মোটর গাড়ীর লুবরিকেটিং পদ্ধতি

মোটর গাড়ীর লুবরিকেটিং পদ্ধতি – এই পাঠটি “অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং” বিষয়ের “মোটর গাড়ীর বিভিন্ন পদ্ধতি” অধ্যায়ের একটি পাঠ।

মোটর গাড়ীর লুবরিকেটিং পদ্ধতি

 

বহু গতিদায়ক (moving) যন্ত্রের সমন্বয়ে একটি মোটরযান গঠিত। গাড়ী চালনার ফলে ইঞ্জিনের বিভিন্ন অংশ অত্যন্ত গরম, ক্ষয় ও ঘর্ষণ হয়। এর হাত হতে ইঞ্জিনের যন্ত্রাদি রক্ষা করে সহজ, সরল ও সুষ্ঠুভাবে চলতে দেওয়াই এই পদ্ধতির প্রথম এবং প্রধান কর্তব্য। লুবরিকেটিং অয়েল এক প্রকার ঘন এবং আঠালযুক্ত তেলবিশেষ। ইহা পেট্রোলজাত পদার্থ ।

লুবরিকেটিং অয়েলের গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য নিম্নে প্রদান করা হলো :

(১) ইহা ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশকে সহজ ও সরলভাবে চলাচলে সাহায্য করে থাকে।

(২) এই তৈল ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশকে মরিচা ধরার হাত হতে রক্ষা করে থাকে।

(৩) পরিষ্কারক পদার্থ হিসাবে কাজ করে থাকে। অর্থাৎ ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশকে ধৌত করার কাজ করে থাকে।

(৪) ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ ঠাণ্ডা করার কার্য সমাধা করে থাকে, অর্থাৎ কুলিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে। (৫) ইহা ইঞ্জিন যন্ত্রাংশের শূন্যতা কমাতে সাহায্য করে থাকে। অর্থাৎ অয়েল ফিল্ম হিসেবে কার্য সমাধান করে থাকে।

(৬) অতিরিক্ত ঘর্ষণের হাত থেকে যন্ত্রাদিকে রক্ষা করে থাকে।

(৭) বডি এবং ফ্লুইডিটি (body and fluidity) এই তেলের একটি বিশেষ ধরনের বৈশিষ্ট্য। বডি হচ্ছে তেলের এমন একটি গুণ, যে তেল কোন বস্তুকে একবার স্পর্শ করলে বহু সময় সেই বস্তুর সঙ্গে লেগে থাকার প্রবণতা দেখা যায়। ফ্লুইডিটি তেলের এমন একটি গুণগত মান আছে যে, লুব অয়েলের ঘনত্ব সাধারণ তেল হতে অনেক বেশী। কিন্তু এছাড়াও এই তেলের প্রবহমান ক্ষমতা আছে।

 

লুবরিকেটিং পদ্ধতির প্রকারভেদ (Classification):

লুবরিকেটিংকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন : (ক) ফুল প্রেসার (full pressure) লুবরিকেটিং পদ্ধতি ।

  • (খ) স্প্ল্যাশ (splash system) পদ্ধতি।
  • (গ) মডিফাই স্প্ল্যাশ এবং ফুল প্রেসার পদ্ধতি।
  • (ঘ) পেট্রো অয়েল পদ্ধতি।

 তিনটি লুবরিকেটিং পদ্ধতির পার্থক্য তিনটি চিত্রের মাধ্যমে দেখানো হলো। চিত্র ৩.১ (খ) (গ) ও (ঘ) দ্রষ্টব্য।

মোটর গাড়ীর লুবরিকেটিং পদ্ধতি | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

মোটর গাড়ীর লুবরিকেটিং পদ্ধতি | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

 

 

(ক) ফুল প্রেসার লুবরিকেটিং পদ্ধতি :

এই পদ্ধতিই সবচেয়ে ভাল এবং বেশীরভাগ গাড়ীতে এই পদ্ধতির ব্যবহার দেখা যায়। এই পদ্ধতিতে একটি অয়েল পাম্প ব্যবহার করা হয়। এই পাম্প লুব অয়েলকে পাম্প করে (প্রেসারের সাহায্যে) অয়েল গ্যালারী ও রাইফেল ড্রিলের সাহায্যে ইঞ্জিনের বিভিন্ন অংশে পৌঁছিয়ে দেয়।

অয়েল পাম্প হতে তেল ইঞ্জিনের অয়েল গ্যালারীতে আসে। সেখান থেকে তেল ইঞ্জিনের মেইন বিয়ারিং এবং ক্যামশ্যাফট বিয়ারিং-এ আসে। মেইন বিয়ারিং এ তেলের ছিদ্রপথ আছে, সেখান থেকে তেল ক্র্যাঙ্কপিনের ছিদ্রে যায়। এখান থেকে কানেকটিং রডে যায়, কানেকটিং রড হতে পিস্টন পিন বিয়ারিং-এ আসে। কানেকটিং রড এবং পিস্টন পিন বিয়ারিং-এর সাহায্যে তেল সিলিন্ডার ওয়ালে পৌঁছায়। সিলিন্ডার ওয়ালের তেল পিস্টনের অয়েল স্ক্র্যাপার রিং-এর সহায়তায় সম্পূর্ণ সিলিন্ডার ওয়াল তৈলাক্ত করে ফেলে।

মোটর গাড়ীর লুবরিকেটিং পদ্ধতি | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

 

এই পদ্ধতিতে একটি ওয়েল ফিল্টার, অয়েল পাম্প, অয়েল প্রেসার, রিলিফ ভাল্ভ, অয়েল গ্যালারী এবং একটি অয়েল প্রেসার গেজ থাকে।

 

(খ) স্প্ল্যাশ পদ্ধতি :

এই পদ্ধতিতে তেল ছিটিয়ে ইঞ্জিনের বিভিন্ন অংশকে তৈলাক্ত করে। বিগ এণ্ড বিয়ারিং ক্যাপ-এর সাথে ডিপার (diper) নামক চামচ জাতীয় একটি যন্ত্র লাগানো থাকে। ক্র্যাঙ্কশ্যাফট যখন ঘুরতে আরম্ভ করে তখন ঐ চামচ অয়েল সাম্প (sump) হতে কিছু কিছু তেল নিয়ে ইঞ্জিনের বিভিন্ন অংশে ছিটিয়ে দেয়। ফলে পিচ্ছিল হয়। 

 

(গ) স্প্ল্যাশ এবং ফুল প্রেসার পদ্ধতি :

এই পদ্ধতিতে প্রেসার এবং স্প্ল্যাশ পদ্ধতি যুগ্মভাবে কাজ করে। এখানে প্রেসার এবং স্প্ল্যাশ এই দুই পদ্ধতিতেই ইঞ্জিনের যন্ত্রাদি পিচ্ছিলকরণ করা হয় ।

 

(ঘ) পেট্রো অয়েল পদ্ধতি :

কিছু সংখ্যক মোটরযান আছে যেখানে লুবঅয়েল রাখার কোন স্থান নেই। সেসব মোটরযানের পিচ্ছিলকরণের জন্যে পেট্রোলের সাথে লুব অয়েল মিশ্রিত করা হয়। পেট্রোলের ফ্লাস পয়েন্ট কম বলে পেট্রোল তাড়াতাড়ি জ্বলে যায়। কিন্তু লুব অয়েলের কিছু অংশ জ্বলে যায় এবং বাকী অংশ পিস্টন, সিলিন্ডার, কানেকটিং রড, ক্র্যাঙ্কশ্যাফট ইত্যাদিকে তৈলাক্ত করতে সাহায্য করে। ভেস্‌পা, হোল্ডা, বেবীট্যারী ইত্যাদি ইঞ্জিনে পেট্রো-অয়েল পদ্ধতি দেখা যায়। এসব ইঞ্জিনের পোড়া গ্যাস খুবই বিষাক্ত হয়ে থাকে।  এই গ্যালন পেট্রোলের সাথে। গ্যালন মোবিল (লুব অয়েল) মিশ্রিত করতে হয়।

আরও দেখুনঃ