ইঞ্জিন দহন ক্রিয়া

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-ইঞ্জিন দহন ক্রিয়া

ইঞ্জিন দহন ক্রিয়া Ignition System of Engine

এম আই ইঞ্জিনের গহন করার বর্ণনা (Description of SI Engine Ignition System):

ক) আমরা জানি, অক্সিজেন নিজে জ্বলে না, কিন্তু অপরকে জ্বলতে সাহায্য করে। যে সমস্ত পেট্রোলিয়াম জ্বালানি রয়েছে তা হলো হাইড্রোকার্বন কম্পাউন্ডেরা সংমিশ্রণ। এ হাইড্রোকার্বন কম্পাউন্ড জ্বালাতে হলেও অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়।

খ) তাই হাইড্রো-কার্বন কম্পাউন্ডযুক্ত প্যাসলিন বা পেট্রোলকে সহজযোগ্য দহনে পরিণতকরণের লক্ষ্যে যাজ্ঞান ও রেলের যে সংমিশ্রণ কার্বুরেটর তৈরি করে, তার আনুপাতিক হারে হয়ে থাকে। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ১০৫১ হতে ১৫৪১ পর্যন্ত।

অর্থাৎ ১০ হতে ১৫ ভাগ বাতাসের যে পরিমাণ অক্সিজেন থাকে, তা এক ভাগ ফুয়েলকে জ্বালাতে সক্ষম। সাধারণত আমরা জানি যে, ১ লিটার/কেজি পেট্রোল দহনের ১৪/১৫ কেজি বাতাসের প্রয়োজন।দহনযোগ্য বায়বীয় বাতাস ও রেলের এ সংমিশ্রণ তৈরি করে কার্বুরেটর ইনটেক স্ট্রোকে ইঞ্জিন সিলিন্ডার প্রেরণ করে থাকে।

গ) তাই হাইড্রোকার্বন কম্পাউণ্ডযুক্ত গ্যাসলিন বা পেট্রোলকে সহজযোগ্য দাহনে পরিণতকরণের লক্ষ্যে বাতাসও ঘুয়েলের যে সংমিশ্রণ কার্বুরেটর তৈরি করে, তার আনুপাতিক হারে হয়ে থাকে। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ১০ঃ১ হতে ১৫১১ পর্যন্ত।

 

ইঞ্জিন দহন ক্রিয়া

 

অর্থাৎ ১০ হতে ১৫ ভাগ বাতাসের যে পরিমাণ অক্সিজেন থাকে, তা এক ভাগ ফুয়েলকে জ্বালাতে সক্ষম। সাধারণত আমরা জানি যে, ১ লিটার/কেজি পেট্রোল দহনের জন্য ১৪/১৫ কেজি বাতাসের প্রয়োজন । দহনযোগ্য বায়বীয় বাতাস ও রেলের ও সংমিশ্রণ তৈরি করে কার্বুরেটর ইনটেক স্ট্রোকে ইঞ্জিন সিলিন্ডারে প্রেরণ করে থাকে।

ঘ) সত্যিকার অর্থে যদি ক্যানসন চেম্বারে জ্বালানি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ দহন হয়, তখন জ্বালানিতে অবস্থিত সম্পূর্ণ কার্বন, কার্বন ডাই-অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়। সুতরাং স্বাভাবিক হন প্রক্রিয়ার জন্য উল্লেখিত স্বাভাবিক হারের সংমিশ্রণ তৈরি ও সরবরাহ হওয়া অত্যাবশ্যক।

ঙ) সাধারণত এ দহনের গতি প্রতি সেকেন্ডে ৬-১৪ মিটার হতে ৪৬ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। এ গতি প্রাথমিকভাবে নির্ভর করে মিশ্রণের অনুপাত, বায়বীয় অবস্থা, চাপ, তাপ কম্বাশন চেম্বারের ডিজাইনের উপর ।

চ) দহন প্রক্রিয়ার গতি লক্ষ্য করলে সহজেই অনুমেয় যে, মাত্র কয়েক সে.মি. দীর্ঘ কম্বাশন চেম্বারের, এ গতি একটি তাৎক্ষণিক প্রক্রিয়া, যাকে এক কথায় কম্বাশনজনিত বিস্ফোরণ বলা চলে। এ দহন বা বিস্ফোরণ জনিতকারণে কম্বাশন চেম্বারে হঠাৎ করে তাপ ও চাপ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে তাপশক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে শক্তি উৎপাদিত হয়ে ক্র্যাংক শ্যাফটের আবর্তন করে থাকে ।

সি আই ইঞ্জিনের দহন ক্রিয়ার বর্ণনা (Description of Ignition system of Cl Engine):

১. সিআই ইঞ্জিনের অর্থ হলো কম্প্রেশন ইগনিশন ইঞ্জিন। এস আই ইঞ্জিনের তুলনায় এর তাপ, চাপ ও কম্প্রোশন রেশিও অনেক বেশি। তাই এ ইঞ্জিন এয়ার ফুয়েল মিকচারের পরিবর্তে ইনটেক স্ট্রোকে শুধুমাত্র বাতাসকে শোষণপূর্বক পরবর্তী স্ট্রোকে কম্প্রেসড করে থাকে ।

২। ডিজেল ইঞ্জিন সিলিন্ডার অভ্যন্তরে সুষ্ঠু কমাশনের জন্য নিম্নলিখিত চারটি শর্ত অবশ্যই পূরণ করতে হয়:

ক. জ্বালানি সূক্ষ্ম ও বাষ্পীয় আকারে ছড়ানো (অটোমাইজেশন);

খ. দ্রুত দহন ক্রিয়া সম্পন্নকরণের নিমিত্তে উচ্চ তাপমাত্রা সংরক্ষণ;

গ. জ্বালানি ও বাতাসের মধ্যে উচ্চ বেগ সংরক্ষণ:

ঘ. বাতাস ও জ্বালানির মধ্যে উত্তম মিশ্রণ ও সংঘৰ্ষণ ।

৩। উল্লিখিত শর্তসমূহ যথাযথভাবে সম্পন্নকরণের নিমিত্তে সিআই ইঞ্জিনের উচ্চ চাপ ও তাপের বাতাসের বাষ্পীয় অবস্থার উপর কম্প্রেশন স্ট্রোকের শেষ প্রান্তে ইনজেক্টর/ অটোমাইজার কর্তৃক উচ্চ চাপে ফুয়েলকে অটোমাইজ অবস্থায় সিলিন্ডার প্রকোষ্ঠে স্প্রে করা হয়।

অক্সিজেন অণুর উপস্থিতিতে এবং ডিজেলের হাইড্রো কার্বন কম্পাউন্ডের সাথে সংঘর্ষে তাৎক্ষণিক সিলিন্ডার প্রকোষ্ঠে আগুন ধরে ও দহন ক্রিয়া আরম্ভ হয় । এতে উৎপাদিত তাপ ও চাপ পিস্টনকে নিচের দিকে ধাক্কা দিয়ে এসআই ইঞ্জিনের ন্যায় তাপ শক্তিকে এ দহন ক্রিয়ার মাধ্যমে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে যা আমরা ডিজেল ইঞ্জিনের শক্তি হিসেবে পেয়ে থাকি ।

৪। এছাড়াও কমাশনের রেশিও, সিলিন্ডারের আকার, ঠাণ্ডাকরণ পদ্ধতি, কম্বাশন চেম্বারের আকৃতি, ইনজেকশন টাইমিং কম্প্রেশন ও ইনজেকশন প্রেসারের পার্থক্য এ সকল শর্তও সঠিক ও সূক্ষ্ম (Smooth) কম্পাশনের পূর্বশর্ত হিসেবে কাজ করে।

কম ব্যাস বিশিষ্ট সিলিন্ডারের আয়তনও কম, তাই ঠাণ্ডাকরণ প্রক্রিয়ায় এটি তাড়াতাড়ি ঠাণ্ডা হয়ে যায় বিধায় এর কম্প্রেশন রেশিও তুলনামূলকভাবে বেশি রাখা হয়, যাতে এটা বেশি উষ্ণতায় কাজ করে দহন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।

৫। সুষ্ঠু কম্বাশনের অপর একটি শর্ত হলো বাতাসের গতিবেগ যা কমাশন চেম্বারে উত্তম মিশ্রণ তৈরির জন্য সহায়ক। এ জন্য বেশির ভাগ কম্বাশন চেম্বার এমনভাবে তৈরি থাকে, যাতে আবদ্ধকৃত বাতাস একটি ঘূর্ণায়ন পতিপ্রাপ্ত হয়।

কম ব্যাস বিশিষ্ট অথচ উচ্চ গতিসম্পন্ন ডিজেল ইঞ্জিনে এ জাতীয় উচ্চমানের কম্বাশন চেম্বারের প্রয়োজন হয়, যাতে আবদ্ধকৃত মিশ্রণ কমাশন চেম্বারে খুবই কম সময়ে দাহিত হতে পারে। সুতরাং একখানা সিআই ইঞ্জিনের কম্পন মুক্ত ও সুষ্ঠু দহন প্রক্রিয়া একে যথার্থ শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে।

ইঞ্জিনের অটো ইগনিশন ও প্রি-ইগনিশন (Auto Ignition & Pre-Ingition of Engine)

 

ইঞ্জিন দহন ক্রিয়া

 

১. ইঞ্জিনে অটো ইগনিশন বা প্রি-ইগনিশন সংঘটিত হয়, যখন এয়ার অয়েল সংমিশ্রণ, স্পার্ক প্লাগের স্পার্ক ব্যতিরেকে অন্য কোনো মাধ্যমে যেমন জ্বলিত কার্বন, তাপিত এগজস্ট ভাত অথবা তাপে লাল হয়ে থাকা স্পার্ক প্লাগের সংস্পর্শে জ্বলে।

অর্থাৎ স্পার্ক প্লাগ থেকে স্পার্ক সংঘটিত হওয়ার আগেই যদি দহন প্রক্রিয়া আরম্ভ হয় তাকে অটো ইগনিশন অথবা প্রি-ইগনিশন বলে। এটি স্বাভাবিক কারণেই এসআই ইঞ্জিনেই ঘটে থাকে কারণ এয়ার ও ফুয়েল সংমিশ্রিত হয়ে ইঞ্জিন সিলিন্ডারে প্রবেশ করে থাকে।

২. প্রি-ইগনিশন বা অটো ইগনিশনের কারণে ইঞ্জিনে অস্বাভাবিক ঝাঁকুনি ও অনিয়মিত গতির সৃষ্টি হবে। এ ঘটনা ইঞ্জিনের ক্যাশসন চেম্বারে মিশ্রণ প্রবেশের পর যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে। সাধারণত বিনির্দেশিত স্পার্ক প্লাগ ব্যবহার না করার জন্য এবং ক্যাপসন চেম্বারে মাত্রাতিরিক্ত কার্বন জমা হলে প্রি-ইগনিশন বা অটো ইগনিশন সংঘটিত হতে পারে।

 ইঞ্জিনের নক ও ডেটোনেশন (Knoe and Detonation of Engine):

আমরা আগেও বলেছি এক সেকেন্ডের কয়েক হাজার ভাগের এক ভাগেরও কম সময়ের মধ্যে ইঞ্জিনের দহন ক্রিয়া সম্পন্ন হতে হয়। তাই অত্যন্ত ত্বরিত গতিতে এ দহন ক্রিয়া সম্পন্ন হতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে কিছু অদাহ্য জ্বালানির সংমিশ্রণ থেকে যায়।

স্পার্কের সঙ্গে এক দিক হতে স্বাভাবিক দহন শুরু হলেও চাপ বৃদ্ধি পেয়ে অদহন জ্বালানির সংমিশ্রণ কম্বাসন চেম্বারের অন্য প্রান্তে প্রাথমিক প্রজ্বলনের সম্প্রসারণের ফলে সংকুচিত হতে থাকে। এ সংকোচনের ফলে অদহন জ্বালানির চাপ ও তাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে।

তাৎক্ষণিক একপর্যায়ে এর মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটে এবং এ প্রান্ত থেকেও আবার দহন প্রক্রিয়া আরম্ভ হয়। এ জাতীয় অস্বাভাবিক দহনকে ইঞ্জিনের নক বা ডেটোনেশন বলা হয়ে থাকে। এটি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘ফুয়েল নক’ স্পার্ক নক অথবা পিং নামেও অভিহিত হয়ে থাকে।

 

ইঞ্জিন দহন ক্রিয়া

 

প্রশ্নমালা-১৯

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১। এসআই ইঞ্জিনের দহন ক্রিয়া কাকে বলে?

২। ইঞ্জিনের দহন জ

৩। এসআই ইঞ্জিনের দহনে বাতাস ফুয়েলের আনুপাতিক হারে?

৪। সিজাই ইঞ্জিনের দহনে বাতাস ও ফুয়েলের আনুপাতিক হারে?

৫। কম্বাশনজনিত বিস্ফোরণ কাকে বলে?

৬। প্রি-ইগনিশন কাকে বলে?

৭। প্রি-ইগনিশন ফল কী

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১। ইঞ্জিনের দহন ক্রিয়া বলতে কী বোঝায়?

২। এসজাই ইঞ্জিনের দহন ক্রিয়া বলতে কী বোঝায়?

৩। সিআই ইঞ্জিনের দহন বলতে কী বোঝায়?

৪। অটো ইগনিশন কেন ঘটে?

৫। প্রি-ইগনিশন কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়?

৬। ইঞ্জিনের নক বা ডেটোনেশন বলতে কী বোঝায়?

৭। সুষ্ঠু ক্যাশসনের শর্তাবলী কী কী?

রচনামূলক প্রশ্ন :

১। এসআই ইঞ্জিনের দহন ক্রিয়া সম্পর্কে যা জানো লেখ।

২। সিআই ইঞ্জিনের দহন জিয়া বিবৃত কর।

৩। প্রি-ইগনিশন ও অটো ইগনিশন সম্পর্কে যা জানো লেখ।

৪। ইঞ্জিনের নক বা ডেটোনেশন কেন ঘটে বর্ণনা দাও।

৫। প্রি-ইগনিশন ও অটো ইগনিশন ঘটার কারণ উল্লেখ কর।

আরও দেখুন :

Leave a Comment