ডিপ্লোমা ইন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় ৪ বছরের ডিপ্লোমা কোর্সে। এই কোর্সে একজন ছাত্র অটোমোবাইল সম্পর্কে যথেষ্ঠ জ্ঞান অর্জন করে এবং অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে তাকে প্রস্তুত করতে পারেন এবং সহজেই তার লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হতে পারেন।
ডিপ্লোমা ইন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং
ডিপ্লোমা ইন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স স্ট্রাকচার ডাউনলোড:
ডিপ্লোমা ইন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সটিতে যা শেখানো হয়:
- অটোমোবাইল কী এবং কেন আমাদের এই জীবনে তা প্রয়োজন, আমাদের জন্য এটি কি করতে পারে ইত্যাদি।
- একটি সম্পূর্ন অটোমোবাইল কিভাবে নির্মাণ হয় এবং কিভাবে সেটা তৈরি হয় তা সম্পর্কে ধারনা।
- কতগুলি শিল্প অটোমোবাইলের সাথে সম্বন্ধযুক্ত এবং বিশ্বব্যাপী প্রয়োজনীয় চাহিদা অনুযায়ী মানুষের কাছে সরবরাহ করছে তা সম্পর্কে ধারনা।
- একটি গাড়ির স্টার্টিং সিস্টেম ।
- একটি গাড়ির ইগনিশন সিস্টেম।
- ফুয়েল ইনজেকশন সিস্টেম (পেট্রোল / ডিজেল)
- বৈদ্যুতিক জ্বালানী ইনজেকশন সিস্টেম (ই এফ আই )
- ব্রেকিং সিস্টেম
- ট্র্যাকশন কন্ট্রোল সিস্টেম
- সাসপেনশন সিস্টেম
- বৈদ্যুতিক সিস্টেম (লাইটীং, হর্ণ,রেডিও ইত্যাদি)
- স্টিয়ারিং সিস্টেম
- পাওয়ার ট্রেইন
- এই গাড়ি কে চালানোর জন্য অন্য যান্ত্রিক প্রক্রিয়া
- কোন সমস্যা হয়ে থাকলে তার সম্ভাব্য কারণ
- গাড়ির বিভিন্ন সমস্যার সংশোধন
- অন বোর্ড ডায়াগনোসিস ১ (ওবিডি ১) এবং বোর্ড ডায়াগনোসিস ২ (ওবিডি ২) এর ব্যবহারের মাধ্যমে অটোমোবাইলীর ত্রূটি সনাক্তকরণ / স্ক্যান করা।
- নির্দিষ্ট সমস্যার সম্ভাব্য কারন ও প্রতিকার
- বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কতৃক পরিচালিত বিভিন্ন ট্রাফিক সংকেত এবং সাইন।
- ড্রাইভিং পদ্ধতি শেখানো।
অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বর্তমানে ক্যারিয়ার গড়তে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য একটি কর্মমুখী শিক্ষা শিক্ষা। মূলত কার, জীপ, মোটরসাইকেল, বাস, ট্রাক,
এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিদ্যাই হল অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং। ২০২১ সাথে বাংলাদেশে শুধু কার রেজিস্ট্রেশন হয়েছে প্রায় ৪.৫ লাখ। যা ২০০৫ সালের প্রায় দিগুণ। এবার চিন্তা করে দেখুন এবিষয়ের চাহিদা কি হারে বাড়ছে! সুতরাং এখনি সময় এ বিষয়ে শিক্ষা অর্জন করে এ ক্ষাতে ব্যবসা ও চাকুরী আগামীর অপার সম্ভাবনাকে হতের মুঠোয় আনা। নিচে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হল।
কেন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং শিখবেন?
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) এর সূত্র মতে শুধু ঢাকা শহরে মোটর গাড়ির সংখ্যা প্রায় সারে সাত লাখ। আর সারা দেশে গাড়ি আছে ১৮ লাখেরও বেশি। এই লাখ লাখ গাড়ির তুলনায় অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারের সংখ্যা খুব কম।
অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার কি কাজ করেন?
অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়াররা একটি গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের সব দায়িত্ব পালন করে। একটি গাড়ির কোথায় কী সমস্যা? কোন সমস্যা কিভাবে কাটাতে হবে?
কোথায় কোন যন্ত্রাংশ পাল্টাতে হবে বা মেরামত করতে হবে, কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে গাড়ি সচল করা হবে? কোন পদ্ধতি ব্যবহার করলে সহজেই সফলতা মিলবে? ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়াররা সমস্যার সমাধান করেন। তাঁদের নির্দেশ অনুসরণ করে অটোমোবাইল মেকানিকরা গাড়ি মেরামত করেন। তবে প্রয়োজনে অনেক সময় অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারকেও ইঞ্জিন মেরামতে হাত লাগাতে হয়।
অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের পরিধি:
- অটোমোবাইলের বিভিন্ন গবেষণা, নিরীক্ষা ও প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ
- গাড়ি তৈরি বা মেরামত সক্রান্ত ইকুইপমেন্ট নির্ধারণ ও প্রয়োজন অনুসারে সঠিক ব্যবহার
- নতুন গাড়ির মডেলের জন্য বাজেট তৈরি
- মূল গাড়ি তৈরির আগে অনুরূপ মডেল তৈরি
- গাড়ি কোয়ালিটি কন্ট্রোল নিশ্চিত করা
- গাড়ি তৈরি বা মেরামতের প্রতিটি ধাপে কোয়ালিটি নিশ্চিত করা
- প্রয়োজন অনুসারে গাড়ির ইম্প্রুভমেন্ট সক্রান্ত কাজ করা
- গাড়ীর যাবতীয় তথ্যাদি ডকুমেন্টেনশন করে থাকে।
অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মক্ষেত্র সমূহ:
আমাদের দেশে গাড়ি উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের দেশে কার সার্ভিস সেন্টারের তুলনায় অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারের সংখ্যা বেশ কম।
তাই এ সেক্টরে কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক বেশি। এ বিষয়ে পড়ালেখা করে তাই সাধারণত চাকরির জন্য বসে থাকতে হয় না। মোট কথা এ বিষয়ে পড়াশোনা করে যে যে জায়গায় কাজ করা যায় তা হল-
- যারা পরিবহন প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা করেন, তাদেরও অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন হয়। সুতরাং সেখানে চাকুরীর সুবিধা প্রচুর।
- বড় বড় প্রতিষ্ঠান তাদের গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালনের জন্য অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ করে থাকেন।
- গাড়ি বিক্রির দোকানেও রয়েছে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের সুযোগ। আমদানি করা নতুন গাড়ি কিংবা রি-কন্ডিশন গাড়ির ত্রুটি সারাতে কাজ করে থাকেন তারা।
- বিদেশে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগও আছে । বিদেশে গাড়ির কারখানা থেকে শুরু করে গাড়ি মেরামতের গ্যারেজে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদাও রয়েছে প্রচুর।
- নিজেই একটি কার সার্ভিস সেন্টার প্রতিষ্ঠান দিতে পারে। এ জন্য প্রাথমিকভাবে ১৮/২০ লাখ প্রয়োজন হতে পারে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে পুজিও সরবরাহ করা হয়।
- সরকারি চাকরির সুযোগ রয়েছে ইস্পাত প্রকৌশল অধিদপ্তর ও অন্যান্য মেকানিক্যাল ইকুইভ্যালেন্ট জব ফিল্ডে।
ডিপ্লোমা অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কোথায় করা যায়?
সারা দেশ জুড়ে ৪৯ টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং–এ ডিপ্লোমা করার সুযোগ রয়েছে।
অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তির যোগ্যতা:
অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমার চার বছর মেয়াদি আট সেমিস্টারের এই কোর্সে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার পর যে কোন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া সম্ভব। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড নীতিমালা প্রণয়ন করে থাকে। তবে এইচএসসি বিজ্ঞান পাশদের জন্য সরাসরি ২য় বর্ষে ভর্তির সুযোগ আছে। তবে গণিত থাকতে হবে।
দেশে বিদেশে অটোমোবাইল এ উচ্চ শিক্ষা:
দেশে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রগুলো হল – ডুয়েট ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মেকানিক্যাল, আইপিই ও মেকাট্রনিক্সে বিএসসির সুযোগ রয়েছে। বিদেশে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রগুলো হল – নানইয়াং পলিটেকনিক (সিঙ্গাপুর), ও সরকারি অনুদানে চীনের চাঙ্গু ভোকেশনাল ইন্সটিটিউটসহ বেশ কয়েকটি পলিটেকনিক, চীন, সিঙ্গাপুর, জার্মানি, জাপানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ আছে।
অটোমোবাইল প্রযুক্তির আগামীর ভবিষ্যত বা লাভ:
একজন ছাত্র যে অটোমোবাইল প্রযুক্তির উপড় ডিপ্লোমা করে যা করতে পারেন:
- আধুনিক প্রযুক্তির সাথে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে।
- অটোমোবাইল এর উপর তারা বিশ্বব্যাপী স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করতে পারেন। ।
- প্রযুক্তির শীর্ষ দেশগুলোতে যেমন জার্মান, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া এবং অন্যান্য উন্নত দেশগুলি্তে অটোমোবাইল বিভাগের উপর পূর্ণ বৃত্তি এবং চাকরীর সাথে স্নাতক, মাস্টার্স এবং পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করে যাচ্ছে।
- ডিপ্লোমা কোর্স শেষ করার পর একজন ছাত্র তার ছোট বিনিয়োগের সাথে আত্মকর্মসংস্থান করতে পারে।
- অটোমোবাইল আধুনিক জীবনে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস এবং এর চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটির উপর পড়াশোনা করে একজন ছাত্র তার জ্ঞান ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী কর্মক্ষেত্রে সুযোগ পেতে পারেন।
- বিশ্বজুড়ে অটোমোবাইল সবচেয়ে বেশি চাহিদাপূর্ন, এবং নিজেকে বিশ্বের কাছে একজন ভাল প্রকৌশলী হিসাবে প্রকাশ এবং প্রমান করতে পারে।
অটোমোবাইল এর বিভিন্ন সরকারি এবং বেসারকারি কর্মক্ষেত্র :
বিভিন্ন সরকারি কর্মক্ষেত্র:
- বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)
- বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানা (বিওফ)
- বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কতৃপক্ষ (বিআরটিএ)
- বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি)
- বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)
- বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)
- প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়
- প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ইত্যাদি।
বিভিন্ন বেসরকারি কর্মক্ষেত্র:
বিভিন্ন পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি তে ডিপ্লোমা ইন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজন হয়। এছাড়াও বিশ্বব্যাপী অটোমোবাইল এর বেসরকারী খাতে প্রচুর কর্মক্ষেত্র রয়েছে যেমন:
- ব্রিটিশ মোটর ওয়াগন (সার্ভিস সেন্টার এবং শো রুম),বাংলাদেশ
- মার্সিডিস বেঞ্জ (সার্ভিস সেন্টার এবং শো রুম),বাংলাদেশ
- ফোর্ড মোটরস (সার্ভিস সেন্টার এবং শো রুম),বাংলাদেশ
- নাভানা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ
- Rangs group of Industries
- রহিমা আফরোজ অটোমোবাইলস
- মাল্টিব্রান্ড অটোমোবাইল
- রানার অটোমোবাইলস
- সুজুকি মোটরস
- মিতশুবিশি অটোমোবাইল
- মিলেনিয়াম।
আরও দেখুন: