আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-ইঞ্জিনের কার্যপ্রণালি
ইঞ্জিনের কার্যপ্রণালি Working Principles of Engine
ইঞ্জিনের ক্রিয়া চক্র (Working Cycle of Engine) :
ইঞ্জিনের কার্যপ্রণালিতে মূল চারটি কাজ সাকশন, কমপ্রেশন, পাওয়ার ও এগজস্ট একই রূপে পর্যায়ক্রমিকভাবে সংঘটিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ইঞ্জিনের ক্রিয়াচক্র বলে। যখন এই ক্রিয়াচক্র সম্পূর্ণ করতে পিস্টরেন দুই ঘাতে বা ক্র্যাংক শ্যাফটকে ৭২০° ডিগ্রি কৌণিক দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়।
তখন তাকে ফোর স্ট্রোক ক্রিয়া চক্র এবং যখন পিস্টনের চারঘাতে বা ৩৬০° শ্যাফটকে দূরত্ব অতিক্রম করতে হয় তখন তাকে টু স্ট্রোক ক্রিয়াচক্র বিশিষ্ট ইঞ্জিন বলে ।
ইঞ্জিনের সিসি নির্ণয়ের গাণিতিক পদ্ধতি :
কোনো একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাসের সংকোচন পূর্ব আয়তন (Volume) এবং সংকোচন পরবর্তী আয়তনের অনুপাতকে সংকোচন অনুপাত (Compression ratio) বলা হয়। যেমন ১ : ১৪ সংকোচন অনুপাত বলতে সংকোচন-পূর্ব আয়নত ১৪ ঘন একক (Cubic unit) এবং সংকোচন পরবর্তী আয়নত ১ (এক) ঘন একক বুঝায়।
চাপ বৃদ্ধির কারণে সংকুচিত হওয়া বা আয়তন কমে যাওয়া এবং তাপ বৃদ্ধির মধ্যে যে একটি গাণিতিক P1V1 P2V2 = = Constant সম্পর্ক রয়েছে তা গ্যাসের সাধারণ সূত্র দ্বারা প্রকাশ করা যায়- এখানে P = প্রাথমিক চাপ, P2 = চূড়ান্ত চাপ V1 = প্রাথমিক আয়তন, V2 = চূড়ান্ত আয়তন T = প্রাথমি তাপমাত্রা T2 = চূড়ান্ত তাপমাত্রা পিস্টন ডিসপ্লেসমেন্ট বা অতিক্রান্ত আয়তন (Piston Displacement or Swept Volume ) : ‘পিস্টনের সর্বোচ্চ অবস্থান (TDC) এবং সর্বনিম্ন অবস্থানের (BDC) মধ্যে একবার চলতে যে পরিমাণ আয়তন অতিক্রম করে, তাকে অতিক্রান্ত আয়তন ( Swept Volume) বলে।
একে পিস্টন সরণও (Piston displacement) বলে। একে ঘন সেন্টিমিটার বা ঘন ইঞ্চি বা লিটারে প্রকাশ করা হয়। অতিক্রান্ত আয়তন সূত্রাকারে নিম্নোক্তভাবে লেখা হয়। πD2 Vs XL 4 অথবা Vs = 0.785 D2 L
এখানে Vs = অতিক্রান্ত আয়তন (Swept Volume ) D = সিলিন্ডারের অভ্যন্তরের ব্যাস L = খাত দৈর্ঘ্য = 3.1416
ক্লিয়ারেন্স ভলিউম (Clearance Volume ) :
পিস্টন টিডিসিতে অবস্থানকালে, টি.ডি.সি এবং সিলিন্ডারের সর্বোচ্চ প্রাপ্তের মধ্যেবর্তী ফাঁকা স্থানকে ক্লিয়ারেন্স ভলিউম বলে। এ ভলিউম কে Ve দ্বারা প্রকাশ করা হয় । মোট আয়তন বা টোটাল ভলিউম (Total Volume) : পিস্টনের সর্বনিম্ন অবস্থান (BDC) থেকে সিলিন্ডারের শীর্ষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ আয়তনকে মোট আয়তন বা টোটাল ভলিউম বলে। অন্য কথায় ক্লিয়ারেন্স ভলিউম এবং সোয়েন্ট ভলিউমের যোগফলকে টোটাল ভলিউম বলে। অর্থাৎ টোটাল ভলিউম V = V + V 1
ফোর স্ট্রোক ক্রিয়াচক্র ইঞ্জিনের কার্যপ্রণালি (Working Procedure of Four Stroke
Cycle Engine:
ফোর স্ট্রোক জিম্মাচক্র ইঞ্জিনগুলো পেট্রোল বা ডিজেল বা এগুলো চেয়ে ভারী যে কোনো ফুয়েল দ্বা পরিচালিত হতে পারে। ব্যবহৃত ফুয়েলে উপর ভিত্তি করে কার্যপ্রণালিতে কিছুটা পার্থক্য ঘটে তাই কোর স্ট্রোক পেট্রোল এবং ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিলের কার্যপ্রণালি আলাদা আলাদাভাবে বর্ণনা করা হলো-
ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিনের কার্যপ্রণালি:
এই ইঞ্জিনের জিয়াচক্রের ক্রিয়াদি চারটি আলাদা আলাদা স্ট্রোকে সম্পন্ন হয়। এ সকল স্ট্রোক এবং এদের দ্বারা সম্পাদিত ক্রিরা নিচে আলাদা আলাদাভাবে বর্ণনা করা হলো।
ক) সাকশন বা ইনটেক স্ট্রোক (Intake Stroke)
এ স্ট্রোকে পিস্টন সিলিন্ডারে টি.ডি.সি হতে বি.ডি.সি অভিমুখে ধাবিত হয়। পিস্টনের এ নিচ গতিতে সিলিন্ডার এ শূন্যতার সৃষ্টি হওয়ায় বা বায়ুমণ্ডল হতে বাতাস কার্বুরেটরগামী হয়। কার্বুরেটরে বাষ্পাকারে পেট্রোল এ বাতাসের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে মিকচার আকারে খোলা ইনটেক ভাতের মাধ্যমে সিলিন্ডারে প্রবেশ করে এ সময় এগজস্ট বাল্ব বন্ধ থাকে । এই ক্ষেত্রে এই স্ট্রোকটি সম্পূর্ণ করতে ক্র্যাংক শ্যাফটের অর্ধঘূর্ণনের প্রয়োজন হয় ।
খ) কমপ্রেশন স্ট্রোক (Compression Stroke)
পিস্টন বি.ডি.সি-তে পৌঁছানোর পর এর গমনের দিক পরিবর্তন করে টিটিসির দিকে ধাবিত হতে থাকে। তখন উভয় তাৰ বন্ধ থাকায় সিলিন্ডারে প্রবেশকৃত মিকচার সংকুচিত হতে থাকে এবং পিস্টন যখন টিডিসিতে পৌঁছায় তখন ক্লিয়ারেন্স ভলিউমে মিকচারে পূর্ণ সংকোচন ঘটে । এই সংকোচনের ফলে মিকচারের চাপ এবং তাপ উভয়ই বৃদ্ধি পায় ।
গ) পাওয়ার স্ট্রোক (Power Stroke) :
কমপ্রেশন স্ট্রোককে পিস্টন টি.ডি.সি তে পৌঁছালে মিকচার স্পার্ক প্লাগ হতে স্পার্ক লাভ করে এ স্পার্ক মিকচারকে আগুন ধরে দেয়। এতে মিকচার প্রজ্বলিত হয় পিস্টনকে প্রচণ্ড চাপে নিচের দিকে ধাক্কা দেয়। পিস্টনের এ রেসিপ্রোকেটিং গতিই ক্র্যাংক শ্যাফ্টকে ঘূর্ণন গতি প্রদান করে। এখান হতে যান্ত্রিক শক্তি আমরা কাজে লাগাই। এই স্ট্রোকে উভয় ভাত বন্ধ থাকে।
ঘ) এগজস্ট স্ট্রোক (Exhaust stroke):
এ স্ট্রোকে এগজস্ট ভালভ খোলা থাকে এবং ইনটেক ভাত বন্ধ থাকে । পিস্টন বি.ডি.সি. হতে টি.ডি. সিতে গমন করে সিলিন্ডার হতে পোড়া গ্যাস খোলা ভালভের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে বাহিরের করে দেয়। এই স্ট্রোক পর্যন্ত সমাধান করতে ক্র্যাংক শ্যাফটের পূর্ণ দুই ঘূর্ণনের প্রয়োজন হয়। এই স্ট্রোকে পিস্টন যখন টি.ভি.সি পৌঁছায় ইঞ্জিন তখন উল্লিখিত কাজগুলো পুনরায় করতে শুরু করে।
২. ফোর স্ট্রোক ডিজেল ইঞ্জিনের কার্যপ্রণালি :
এই ইঞ্জিনের ক্রিয়াচক্রের ক্রিয়াদি চারটি আলাদা আলাদা স্ট্রোকে সম্পাদিত হয় যা নিচে বর্ণনা করা হলো ।
ক) সাকশন স্ট্রোক (Suction Stroke) : এ স্টোক ইনটেক ভালভ খোলা থাকে এবং এগজস্ট ভাত বন্ধ থাকে। এই সময় পিস্টন টি.ডি.সি হতে বি.ডি. সিতে গমন করায় সিলিন্ডারে শূন্যতার সৃষ্টি হয়, ফলে বায়ুমণ্ডল হতে শুধু বাতাস সিলিন্ডার প্রবেশ করে। টু স্ট্রোক ক্রিয়াচক্র ইঞ্জিনগুলো হয় পেট্রোল অথবা ডিজেল ফুয়েল দ্বারা চালিত হয়। ব্যবহৃত ফুয়েল ভেদে কার্যপ্রণালিতে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। তাই টুস্ট্রোকে ডিজেল এবং টু স্ট্রোক পেট্রোল ইঞ্জিনের কার্যপ্রণালি ভিন্ন ভিন্ন ভাবে বর্ণনা করা হলো।
খ) কমপ্রেশন স্ট্রোক (Compression Stroke) : এ স্ট্রোকে পিস্টন বি.ডি.সি হতে টি.ডি.সির দিকে ধাবিত হয়। এই স্ট্রোকে উভয় ভাল্ব বন্ধ থাকায় পূর্বের স্ট্রোকে সিলিন্ডারে প্রবেশকৃত বাতাস সংকুচিত হতে থাকে এবং পিস্টন যখন টি.ডি.সিতে পৌঁছায় তখন ক্লিয়ারেন্স ভলিউমে বাতাসের পূর্ণ সংকোচন ঘটে। এই সময় সংকুচিত বাতাসের ভাপ ও চাপ বেড়ে যায় । কমপ্রেশন স্ট্রোকের শেষের দিকে ইনজেক্টর হতে ভিজেল ফুয়েল ক্ষুদ্রানুকারে সিলিন্ডারে প্রবেশ করে সংকুচিত ও উত্তপ্ত বাতাসের সংস্পর্শে আসা মাত্রই প্রজ্জ্বলন শুরু হয় ।
গ) পাওয়ার স্ট্রোক (Power Stroke): বাতাস ও জ্বালানি প্রজ্জ্বলনের ফলে প্রচণ্ড চাপ বা ধাক্কাই পিস্টনকে নিচের দিকে ধাবিত হতে বাধ্য করে। ইহাই পাওয়ার স্ট্রোক। এই স্ট্রোক হতেই ক্র্যাংক শ্যাফট ঘূর্ণায়ন গতি লাভ করে। এই স্ট্রোকে উত্তর ভাতই বন্ধ থাকে।
ঘ) এগজস্ট স্ট্রোক (Exhaust Stroke): এ স্ট্রোকে এগজস্ট ভালভ খোলা থাকে এবং ইনটেক ভালভ বন্ধ থাকে। পিস্টন বি.ডি.সি হতে টি.ডি.সিতে গমন করে সিলিন্ডার হতে পোড়া গ্যাস খোলা ভালভের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে বের করে দেয়। স্ট্রোকে পিস্টন যখন টি.ডি. সিতে পৌঁছায়, ইঞ্জিন তখন ক্রিয়াচক্রের ক্রিয়াদি পুনরায় করতে শুরু করে ।
টু স্ট্রোক ক্রিয়াচক ইঞ্জিনের কার্যপ্রণালি (Working Procedure of Two Stroke Cycle Engine):
১। টু-স্ট্রোক পেট্রোল ইঞ্জিনের কার্যপ্রণালি এ ইঞ্জিনের ক্রিয়াচক্রের ক্রিয়ানি পিস্টনের দুইটি কার্যাদি নিচে বর্ণনা করা হলো।
ক) উর্ধ্বগতি (Upward Motion) Power
পিস্টন বি.ডি.সি. হতে টি.ডি সিতে গমন করায় ক্র্যাংক কেইসে শূন্যতার সৃষ্টি হয়। তখন কার্বুরেটরের সঙ্গে সংযুক্ত ইনটেকপোর্ট-এর মাধ্যমে সেখানে মিকচার প্রবেশ করে। এ গমনের একপর্যায়ে এগজস্ট ও ট্রান্সফার পোর্ট পিস্টনের দ্বারাই বন্ধ হয়ে যায়। তখন সিলিন্ডারে পিস্টনের পূর্বের স্ট্রোকে প্রবেশকৃত মিকচার সংকুচিত হতে থাকে। এ স্ট্রোকের শেষে দিকে মিকচার স্পার্ক প্লাগ হতে স্পার্ক লাভ করে।
নিম্নগামী গতি (Downward Motion):
ঊর্ধ্বগমনের শেষের দিকে প্রাপ্ত স্পার্ক মিকচারে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে মিকচার খুবই দ্রুত প্রজ্বলিত হতে থাকে। এই প্রজ্বলনের সময় সিলিন্ডারে প্রচণ্ড চাপের সৃষ্টি হয়। এ প্রচণ্ড ধাক্কাই পিস্টনকে নিচের দিকে ধাবিত হতে বাধ্য করে। এটা পাওয়ার বা শক্তি। এই স্ট্রোকের শেষের দিকে প্রবেশকৃত মিকচারকেও কিছুটা সংকুচিত করে।
এ নিম্ন গমনের শেষ পর্যায়ে পিস্টন যখন এগজস্ট পোর্ট খুলিয়ে দেয়, তখন পোড়া গ্যাস বায়ুমণ্ডলে বের হতে থাকে। নিম্ন গমনের একবারে শেষ পর্যায়ে পিস্টন যখন ট্রান্সফার পোর্ট খুলিয়ে দেয়, তখন ক্র্যাংক কেইস হতে মৃদু চাপযুক্ত মিকচার সিলিন্ডারে প্রবেশ করে।
এতে নতুন মিকচার পোড়া গ্যাসকে সিলিন্ডার হতে বের করে দেয় । এরূপে দুই স্ট্রোক বিশিষ্ট ইঞ্জিনে ঊর্ধ্বগতিতে একদিকে সাকশন, অপর দিকে কমপ্রেশন এবং নিম্ন গতিতে পাওয়ার, এগজস্ট এবং মিকচার ট্রান্সফারেন্স কার্য সম্পূর্ণ হয় এবং এতে ক্র্যাংক শ্যাফটের মাত্রা পূর্ণ এক ঘূর্ণায়নের প্রয়োজন হয় ।
২. টু-স্ট্রোক ডিজেল ইঞ্জিনের কার্যপ্রণালি :
এ ইঞ্জিন একটি ব্রোয়ার সিলিন্ডারের চতুর্পার্শ্বে এয়ার রিজার্ভ এবং সিলিন্ডারের নিম্নাংশের চতুর্দিকে কতকগুলো এয়ারপোর্ট সিলিন্ডার হেডে শুধু এগজস্ট ভাত ও ইনজেকটর নিয়ে গঠিত। এই ইঞ্জিনে ক্রিয়াচক্রের ক্রিয়াদি দুইটি মাত্র স্ট্রোকে সম্পন্ন হয়।
ইনটেক ও এগজস্ট
ক) ঊর্ধ্বগমন (Upward Motion):
পিস্টনের নিম্ন গমনের শেষে এবং ধার ঊর্ধ্বগমনের শুরুতে সে সময় ইনলেট পোর্টসমূহ খোলা থাকে ঐ সময় সিলিন্ডার শুধু বাতাস দ্বারা পূর্ণ হয়। অতঃপর পিস্টনের উর্ধ্বগমনের ইনলেট পোর্টগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সিলিন্ডারে প্রবেশকৃত বাতাস সংকুচিত হতে থাকে। পিস্টন যখন ঊর্ধ্বগমনের শেষ পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন এ অবস্থায় ফুয়েল উত্তপ্ত বাতাসের সংস্পর্শে আসা মাত্র জ্বলে ওঠে।
এইরূপ পিস্টনের উর্ধ্বগমনের শুরুতে সিলিন্ডার বাতাস প্রবেশ অতঃপর কমপ্রেশন এবং শেষ পর্যায়ে ফুয়েল ইনজেকশন উত্তপ্ত বাতাসে সঙ্গে মিশ্রণ এবং প্রজ্বলনের শুরু ইত্যাদি কার্যাদি সম্পূর্ণ হয়ে থাকে।
খ) নিম্নগমন :
ঊর্ধ্বগমনের শেষে ফুয়েল ইনজেশন হওয়ার সাথে সাথে সিলিন্ডারের ভিতর আগুন ধরে যায়। এত মিকচার খুবই দ্রুত প্রজ্বলিত হয়ে থাকে, সিলিন্ডারে প্রচণ্ড চাপের সৃষ্টি হয় এবং এ চাপেই পিস্টন নিম্নগতি লাভ করে, এটাই ইঞ্জিনের পাওয়ার বা শক্তি। কারণ পিস্টনের এ নিম্ন গমনই কানেকটিং রডের মাধ্যমে ক্র্যাংক শ্যাফটকে ঘূর্ণন গতি লাভ করতে বাধ্য করে।
পিস্টন পাওয়ার পেয়ে নিচের দিকে নামার শেষ সময়ে ইনলেট ভালভের পূর্বে এগজেস্ট ভাল্ভ এগজস্ট গ্যাস বায়ুমণ্ডলে চলে যায় । এ এগজস্ট ভালভ বন্ধ হবার পূর্বেই ইনলেট পোর্টসমূহ খুলে যায়, এতে চাপযুক্ত বাতাস সিলিন্ডারে প্রবেশ করে পোড়া গ্যাসকে সিলিন্ডার হতে সম্পূর্ণরূপে বের করে দেয়। একেই স্কাভেনজিং বলে। এ রূপে পিস্টন যখন বি.ডি.সিতে পৌঁছায় তখন উল্লেখিত কাজগুলো পুনরায় করতে শুরু করে। এতে ক্র্যাংক শ্যাফটের মাত্রা পূর্ণ এক ঘূর্ণনের প্রয়োজন হয়।
টু স্ট্রোক এবং ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিনের সুবিধা ও অসুবিধা
(ক) টু-স্ট্রোক ইঞ্জিনের সুবিধা ও অসুবিধা :
- সুবিধা :
১) একই ঘূর্ণনে টু-স্ট্রোক ইঞ্জিনের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ শক্তি পাওয়া যায় ।
২) টু-স্ট্রোক ইঞ্জিন তুলনামূলক হালকা ধরনের কাজে ব্যবহৃত।
৩) এতে ভাল্ভ থাকে না এবং এ ইঞ্জিন সাধারণত এয়ার কুণ্ড হয়। এ জন্য ভালভ ম্যাকানিজমের প্রয়োজন হয় না। এ জন্য এর গঠন কৌশল খুব সহজ এবং সংরক্ষণ সহজ।
৪) এর দাম কম এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম ।
৫) এতে ছোট ও হালকা ফ্লাই হুইল হলেই চলে ।
৬) অল্প সময়ের ব্যবধানে পাওয়ার পাওয়া যায় বলে টার্নিং ইফোর্ট প্রায় একইরূপ থাকে ।
- অসুবিধা:
১) টু-স্ট্রোক ইঞ্জিনে কিছুটা পোড়া গ্যাস সিলিন্ডারে থেকে যায়, ফলে মিকচার প্রবেশের পরিমাণ কমে যায় ।
২) টু-স্ট্রোক ইঞ্জিনে স্কাভেনজিং-এর সময় ফুয়েলের অপচয় ঘটে ।
৩। তুলনামূলকভাবে পাওয়ার স্ট্রোক কম শক্তিশালী হয় । ৪। এ ইঞ্জিনে শব্দ ও ক্ষয় বেশি এবং আয়ুষ্কাল কম।
৫। তুলনামূলকভাবে লুব অয়েল খরচ বেশি হয়।
খ ) ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিনের ও সুবিধা ও অসুবিধা :
- সুবিধা :
১) ফোর-স্ট্রোক ইঞ্জিনের পাওয়ার বা কার্যকরী স্ট্রোক টু স্ট্রোক, ইঞ্জিনের পাওয়ার স্ট্রোকের তুলনায় অধিক শক্তিশালী।
২) ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিনের পাওয়ার স্ট্রোকের দৈর্ঘ্যের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি।
৩) এ ইঞ্জিনের এগজস্ট স্ট্রোক পিস্টনের ঊর্ধ্বগমনের দ্বারা পোড়া গ্যাস সম্পূর্ণরূপে বিতাড়িত হয়।
৪। পাওয়ার স্ট্রোকে অধিক শক্তি উৎপন্ন হয়।
৫। ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিনের তুলনামূলকভাবে শব্দ ও ক্ষয় কম হয়, তাই আয়ুষ্কালও বেশি।
৬) ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিন তুলনামূলকভাবে ফুয়েল ও লুব অয়েলের অপচয় কম হয় ।
- অসুবিধা
১) এ ইঞ্জিনের প্রাথমিক খরচ এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেশি।
২) বেশি ডিগ্রির ব্যবধানে অর্থাৎ ৭২০ ডিগ্রি অন্তর অন্তর পাওয়ার পাওয়া যায় ।
৩) সম অশ্ব শক্তিসম্পন্ন একটি টু-স্ট্রোক ইঞ্জিনের তুলনায় ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিনের আকার বড় এবং একই কারণে এ ইঞ্জিনের ফ্লাই হুইল আকারও তুলনামূলকভাবে বড় হয়।
পেট্রোল ও ডিজেল ইঞ্জিনের তুলনামূলক পার্থক্য এবং সুবিধা ও অসুবিধা :
পেট্রোল ও ডিজেল ইঞ্জিনের তুলনামূলক পার্থক্য
১. পেট্রোল ইঞ্জিনের সুবিধা এবং অসুবিধা :
- সুবিধা :
১) পেট্রোল ইঞ্জিন হালকা।
২) একে সহজে স্টার্ট দেওয়া যায়।
৩) এতে ইনজেকটর, গভর্নর-এর মতো জটিল যন্ত্রাংশের প্রয়োজন হয় না ।
৪) স্পার্ক ইগনিশন ইঞ্জিনের অপারেটিং স্পিড সাধারণত বেশি হয় ।
- অসুবিধা:
(১) এর তাপীয় দক্ষতা কম।
২) পেট্রোল জ্বালানির দাম বেশি।
৩) ইঞ্জিন ব্যবহারে মাঝে মাঝে ভেপার লগের সৃষ্টি হয়।
৪) জ্বালানি খুব উদায়ী এ জন্য ইঞ্জিনে অগ্নিকাণ্ডের ন্যায় বিপদের সম্ভাবনা থাকে ।
২. ডিজেল ইঞ্জিনের সুবিধা ও অসুবিধা :
- সুবিধা :
১) ডিজেল জ্বালানি হিসাবে সস্তা এবং খরচ তুলনামূলকভাবে কম ।
২) এটি উদায়ী নয় বিধায় অগ্নিকাণ্ডের বিপদের হাত হতে রক্ষা করে ।
৩) এতে ইগনিশন সিস্টেম অথবা কার্বুরেটরের দরকার পড়ে না ।
৪) এতে হাইটেনশন কারেন্টের প্রয়োজন পড়ে না ।
৫) এ ধরনের ইঞ্জিনে সহজে লোড চাপানো যায়, স্টার্টিং এ পর কিন্তু পেট্রোল ইঞ্জিনের মতো গরম হয় না।
৬) এর তাপীয় দক্ষতা বেশি হওয়ায় টর্ক ও বেশি ।
৭) একে দীর্ঘ সময় চালু রাখা সম্ভব।
- অসুবিধা:
(১) এ ইঞ্জিন কমপ্রেশন বেশিও বেশি হওয়ায় ইঞ্জিন অধিক ভারী ও বড় হয় ।
২) অনেক সময় এ জাতীয় ইঞ্জিনে এয়ার লক হয় এবং স্টার্ট করতে অসুবিধা হয়।
৩) দুই দফা ফিল্টারের প্রয়োজন হয়।
৪) এর গভর্নর জটিল হয়।
৫) ফুয়েল ইনজেকটর সরঞ্জাম মেরামত করতে দক্ষ কারিগরের প্রয়োজন হয়।
প্রশ্নমালা-১৯
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :
১. ইঞ্জিনের ক্রিয়াচক্র কী?
২. চার ঘাত ইঞ্জিনের ক্র্যাংক শ্যাফট কত ডিগ্রি কৌণিক দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়?
৩. দুই ঘাত ইঞ্জিনের ক্র্যাংক শ্যাফটকে কত ডিগ্রি কৌণিক দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়?
৪. চারঘাত ডিজেল ইঞ্জিন কোন গাড়িতে ব্যবহার করা হয়?
৫. পেট্রোল ইঞ্জিনের দুইটি স্ট্রোকের নাম লেখ।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :
১. পেট্রোল ও ডিজেল ইঞ্জিনের সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ লেখ।
2. ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিনের সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ লেখ।
৩. টু-স্ট্রোক ইঞ্জিনের সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ লেখ।
রচনামূলক প্রশ্ন :
১. চার স্ট্রোক পেট্রোল ইঞ্জিনের কার্যপ্রণালি চিত্রসহ বর্ণনা কর।
২. চার স্ট্রোক ডিজেল ইঞ্জিনের কার্যপ্রণালি চিত্রসহ বর্ণনা কর ।
৩. চিত্রসহ দুই স্ট্রোক পেট্রোল ইঞ্জিনের কার্যপ্রণালি বর্ণনা কর।
৪. চিত্রসহ দুই স্ট্রোক ডিজেল ইঞ্জিনের কার্যপ্রণালি বর্ণনা কর।
৫. পেট্রোল ও ডিজেল ইঞ্জিনের মধ্যে পার্থক্য লেখ।
আরও দেখুন :