরিবর্তন করতে হবে।
১৫। রেডিয়েটর কোর অথবা নলসমূহ পাতলা কোন পাত অথবা হ্যাক-স ব্রেড দ্বারা উক্ত ময়লা পরিষ্কার করতে হবে এবং পরিষ্কার পানি দ্বারা ধৌত করতে হবে।
১৬। রেডিয়েটর এবং পানির জ্যাকেট ভালোভাবে ফ্লাশিং করতে হবে যাতে পানির স্কেল উঠে যায়।
রেডিয়েটর এবং পাম্প মেরামত রেডিয়েটরের উপরে-নীচে, হোজ পাইপ এবং কোর হতে যদি পানি পড়ে তখন উহা গাড়ী থেকে খুলে ফেলতে হয়, খোলার নিয়ম নিম্নরূপ।
(১) ড্রেন কর্কের সাহায্যে সব পানি বের করে ফেলতে হবে।
(২) উপরের হোজ পাইপ এবং নীচের হোজ পাইপ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে।
(৩.) ইঞ্জিন, ব্লক এবং বডির সঙ্গে সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে।
(৪) এখন পানি দ্বারা সম্পূর্ণ রেডিয়েটরটি ভালভাবে পূর্ণ করে দিতে হবে এবং লক্ষ্য করতে হবে কোন স্থান থেকে পানি বের হয়। যেখান থেকে পানি বের হবে সে স্থানটি চিহ্ন দিয়ে রাখতে হবে। এক বা একাধিক স্থান এক সঙ্গে নষ্ট হতে পারে।
(৫) ছিদ্রযুক্ত স্থানসমূহ স্ক্রাইবার (scriber) দ্বারা ভালোভাবে পরিষ্কার করে সোল্ডারিং করতে হবে। সোল্ডারিং শেষ হলে আরও ছিদ্র আছে কিনা পরীক্ষা করার জন্য পুনরায় পানি দ্বারা রেডিয়েটর পূর্ণ করতে হবে। রেডিয়েটর পানি দ্বারা পূর্ণ করলে উহার উপরের এবং নীচের হোজ সংযোগের মুখ ভালভাবে বন্ধ করে দিতে হবে। পরীক্ষায় যদি আর কোন ছিদ্র ধরা না পড়ে তবে পুনরায় রেডিয়েটর তার স্থানে পুনঃস্থাপন করে দিতে হবে।
পানির পাম্প মেরামতও তদ্রূপ। পাম্পে শব্দ হলে এবং পাম্পে পানি সরবরাহ না হলে পাম্প ইঞ্জিন থেকে খুলে ফেলতে হবে। দেখতে হবে পাম্প কেসিং, পাম্প শ্যাফট, সীল বিয়ারিং, ইম্পেলার সঠিক আছে কিনা। যদি ঠিক না থাকে তবে মেরামত করতে হবে নতুবা পরিবর্তন করতে হবে। রেডিয়েটর মেরামত সবসময় রেডিয়েটর মেরামত দোকান থেকে করানোই সবচেয়ে উত্তম এবং নিরাপদ। কারণ যেসব লোক সবসময় যে কাজ ব্যবসায়িক ভিত্তিতে করে তারাই ঐ কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে পারে।
আরও দেখুনঃ
- ডিজেল ফুয়েল পদ্ধতি | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং
- ফোর-স্ট্রোক পেট্রোল ইঞ্জিনের কার্যপ্রণালী | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং
- টর্ক তাপ ইঞ্জিন | | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং
- তাপ ইঞ্জিন | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং
- গ্যারেজ এবং সার্ভিস স্টেশন | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং
- মোটরগাড়ি শিল্প
4 thoughts on “তাপমাত্রা ইণ্ডিকেটর”