কুলিং এবং ট্রান্সমিশন পদ্ধতি

কুলিং এবং ট্রান্সমিশন পদ্ধতি – এই পাঠটি “অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং” বিষয়ের “কুলিং এবং ট্রান্সমিশন পদ্ধতি” অধ্যায়ের একটি পাঠ।

কুলিং এবং ট্রান্সমিশন পদ্ধতি

কুলিং পদ্ধতি একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। এই পদ্ধতির সহায়তায় ইঞ্জিনকে অতিরিক্ত উত্তাপ হতে রক্ষা করা যায়। সিলিন্ডারের মধ্যে দহনকার্য সম্পাদনের ফলে যে উত্তাপের সৃষ্টি হয়, তা যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তবে ইঞ্জিন চালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

সিলিন্ডারে ১১০০° ফাঃ হতে ৪৫০০° ফাঃ তাপমাত্রার সৃষ্টি হয়। এই তাপমাত্রা সিলিন্ডার হেড, সিলিন্ডার ওয়াল এবং পিস্টনকে বেশী উত্তাপ করে। ফলে সিলিন্ডার ওয়াল এবং পিস্টনের মধ্যে যে অয়েল ফিল্ম বর্তমান থাকে তা উত্তাপে শুকিয়ে যাবে এবং সিলিন্ডার ও পিস্টন ইত্যাদি বন্ধ হয়ে যাব। অর্থাৎ ইঞ্জিনের প্রভূত ক্ষতি সাধিত হবে। এই জন্যেই কুলিং পদ্ধতি ৩০ থেকে ৩৫% তাপ গ্রহণ করে থাকে (তাপ কমিয়ে দেয়) এবং ইঞ্জিনকে স্বাভাবিকভাবে চলাচলে সহায়তা করে থাকে।

ইঞ্জিনকে ঠাণ্ডা রাখার জন্য প্রধানত দুই ধরনের কুলিং পদ্ধতি প্রচলিত আছে। যেমন :

  • ১. বাতাসের সাহায্যে ঠাণ্ডা করার পদ্ধতি (air cooling system)
  • ২. পানির সাহায্যে ঠাণ্ডা করার পদ্ধতি (water cooling system)

বাতাসের সাহায্যে ঠাণ্ডা করার পদ্ধতি : যেসব গাড়ীর ইঞ্জিনকে ঠাণ্ডা করার জন্য বাতাস ব্যবহার করা হয় তাকে এয়ার কুল্ড ইঞ্জিন বলে। এয়ার কুল্ড ইঞ্জিনের সিলিন্ডার এবং ইঞ্জিন হেডের তাপমাত্রা তাড়াতাড়ি অপসারিত করার জন্য ফিন্স (fins) ব্যবহার করা হয়। সিলিন্ডার এবং হেডের উত্তাপ দ্রুত কমিয়ে দেওয়ার জন্য কোন কোন গাড়ীতে ব্লোয়ার অথবা ফ্যান ব্যবহার করা হয়।

আবার কোন কোন গাড়ীতে সিলিন্ডার এবং হেড এমনভাবে সংযুক্ত করা হয় যাতে গাড়ীর সম্মুখ গতিতে বাতাসের ঝাপটায় তা ঠাণ্ডা হয়। মোটর সাইকেলগুলিতে এইরূপ ব্যবস্থা দেখা যায় । নিম্নলিখিত যানসমূহে এয়ার কুলিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যেমন :

(ক) এরোপ্লেন,

(খ) ভেস্পা, 

(গ) হোন্ডা, 

(ঘ) ভক্সওয়াগন (মাইক্রোবাস)

(ঘ) ছোট ছোট ঘাস কাটার ইঞ্জিন 

(চ) ধানের জমিতে ওষুধ ছিটানোর ইঞ্জিন ইত্যাদি।

ফিন্স-এর ওপর যাতে ময়লা আবর্জনা জমে না থাকে সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হয়।

 

পানির সাহায্যে ঠাণ্ডা করার পদ্ধতি :

যেসব গাড়ীতে ইঞ্জিনকে ঠাণ্ডা করার জন্য পানি ব্যবহার করা হয় তাকে ওয়াটার কুলিং পদ্ধতি বলে। পৃথিবীর অধিকাংশ গাড়ীতে ওয়াটার কুলিং পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। নিম্নলিখিত যন্ত্রাদির সাহায্যে ওয়াটার কুলিং পদ্ধতি গঠিত।

  • ১ |ওয়াটার পাম্প (water pump )
  • ২। রেডিয়েটর (radiator)
  • ৩। আপার হোজ পাইপ (upper hose pipe) 
  • ৪ । লোয়ার হোজ পাইপ (lower hose pipe)
  • ৫। রেডিয়েটর কোর (radiator core)
  • ৬| রেডিয়েটর আপার ট্যাঙ্ক (radiator upper tank )
  • ৭। রেডিয়েটর লোয়ার ট্যাঙ্ক (radiator lower tank )
  • ৮। ফিন্স (fins)
  • ৯। রেডিয়েটর ক্যাপ (radiator cap)
  • ১০। থারমোস্টেটিভ ভাল্ভ (thermostative valve)
  • ১১। ফ্যান বেল্ট (fan belt) 
  • ১২। কুলিং ফ্যান (cooling fan)
  • ১৩। ড্রেন কর্ক বা প্লাগ (drain cork or plug ) 
  • ১৪। ওভার ফ্লো পাইপ বা বাইপাস পাইপ (over flow or bypass pipe)

কুলিং এবং ট্রান্সমিশন পদ্ধতি | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

১। ওয়াটার পাম্প :

ওয়াটার কুলিং পদ্ধতিতে ওয়াটার পাম্পটি প্রধান কার্য সমাধান করে থাকে। পানি চলাচল এই পাম্পের সাহায্যেই হয়ে থাকে। ফ্র্যাঙ্কশ্যাফট পুলির সঙ্গে কুলিং ফ্যানের পুলি ফ্যানবেল্ট দ্বারা যুক্ত থাকে। ইঞ্জিন ঘুরলে ফ্যান ঘোরে। ফ্যান ঘুরলে পাম্পও ঘোরে। কারণ পাম্পের শ্যাফট ফ্যান পুলির সঙ্গে শক্ত করে আঁটানো থাকে। পাম্পের দুটি মুখ আছে।

একটি ইনলেট এবং অপরটি আউটলেট। পাম্পের এই মুখদ্বয় একটি আপার হোজ পাইপের সাথে যুক্ত এবং অপরটি লোয়ার হোজ পাইপের সাথে যুক্ত থাকে। পাম্পের মধ্যে একটি ইম্পেলার থাকে। এটি পাম্প শ্যাফটের সাথে যুক্ত থাকে। পাম্প ঘুরলে ইম্পেলারটিও ঘোরে।

ফলে পাম্প কেসিং-এর মধ্যে শক্তির সৃষ্টি হয়। ফলে পানি পাম্প কেসিং থেকে বের হয়ে আপার হোজ পাইপে যায় এবং সেখান থেকে আপার ট্যাঙ্কে যায়। অতঃপর সেখান থেকে পানি রেডিয়েটর কোর-এর মাধ্যমে লোয়ার ট্যাঙ্কে যায়। তারপর লোয়ার হোজ পাইপ দ্বারা পুনরায় পাম্পে ফেরত যায়। এভাবে পানির চলাচল হতে থাকে। পাম্পের পানির সাথে পানির জ্যাকেটের পূর্ণ যোগাযোগ থাকে। যেসব যন্ত্রাদির সমন্বয়ে ওয়াটার বা পানির পাম্প গঠিত তা হচ্ছে :

 

কুলিং এবং ট্রান্সমিশন পদ্ধতি | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

 

(ক) পাম্প কেসিং, 

(খ) পাম্প ইমপেলার, 

(গ) পাম্প শ্যাফট, 

(ঘ) ওয়াটার সীল, 

(ঙ) স্পেসার, 

(চ) বিয়ারিং, 

(ছ) গ্যাসকেট, 

(জ) ইনলেট পাইপ, 

(ঝ) আউটলেট পাইপ, 

(ঙ) পাম্প পুলি।

 

২। রেডিয়েটর :

ইহা আপার ট্যাঙ্ক, লোয়ার ট্যাঙ্ক, ফিল্ম, ওয়াটার টিউব (কোর), ক্যাপড্রেন প্লাগ ইত্যাদি নিয়ে গঠিত। ইহা বহু নলবিশিষ্ট (টিউব) একটি পানির ট্যাঙ্কবিশেষ। রেডিয়েটরে সবসময় পানি পূর্ণ থাকে। এর আপার ট্যাঙ্কে একটি ফিলার ক্যাপ থাকে। ঐ ক্যাপের সাহায্যে রেডিয়েটরে পানি পূর্ণ করতে হয়। রেডিয়েটরের পানি পানির জ্যাকেটকেও পূর্ণ করে। ওভার ফ্লো পাইপ দ্বারা অতিরিক্ত পানি পড়ে যায়। এই পাইপ ফিলার ক্যাপের সাথে যুক্ত থাকে।

রেডিয়েটরের পানি ইঞ্জিন কুলিং ফ্যানের বাতাস এবং মোটরযানের সম্মুখ গতির ফলে আগত বাতাস দ্বারা ঠাণ্ডা হয়। রেডিয়েটরের ঠাণ্ডা পানি ইঞ্জিনের পানির জ্যাকেটে যায় লোয়ার ট্যাঙ্ক এবং লোয়ার হোজ পাইপের সাহায্যে। জ্যাকেটের গরম পানি আপার হোজ পাইপ দ্বারা আপার ট্যাঙ্কে এবং রেডিয়েটরে ফেরত আসে। পুনরায় ঠাণ্ডা হয়ে ইঞ্জিনে যায়। এভাবে পানি আসা-যাওয়া করে।

ইঞ্জিনের খুব গরম পানিকে একটি বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে রেডিয়েটর ঠাণ্ডা করে। ইঞ্জিন হতে গরম পানি যখন আপার ট্যাঙ্কে আসে ; এই গরম পানি তখন অনেকগুলি নল বা .টিউবের মধ্যে বিভক্ত হয়ে লোয়ার ট্যাঙ্কে যাওয়ার সময় ফ্যানের বাতাস এবং সম্মুখগতিতে বাতাসের ঝাপটায় পানি খুব তাড়াতাড়ি ঠাণ্ডা হয়ে যায়।

রেডিয়েটর কোরে ফিন্স ব্যবহার করা হয় এজন্য যে উহা বেশী পরিমাণ বাতাসকে ধারণ করতে সহায়তা করে অর্থাৎ বাতাসের সংস্পর্শে পানির তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে। রেডিয়েটর পানিতে পূর্ণ হয়ে গেলে ফিলার ক্যাপ লাগিয়ে রাখতে হয়। ইঞ্জিনের পানি বেশী গরম হলে পানি বাষ্প হয়ে যায় ; তখন এই বাষ্প ওভার ফ্লে পাইপ দ্বারা বের হয়ে যায়।

রেডিয়েটরের পানি ময়লা হলে বা ধৌত করার জন্যে পানি সম্পূর্ণরূপে বের করে ফেলার জন্য ড্রেন কর্ক বা প্লাগ ব্যবহার করা হয়। শীতপ্রধান দেশে রেডিয়েটরের পানি যাতে ঠাণ্ডায় জমে না যায় (বরফ না হয়) সেজন্য পানিতে অ্যালকোহল বা এন্টিফ্রিজিং সলুশন ব্যবহার করা হয়।

ওয়াটার জ্যাকেটগুলি সিলিন্ডার ব্লক এবং ইঞ্জিন হেডে থাকে। এগুলি সিলিন্ডারের চতুষ্পার্শ্ব দিয়ে অবস্থান করে।

 

থারমোস্টেটিভ ভাল্ভ :

ইহা একটি বিশেষ ধরনের ভাল্ভ যা কুলিং পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হয়। ইহা ঠাণ্ডা অবস্থায় অর্থাৎ ১৪০° ফাঃ হতে ১৬০° ফাঃ পানির তাপমাত্রা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। ফলে পানির সরবরাহ হয় না। ঐ সময় পানির যে সরবরাহ হয় তা শুধু পাম্প থেকে সিলিন্ডার পর্যন্তই হয়ে থাকে। বাইপাস পোর্টের মাধ্যমেই তা হয়ে থাকে। পানির তাপমাত্রা ১৭৫° ফাঃ হতে ১৯৫° ফাঃ এর মধ্যে থারমোস্টেটিভ ভাল্ভ সম্পূর্ণভাবে খুলে যায়।

ফলে পুরাপুরি পানি সরবরাহ হয়। কিন্তু বাইপাস পোর্ট বন্ধ হয়ে যায়। কোন কোন ইঞ্জিনে স্প্রিং লোডেড ভাল্ভ বাইপাস পোর্টে ব্যবহার করা হয়। ইঞ্জিন চালু হলে পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি না পাওয়া পর্যন্ত পানির চাপে স্প্রিং লোডেড ভাল্ভটি খুলে যায় এবং পানির সরবরাহ সিলিন্ডার ও হেড-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। ফলে খুব তাড়াতাড়ি পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাপমাত্রা বয়েলিং পয়েন্টের কাছাকাছি আসলেই থারমোস্টেটিভ ভালভটি পুরাপুরি খুলে যায়। ফলে স্বাভাবিক পানির প্রবাহ চলতে থাকে। (১) বিলোজ এবং (২) বাইমেটাল এই দুই ধরনের থারমোস্টেটিভ ভাল্ভ দেখা যায়।

 

কুলিং এবং ট্রান্সমিশন পদ্ধতি | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

আরও দেখুনঃ

 

 

6 thoughts on “কুলিং এবং ট্রান্সমিশন পদ্ধতি”

Leave a Comment