ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ , কারণ ও প্রতিকার

ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ , কারণ ও প্রতিকার – এই পাঠটি “অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং” বিষয়ের “ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ, কারণ ও প্রতিকার” অধ্যায়ের একটি পাঠ।

Table of Contents

ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ , কারণ ও প্রতিকার

অভিযোগ-১ : ‘ইঞ্জিনে বেশী তেল খরচ হয়।

কারণ

১. জ্বালানি লাইন দিয়ে কোথাও তেল বের হলে।
২. নিম্নমানের তেল অথবা তেলের মধ্যে পানি মিশ্রিত হলে।
৩. ইঞ্জিন বেশী বোঝাই হলে।
৪. এয়ার ক্লিনার জ্যাম অথবা নষ্ট হলে।
৫. কার্বুরেটরের জেটসমূহ বড় হলে।
৬. ফ্লোট ছিদ্র হলে।
৭. নিড়ল ভাল্ভ অকেজো হলে।
৮. ভাল্ভ ঠিকমত কাজ করে না।
৯. টাইমিং ঠিক না থাকলে ।
১০. স্পার্ক প্লাগের ফাঁক ঠিক নেই।
১১, চাকায় হাওয়া কম।
১২. ঢাকা ময়লায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
১৩. দ্রুতবেগে গাড়ি চালালে।

১৪. কার্বুরেটর গ্যাসকেট ছিদ্র হলে।
১৫. এ. সি. পাম্প গ্যাসকেট অথবা ডায়াফ্রাম ছিদ্র হলে।
১৬. গাড়ী বার বার চালু ও বন্ধ করলে অর্থাৎ সর্টরান অপারেশন করলে।
১৭. ইঞ্জিনের কম্প্রেশন ছিদ্র হলে।
১৮. গাড়ী অনিয়মতান্ত্রিকভাবে চালনা করলে।
১৯, ফ্লোট লেভেল উঁচু হলে।
২০. ইঞ্জিন গমর হওয়ার পর ঢোক ভাত না খুললে ।
২১. ক্লাচ পিছলে যেয়ে শক্তি অপচয় হলে।
২২. কোন সিলিন্ডারে শক্তি উৎপন্ন হলে।
২৩. অটোমেটিক গিয়ার বক্স ফসকে গেলে।

প্রতিকার

১. জ্বালানি লাইন পরীক্ষা করে ছিদ্র বন্ধ করতে হবে।
২. ভাল তেল ব্যবহার করা উচিত।
৩. পরিমিত পরিমাণে বোঝা বা মালামাল উঠানো উচিত।
৪. এয়ার ক্লিনার পরিষ্কার করতে হবে অথবা বদলী করতে হবে।
৫. কার্বুরেটরের জেটসমূহ বদলী করতে হবে।
৬. ফ্লোট মেরামত অথবা পরিবর্তন করা বাঞ্ছনীয়।
৭. গ্রাইন্ডিং করে লাগাতে হবে অথবা বদলী করতে হবে।
৮. মেরামত করানো উচিত।
৯. টাইমিং ঠিক করতে হবে।
১০. স্পার্ক প্লাগের ফাঁক সমন্বয় করতে হবে।
১১. হাওয়া পূর্ণ করা উচিত।
১২. ময়লা পরিষ্কার করা উচিত।
১৩. ইকনমি রেঞ্জে (২৫ হতে ৪৫ মাইল বেগে) গাড়ী চালানো বাঞ্ছনীয়।

১৪. গ্যাসকেট বদলী করতে হবে।
১৫. এ.সি. পাম্প গ্যাসকেট ও ডায়াফ্রাম বদলী করতে হবে।
১৬, যথাসম্ভব কম করে চালু ও বন্ধ করতে ড হবে। দীর্ঘ পথে চলাচল করলে অবস্থার উন্নিত হবে।
১৭. পরীক্ষা করে কম্প্রেশন ছিদ্র হওয়া বন্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে।
১৮. দায়িত্বশীল ড্রাইভার কর্তৃক গাড়ী চালানো উচিত।
১৯. সমন্বয় করতে হবে।
২০. পরীক্ষা করে ঠিকমত লাগানো প্রয়োজন।
২১. সমন্বয় করতে হবে অথবা পরিবর্তন করতে হবে।
২২ মিসিং সিলিন্ডার বের করে ঠিক করতে হবে।
২৩. গিয়ার বক্স পরীক্ষা করে সংশোধনের ব্যবস্থা করা উচিত।

অভিযোগ-২ : ইঞ্জিনে বেশী লুব অয়েল খরচ হয়।

কারণ

১. অয়েল পাম্পে লুব অয়েল বেশী থাকবে।
২. পিস্টন রিং ক্ষয়প্রাপ্ত হলে।
৩. পাম্প (অয়েল পাম্প) গ্যাসকেট নষ্ট হলে।
৪. ট্যাপেট কভার গ্যাসকেট এবং হেড গ্যাসকেট নষ্ট হয়ে লুব অয়েল নষ্ট হতে পারে।

প্রতিকার

১. পরিমিত পরিমাণে লুব অয়েল রাখতে হবে।
২. পিস্টন রিং বদলী করতে হবে।
৩. অয়েল পাম্প গাসকেট বদলী করতে হবে।
৪. ট্যাপেট এবং হেড গ্যাসকেট বদলী করতে হবে।

অভিযোগ-৩ : ইঞ্জিন বেশী গরম হয়।

কারণ

১. রেডিয়েটরে পানি কম থাকলে।
২. ওয়াটার পাম্প ঠিকমত কাজ না করলে।

৩. থার্মোস্টেটিভ ভাল্ভ ঠিক মত কাজ না করলে।
৪. ইঞ্জিনে বোঝা বেশী হলে।
৫. ব্রেক জ্যাম থাকলে।
৬. লুবরিকেশন ঠিকমত না হলে।
৭. লুব অয়েল পাতলা হলে।
৮. সিলিন্ডার মিসিং হলে।
৯. ইগনিশন টাইমিং ঠিক না থাকলে।
১০. সি.বি.বিন্দু এবং স্পার্ক প্লাগের ফাঁক ঠিক না থাকলে।
১১. ব্লাড ফসকে গেলে।
১২. প্রথম গিয়ার (first gear) বেশীক্ষণ চালালে।

প্রতিকার

১. পানি দ্বারা রেডিয়েটর পূর্ণ করা বাঞ্ছনীয়।
২. পাম্প মেরামত করা প্রয়োজন।
৩. থার্মোস্টেটিভ ভালভ বদলী করতে হবে।
৪. কম বোঝা নিতে হবে।

৫. সমন্বয় করে ব্রেক মুক্ত করা বাঞ্ছনীয়।
৬. ভাল লুবরিকেশনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
৭. লুব অয়েল বদলী করতে হবে এবং উন্নতমানের লুব অয়েল ব্যবহার করতে হবে।
৮. পরীক্ষা করে মিসিং সিলিন্ডার বের করে মেরামত করা প্রয়োজন।
৯. টাইমিং ঠিক করতে হবে।
১০. উভয় ফাঁক ফিলার গেজ দ্বারা মেপে ঠিক করতে হবে।
১১. ক্লাচ ঠিকমত লাগতে হবে অথবা ফেসিং বদলী করতে হবে।
১২ ৪/৫ মিনিটের বেশী না চালানোই উত্তম।

 

 

ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ , কারণ ও প্রতিকার

 

অভিযোগ – ৪ : ইঞ্জিন চালু হতে চায় না (ডিজেল)

কারণ

১. ট্যাঙ্কে তেল নেই।
২. জ্বালানি লাইনে বাতাস ঢুকলে।
৩. জ্বালানি ছাঁকনি ময়লায় জ্যাম হলে।
৪. ভাল্‌ভ টাইমিং ঠিক না থাকলে।
৫. ইনজেক্টর তেল স্প্রে না করলে।
৬. তেলে পানি এবং ময়লা থাকলে।
৭. জ্বালানি কম বা বেশী স্প্রে হলে।
৮. কম্প্রেশন চাপ কম হলে।
৯. একজস্ট পাইপ জ্যাম হলে।
১০. ব্যাটারী দুর্বল থাকলে।
১১. ক্র্যাঙ্কিং মোটর ত্রুটিপূর্ণ থাকলে।
১২. ইনজেকশন টাইমিং ভুল থাকলে।
১৩. ইঞ্জিন জ্যাম হলে।

প্রতিকার

১. ট্যাঙ্কে তেল দিয়ে পূর্ণ করতে হবে।
২. এয়ার ব্রিডিং করে বাতাস বের করতে হবে।

৩. ছাকনি পরিবর্তন করতে হবে।
৪. ভাল্ভ টাইমিং ঠিক করা আবশ্যক।
৫. ইনজেক্টর পরীক্ষা করে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৬. ভাল তেল ব্যবহার করতে হবে।
৭. ইনজেক্টর এবং উচ্চচাপ পাম্প পরীক্ষা করে দেখা উচিত।
৮. চাপ পরীক্ষা করতে হবে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৯. জ্যামমুক্ত করা প্রয়োজন।
১০. ব্যাটারী পূর্ণ চার্জ করতে হবে।
১১. যথাযথভাবে মেরামত করা আবশ্যক।
১২. টাইমিং সংশোধন করা বাঞ্ছনীয়।
১৩. সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা করে জ্যাম মুক্ত করতে হবে।

 

অভিযোগ-৫ : ইঞ্জিন চালু হতে চায় না (পেট্রোল)

কারণ

১. ব্যাটারীতে চার্জ না থাকলে।

২. ব্যাটারী সংযোগ ঢিলা।
৩. ট্যাঙ্কে তেল না থাকলে।
৪. জ্বালানি লাইন জ্যাম।
৫. ইগনিশন টাইমিং ভুল।

৬. ইগনিশন কয়েল ত্রুটিপূর্ণ।
৭. এ.সি. পাম্প ডায়াফ্রাম নষ্ট বা এ.সি. পাম্পের গ্যাসকেট ছিদ্র অথবা এ. সি. পাম্পের চাপ কম।
৮. মিশ্রণ খুব সমৃদ্ধ বা দুর্বল।
৯. হাইটেনশন লিড ত্রুটিপূর্ণ।
১০. রোটর, কন্ডেন্সার, সি.বি. পয়েন্ট, স্পার্ক প্লাগ ত্রুটিপূর্ণ।
১১. ইনলেট মেনিফোল্ড এবং কার্বুরেটরের মধ্যে সংযোগ ঢিলা।
১২. ইঞ্জিনের কম্প্রেশন দুর্বল।
১৩. তেলের সাথে পানি মিশ্রিত হয়েছে।
১৪. ওয়াটার জ্যাকেট থেকে প্রধান গ্যাসকেট ছিদ্র হয়ে সিলিন্ডারে পানি প্রবেশ করে।
১৫. ইগনিশন সুইচ ত্রুটিপূর্ণ।

১৬. ক্র্যাকিং মোটরের সংযোগ ঢিলা।

১৭. সলেনয়েড সুইচ খারাপ

প্রতিকার

১. ব্যাটারী চার্জ করে পূর্ণ করতে হবে।
২. ডান করে আঁটানো দরকার।
৩. তেল দিতে হবে।
৪. জ্বালানির লাইনের জ্যাম মুক্ত করতে হবে।
৫. সঠিক করা বাঞ্ছনীয়।

৬. কয়েল পরিবর্তন করা উচিত।
৭. এ.সি. পাম্প কীট বদলী করতে হবে। গ্যাসকেট বদলী করতে হবে।
৮. কার্বুরেটর টিউনিং করা প্রয়োজন।
৯. হাইটেনশন লিড বদলী করতে হবে।

১০. ভালভাবে ইগনিশন ব্যবস্থা পরীক্ষা করে ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করতে হবে।
১১. গ্যাসকেট দ্বারা ভালভাবে আঁটানো উচিত।
১২. কম্প্রেশন টেস্টার দ্বারা পরীক্ষা করা উচিত। প্রয়োজনবোধে পিস্টন-রিং বদলী করতে হবে।
১৩. পুনরায় নতুন তেলের ব্যবস্থা করতে হবে।
১৪. প্রধান গ্যাসকেট পরিবর্তন করতে হবে।
১৫. সংযোগ এবং শর্ট সার্কিট পরীক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনবোধে পরিবর্তন করতে হবে।

১৬. সংযোগ শক্ত করতে হবে।

১৭. সলেনয়েড সুইচ পরিবর্তন করতে হবে।

অভিযোগ-৬ ইঞ্জিন বোঝা (load) টানতে পারে না (উভয় ইঞ্জিন)

কারণ

১. কম্প্রেশন দুর্বল।
২. ক্লাচ পিছলে যায়।
৩. মিসিং সিলিন্ডার ত্রুটিপূর্ণ।
৪. প্রধান গ্যাসকেট ছিদ্রযুক্ত।
৫. চাকায় হাওয়া কম।
৬. লোড বেশী।
৭. মিশ্রণ দুর্বল হলে।
৮. ইনজেক্টর ভালভাবে স্প্রে করে না।
৯. উচ্চচাপ পাম্প ত্রুটিপূর্ণ।
১০. ট্যাপেট ক্লিয়ারেন্স ঠিক নেই।
১১. স্পার্ক প্লাগ ঠিকমত কাজ করে না।

প্রতিকার

১. পিস্টন রিং বদলী করতে হবে।
২. ক্লাচ ফেসিং ধুয়ে লাগাতে হবে। অথবা বদলী করতে হবে।
৩. মিসিং সিলিন্ডার ঠিক করতে হবে।
৪. গ্যাসকেট বদলী করতে হবে।
৫. পরিমিত পরিমাণ হওয়া দেওয়া উচিত।
৬. পরিমাণ মত বোঝা নিতে হবে।
৭. কার্বুরেটর টিউনিং করতে হবে।
৮. ইনজেক্টর পরীক্ষা করা উচিত।
৯. পাম্প ফেসিং ক্যালিব্রেশন করতে হবে।
১০. ট্যাপেট সমন্বয় করা উচিত।
১১. প্লাগ পরিষ্কার করে সমন্বয় এবং প্রয়োজনবোধে বদলী করতে হবে।

অভিযোগ-৭: ইঞ্জিন পূর্ণ ক্ষমতা উৎপন্ন করতে পারে না। (উভয় ইঞ্জিন)

কারণ

১. ট্যাপেট সমন্বয় ঠিক নেই।
২. পিস্টন রিং এবং লাইনার ক্ষয়। –
৩. ভাল্‌ভ টাইমিং ঠিক না হলে এবং ভাল্ড ও ভাল্ভ সিট ক্ষয়প্রাপ্ত।

৪. ভাল্ভ স্প্রিং দুর্বল অথবা ভেঙ্গে গেছে।

৫. সাইলেন্সার বক্সে কার্বন জমেছে।
৬. কার্বুরেটরের উচ্চচাপ বর্তনী ভালভাবেকাজ করে না।
৭. থ্রোটল ভাল্ভ পুরাপুরি খোলে না।
৮. এয়ার ফুয়েল মিশ্রণ দুর্বল।
৯. জ্বালানি সরবরাহ ঠিক মত হয় না।
১০. ইগনিশন ব্যবস্থা (কয়েল, স্পার্ক প্লাগ, সি.বি. বিন্দু, কন্ডেন্সার) ত্রুটিপূর্ণ।
১১. ইগনিশন টাইমিং ত্রুটিপূর্ণ।
১২. নিম্নমানের তেল বা তেলের মধ্যে পানি আছে।
১৩, চলমান যন্ত্রাংশ (মেইন এবং বিগ এ বিয়ারিং অথবা পিস্টন রিং ও সিলিন্ডার ওয়ালের মধ্যে) জ্যাম হলে বা বেশী এঁটে গোল।
১৪. জ্বালানি ব্যবস্থার মধ্যে বাতাস প্রবেশ করে (ডিজেল ইঞ্জিন)।
১৫. জ্বালানি লাইন ময়লা বা ছিদ্র।

প্রতিকার

১. যথাযথভাবে সমন্বয় করতে হবে।
২. ইঞ্জিন ওভারহলিং ও রিবোরিং করতে হবে এবং ওভারসাইজ ও পিস্টন রিং লাগাতে হবে।
৩. ভাল্‌ভ টাইমিং ঠিক করতে হবে। ভাত গ্রাইন্ডিং ও ল্যাপিং করে ভালভ সিটের সাথে সমন্বয় করতে হবে যাতে কম্প্রেশন লিক না করে।

৪. ভাত স্প্রিং বদলী করতে হবে।

৫. কার্বন পরিষ্কার করা বাঞ্ছনীয়।
৬. কার্বুরেটর ওভারহলিং এবং সকল বর্তনী পরীক্ষা করতে হবে।
৭. ছোটল নিজে পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
৮. কার্বুরেটর টিউনিং করতে হবে। গ্যাসকেট বদলী করতে হবে।
৯. নিল ভাত পরীক্ষা করতে হবে। ফ্লোট লেভেল, এ. সি. পাম্প-এর চাপ পরীক্ষা করতে হবে।
১০. ইগনিশন ব্যবস্থা ভালভাবে পরীক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিটি যন্ত্র মেরামত অথবা বদলী করতে হবে।
১১. টাইমিং লাইটের সাহায্যে পরীক্ষা করা বাঞ্ছনীয়।
১২. ভাল তেল ব্যবহার করা উচিত।
১৩. যন্ত্রাংশ সঠিকভাবে রেখে ও পরিষ্কার করে এবং টর্ম রেঞ্জ দিয়ে নির্মাতার দেওয়া নির্দেশ মোতাবেক আঁটতে হবে। প্রয়োজনবোধে রমারী পেপার দ্বারা (০০ সাইজ) পলিশ করতে হবে।

১৪. ব্লিডিং করে সম্পূর্ণ বাতাস বের করতে হবে।
১৫. পরিষ্কার এবং মেরামত করা উচিত।

অভিযোগ-৮ : ইঞ্জিন হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় (উভয় ইঞ্জিন)

 

কারণ

১. তেল পায় না।
২. এ. সি. পাম্প কাজ করে না।
৩. ইগনিশন কয়েল, সি.বি. বিন্দু এবং স্পার্ক প্লাগ ও কন্ডেন্সার নষ্ট।
৪. কার্বুরেটর কাজ করে না।
৫. ইনজেক্টর ও উচ্চচাপ পাম্প কাজ করে না।
৬. জ্বালানি লাইনে বাতাস প্রবেশ করে (ডিজেল)
৭. ইঞ্জিন দ্রুত বেগে ভাল চলে কিন্তু কম বেগে বন্ধ হয়ে যায়।
৮. ইঞ্জিন অত্যধিক বোঝাই হলে।
৯. ইঞ্জিন অধিক উত্তপ্ত হলে।
১০. সিলিন্ডারের মধ্যে পানি প্রবেশ করে।

প্রতিকার

১. ট্যাঙ্কে তেল নিতে হবে।
২. এ.সি. পাম্প ঠিক করতে হবে।
৩. ইনাশিন ব্যবস্থা পরীক্ষা করে প্রতিটি যন্ত্রাংশ দেখতে হবে। প্রয়োজনে বদলী করতে হবে।
৪. সব বর্তনী পরীক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনবোধে কার্বুরেটর কী-বদলী করতে হবে।
৫. পাম্প ও ইনজেক্টর পরীক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনবোধে ইনজেক্টর প্লাজার পরিবর্তন করা উচিত।

৬. এয়ার ব্রিডিং করে বাতাস বের করতে হবে।
৭. আইডেলিং ও কম বেগের বর্তনী ভালভাবে কাজ করে না। কার্বুরেটর ময়লা, তাই কার্বুরেটর ওভারহলিং করতে হবে।
৮. বোঝা কমাতে হলে।
৯. ইঞ্জিন ঠান্ডা করতে হবে।
১০. প্রধান গ্যাসকেট পরিবর্তন করা উচিত।

অভিযোগ-১০ : ইঞ্জিন থেকে কালো ধোঁয়া বের হয় (উভয় ইঞ্জিন)

কারণ

১. ইঞ্জিন অতিরিক্ত বোঝাই।
২. ইনজেক্টর স্প্রিং দুর্বল (বেশী তেল স্প্রে হলে)।
৩. নিম্নমানের ফুয়েল।
৪. কম্প্রেশন দুর্বল হলে।
৫. ইগনিশন টাইমিং ঠিক নেই।
৬. লুব অয়েল সিলিন্ডারে আসে।
৭. স্পার্ক প্লাগ ঠিকমত কাজ করে না।
৮. মিশ্রণ খুবই সমৃদ্ধ (rich)

প্রতিকার

১. বোঝা কমাতে হবে।
২. নতুন স্প্রিং লাগাতে হবে।
৩. ভাল ফুয়েল ব্যবহার করা উচিত।
৪. কম্প্রেশন পরীক্ষা করে উত্তম ব্যবস্থা। গ্রহণ করতে হবে।
৫. সঠিক করা উচিত।
৬. পিস্টন রিং বদলী করতে হবে।
৭. প্লাগ পরিষ্কার করতে হবে, ফাঁক সমন্বয় করতে হবে এবং প্রয়োজনে বদলী করতে হবে।
৮. কার্বুরেটর টিউনিং করা উচিত।

অভিযোগ-১১ ইঞ্জিন থেকে সাদা ধোঁয়া বের হয়

কারণ

১. হেড গ্যাসকেট ছিদ্র হয়ে সিলিন্ডারে পানি যায়।
২. জ্বালানির সাথে পানি মিশে যায়।
৩. ইগনিশন টাইমিং রিটার্ড হয়।
৪. কম্প্রেশন চাপ বেশী
৫. নিম্নমানের জ্বালানি।

প্রতিকার

১. হেড গ্যাসকেট পরিবর্তন করতে হবে। হেড-এর নাটসমূহ টাইট করতে হবে।
২. পানি-মুক্ত তেল ব্যবহার করতে হবে।
৩. টাইমিং লাইটের সাহায্যে টাইমিং ঠিক করতে হবে।
৪. গ্যাসকেট ব্যবহার করে চাপ কমাতে হবে।
৫. ভাল তেল ব্যবহার করতে হবে।

অভিযোগ ১২ : ইঞ্জিন থেকে নীল ধোঁয়া বের হয়

কারণ

১. পিস্টন, পিস্টন রিং ও লাইনার ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে মোবিল দহন প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করে।
২. প্লাগসমূহ নিয়মিত কাজ করে না।

প্রতিকার

১. ইঞ্জিন ওভারহলিং-এর প্রয়োজন।
২. প্লাগসমূহ পরিষ্কার করতে হবে এবং ফাক সমন্বয় করতে হবে। প্রয়োজনে বদলী করতে হবে।

অভিযোগ ১৩ : ইঞ্জিনে ব্যাক ফায়ার হয়

কারণ

১. ইগনিশন টাইমিং ভুল।
২. হাইটেনশন লিড উল্টাভাবে লাগানো।
৩. ভাল্ভ টাইমিং উল্টা হলে।
৪. ইঞ্জিন খুব বেশী গরম হয়।
৫. দহন প্রকোষ্ঠে বেশী কার্বন জমে।

প্রতিকার

১. যথাযথভাবে টাইমিং করতে হবে।
২. ফায়ারিং অর্ডার অনুসারে লাগাতে হবে।
৩. ঠিকমত ভাল্ভ টাইমিং করতে হবে।
৪. ইঞ্জিন ঠান্ডা করা উচিত।
৫. কার্বন পরিষ্কার করা বাঞ্ছনীয়।

অভিযোগ-১৪ : ইঞ্জিনের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ঘট-ঘট, পট-পট, ঠক ঠক শব্দ হয় (উভয় ইঞ্জিন)

কারণ

১. ক্র্যাঙ্কশ্যাফট ঢিলা হলে এই ধরনের ঘট ঘট শব্দ পাওয়া যায়। মেইন বিয়ারিং ঢিলা হয় অথবা ক্র্যাঙ্ককেস বেশী ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
২. কানেকটিং রড ঢিলা হলে ইঞ্জিনে শব্দ হয়। পিস্টন পিন ঢিলা হলে শব্দ হয়।

৩. ট্যাপেট সমন্বয় ঠিক না হলে ইঞ্জিন থেকে টিকটিক শব্দ ভেসে আসে।
৪. পিস্টন স্লাপ হলেও ইঞ্জিন থেকে শব্দ আসে। (সিলিন্ডার এবং পিস্টনের মধ্যে ফাঁকের মাত্রা বেড়ে গেলে এই রূপ হয়)।
৫. ইগনিশন ব্যবস্থার হাইটেনশন লিড, ক্যাপ, রোটর, কয়েল এবং হেড ফেটে, গেলে বা ছিদ্র হলে সাধারণত পট্ পট্ ও ঘট ঘট শব্দ হয়।

প্রতিকার

১. সকল মেইন ও বিগ এন্ড বিয়ারিং ভালভাবে টাইট করতে হবে এবং প্রয়োজনে সিম দিয়ে টাইট করতে হবে। প্রয়োজনবোধে ক্র্যাঙ্ক শ্যাফট টারনিং করতে হবে এবং ছোট আকারের বিয়ারিং লাগাতে হবে। অনেক সময় ইঞ্জিন ব্লকে আলাদা স্লিভ বসিয়ে সব মেইন বিয়ারিং এর সমতা রক্ষা করা হয়।

২. কানেকটিং বোল্ট এঁটে দিতে হবে। শেল বিয়ারিং বদলী করতে ও পিস্টন পিন ক্লিয়ারেন্স পরীক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনবোধে পিস্টন পিন পরিবর্তন করতে হবে এবং ক্র্যাঙ্কশ্যাফট টারনিং করাতে এবং ছোট আকারের শেল বিয়ারিং লাগাতে হবে।

৩. ইঞ্জিন ঠান্ডা অবস্থায় নির্মাতার দেয় মাপের অনুপাতে ট্যাপেট সমন্বয় করতে হবে। ইঞ্জিন কিছু সময় চালনা করার পর পুনরায় ট্যাপেট সমন্বয় করতে হবে।

৪. সিলিন্ডার হোনিং বা বোরিং করে বড় আকারের পিস্টন রিং লাগাতে হবে।

৫. হাইটেনশন লিড, ক্যাপ, কয়েল ইত্যাদি বদলী করতে হবে।

অভিযোগ-১৫: ডিফারেন্সিয়াল গিয়ার বাক্সের মধ্যে শব্দ হয়

কারণ

১. প্রপেলার শ্যাফট ত্রুটিপূর্ণ
২. গিয়ার বার ত্রুটিপূর্ণ থাকতে পারে।
৩. টেইল পেনিয়ন ক্ষয়প্রাপ্ত।

৪. পিছনের চাকার বিয়ারিং ক্ষয়প্রাপ্ত।
৫. লুবরিকেশনের অভাব
৬. ক্রাউন হুইল এবং বেভেল পিনিয়নের মধ্যে ব্যাকল্যাশ বেড়ে গেছে।

প্রতিকার

১. পরীক্ষা করে ত্রুটিমুক্ত করতে হবে। প্রপেলার শ্যাফট থাকা হতে পারে ও ক্রস জয়েন্ট নষ্ট হতে পারে।
২. পরীক্ষা করে এই বাক্স ত্রুটিমুক্ত করা উচিত।
৩. পরিবর্তন করা বাঞ্ছনীয়।

৪. পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
৫. তেল দিয়ে পূর্ণ করা উচিত।
৬. যথাযথভাবে সমন্বয় করা প্রয়োজন।

অভিযোগ-১৬: স্টিয়ারিং ঘুরালে সহজে ফিরে আসে না

কারণ

১. সাসপেনশন ব্যবস্থার বল-জয়েন্টের লুবরিকেশনের অভাব।
২. সাসপেনশন বল-জয়েন্ট এঁটে গেছে।
৩. সম্মুখের চাকার অ্যালাইনমেন্ট ঠিক নেই।
৪. স্টিয়ারিং সমন্বয় ঠিক নেই।
৫. ওয়ার্ম গিয়ার খুব আঁটানো।

প্রতিকার

১. লুবরিকেশন করা প্রয়োজন।
২. পরিমিত পরিমাণে আঁটতে হবে।
৩. পরীক্ষা করে সম্মুখের চাকার অ্যালাইনমেন্ট ঠিক করতে হবে। টো- ইন, টো-আউট, কোস্টার, বোম্বার অ্যাঙ্গেল সমন্বয় করতে হবে।
৪. যথাযথভাবে সমন্বয় করতে হবে।
৫. রিসারকুলেটিং বলগুলি পরীক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে বদলী করতে হবে – এবং নাট ও বোল্টগুলি এঁটে দিতে হবে।

অভিযোগ-১৭ : স্টিয়ারিং ব্যবহারে খুব শক্ত লাগে

কারণ

১. সম্মুখের ঢাকার অ্যালাইনমেন্ট ঠিক নেই।
২. চাকায় হাওয়া কম।
৩. স্টিয়ারিং কলামের অ্যালাইনমেন্ট ঠিক নেই।
৪. স্টিয়ারিং নাকেল থাকা।
৫. লুবরিকেশনের অভাব।
৬. টাইরড-এন্ড-বাকা অথবা ক্ষয়প্রাপ্ত।
৭. স্টিয়ারিং কাপলিং স্থানচ্যুত হলে।

প্রতিকার

১. অ্যালাইনমেন্ট ঠিক করতে হবে।
২. পরিমিত পরিমাণে হাওয়া দিতে হবে।
৩. ঠিক করতে হবে।
৪. নাকেল পরিবর্তন করতে হবে।
৫. ভালভাবে লুবরিকেটিং করতে হবে।
৬. বদলাতে হবে।
৭. কাপলিং বদলাতে হবে।

অভিযোগ-১৮ : স্টিয়ারিং হুইল খুব ধীর বা মন্থর

কারণ

১. স্টিয়ারিং গিয়ারগুলি (সেক্টর ও ওয়ার্ম) সমন্বয় করা নেই।
২. বল সংযোগ ঢিলা।
৩. স্টিয়ারিং লিঙ্কেজ সমন্বয় করা নেই।
৪. পিটম্যান আর্ম ঢিলা।
৫. সম্মুখের চাকার বিয়ারিং সমন্বয় করা নেই অথবা ক্ষয়প্রাপ্ত ।
৬. টাইরড এন্ড ক্ষয়প্রাপ্ত অথবা নষ্ট।

প্রতিকার

১. ভালভাবে সমন্বয় করতে হবে।
২.পরিবর্তন করতে হবে।
৩. পরীক্ষা করে সমন্বয় করতে হবে এবং প্রয়োজনবোধে বদলী করতে হবে।
৪. এঁটে দিতে হবে অথবা পরিবর্তন করতে হবে।
৫. বিয়ারিং সমন্বয় করতে হবে অথবা বদলাতে হবে।
৬. পরিবর্তন করা উচিত।

বিগ এন্ড বিয়ারিং ঢিলা হলে নিম্নলিখিত ক্ষতি হয় :

(১) বিয়ারিং জ্বলে যাবে, (২) ক্র্যাঙ্ক পিনে দাগ হবে, (৩) কানেকটিং রড বাঁকা হতে পারে, (৪) বিয়ারিং নষ্ট হতে পারে, (৫) তেলের চাপ গেজে কম দেখাবে।

গাজন পিন ঢিলা হলে নিম্নলিখিত ক্ষতি হয় :

(১) বুশ এবং পিস্টন পিন উভয়েই দাগ হতে পারে, (২) পিস্টন পিন ও স্মল এন্ড বিয়ারিং জ্বলে যেতে পারে, (৩) পিস্টন ফেটে যেতে পারে, (৪) গাজন পিন বের হয়ে সিলিন্ডার ওয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ডিজেল ইঞ্জিনের মিসিং সিলিন্ডার বের করার উপায় : (১) যে সিলিন্ডারে মিসিং হচ্ছে সেই সিলিন্ডারটি তুলনামূলকভাবে কম গরম হবে। (২) প্রতিটি ইনজেক্টর হতে যদি এক এক করে জ্বালানি লাইন কেটে দেওয়া হয় তাহলে দেখা যাবে যে, ভাল সিলিন্ডারের বেলায় ইঞ্জিন বেশী নক করবে এবং দ্রুতি কমে যাবে। আর যদি মিসিং সিলিন্ডার হয় তবে ইঞ্জিনের দ্রুতির কোন পরিবর্তন হবে না এবং নকও হবে না এবং কম্পন বাড়বে না ।(৩) উচ্চচাপ লাইনে কান দিয়ে শব্দ শুনেও বুঝা যায় যে, লাইনে তেল সরবরাহ হচ্ছে কিনা। নিম্নলিখিত কারণে ইঞ্জিনে ঘটঘট শব্দ হতে পারে।

  • (১) মেইন এবং বিগ এন্ড বিয়ারিং ঢিলা হলে।
  • (২) ভাল্ভ খোলা অবস্থায় জ্যাম হলে।
  • (৩) কোন সিলিন্ডার কাজ না করলে।
  • (৪) ট্যাপেট ক্লিয়ারেন্স বেশী হলে।
  • (৫) গাজন পিন বুশ ঢিলা হলে।
  • (৬) সক অ্যাবজারভার, সেকেল এবং প্রোপেলার শ্যাফট বুশ খারাপ হলে। ঘটঘট শব্দ হয় (পিছনের দিকে)।

কোন সিলিন্ডারে স্পার্ক না পাওয়ার কারণ নিম্নরূপ :

(১) ইগনিশন সুইচ খারাপ, (২) ইগনিশন কয়েল শর্ট, (৩) সি.বি. পয়েন্ট ব্রেক করে না, (৪) কন্ডেন্সার শর্ট করে, (৫) হাইটেনশন লিড ঢিলা, (৬) কার্বন রড রোটরের সাথে সংযোগ নেই, (৭) রোটর ভাঙ্গা বা শর্ট হওয়া, (৮) স্পার্ক প্লাগ শর্ট বা ফাঁক বেশী, (৯) স্পার্ক প্লাগের ফাঁকে কার্বন জমেছে। নিম্নলিখিত কারণে কম্প্রেশন দুর্বল হতে পারে।

(১) ভাল্ভ স্প্রিং দুর্বল, (২) হেড গ্যাসকেট ছিদ্র, (৩) পিস্টন রিং এবং লাইনার ক্ষয়প্রাপ্ত, (৪) লুবরিকেশনের অভাব, (৫) এয়ার কিনার জ্যাম, (৬) ভাল্ভ সিটে গর্ত বা ক্ষত চিহ্ন, (৭) ভাল্ভ গাইড ক্ষয়প্রাপ্ত, (৮) ভাল্ভ টাইমিং ঠিক নেই, (৯) ভাল্ভ ট্যাপেট ক্লিয়ারেন্স ঠিক নেই,

(১০) সিলিন্ডার হেড নাট ঢিলা, (১১) স্পার্ক প্লাগ বা ইনজেক্টরের সংযোগ ঢিলা, (১১) স্পার্ক প্লাগের সকেট ঢিলা, (১৩) সাইলেন্সার বাক্স জ্যাম, (১৪) নিম্নমানের জ্বালানির ব্যবহার করা হয়, (১৫) জ্বালানির সঙ্গে পানি মিশ্রিত হয়েছে, (১৬) ইগনিশন টাইমিং বেশি অ্যাডভান্স বা বেশী রিটার্ড হলে, (১৭) এ.সি. পাম্পের দোষে, (১৮) কার্বুরেটরে মিশ্রণের গরমিল, (১৯) ইনজেকটর ত্রুটিপূর্ণ (২০) উচ্চচাপ পাম্প ত্রুটিপূর্ণ।

ইঞ্জিন ওভারহলিং

একটি নতুন গাড়ী যখন ক্রয় করা হয় তখন গাড়ীর কার্যক্ষমতা থাকে অনেক বেশী। ইঞ্জিন এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশের অবস্থাও ভাল থাকে। গাড়ীটি তখন প্রচুর বোঝা টানে এবং এর দ্রুতি (speed) বেশী হয়। এরপর আস্তে আস্তে এর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে এবং কার্যক্ষমতা লোপ পেতে থাকে। ফলে পূর্বের মত বোঝা টানতে পারে না, ইঞ্জিনের মধ্যে নানা রকম শব্দ হয়, ইঞ্জিন গরম হয়, ক্ষয়ক্ষতি এবং খরচও বৃদ্ধিায় এবং কম্প্রেশন দুর্বল হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় ইঞ্জিনটি ওভারহলিং করতে হয়।

ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনার জন্য ফ্রেম হতে বিচ্ছিন্ন করে—এর বিভিন্ন অংশ (পিস্টন, পিস্টন রিং, সিলিন্ডার ওয়াল, ক্যামশ্যাফট, ক্র্যাঙ্কশ্যাফট ভাল্ভ, ভাল্ভ সিট, কার্বুরেটর, কন্ডেন্সার, সি.বি. বিন্দু, স্পার্কপ্লাগ ইনজেক্টর এবং পাম্প ইত্যাদি) পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর মেরামত অথবা পরিবর্তন করে পুনরায় সংযোগ স্থাপন করে পূর্ণ কার্যক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থাকেই ওভারহলিং বলে।

কম্প্রেশন এবং ভরকিউয়াম পরীক্ষা করে আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, ইঞ্জিন ওভারহলিং করার দরকার কিনা। সাধারণভাবে ওভারহলিংকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন : (১) টপ ওভারহলিং, (২) মাইনর ওভারহলিং, (৩) মেজর ওভারহলিং।

(১) টপ ওভারহলিং :

ইঞ্জিনকে মাউন্টিং-এর উপর রেখে সাধারণত যন্ত্রাদি আঁটানো, সমন্বয় করা ও মেরামত করাকেই ওভারহলিং বোঝায়। যেমন কার্বুরেটরের নাট বোল্ট আঁটানো, আইডেলিং সমন্বয় করা, স্পার্কপ্লাগ এঁদে দেওয়া, হাইটেনশন লিড ঠিকভাবে সংযোগ করা, ব্যাটারী লিডগুলি ঠিকভাবে লাগানো, অ্যাকসেলারেটিং লিঙ্কেজ, ক্লাচ সমন্বয় করা, ফ্যানবেল্ট ও ওয়াটার পাম্প পরীক্ষা করা, রেডিয়েটরের হোজ-পাইপ সংযোগ স্থাপন,

এয়ার ক্লিনার পরিষ্কারকরণ বা বদলীকরণ, জ্বালানি ছাঁকনি এবং মোবিল ছাঁকনি পরিষ্কারকরণ বা বদলীকরণ, এ.সি. পাম্প পরীক্ষা করা ও পরিষ্কার করা, সেলফ স্টার্টার ও ডায়নামোর সংযোগ পরীক্ষা করা এবং সি.বি. বিন্দুর ফাঁক পরিষ্কার করা, সমন্বয় করাকেই টপ ওভারহলিং বোঝায়। এটি একটি হাল্কা ধরনের কাজ। এ কাজে সকল বা সম্পূর্ণ যন্ত্রাংশ বিচ্ছিন্ন করতে হয় না ।

(২) মাইনর ওভারহলিং :

মাইনর ওভারহলিং-এর মাউন্টিং-এর উপর রেখে প্রয়োজনবোধে ইঞ্জিন হেড খুলে ডি-কোর্বোনাইজিং করতে হয়। স্পার্কপ্লাগ ও কার্বুরেটর খুলে পরিষ্কার এবং সমন্বয় করতে হয়। অয়েল সাম্প এবং টাইমিং চাকনি খুলে পরীক্ষা করতে হয় এবং প্রয়োজনে অয়েল সাম্প ও বিগ এন্ড বিয়ারিং খুলে বদলী করা হয়।

(৩) মেজর ওভারহলিং :

ইঞ্জিন চেসিস থেকে পৃথক করা, সকল যন্ত্রাংশ খুলে পরিষ্কার, পরীক্ষা, মেরামত ও পরিবর্তন করাকেই মেজর ওভারহলিং বোঝায়। মেজর ওভারহলিং করার পূর্বে নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলি করা বিশেষ প্রয়োজন।

সিলিন্ডার কম্প্রেশন পরীক্ষা করার নিয়ম :

(১) কম্প্রেশন টেস্টারের সাহায্যে এই পরীক্ষা করতে হয়। প্রথমে স্পার্ক প্লাগগুলি খুলে ফেলা হয় এবং টেস্টারটি, ১নং সিলিন্ডারের স্পার্ক প্লাগের ছিদ্রে খুব ভালভাবে শক্ত করে ধরতে হবে। এমতাবস্থায় ইঞ্জিন ক্র্যাঙ্কিং (cranking) করতে হবে।

(২) পরীক্ষার সময় থ্রোটল ভাল্ভ পূর্ণ খোলা অবস্থায় রাখতে হবে যাতে জ্বালানি সিলিন্ডারে না যেতে পারে। স্পার্ক প্লাগ ছিদ্রে টেস্টারটি শক্ত করে ধরে রাখলে টেস্টারের কাঁটা (needle) ডায়ালের উপর কম্প্রেশন চাপে রিডিং দেখাবে। টেস্টারটি তার রিডিং ধারণ ধরে রাখতে পারে। কারণ এর মুখে একটি এয়ার টাইট ভাল্ভ থাকে। 

(৩) প্রাপ্ত রিডিং নির্মাতার দেওয়া রিডিং-এর কম হলে অথবা সাধারণত কম্প্রেশন চাপের চেয়ে কম হলে বুঝতে হবে যে, ভাল্ভ, ভাল্ভ সিট, পিস্টন রিং, হেড গ্যাসকেট, সিলিন্ডার ওয়াল ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত অথবা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। এসব কারণে বোঝা যায় ইঞ্জিন ওভারহলিং করতে হবে।

(৪) এই পরীক্ষা আরও ভালভাবে করা যায়। উক্ত (১নং) সিলিন্ডারে খানিকটা গাঢ় লুব অয়েল ঢেলে দিয়ে পুনঃ পুনঃ পরীক্ষা করলে যদি নির্মাতার দেওয়া রিডিং বরাবর হয় তাহলে বোঝা যাবে যে, পিস্টন রিং, সিলিন্ডার ওয়াল এবং পিস্টনের মাধ্যমে কম্প্রেশন ছিদ্র বা ক্ষয় হচ্ছে। লুব অয়েল দেওয়ার পরও যদি রিডিং না বাড়ে তাহলে বুঝতে হবে যে, ভাল্ভ সিট দ্বারাই ভাল্ভ ছিদ্র বা ক্ষয় হচ্ছে।

 

ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ , কারণ ও প্রতিকার | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

(৫) পাশাপাশি দুইটি সিলিন্ডার যদি ছিদ্র হয় তাহলে বুঝতে হবে যে হেড গ্যাসকেট নষ্ট বা ছিদ্রযুক্ত।

(৬) সিলিন্ডারের চাপের রিডিং নির্মাতার দেওয়া রিডিং হতে যদি ৫ থেকে ১০ পি.এস.আই (পাউন্ড প্রতি বর্গইঞ্চি) এর মধ্যে থাকে তবে শুধু পিস্টন রিং বদলী করলেই চলবে। এই পরীক্ষা ইঞ্জিনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইঞ্জিনের ভ্যাকিউয়াম পরীক্ষা : এটি ইঞ্জিনের জন্য আর একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় ইনটেক মেনিফোল্ডের ভ্যাকিউয়াম পরিমাপ করা যায়। ইনটেক মেনিফোল্ডের ভ্যাকিউয়াম নির্ভর করে ইঞ্জিনের দোষত্রুটি এবং পরিচালনার বিভিন্ন অবস্থার উপর। এই গেজটি ইনটেক মেনিফোল্ডের সাথে যুক্ত করা হয়।

 

ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ , কারণ ও প্রতিকার | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

ইঞ্জিন চালিয়ে কিছুক্ষণের জন্য আইডেলিং অবস্থায় রেখে গেজ রিডিং নেওয়া হয়। এখানে রিডিং এর বর্ণনা করা হলো :

(১) ভ্যাকিউয়াম গেজের কাঁটা ডায়ালের উপর যদি স্থির ও উচ্চ রিডিং (১৭ হইতে ২২ পারদের লেভেল) দেখায় তাহলে মনে করতে হবে যে, ইঞ্জিন ভালভাবে চলছে ।

(২) কাঁটাটি যদি স্থির কিন্তু রিডিং কম (পারদের লেভেল) দেখায় তাহলে বুঝতে হবে যে ইগনিশন টাইমিং ভাল্ভ টাইমিং অথবা পিস্টন রিং এবং সিলিন্ডার ওয়াল ক্ষয়প্রাপ্ত।

(৩) যদি রিডিং খুব কম দেখায় তাহলে বুঝতে হবে যে, ইনটেক মেনিফোল্ড এবং কার্বুরেটর গ্যাসকেট ছিদ্রযুক্ত। বাতাস বের হলে ভ্যাকিউয়াম কম হয়, ফলে ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা লোপ পায় ।

(৪) দ্রুতি (speed) বাড়ার সাথে সাথে যদি কাঁটা উঠানামা করে তাহলে বুঝতে হবে ভাল্ভ দুর্বল।

(৫) কাঁটাটি স্থির কিন্তু ধীরে ধীরে উঠানামা করলে বুঝতে হবে যে ইঞ্জিনের জ্বালানি খরচ বেড়েছে।

(৬) ইঞ্জিনকে যদি সহসা উত্তেজিত করা হয় এবং সহসা থ্রোটল ভাল্ভ বন্ধ করা হয় এবং এরূপ অবস্থায় ডায়ালের উপর ২৩ হতে ২৫ রিডিং দেখায় তাহলে বোঝা যাবে যে, ইঞ্জিনের কম্প্রেশন ভাল আছে।

আরও দেখুনঃ

4 thoughts on “ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ , কারণ ও প্রতিকার”

Leave a Comment