অপরিশোধিত তেল থেকে অতিরিক্ত এবং অপ্রয়োজনীয় পদার্থসমূহ পৃথকীকরণ নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং” বিভাগ এর “ফুয়েলস এন্ড লুব্রিক্যান্টস” বিষয়ের একটি পাঠ। খনি থেকে পাওয়া অপরিশোধিত তেলে গ্যাস, পানি, ম্যাগনেসিয়াম, ভ্যানাডিয়াম, সোডিয়াম ক্লোরাইড ও সালফার ইত্যাদির মিশ্রণ থাকে। তেল থেকে এসব অপ্রয়োজনীয় পদার্থ পৃথক করা হয়। তা না করলে তেলের গুণগত মান হ্রাস পায়, ইঞ্জিন ও জ্বালানী পদ্ধতিতে মরিচা ধরে এবং যন্ত্রপাতি দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। অপ্রয়োজনীয় উপকরণগুলি তেল শোধনাগারের উৎপাদন ক্ষমতাও কমিয়ে দেয়। অবাঞ্ছিত উপকরণগুলি তেল হতে দুইভাবে বের বা পৃথক করা যায় যেমন : (ক) রাসায়নিক পদ্ধতিতে এবং (খ) বৈদ্যুতিক পদ্ধতিতে।
অপরিশোধিত তেল থেকে অতিরিক্ত এবং অপ্রয়োজনীয় পদার্থসমূহ পৃথকীকরণ
খনি থেকে উত্তোলন তেলের যদি পানি মিশানো থাকে (water-in-oil emulsion) তাহলে তেল থেকে এই পানি দূরীভূত করার জন্য ‘ট্রিট-ও-লাইট’ (tret-o-lite) নামক এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ মিশালে তেল থেকে পানি পৃথক হয়ে যায়। এই পৃথকীকরণ . পদ্ধতিকে ইমালশন ব্রেকিং (emulsion breaking) বলে।
তেল পানি অপেক্ষা হাল্কা, তাই তেল ও পানি মিশ্রণকে একটি বড় ট্যাঙ্কে কয়েকদিন জমা করে রাখলে তেল পানি থেকে রাসায়নিক পদ্ধতি হচ্ছে এমন একটা-ব্যবস্থা যার সাহায্যে অপরিশোধিত তেল হতে অপ্রয়োজনীয় উপাদানসমূহ দূরীভূত করা হয় এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে উপাদানগুলিকে কার্যকরী পদার্থে রূপান্তর করা হয়।
অপরিশোধিত তেল হতে সালফার দূরীভূত করার জন্য সালফিউরিক- এসিড ট্রিটমেন্ট করা হয়। এসিড প্রক্রিয়াজাতকরণের পর তেল হতে এসিড দূর করার জন্য তেলকে অ্যালক্যালি (alkali) দ্বারা বিশেষ প্রক্রিয়াতে ধৌত করা হয়। এরপর পানি দ্বারা ধৌত করা হয়।
তেলে সালফার থাকলে যন্ত্রাংশে মরিচা ধরে এবং দুর্গন্ধ বের হয়। সুগন্ধি তেলে ধোঁয়াযুক্ত অগ্নিশিখা বের হয়। তরল সালফার ডাই-অক্সাইড বিশেষ প্রক্রিয়ায় ব্যবহারের ফলে ঐসব অপ্রয়োজনীয় উপাদানগুলি দূর করা যায়। ইহা ছাড়া সালফিউরিক- এসিড প্রক্রিয়া এবং পরে এসিড-কে (Acid clay) প্রক্রিয়ার সাহায্যে কেরোসিনের রং উন্নত করা যায়। সালফিউরিক- এসিড প্রক্রিয়ার সাহায্যে সালফার ছাড়া আরও অন্যান্য মিশ্রণ দূরীভূত করা যায়, যেমন অক্সিজেন ও নাইট্রোজেনের মিশ্রণ, অ্যাসফল্ট, রজন বা ধুনা এবং অসংপৃক্ত পদার্থ।
লুব্রিকেটিং তেলের পাতন প্রক্রিয়াতে যেসব অপ্রয়োজনীয় ও বাধা সৃষ্টিকারী পদার্থ বিদ্যমান তাদের মধ্যে মোমজাতীয় পদার্থ এবং আলকাতরা জাতীয় পদার্থ বা অ্যাসফল্টই প্রধান।. অপ্রয়োজনীয় পদার্থ দূর করার জন্য লুবঅয়েল পাতন প্রক্রিয়াতে যথাযথ তাপমাত্রায় ঠাণ্ডা করা হয় যাতে বেশী পরিমাণে মোম এবং আলকাতরা জাতীয় পদার্থ তলানি হিসাবে জমা হয়। এরপর পরিস্রাবণের সাহায্যে অপ্রয়োজনীয় পদার্থসমূহ দূর করা হয় এবং লুবঅয়েল হতে অ্যাসফল্ট ও মোমজাতীয় পদার্থ দ্রাবক পরিশোধনের মাধ্যমেও দূরীভূত করা যায়।
১৬.৫ চিত্রে এটি দেখানো হয়েছে। এখানে দ্রাবক হিসাবে প্রপেন, মিথেনইথেন, কিটোন ব্যবহার করা হয়। এই দ্রাবকগুলিকে সংক্ষেপে মিক বলা হয় (MEK)। ক্লে (clay) এবং দ্রাবক (solvent) এই দুটি প্রক্রিয়াই চিত্রে দেখানো হয়েছে। এই দুটি প্রক্রিয়াই বার বার প্রয়োগ করে অপ্রয়োজনীয় পদার্থ ও মিশ্রণগুলি লুব অয়েল থেকে বাদ দেওয়া হয়। দ্রাবক এবং
লুবঅয়েল খুব ভালভাবে মিশিয়ে বহুক্ষণ স্থিরভাবে রেখে দিতে হয়। এতে লুবঅয়েল এবং দ্রাবক আলাদা হয়ে যায়। মিশ্রণকালে কিছু অ্যাসফল্টজাতীয় পদার্থ দ্রাবকরূপে পরিবর্তিত হয়। লুবঅয়েল শোধনাগারেও সালফিউরিক- এসিড প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয়। চিত্রে এটি দেখানো হয়েছে। নাইট্রোবেনজিন, ফুরফুরাল, ফিনল ইত্যাদিও দ্রাবক হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
আরও দেখুনঃ
- চার্জিং ও স্টার্টিং পদ্ধতি
- স্পার্ক প্লাগ
- ভ্যাকিউয়াম অ্যাডভান্সের কাজ বোঝার উপায়
- ভ্যাকিউয়াম অ্যাডভান্সের কাজ বোঝার উপায়
- ইগনিশন পদ্ধতি | বৈদ্যুতিক পদ্ধতি
- মোটরগাড়ি শিল্প
2 thoughts on “অপরিশোধিত তেল থেকে অতিরিক্ত এবং অপ্রয়োজনীয় পদার্থসমূহ পৃথকীকরণ”