অটোমোবাইলের ইতিহাস, অটোমোবাইল বলতে আমরা সাধারণভাবে বুঝি স্বয়ংক্রিয় মটরযান। সেলফ স্টার্টার বা ক্র্যাঙ্কিং মোটর অথবা অন্য কোন উপায়ে একবার ইঞ্জিনকে স্টার্ট করিয়ে দিলে শক্তি উৎপাদনের জন্য ইঞ্জিন নিজেই স্বয়ংসম্পূর্ণ। এক স্থান হতে অন্যত্র যাওয়ার ব্যাপারে মানুষ শুধু নিয়ন্ত্রণ করে মাত্র। ইঞ্জিনে মূল শক্তি উৎপাদনের জন্য মানুষ কিছুই করে না। অতীতে বিভিন্ন দেশে নানা ভাবে মটরযান প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য বহু প্রকারে চেষ্টা–প্রচেষ্টা চিন্তা— ভাবনার ইতিহাস শোনা যায়।
অটোমোবাইলের ইতিহাস | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং
আমার জানামতে ১৭৭০ সালে ফ্রান্সের অধিবাসী মিঃ নিকোলাস প্রথম স্বয়ংক্রিয় মটর যানের উদ্ভাবন করেন। তবে ঐ যানটি ছিল তিন চাকাবিশিষ্ট এবং বাষ্প চালিত। ঐ গাড়ীটি ধীর গতিতে মাত্র ১৫/২০ মিনিট চলেছিল। ইহার পর ১৮০২ সালে মিঃ ডেভিট টেবিটলার্ক এবং ১৮২১ সালে মিঃ জুলিস গ্রিফিথ (উভয়ে ইংল্যান্ডের অধিবাসী) বাষ্প চালিত স্বয়ংক্রিয় যান তৈরী করেন। কিন্তু এইগুলি মোটেও সন্তোষজনক ছিল না। প্রকৌশলীরা এবং বিজ্ঞানীরা বসে নেই তারা নিরন্তর চেষ্টা–প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন। কিন্তু চিন্তা–ভাবনা এবং গবেষণা চলতে থাকে। বেলজিয়ামের মিঃ লেনিয়র ১৮৬০ সালে প্রথম অন্তর্দাহ ইঞ্জিন (I. C. Engine) আবিষ্কার করেন।
১৮৬২ সালে মিঃ বিউডিরোসাস এবং জার্মান প্রকৌশলী মিঃ নিকোলাস অটো ১৮৭৬ সালে পেট্রোল ইঞ্জিন তৈরী করেন। ১৮৮০ সালে জার্মান এবং ফ্রান্সের ইঞ্জিনিয়ারগণ সম্মিলিতভাবে অন্তর্দাহ ইঞ্জিন (Internal combusion Engine) তৈরী করেন। ১৮৮৫ সালে জার্মানীর মিঃ গটসি ডায়ামলার এবং ১৮৮৬ সালে মিঃ কলবেঞ্জ অন্তর্দাহ ইঞ্জিন তৈরী করেন এবং বাইসাইকেল এবং ট্রাইসাইকেলে স্থাপন করেন।
ইহার পর থকে আরও উন্নত ধরনের যান তৈয়ারীর জন্য জোর প্রচেষ্টা ও গবেষণা চলতে থাকে এবং এক পর্যায়ে ১৮৯৩ সালে আমেরিকার মিঃ চার্লস–ডুরি এবং মিঃ ফ্রাংক– ডুরি (দুই সহধর ভাই) উন্নত প্রযুক্তিতে স্বয়ংক্রিয় মটরযান তৈরী করেন। ঐ যানসমূহের সাথে বর্তমান মটরযানসমূহের সাথে বহু মিল দেখা যায়। যেমন– ব্রেক সিস্টেম–ক্লাচ সিস্টেম–ট্রান্সমিশন, ইঞ্জিন—চাকা ইত্যাদি ইত্যাদি।
এদিকে ফ্রান্সে মিঃ পেনহার্ড এবং মিঃ লিভাসর ১৮৯৫ সালে উন্নত মানের পেট্রোল গাড়ী বাজারজাত করেন। ১৮৯৬ সালে যে সকল নির্মাতাগণ স্বয়ংক্রিয় মটরযান বাজারজাত করেন তাদের মধ্যে মিঃ আলেকজান্ডার উইনস্টন, মিঃ চার্লস কিং, মিঃ হেনরীফোর্ড এবং মিঃ রেনসন হুড উল্লেখযোগ্য।
১৮৯৩ সালে জার্মানীতে জয় জয়কার পড়ে যায়। কারণ ঐ সময় ডক্টর রুডলফ ডিজেল আধুনিক ডিজেল ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন। ফলে সারা বিশ্বে স্বয়ংক্রিয় যানের অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়। তাহার নাম অনুসারেই ইঞ্জিনের নাম রাখা হয় “ডিজেল ইঞ্জিন”। এই যানে যে জ্বালানি ব্যবহার করা হয় তাহাও “ডিজেল” নামে পরিচিত।
তাই দেখা যাচ্ছে যে ১৯০০ সাল হতে ১৯২০ সালের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে এবং প্রতিযোগিতা সহকারে আধুনিক মটরযান নির্মাণে বহু প্রতিষ্ঠান আত্মনিয়োগ করে। কেবলমাত্র আমেরিকাতেই শতাধিক প্রতিষ্ঠান মটরযান তৈরীর কাজে ব্রতী হয়। উহাদের মধ্যে ফোর্ড, বেডফোর্ড, নাশ, হার্ডসন, স্টুড বেকার, ক্যাডিনারু, পে–কার্ড, ওভার ল্যান্ডফোর্ড এবং পিয়াসএ্যারো, রোলরোজ, মারসিটিস, হীলম্যান, টয়োটা, হীনো, মিৎসুবিসি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
১৯২০ সাল হতে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত নির্মিতব্য মটরযান সমূহকে সেকেলে ধরনের যান বলা হয়। ১৯৭০ সালের পর থেকে মটরযান প্রযুক্তিতে এক অভিনব বিপ্লব ঘটতে থাকে এবং অদ্যাবধি তার জের চলছে। উন্নত ধরনের প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে নূতন নূতন ডিজাইনের যানবাহন বাজারে দেখা যাচ্ছে।
এইসব যানে ইলেকট্রনিক নিয়ন্ত্রিত ফুয়েল সিস্টেম, ইগনিশন সিস্টেম, ব্রেক সিস্টেম ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়াও রেডিও, টি.ভি এবং এয়ার কন্ডিশনার ইত্যাদি মটরযানে ব্যবহৃত হচ্ছে। অটোমেটিক ডোরলক, স্টিয়ারিং লক, চোর তাড়াবার অটোমেটিক সাইরেন ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে ক্লোজ সার্কিট সেটেলাইটের মাধ্যমে মটরযানের দুর্ঘটনা, নিখোঁজ এবং কোথায় অবস্থান করছে ইত্যাদি জানা যায়।
অতি সম্প্রতি আমেরিকায় ড্রাইভারবিহীন অর্থাৎ কম্পিউটার চালিত মটরযান বাজারে এসেছে কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হয় নাই। এই যানগুলি রোড নং– সংকেত এবং বাসা নং বিশ্লেষণ করে নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থানে পৌঁছাতে সক্ষম। অদূর ভবিষ্যৎ–এ কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত মটরযানের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে।
অত্যাধুনিক মটরযান নির্মাতা দেশের মধ্যে জাপান, আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানী, গ্রেট ব্রিটেন ইত্যাদি প্রধান। বর্তমান বিশ্বে জ্বালানি তৈল বাঁচানোর জন্য এবং পরিবেশ দূষণ কমানোর জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে জাপান ব্যাটারীর (Lead-Acid Battery) সাহায্যে অত্যাধুনিক মটরযান বাজারজাত করতে সক্ষম হয়েছে। আশা করা যায় অচিরেই ইহার বাণিজ্যিক উৎপাদন আরম্ভ হবে।
স্কোয়ার এবং ওভার স্কোয়ার ইঞ্জিন : যে ইঞ্জিনে সিলিন্ডারের বোর (squdre and over square), (Bore) এবং স্ট্রোক সমান হয় তখন সে ইঞ্জিনকে স্কোয়ার ইঞ্জিন বলে। স্ট্রোকের দৈর্ঘ্য কমিয়ে পিস্টনের চলার পথ কম করা, যার ফল হচ্ছে ইঞ্জিনের সিলিন্ডারের বোর বড় করা এবং স্ট্রোকের দৈর্ঘ্য ছোট করা এই জাতীয় ইঞ্জিনকে ওভার স্কোয়ার ইঞ্জিন বলে। যেমন, ৮৪ মিমি বোর এবং ৮০ মিমি স্ট্রোক। স্কোয়ার ইঞ্জিন অতীত কালে তৈরী করা হতো। বর্তমানকালে ওভার স্ট্রোক ইঞ্জিন তৈরী করা হয়।
আরও দেখুনঃ
- ইঞ্জিন টিউন-আপ | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং
- ফ্রন্ট এন্ড জিওমেট্রি | সাসপেনশন ও স্টিয়ারিং ব্যবস্থা | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং
- পাওয়ার স্টিয়ারিং | সাসপেনশন ও স্টিয়ারিং ব্যবস্থা | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং
- স্টিয়ারিং ব্যবস্থা | সাসপেনশন ও স্টিয়ারিং ব্যবস্থা | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং
- ঝাঁকুনি বিশোষক | সাসপেনশন ও স্টিয়ারিং ব্যবস্থা | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং
- বৈদ্যুতিক গাড়ি
1 thought on “অটোমোবাইলের ইতিহাস | অটোমোবিল ইঞ্জিনিয়ারিং”