আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় -ড্রিলিং পদ্ধতি
ড্রিলিং পদ্ধতি Drilling Process
ড্রিলিং (Drilling) :
অটোমোটিভ কর্মশালার বিভিন্ন কর্মে, বিভিন্ন সময়ে ধাতব শীট খণ্ডে বিভিন্ন পরিমাপের গর্ত বা ছিদ্র করতে হয়। ড্রিল মেশিনে ড্রিল বিট নামক এক প্রকার টুলস যুক্ত করে এবং মেশিনের সাহায্যে ড্রিল বিটকে পরিচালনা করে গোল ছিদ্র করার প্রণালিকে ড্রিলিং বলে। এ ড্রিলিং কর্ম সম্পন্ন করণের নিমিত্তে সর্বদা তিনটি জিনিসের প্রয়োজন পড়ে । যেমন- (১) ওয়ার্কপিচ, (২) ড্রিল বিট, (৩) ড্রিল মেশিন ।
ড্রিলিংয়ের প্রকারভেদ (Types of Drilling) :
ড্রিলিং প্রক্রিয়া ভেদে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে । যেমন :
১. হস্তচালিত পোর্টেবল ড্রিল মেশিন দ্বারা ড্রিলিং
২. স্থায়ীভাবে স্থাপিত মেশিন দ্বারা ড্রিলিং
১. হস্তচালিত পোর্টেবল ড্রিল মেশিন দ্বারা ড্রিলিং করণ:
সাধারণত এ জাতীয় ড্রিল মেশিন আকারে ছোট ও হালকা হয় এবং সহজে স্থানান্তর ও উত্তোলনপূর্বক হস্ত দ্বারা ব্যবহার করে কাঙ্কিত ছিদ্রটি করা হয়। এ জাতীয় হস্তচালিত ড্রিলিং মেশিন আবার তিন প্রকার যেমন-
ক) সাধারণত হ্যান্ড ড্রিল
এটি গিয়ার রেশিও ও যান্ত্রিক হাতলের সুবিধা নিয়ে সম্পূর্ণ নিজের শারীরিক শক্তিতে পরিচালিত হয়ে ড্রিলিং বা ছিদ্রকরণের কাজ সম্পন্ন করে। গ্রামে-গঞ্জে আজও সেখানে বৈদ্যুতিক শক্তি নেই, সে সকল স্থানে কাঠে বা পাতলা ধাতব খণ্ডে ছিদ্রকরণের কাজে এ জাতীয় ড্রিল মেশিন ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
খ) ইলেকট্রিক হ্যান্ড ড্রিল :
এটি বহুল ব্যবহৃত একপ্রকার হস্তচালিত ড্রিলিং মেশিন। এটি বৈদ্যুতিক শক্তি দ্বারা একদিকে স্বল্প সময়ে অধিক ছিদ্র করা যায় এবং যে স্থানে ছিদ্র করতে হবে ইলেকট্রিক হ্যান্ড ড্রিলকে সে স্থানে নিয়ে গিয়ে ছিদ্র করা যায় ।
গ) নিউমেটিক হ্যান্ড ড্রিল:
এ জাতীয় হ্যান্ড ড্রিল মেশিন কম্প্রেসারের দ্বারা পরিচালিত হয় । ভারী কাজ বিশেষ করে কংক্রিট ও পাকা রাস্তা ছিদ্র করে ভাঙার কাজে এ জাতীয় নিউমেট্রিক ড্রিল মেশিন ব্যবহৃত হয়।
২. স্থায়ীভাবে স্থাপিত মেশিন দ্বারা ড্রিলিং করণ:
ড্রিল মেশিনকে নির্দিষ্ট স্থানে স্থায়ীভাবে স্থাপন করে ড্রিলিং কার্য সম্পন্ন করা যায়। এ ক্ষেত্রেও ড্রিলিং মেশিন নিচের শ্রেণিভেদে বিভক্ত করা যায় ।
ক) হস্তচালিত বেঞ্চ ড্রিলিং মেশিন
এটি ওয়ার্কিং বেঞ্চে স্থায়ীভাবে স্থাপন করা থাকে। গিয়ারের যান্ত্রিক শক্তি সুবিধা নিয়ে এটি ড্রিলিং কাজ করে ।
খ) বৈদ্যুতিক বেঞ্চ ড্রিলিং মেশিন :
এটিকেও ওয়ার্কিং বেঞ্চে স্থাপন করা হয় এবং এটি বৈদ্যুতিক শক্তিতে ড্রিলিং সম্পন্ন করে ।
গ) প্যাডেস্ট্যাল ড্রিলিং পদ্ধতি :
এটি ওয়ার্কশপের মেঝেতে স্থায়ীভাবে স্থাপন করা থাকে। সংখ্যাধিক ছিদ্রকরণের কাজে এটি বহুল ব্যবহৃত হয়।
বেঞ্চ ড্রিলিং পদ্ধতি (Bench Drilling Process) :
বেঞ্চ ড্রিলিং পদ্ধতি স্থায়ী ড্রিল মেশিন দ্বারা ড্রিলি পদ্ধতিকে বুঝায় । বেঞ্চ ড্রিলিংকালে নিচের পদ্ধতি অনুসরণ করা উত্তম :
১. ড্রিল ভাইসে জবকে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ করে নিতে হবে ।
২. ড্রিলিং পয়েন্টে সেন্টার পাঞ্চ দ্বারা চিহ্নিত করতে হবে।
৩. ড্রিল বিট নির্বাচন করে ড্রিল ঢাকে তা যুক্ত করতে হবে।
৪. গুলির ব্রেন্ট যথার্থ পুলিতে স্থাপন করে ড্রিলিং স্পিড সেট করে নিতে হবে ।
৫. স্টপার থাকলে তা ড্রিলের গভীরতার মাপে সেট করে নিতে হবে । ৬. সুইচ অন করে বৈদ্যুতিক সরবরাহ দিয়ে ড্রিল মেশিন চালু করতে হবে ।
৭. ইলেকট্রিক বেঞ্চ ট্রিল হলে টেবিলের উপর ভাইসসহ জবকে স্থাপন করতে হবে ।
৮. ড্রিল বিটকে চিহ্ন বরাবর নিয়ে ফীড হাতল চেপে চেপে একটি একটি করে প্রয়োজনীয় ড্রিল সম্পন্ন করতে হবে।
৯. ড্রিলিংকালে ৰিটকে ঠাণ্ডাকরণ ও চিপসকে আপনা-আপনি অপসারণের নিমিত্তে একবার চাপ দিয়ে পুনরার কিছুটা তুলে আবার চাপ দিতে হবে ।
১০. যান্ত্রিক বেঞ্চ ড্রিল হলে এক হাতে বড় পুলিটিকে ঘুরিয়ে অন্য হাতে জবের ভাইসকে ধরে ছিদ্রকরণ সম্পন্ন করতে হবে ।
১১. কার্যান্তে ড্রিল বিট চাক হতে অপসারণ করতে হবে।
১২. চিপস পরিষ্কার করতে হবে।
১৩. বৈদ্যুতিক ড্রিলের ক্ষেত্র বৈদ্যুতিক সুইচকে বন্ধ করতে হবে ।
ড্রিল মেশিনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের নাম নিচে একটা বেঞ্চ বা প্যাডাস্টেল ড্রিল মেশিনের প্রধান
যন্ত্রাংশের নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি চিত্রসহ প্রদত্ত হলো :
১. বেল (Base) এর সাহায্যে ড্রিল মেশিনকে বেঞ্চে দৃঢ়ভাবে ও স্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয়ে থাকে ।
২. টেবিল (Table) : এতে ভাইসসহ জবকে দৃঢ়ভাবে স্থাপন করে ড্রিল করা হয় ।
৩. ব্ল্যাক Rack) এর সাথে টেবিলসহ ড্রিল মেশিনের অন্যান্য যন্ত্রাংশ যুক্ত থাকে।
৪. ফীড হাতল (Feed Handle) : এ লিভার চেপে ড্রিলিং ফীড দেওয়া এবং উপরে-নিচে উত্তোলনপূর্বক চিপস অপসারণ ও বিট ঠাণ্ডা করা হয় ।
৫. ডেপথ্ গেজ বা স্টপার (Depth Gauge or Stopper) : স্পিন্ডল যেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিচে নেমে না যায় বা ব্রাইন্ড ছিদ্রকরণের ক্ষেত্রে এটি অ্যাডজাস্ট করতে হয় ।
৬. পুলিবক্স/গিয়ার বক্স (Pully Box / Gear Box) : এতে একাধিক পুলি বা গিয়ার থাকে, যা নির্বাচনের মাধ্যমে ড্রিল মেশিনের স্পিড কম/বেশি করা যায় ।
৭. বৈদ্যুতিক মোটর (Electric Motor) : এটি বৈদ্যুতিক শক্তি দ্বারা ড্রিলবিটকে আবর্তন করে ।
৮. পুলি (Pully) : একাধিক ছোট-বড় পুলি থাকে। এটি ড্রাইভ বেল্ট স্থানান্তর করে গতি কম বেশি করতে সাহায্য করে ।
৯. ভি-বেল্ট (V-belt): যে ড্রিল মেশিনে গিয়ার থাকে না, তাতে এ জাতীয় ভি-বেল্ট থাকে এবং ড্রাইভ ও ড্রিভেন পুলির মধ্যে এটি সংযোগ সংরক্ষণ ও পরিচালনা করে ।
১০. টেবিল লক লিভার (Table Lock Lever) : এটি ঢিলা দিয়ে টেবিল উপরে-নিচে উত্তোলন করা যায় এবং নির্ধারিত স্থানে অনড় রাখা যায় ।
প্যাডেস্ট্যাল ড্রিল মেশিন দ্বারা ড্রিলিং পদ্ধতি :
মেঝেতে স্থায়ীভাবে স্থাপিত ড্রিলিং মেশিনই হচ্ছে প্যাডেস্ট্যাল ড্রিল মেশিন। এ জাতীয় মেশিন দ্বারা ছিল করার পদ্ধতি ধারাবাহিকভাবে নিম্নে প্রদত্ত হলো :
১. ওয়ার্কপিচে ড্রিলিং স্থান নির্বাচনপূর্বক হাতুড়ি ঘাতে সেন্টার পাঞ্চ দ্বারা চিহ্নকে কিছুটা গভীর করতে হবে ।
২. সঠিক মাপের ড্রিলবিট নির্বাচনপূর্বক একে ড্রিল মেশিনের চাকের সাথে হস্তচাপে আটকাতে হবে ।
৩. ড্রিল মেশিন ভাইসে ওয়ার্কপিচকে দৃঢ়ভাবে এঁটে নিতে হবে ।
৪. ওয়ার্কপিচের ড্রিলের চিহ্ন ও বিটের মাথাকে একই সেন্টার লাইনে নিয়ে আসতে হবে ।
৫. ড্রিল মেশিনের স্পিড অর্থাৎ গতি নির্বাচন করতে হবে।
৬. কুলেন্ট ব্যবহার করার ক্ষেত্রে তা নির্বাচন করে সরবরাহ লাইন খুলে দিতে হবে ।
৭. ব্লাইন্ড ড্রিলের ক্ষেত্রে পরিমাপপূর্বক স্টপার সেট করে নিতে হবে ।
৮. সরাসরি ড্রিলের ক্ষেত্রেও শেষ প্রান্তের পরিমাপ মোতাবেক স্টপার সেট করে নিতে হবে ।
৯. ফীড হ্যান্ডল ধরে স্পিন্ডলকে নামিয়ে ড্রিলিং চিহ্ন বরাবর রাখতে হবে ।
১০. বৈদ্যুতিক সরবরাহ দিয়ে মেশিন চালু করতে হবে ।
১১. ফীড হ্যান্ডেল এক হাতে ধরে এবং অন্য হাতে ড্রিল ভাইসকে ধরে ড্রিলিং আরম্ভ করতে হবে ।
১২. ফীড হ্যান্ডেল লিভার চাপ দিয়ে ধীরে ধীরে ড্রিলিং ফীড দিয়ে ছিদ্র করতে হবে।
১৩. মাঝে মাঝে বিটকে উপরে তুলে পুনঃচাপ দিলে বিটের মাথা ঠাণ্ডা থাকবে ও চিপস অপসারিত হবে ।
১৪. প্রয়োজনে একটি একটি করে ছিদ্রকরণের কাজ সম্পন্ন করতে হবে ।
১৫. কার্যাস্তে চিপস পরিষ্কার, ফ্লাইড সরবরাহ বন্ধ, বৈদ্যুতিক সরবরাহ বন্ধ ও বিট অপসারণ করতে হবে ।
ড্রিলিংকালীন পালনীয় সতর্কতাসমূহ
ড্রিল মেশিন দ্বারা ড্রিলিং অর্থাৎ ছিদ্র করা কালে নিচের সতর্কতাসমূহ অবশ্যই পালন করতে হবে:
১. ড্রিলিং স্থানকে সেন্টার পাঞ্চ দ্বারা মার্কিং করে ছিদ্র করতে হবে। অন্যথায় ড্রিল কার্যবস্তুর যথাযথ স্থানে না হয়ে কাঁচামালের অপচয় ঘটাবে ।
২. শক্ত ধাতুকে ড্রিলিং কালে বেশি স্পিড ও কম ফীড দিতে হবে পক্ষান্তরে নরম ধাতুকে ড্রিলিং কালে কম স্পিড ও বেশি ফীড দেওয়া যাবে অর্থাৎ ধাতুভেদে স্পিড ও ফীড নির্বাচন করতে হবে ।
৩. ফীড দেওয়াকালীন সময়ে বা মেশিন চলাবস্থায় শরীর ও মাথাকে স্পিন্ডল হতে নিরাপদ দূরত্বে রাখা বাঞ্ছনীয় ।
৪. ড্রিলিংকালে অবশ্যই সতর্কতা থাকতে হবে হাত/আঙুল কোনো অবস্থাতে ড্রিল বিটের নিচে না যায় । অর্থাৎ ড্রিল বিট হতে হাতকে সর্বদা নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে ।
৫. সর্বদা নির্ধারিত ধাতুকে ড্রিলিংকালে কাটিং ফ্লুইডের সরবরাহ থাকলে তা দিতে হবে ।
৬. ড্রিলিংকালে মাঝে মাঝে বিট উত্তোলন করে বিটের টিপকে ঠাণ্ডা হতে দেওয়া উচিত ।
৭. কিছু সময় পর পর বিট উত্তোলন করে আবার ফীড দিলে সহজে চিপস্ অপসারিত হয় ।
৮. কোনো অবস্থায় ড্রিলিংকালে জব ছুটে গিয়ে বিটের সঙ্গে আবর্তন করলে তৎক্ষণাৎ ড্রিল মেশিন বন্ধ করে দিতে হবে।
৯. বড় ছিদ্রের ক্ষেত্রে এক সঙ্গে বড় ছিদ্রটি না করে প্রথমে ছোট একটি গাইড ছিদ্র করে নিয়ে পরে ঐ গাইড ছিদ্র বরাবরই বড় ছিদ্রটি করতে হবে ।
১০. ড্রিলিংকালে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য অ্যাপ্রন, সেফটি গগলস ও সেফটি স্যু পরিধান করতে হবে । ১১. কার্যান্তে বিট অপসারণপূর্বক চিপস্ পরিষ্কার করতে হবে ।

প্রশ্নমালা-৯
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :
১. ড্রিলিং বলতে কী বোঝায়?
২. বেঞ্চ ড্রিলিং পদ্ধতি বলতে কী বোঝায়?
৩. হস্তচালিত ও স্থানান্তরযোগ্য ড্রিলিং যন্ত্র কত প্রকার ও কী কী
৪. স্থায়ীভাবে স্থাপিত ড্রিলিং যন্ত্র কত প্রকার ও কী কী ?
৫. ড্রিলিং কত প্রকার ও কী কী?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :
১. ড্রিল বিটকে বক্সে কীভাবে রেখে সংরক্ষণ করতে হয়?
২. ড্রিলিং-এর শ্রেণিবিন্যাস কর।
৩. ড্রিলিংকালীন পালনীয় সতর্কতাসমূহ কী কী?
৪. ড্রিল মেশিনের রক্ষণাবেক্ষণগুলো লেখ ।
রচনামূলক প্রশ্ন :
১. ড্রিলিং কী? এর শ্রেণিবিন্যাস কর ।
২. বেঞ্চ ড্রিলিং পদ্ধতি ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ কর।
৩. ড্রিল মেশিনের বিভিন্ন অংশের বর্ণনা দাও ।
৪. ড্রিলিংকালীন পালনীয় সতর্কতাসমূহ লেখ।
আরও দেখুন :