আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়- ক্র্যাংকিং মোটর
ক্র্যাংকিং মোটর Cranking Motor
ক্র্যাংকিং মোটরের প্রয়োজনীয়তা (Necessity of Cranking Motor) :
১. অটোমোটিভ ইঞ্জিনের প্রাথমিক অবস্থায় ইঞ্জিনকে হ্যান্ডেল দ্বারা ঘুরিয়ে চালু করা হতো। এ জাতীয় ইঞ্জিনে ব্যাটারি ব্যবহৃত হতো না। একটি ম্যাগনেটো ইগনিশন সিস্টেম প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে।
২. মোটরগাড়িকে পিছন দিক থেকে ধাক্কা দিয়ে চালু করা হতো, যা ছিল অত্যন্ত কায়িক পরিশ্রম ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এ ছাড়াও রাস্তায় রাস্তায় ইঞ্জিন বন্ধ করে পরবর্তীতে তা চালু করা ছিল এক কষ্টসাধ্য ও কঠিন কাজ।
৩. এ অবস্থা দূর করার লক্ষ্যে ও প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে গাড়িতে স্টার্টিং ব্যবস্থার সংযোগ করা হয়। এ স্টার্টিং ব্যবস্থার মুখ্য যন্ত্রাংশ হিসেবে ইঞ্জিনে ব্যাটারি ও ক্র্যাংকিং মোটর স্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়, যা আজও চলে আসছে। এ ব্যবস্থার ফলে চালক স্বল্প পরিশ্রম এবং এককভাবে নিজ আসনে বসে ইগনিশন সুইচ দিয়ে এবং ক্র্যাংকিং মোটর ঘুরিয়ে গাড়ির ইঞ্জিন যে কোনো স্থানে এবং যে কোনো অবস্থায় চালু করতে পারেন ।
৪. এ ক্র্যাংকিং মোটর ইঞ্জিন ফ্লাই হুইল হাউজিংয়ে যুক্তাবস্থায় থাকে। এর একমাত্র কাজ হলো ইঞ্জিনকে চালু করা। এ জন্যই ক্র্যাংকিং মোটরকে স্টার্টিং মোটরও বলা হয়ে থাকে। আর যে বৈদ্যুতিক সিস্টেমের দ্বারা এ ক্র্যাংকিং/ স্টার্টিং মোটর আবর্তন করে ইঞ্জিনকে চালু করা হয় তাকে স্টার্টিং সিস্টেম বলে ।
ক্র্যাংকিং মোটরের শ্রেণিভেদ (Types of Cranking Motor) :
ইঞ্জিনে ফ্লাই-হুইল হাউজিংয়ের সঙ্গে যুক্ত থেকে ক্র্যাংকিং মোটর স্থাপন করা হয়ে থাকে। এদের ড্রাইভিং মেকানিজমও হালকা থেকে ভারী ইঞ্জিনে ব্যবহার উপযোগিতার উপর ভিত্তি করে নিচের পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. বেনডিন্স টাইপ বা ইনারসিয়া টাইপ ক্র্যাংকিং মোটর ইনারসিয়া অব মোশন এবং বিনডিক্স টাইপের উপর দিয়ে এর জ্যাংকিং মোটর সাইকেল ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।
২. সলিনয়েড টাইপ বা প্রি-ইনগিশন টাইপ ক্র্যাংকিং মোটর জ্যাংকিং মোটরের উপরে সলিনয়েড টাইপ অতিরিক্ত একটি ইউনিট এতে যুক্ত থাকে। বৈদ্যুতিক প্রবাহের সাহায্যে অ্যাটাচমেন্ট গিয়ারকে ওভার রানিং ক্লাচে অথবা গিয়ারের সাহায্যে অগ্রগামী করে ইঞ্জিনকে চালু করে আবার স্ব-স্থানে ফিরে আসে। এটি সাধারণত বড় ও মাঝারি ধরনের গাড়ি, হালকা ট্রাক ও ট্রাক্টর ব্যবহৃত হয়। উপরোক্ত দুই প্রকার জ্যাংকিং মোটরই সাধারণত গাড়িতে সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়।
৩. জ্যাংকিং আর্মেচার টাইপ ক্র্যাংকিং মোটর এর আর্মেচারই অগ্রগামী হয়ে ইঞ্জিনকে স্টার্ট করে স্থানে ফেরত আসে। এটি সাধারণত ভারী ধরনের ট্রাক, বাস এবং জাহাজের ইঞ্জিনে ব্যবহৃত হয়। এগুলোকে হেভি ডিউটি ক্র্যাকিং -মোটর বলে ।
৪. স্লাইডিং গিয়ার টাইল ক্র্যাকিং- মোটর গিয়ার অগ্রগামী হয়ে আবর্তনমূলক ইঞ্জিনকে স্টার্ট করে থাকে। এটি তুলনামূলক আরও ভারী গাড়ির ইঞ্জিন স্টার্ট দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি সাধারণত ভারী গাড়ি, রেলওয়ে ইঞ্জিন ও জাহাজের ইঞ্জিন স্টার্ট দিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
৫. স্লাইডিং পিয়ার এবং ইন্টারমেডিয়েট ট্রান্সমিশন টাইপ ক্র্যাকিং- মোটর। এই জাতীয় ব্যবস্থার ক্র্যাংকিং -মোটরের সঙ্গে অতিরিক্ত একটি পিয়ার ট্রেনের ন্যায় ট্রান্সমিশন বক্স রয়েছে। এটি গিয়ারকে ফ্লাই-হুইল পিয়ারের সঙ্গে সংযোগ দিয়ে যান্ত্রিক সুবিধা প্রদান করে থাকে। অপেক্ষাকৃত বড় আকৃতির এ্যাংকিং মোটর অত্যন্ত ভারী যান, জাহান, ট্রেন ও মাটি কাটার গাড়ির বয় ও শক্তিশালী ইঞ্জিনসমূহ স্টার্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
ফ্যাংকিং মোটরের বিদ্যুৎ প্রবাহ বর্তনী (Electric Circuit of Cranking Motor)।
প্রধানত অটোমোটিভ গাড়িতে দুটি জ্যাংকিং মোটরই ব্যবহৃত হয়, যাদের বৈদ্যুতিক বর্তনী নিচে প্রদত্ত হলো :
১. বেনডিক্স বা ইনারসিয়া টাইপ, যাতে ব্যাটারি ইগনিশন সুইচ ও এ্যাংকিং মোটরের মধ্যে বৈদ্যুতিক সংযোগপূর্বক স্টার্টিং সার্কিট সম্পন্ন করা হয়। নিচে সার্কিটটি অঙ্কিত হলো।
২. সপিনয়েড টাইপ বা প্রিইগনিশন টাইপ ক্র্যাংকিং- মোটর, যার সার্কিটের মূল যন্ত্রাংশসমূহ হলো- ব্যাটারি, ইলনিশন সুইচ বা স্টার্টিং সুইচ, ক্র্যাংকিং- মোটর বা স্টার্টিং মোটর, মলিনয়েড ইউনিট, মোটর ও সলিনরেডের বৈদ্যুতিক সংযোগ ইত্যাদি । নিচে এটি অক্ষন করা হলো :
ক্রাংকিং মোটরের কার্যপ্রণালি (Working Procedure of Cranking Motor) =
একটি ফ্র্যাংকিং মোটর বৈদ্যুতিক শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রপান্তরপূর্বক ক্র্যাংকিং -মোটরের আরমেচারকে আবর্তন করে। আরমেচারের এ আবর্তন, ড্রাইভ মেকানিজমের সাহায্যে ইঞ্জিন ফাই হুইলকে প্রাথমিকভাবে ঘুরিয়ে, ইঞ্জিনকে স্টার্ট করে। ক্র্যাংকিং -মোটরে বৈদ্যুতিক শক্তি কীভাবে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে থাকে তার মূল ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা প্রদান করা হলো
সাধারণ মোটরের কার্যপদ্ধতি : এক খণ্ড বিদ্যুৎ পরিবাহী তার লুপের ন্যায় (রোটর) করে, ম্যাগনেটিক গোলের মধ্যবর্তী স্থানে রাখা হলো। যখন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়, তখন তারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ম্যাগনেটিক ফিল্ড থেকে উৎপন্ন ও প্রবাহিত লাইন অব ফোর্সকে সরল পথে চলতে উক্ত বৈদ্যুতিক লুপটি বাধাগ্রস্ত করে। ফলে লুপটির দুই প্রান্তে চিত্রের তীর চিহ্নিত দিকে আবর্তিত হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
যদি বিয়ারিংয়ের উপর এটি স্থাপন করা হয় তা হলে সত্যিকার অর্থে এটি আবর্তিত হতে থাকে। এ দুর্গটিকে রেটিনা হিসেবে চিন্তা করলেই সহজেই অনুমের হবে যে, প্রবাহিত বৈদ্যুতিক শক্তি রোটরের মধ্যে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত যদি ম্যাগনেটিক পোলের মধ্যবর্তী স্থানে একটি লুপের পরিবর্তে আরও অধিক সংখ্যক লুপ স্থাপন করা হয়, তা হলে কন্ডাক্টরের প্রবাহিত বিদ্যুৎ ও ম্যাগনেটিক লাইন অব ফোর্সের মধ্যে এ বাধার পরিমাণ লুবের সংখ্যানুসারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ শক্তি বৃদ্ধি সরাসরি রোটরকে আবর্তনকরণের শক্তিতে রূপান্তরিত হয়, যা আমরা মোটর হতে যান্ত্রিক শক্তি হিসেবে পেয়ে থাকি ।
ক্র্যাংকিং মোটরে যেহেতু ডিসি সরবরাহ করা হয়, তাই একে ডিসি মোটরও বলে। এ রোটর ক্র্যাংকিং- মোটরে আর্মেচার নামে পরিচিত। আর্মেচার শ্যাফটের সাথে সংযোজিত যান্ত্রিক ব্যবস্থা ইঞ্জিনকে প্রাথমিকভাবে ক্র্যাংকিং পূর্বক স্টার্ট করে বিধায় একে ক্র্যাংকিং- মোটর বা স্টার্টিং মোটর বলা হয় ।
ক্র্যাংকিং মোটরের সম্ভাব্য ত্রুটি সনাক্তকরণ পদ্ধতি (Detection of Possible Defect of Cranking Motor) :
১. ম্যাগনেটিক ফিল্ডের ত্রুটি :
(ক) ফিল্ড কয়েলে ওপেন সার্কিট থাকতে পারে বা কয়েল কেটে গিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকতে পারে। এত ম্যাগনেটিক লাইন অব ফোর্স উৎপাদন হতে পারবে না এবং মোটরও ঘুরবে না। টেস্ট ল্যাম্প অথবা মিটার দ্বারা ওপেন টেস্ট করে এটি শনাক্ত করা সম্ভব।
(খ) ফিল্ড কয়েল বডি বা আর্থিং হলেও ম্যাগনেটিক লাইন অব ফোর্স উৎপন্ন হবে এবং মোটর ঘুরবে না । এক্ষেত্রে অ্যাভোমিটার দ্বারা কন্টিনিউটি অথবা বডি স্টেট করে এটি শনাক্তকরণ করা সম্ভব।
২.আর্মেচার বা রোটরে ত্রুটি : আর্মেচারের লুপ শর্ট হয়ে যেতে পারে। আর্মেচারের লুপ শর্ট হলে রোটর বা আর্মেচার আর আবর্তিত হবে না। এ শর্টের স্থান শনাক্তকরণের আর্মেচারকে গ্রাউলার টেস্ট করতে হয়। এ টেস্টের জন্য প্রস্তুতকারগণের নির্দেশনা অনুসরণ করা উচিত ।
৩.কমিউটেটরে ত্রুটি : কমিউটরের বড়ি হয়েছে কিনা তা টেস্ট ল্যাম্প বা অ্যাডোমিটার দ্বারা টেস্ট করে শনাক্ত করা যায় । এছাড়া কমিউটেটরে সংযুক্ত লুপের মাথাও একটির সাথে অপরটি শর্ট হতে পারে। টেস্ট ল্যাম্প যারা এটি শনাক্তকরণ সম্ভব ।
8. যান্ত্রিক ত্রুটি: ক্র্যাংকিং- মোটরের ফ্লাই হুইল অ্যাটাচমেন্ট একটি জটিল যান্ত্রিক ব্যবস্থা। এতে যে কোনো ত্রুটি আসলে শব্দ করবে অথবা অ্যাটাচমেন্ট করতে ব্যর্থ হবে। এ অবস্থায় যান্ত্রিক মেরামত অপরিহার্য। রোটরের বিয়ারিং গ্রিজিং করতে হয়।
প্রশ্নমালা-১১
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :
১. ব্যাটারি ব্যবহারের পূর্বে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য কী পদ্ধতি অবলম্বন করা হতো?
২. প্রাথমিক অবস্থায় অটোমোটিভ ইঞ্জিনকে কীভাবে চালু করা হতো?
৩. ইঞ্জিনকে সহজে চালু করার জন্য কী ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয়?
৪. স্টার্টিং ব্যবস্থার মুখ্য যন্ত্রাংশের নাম লেখ ।
৫. ক্র্যাংকিং -মোটরের কাজ কী? ৬. স্টার্টিং সিস্টেম কাকে বলে?
৭. বেনডিক্স টাইপ ক্র্যাংকিং -মোটর কোন ধরনের ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় ।
৮. সলিনয়েড টাইপ ক্র্যাংকিং- মোটর কোন ধরনের ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
৯. স্লাইডিং আর্মেচার টাইপ ক্র্যাংকিং -মোটর কোন ধরনের ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত
১০. ক্র্যাংকিং- মোটরের যান্ত্রিক ত্রুটি কীরূপ হয়ে থাকে?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :
১. প্রাথমিক অবস্থায় ইঞ্জিন চালু করার জন্য কি পন্থা অবলম্বন করা উচিত ?
২. জ্যাংকিং মোটরের অবস্থান বিবৃত কর।
৩.বেনডিক্স বা ইনারসিয়া টাইপ ক্র্যাংকিং- মোটরের কাজ কী?
৪. সলিনয়েড টাইপ ক্র্যাংকিং -মোটরের কাজ উল্লেখ কর ।
৫. স্লাইডিং আর্মেচার টাইপ ক্র্যাংকিং -মোটরের কাজ উল্লেখ কর ।
৬. একটি বেনডিক্স টাইপ ক্র্যাংকিং- মোটরের বৈদ্যুতিক প্রবাহ বর্তনীর যন্ত্রাংশসমূহের নাম লেখ ।
৭. একটি সলিনয়েড টাইপ ক্র্যাংকিং- মোটরের বৈদ্যুতিক প্রবাহ বর্তনীর যন্ত্রাংশসমূহের নাম লেখ ।
৮. মোটর হতে যান্ত্রিক শক্তি কীভাবে পেয়ে থাকে?
৯. ক্র্যাংকিং- মোটরের ম্যাগনেটিক ফিল্ডের ত্রুটিসমূহ কী কী?
১০. ক্র্যাংকিং- মোটরের যান্ত্রিক ত্রুটি কীরূপ হয়ে থাকে?
রচনামূলক প্রশ্ন :
১. ক্র্যাংকিং -মোটরের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ কর।
২. ক্র্যাংকিং- মোটরের শ্রেণিভেদ আলোচনা কর ।
৩.ক্র্যাংকিং- মোটরের বিদ্যুৎপ্রবাহ বর্তনী অঙ্কন করে বিভিন্ন অংশসমূহ চিহ্নিত কর।
৪. ক্র্যাংকিং- মোটরের কার্যপ্রণালি আলোচনা কর।
৫. ক্র্যাংকিং- মোটরের বিভিন্ন ত্রুটি শনাক্তকরণ পদ্ধতি আলোকপাত কর।
আরও দেখুন :