ইঞ্জিনের বিভিন্ন যন্ত্রের ক্লিয়ারেন্স – এই পাঠটি “অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং” বিষয়ের “ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ইঞ্জিনের গোলযোগ, কারণ ও প্রতিকার” অধ্যায়ের একটি পাঠ।
ইঞ্জিনের বিভিন্ন যন্ত্রের ক্লিয়ারেন্স
ইঞ্জিনের বিভিন্ন যন্ত্রের ক্লিয়ারেন্স সম্বন্ধে নিম্নে বর্ণনা করা হলো :
(ক) পিস্টন ও সিলিন্ডার ওয়ালের মধ্যে ক্লিয়ারেন্স থাকে (স্টীল বা কাস্ট আয়রণ হলে) .০০০৩ হতে .০০৭´ থাউ (৩.৩৫´ হতে ৬ বোর থাকলে প্রতি ইঞ্চি বোরের জন্য ১ থাই ক্লিয়ারেন্স রাখা হয়)।
(খ) অ্যালুমিনিয়ামের পিস্টন হলে ক্লিয়ারেন্স বেশী হবে। ৩.৫০” হতে ৬.৫০” সি. বোর হলে ক্লিয়ারেন্স হবে .০১০ হতে ০২০´ থাউ। সিলিন্ডার বড় হলে ক্লিয়ারেন্স কমে যায়।
(গ) পিস্টন-রিং ক্লিয়ারেন্সসমূহ ৩” হতে ৬” পিস্টনের জন্য ৩ হতে ৪ থাউ ক্লিয়ারেন্স, কম্প্রেশন রিং এর জন্য ২ হতে ৩ থাউ, অয়েল কন্ট্রোল রিং এর জন্য ১ হতে ২ থাউ ক্লিয়ারেন্স থাকা দরকার। পিস্টনের ব্যাস বাড়লে উভয় রিং-এর ক্লিয়ারেন্স বৃদ্ধি পায়।
(ঘ) ভাল্ভ ট্যাপেট ক্লিয়ারেন্স : ছোট ইঞ্জিনের জন্য .০০২” হতে .০০৪” থাকে। মাঝারি ইঞ্জিনের জন্য .০০৪” হতে .০১২” ক্লিয়ারেন্স থাকে এবং বড় ইঞ্জিনের জন্য .০১০ হতে .০১৫ থাকে। কোন কোন ইঞ্জিন যেমন, জার্মানীর মাইক্রোবাস এর ট্যাপেট ক্লিয়ারেন্স একজস্ট ও ইনলেট ভাল্ভের সমান। সাধারণত দেখা যায় বেশীরভাগ গাড়ীতে ইনটেক ভাল্ভের ট্যাপেট ক্লিয়ারেন্স একটু কম থাকে (.০০২) এবং একজস্ট ভাল্ভের ক্লিয়ারেন্স একটু বেশী থাকে (.০০২)। ট্যাপেট ক্লিয়ারেন্স সাধারণত ইঞ্জিনের গরম অবস্থায় গ্রহণ করতে হয়।
(ঙ) মেইন এবং বিগ এন্ড বিয়ারিং-এর ক্লিয়ারেন্স সাধারণত .০০৪ হতে ০০৭ (৪ থাউ হতে ৭ থাউ) থাকে। এটি নির্ভর করে ক্র্যাঙ্ক জারনাল এবং ক্র্যাঙ্কপিনের ব্যাসের উপর। জারনাল এবং ক্র্যাঙ্কপিনের ব্যাস বেশী হলে ক্লিয়ারেন্সও বেশী রাখতে হয়।
(চ) গাজনপিন, বুশ ও ক্যামবুশ ক্লিয়ারেন্স সাধারণত .০১০ হতে .০০৩” (১ থাউ হতে ৩ থাউ থাকে)। গাজনপিন ও ক্যামশ্যাফটের ব্যাসের উপর নির্ভর করে উক্ত বুশের ক্লিয়ারেন্স কম বা বেশী হবে।
(ছ) পিস্টন রিং ফাঁক সাধারণত ৩-৪ সিলিন্ডারের জন্য .০১০ হতে .০১৬ (১০ থাউ হতে ১৬ থাউ) ফিটিং ক্লিয়ারেন্স রাখা হয়। নিম্নলিখিত নিয়মে মোটরযান রক্ষণাবেক্ষণ ও পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
(১) প্রতিদিন পরীক্ষা করা,
(২) প্রতি তিন দিন পর পরীক্ষা করা,
(৩) প্রতি সাত দিন পর পরীক্ষা করা
(৪) প্রতি পনেরো দিন পর পরীক্ষা করা
(৫) প্রতি একমাস পর পরীক্ষা করা
অথবা
(১) প্রতি ১০০ মাইল চলার পর পরীক্ষা করা।
(২) প্রতি ২০০,, মাইল চলার পর পরীক্ষা করা।
(৩) প্রতি ৩০০ মাইল চলার পর পরীক্ষা করা।
(৪) প্রতি ৫০০ মাইল চলার পর পরীক্ষা করা।
(৫) প্রতি ৫০০ মাইল চলার পর পরীক্ষা করা।
(৬) প্রতি ১০০০-৫০০ মাইল চলার পর পরীক্ষা করা।
(৭) প্রতি ৫০০০-১০০০০ মাইল চলার পর পরীক্ষা করা।
(৮) প্রতি ১০০০০-৫০০০০ মাইল চলার পর পরীক্ষা করা।
তিন মাস অন্তর অথবা ৫০০০-১০,০০০ মাইল গাড়ী চালানোর পর গাড়ীর যেসব যন্ত্রাংশ পরীক্ষা ও পরিবর্তন করা প্রয়োজন তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো। জ্বালানি ছাঁকনি, মোবিল, লুব অয়েল ইত্যাদি পরিবর্তন এবং কারবুরেটর ও এ.সি. পাম্প ওভারহলিং করতে হবে। তাছাড়া ব্যাটারী, ইগনিশন টাইমিং, ট্যাপেট ক্লিয়ারেন্স, আইডেলিং সমন্বয় ইত্যাদি যথাযথভাবে পরীক্ষা এবং প্রয়োজনে মেরামত অথবা পরিবর্তন করতে হবে।
ছয় মাস বা এক বছর অথবা ৩০,০০০-৫০,০০০ মাইল গাড়ী চালানোর পর এর কম্প্রেশন, ইগনিশন টাইমিং, ট্যাপেট সমন্বয় এবং ভ্যাকিউয়াম পরীক্ষা করা উচিত। এছাড়া সিলিন্ডার হেড ডিকারবোনাইজিং করতে হবে এবং গিয়ার অয়েল পরিবর্তন করতে হবে। সবকিছুই নির্ভর করে মোটরযান চালানো এবং রাস্তার অবস্থার উপর ।
আরও দেখুনঃ
- ভ্যাকিউয়াম অ্যাডভান্সের কাজ বোঝার উপায়
- ইগনিশন পদ্ধতি
- কাটআউট ভোল্টেজ পরীক্ষা
- মোটরযানের বৈদ্যুতিক বর্তনীসমূহ
- জেনারেটরে যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়া ও পরীক্ষাকরণ
- মোটরগাড়ি শিল্প
5 thoughts on “ইঞ্জিনের বিভিন্ন যন্ত্রের ক্লিয়ারেন্স”