Site icon অটোমোটিভ গুরুকুল [ Automotive Gurukul ], GOLN

অটোমোটিভ কার্বুরেটর

অটোমোটিভ কার্বুরেটর

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়- অটোমোটিভ কার্বুরেটর

অটোমোটিভ কার্বুরেটর Carburetor

কার্বুরেটরের প্রয়োজনীয়তা (Necessity of Carburetor)

পেট্রোল ইঞ্জিন ফুয়েল সিস্টেমের আরও একটি প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ হলো কার্বুরেটর। পেট্রোল ফুয়েল সিস্টেমে প্রবাহ লাইনে এটি এসি পাম্প ও ইঞ্জিনের ইনটেক মেনিফোল্ডের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করে। কার্বুরেটর পেট্রোল ইঞ্জিনকে পরিচালনা ও কার্যক্ষম রাখার ক্ষেত্রে নিজের কাজগুলো সম্পন্ন করে থাকে।

ক. এটি একটি নির্দিষ্ট হেডে স্বল্প পরিমাণ জ্বালানি সর্বদা ফ্লোট চেম্বারে সংরক্ষণ করে।

খ. এটি জ্বালানিকে ভেনচুরি ভ্যাকুয়ামের সাহায্যে ৰাষ্ট্ৰীয় অবস্থায় অর্থাৎ অটোমাইজেশন ও ভেপারাইজেশন। অবস্থায় রূপান্তর করে।

গ. এটি ফুয়েলকে বাষ্পীয় অবস্থায় আনার পর বাতাসের সঙ্গে মিশ্রণের সৃষ্টি করে ।

ঘ. এতে বাতাসের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকে যা বাতাস ও ফুয়েলের সংমিশ্রণ তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

ঙ. এটি গাড়ির গতি ও লোভ ভেদে বিভিন্ন অনুপাতে ফুয়েল ও বাতাসকে সংমিশ্রণপূর্বক ইঞ্জিন সিলিন্ডারে প্রেরণ করে থাকে। এ কারণে কার্বুরেটরকে অনেক ক্ষেত্রে পেট্রোল ইঞ্জিনের গভর্নরও বলা হয়ে থাকে।

চ. এতে সংমিশ্রিত এয়ার ফুয়েল সরবরাহের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকে, যা পরোক্ষভাবে ইঞ্জিনের গতি নিয়ন্ত্রণ করে ।

কার্বুরেটরের প্রধান অংশসমূহ (Main Parts of Carburetor) :

একটি কার্বুরেটরের ছোট-বড় মিলে অনেক যন্ত্রাংশই থাকে। কার্বুরেটর ভেদে এই যন্ত্রাংশসমূহের কিছুটা ভিন্নতাও রয়েছে । মূল কার্যগুলো সম্পন্নকরণের ক্ষেত্রে মূল যন্ত্রাংশগুলোর অবস্থান ও সাদৃশ্যতার মধ্যে কিছুটা মিল রয়েছে। নিচে বহু প্রচলিত ফিক্সড ভেনচুরি কার্বুরেটরের প্রধান যন্ত্রাংশসমূহ দেখানোর জন্য পাশাপাশি দুটি চিত্র প্রদানপূর্বক প্রধান যন্ত্রাংশসমূহের তালিকা প্রদান করা হলো ।

 

 

১। এসি পাম্প থেকে ফুয়েল ইনলেট লাইন

২। ফ্লোট চেম্বার

৩। ফোট

৪। নিডেল তালত

৫। মেইন মিটারিং লাইন

৬। ঢোক ভাত

৭। প্রোটন ভালভ

৮। ভেনচইর (ফিক্সড

৯। মিটারিং রড

১০। মিটারিং রড জেট

১১। লো-স্পীড জেট

১২। এয়ার বাইপাস লাইন

১৩। আইভেল পোর্

১৪ । আইডেন্স অ্যাডজাস্টিং কু

১৫। নজেল ও নজেল অ্যাসেমনি

১৬। ভ্যাকুয়াম চেম্বার/এক্সিলারেটিং পাম্প চেম্বার

১৭। ডায়াফ্রাম স্প্রিং

১৮। পাম্প লিফটার লিংক

১৯। পাম্প ডায়াফ্রাম

২০। ডায়াফ্রাম

২১। আপার স্প্রিং

২২। কার্বুরেটর বডি

২৩। এয়ার ক্লিনার

২৪। ইনটেক মেনিফোন্ড

কার্বুরেটরের শ্রেণিভেদ (Classification of Carburetor) :

গঠন ভেদে কার্বুরেটরকে বহু ভাগেই ভাগ করা যায়। সচরাচর যে সকল কার্বুরেটর গাড়িতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, সেগুলোর শ্রেণিভেদ নিম্ন প্রদত্ত হলো ।

১। ভেনচুরি ভেদে কার্বুরেটরকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায় ।

ক. ফিক্সড ভেনচুরি কার্বুরেটর বা সলিড কার্বুরেটর।

খ. ভেরিয়েবল ভেনচুরি কার্বুরেটর বা এস ইউ কার্বুরেটর ।

২। ফিক্সড ভেনচুরির আকৃতিভেদে আবার পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়।

ক. প্লেন ভেনচুরি কার্বুরেটর

খ. ডবল ভেনচুরি কার্বুরেট

গ. ভেন ভেনচুরি কার্বুরেটর

ঘ. নজলবোর ভেনচুরি কার্বুরেটর

ও. ট্রিপল ভেনচুরি কার্বুরেটর

৩। ইঞ্জিনে কার্বুরেটর স্থাপনার উপর ভিত্তি করে এদের তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়

ক) আপ-ড্রাফট কার্বুরেটর

খ) ডাউন ড্রাফট কার্বুরেটর

গ) সাইড-ড্রাফট কার্বুরেটর বা হরাইজেন্টাল কার্বুরেটর ।

৪ । ব্যারেলের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে কার্বুরেটরকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় :

ক) সিঙ্গেল বা একক ব্যারেল কার্বুরেটর

খ) ডুয়েল বা ডবল ব্যারেল কার্বুরেটর

গ) ফোর ব্যারেল কার্বুরেটর

৫। মিটারিং সিস্টেমের উপর ভিত্তি করে একে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় :

ক) এয়ার ব্লিডিং টাইপ কার্বুরেটর

খ) মিটারিং রড টাইপ কার্বুরেটর

৬। ঢোক ভাতের নিয়ন্ত্রণ ভেদে একে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় :

ক) ম্যানুয়েল চোক টাইপ কার্বুরেটর

খ) অটোমেটিক চোক টাইপ কার্বুরেটর ।

৭। ফ্লোট চেম্বারের উপর ভিত্তি করে একে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:

ক. এসেনট্রিক ফ্লোট পাইপ কার্বুরেটর

খ. কনসেনট্রিক ফ্লোট টাইপ কার্বুরেটর ।

ফিক্সড ভেনচুরি কার্বুরেটরের কার্যপ্রণালি (Working Procedure of Fixed Venture Carburetor)

ফিক্সড ভেনচুরি কার্বুরেটরকে সোলেক্স কার্বুরেটরও বলা হয়ে থাকে। এ কার্বুরেটরের উপরের অংশ এয়ার ক্লিনারের সাথে যুক্ত থাকে এবং এ প্রান্তকে এয়ার হর্ন বলা হয়। নিচের অংশ ইঞ্জিনের ইনটেক মেনিফোল্ডের উপরে যুক্ত থেকে কাজ করে। দুই প্রান্তের ব্যাস প্রায় সমান হলেও, এর মধ্যবর্তী স্থানের ব্যাস তুলনামূলকভাবে অত্যন্ত কম।

এ সরু পথকে কার্বুরেটর ভেনচুরি বলা হয়ে থাকে । কার্বুরেটর ভেনচুরিও ফুয়েল রিজার্ভ বা ফ্লোট চেম্বার একটি নজেলের মাধ্যমে সংযোগ থাকে ।

 

 

ইঞ্জিনের শোষণ ক্রিয়া যখন ইনটেক মেনিফোল্ডের মধ্য দিয়ে বাতাসকে এয়ার হর্নের দ্বারা টেনে আনতে থাকে, তখন ভেনচুরি সরু পথ অতিক্রমের সময় এর গতিবেগ বেড়ে যায় । আমরা জানি, গতিবেগের সাথে চাপের সম্পর্ক ব্যস্তানুপাতিক। তাই ভেনচুরিতে বাতাসের গতিবেগ যে হারে বাড়ে, সে হারে চাপও কমতে থাকে ।

ফলে ভেনচুরিতে অত্যাধিক শূন্যতা বা ভ্যাকুয়াম সৃষ্টি হয়। ফ্লোর চেম্বারের ফুয়েলের উপর তখন বাতাসের বায়ুমণ্ডলীয় চাপ থাকে । অন্য পক্ষে ভেনচুরিতে থাকে শূন্যতা। এ শূন্যতাজনিত কারণেই নজেল দিয়ে ফুয়েল ভেনচুরিতে শোষিত হয়ে আসে।

ভেনচুরির অধিকতর শূন্যতাতে পড়েই এ তরল ফুয়েল বাষ্পীয় অর্থাৎ অটোমাইজেশন ও ভেপারাইজেশন অবস্থায় রূপান্তরিত হয়। বাতাসও যেহেতু বাষ্পীয় অবস্থাতেই থাকে সুতরাং বাতাসও তরল এক সমতা অবস্থায় এসে এয়ার ফুয়েলের সংশ্রিমণ তৈরি করে।

ইঞ্জিনের বিভিন্ন গতি ও লোডের উপর ভিত্তি করে এ সংমিশ্রণের বিভিন্ন আনুপাতিক হারের প্রয়োজন পড়ে । তাই কার্বুরেটর এ প্রয়োজন মিটানোর জন্য বাতাস ও পেট্রোলের ন্যায় তরল ফুয়েলকে সাধারণত ১০:১ থেকে ১৫ঃ১ আনুপাতিক হারে সংমিশ্রণপূর্বক, ইঞ্জিন সিলিন্ডারে সরবরাহ করে থাকে। এ এয়ার ফুয়েলকে বিভিন্ন অনুপাতে সংমিশ্রণ পূর্বক, ইঞ্জিন সিলিন্ডারে যথাসময়ে, যথার্থভাবে সরবরাহের নিমিত্তে কার্বুরেটরের কার্যক্রম কয়েকটি সার্কিটের উপর নির্ভরশীল ।

ভেরিয়েবল ভেনচুরি কার্বুরেটরের কার্যপ্রণালি : (Working Procedure of Ventury Carburetor) :

ভেরিয়েবল ভেনচুরি কার্বুরেটরকে এসইউ কার্বুরেটরও বলা হয়ে থাকে। এতে কোনো চোক ভাল্‌ভ থাকে না কিন্তু এয়ার হর্ন প্রান্তে এয়ার ক্লিনারের সংযোগ থাকে আর থ্রোটল ভালভের প্রাপ্ত ইনটেক মেনিফোল্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এয়ার হর্ন ও থ্রোটল ভালভের মধ্যবর্তী ভেনচুরি নামক স্থানটিই হচ্ছে এর ব্যতিক্রম।

একটি স্প্রিং লোডেড ভ্যাকুয়াম পরিচালিত পিস্টনের এক প্রান্তই এ ভেনচুরির পরিমাণ সংরক্ষণ করে থাকে। ইঞ্জিনের গতি ও সৃষ্ট ভ্যাকুয়ামের উপর ভিত্তি করে, ভেনচুরির পরিমাণ কম বা বেশি করে থাকে। এতে বাতাসের গতি ও শূন্যতার পরিমাণ সর্বদাই একই থাকে কিন্তু ভেনচুরির পরিমাণ কম-বেশি হলে এটা ঠিক রাখা হয়। তাই ভেরিয়েবল ভেনচুরি কার্বুরেটর বলা হয়ে থাকে

 

 

 

পিস্টনের মাথায় ক্রমাগত মোটা হতে চিকন অর্থাৎ টেপার আকৃতির নিডেল যুক্ত থাকে, যা ভ্যাকুয়াম বেশি হলে উপরে উঠে ফুয়েল ও বাতাস সরবরাহের পরিমাণ বাড়ায়। আবার নিচে নামলে ভেনচুরির পরিমাণও কমতে থাকে । এভাবে নিডেল ভ্যাকুয়াম পিস্টনের সঙ্গে উপরে নিচে ওঠানামা করে ফুয়েল ও এয়ার সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

এতে ভ্যাকুয়াম চেম্বারের সঙ্গে প্রোটল কার্বুরেটরের থ্রোটল প্রান্তের একটি সূক্ষ্ম অন্তঃছিদ্রের দ্বারা সংযোগ থাকে। এ সংযোগের ফলে ভ্যাকুয়াম চেম্বারে, ভ্যাকুয়াম ইঞ্জিনের গতি ও লোডের উপর ভিত্তি করে কম বেশি হয়ে থাকে। এ ভ্যাকুয়ামের তারতম্যজনিত কারণে পিস্টন উপরে নিচে ওঠানামা করে, ট্যাপার নিডেলকেও উপরে নিচে ওঠানামা করায়। ফলে ফ্লোট চেম্বার হতে ফুয়েল বিভিন্ন অবস্থায়, বিভিন্ন মাত্রায় আগমন পূর্বক বিভিন্ন হারে এয়ার ফুয়েলের সংমিশ্রণ তৈরি করে ইঞ্জিনের চাহিদা মিটিয়ে থাকে ।

প্রশ্নমালা-১৫

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :

১। কার্বুরেটরের অবস্থান কোথায়?

২। জ্বালানিকে কে অটোমাইজেশন অবস্থায় পরিণত করে ?

৩। ভেনচুরি ভেদে কার্বুরেটরকে কী কী ভাগে ভাগ করা যায়?

৪। মিটারিং সিস্টেমের উপর ভিত্তি করে কার্বুরেটরকে কী কী ভাগে ভাগ করা যায়?

৫। চোক ভাভের নিয়ন্ত্রণ ভেদে কার্বুরেটরকে কী কী ভাগে ভাগ করা যায়?

৬। সোলেক্স কার্বুরেটর কাকে বলে?

৭। কার্বুরেটর ভেনচুরি কাকে বলে?

৮। ভেনচুরিতে বাতাসের গতিবেগ বাড়লে চাপ কমতে থাকে কেন?

৯। এসইউ কার্বুরেটর কাকে বলে?

১০। ভেনচুরির পরিমাণ কম বা বেশি কার উপর ভিত্তি করে হয়ে থাকে?

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :

১। ফুয়েলকে বাতাসের সাথে সংমিশ্রণ তৈরি করা হয় কী উপায়ে ?

২। কার্বুরেটরকে কেন পেট্রোল ইঞ্জিনের গভর্নর বলা হয় ?

৩। কার্বুরেটরের তিনটি যন্ত্রাংশের নাম লেখ।

৪। ফিক্সড ভেনচুরির আকৃতি ভেদে কার্বুরেটরকে কী কী ভাগে ভাগ করা যায়?

৫। ইঞ্জিনে কার্বুরেটর স্থাপনার উপর ভিত্তি করে কী কী ভগে ভাগ করা যায়?

৬। ব্যারেলে সংখ্যার উপর ভিত্তি করে কার্বুরেটকে কী কী ভাগে ভাগ করা যায়?

৭। কার্বুরেটরের কোন অংশকে এয়ার হর্ন বলা হয়?

৮। ফিক্সড ভেনচুরি কাবুরেটর বলার যৌক্তিকতা কোথায়?

৯। রীচ মিকচার বলতে কী বোঝায়?

১০। লীন মিকচার বলতে কী বোঝায়?

রচনামূলক প্রশ্ন :

১। কার্বুরেটরের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ কর।

২। চিত্রসহ কার্বুরেটরের প্রধান প্রধান অংশসমূহের নাম লেখ।

৩। কার্বুরেটরের শ্রেণিভেদ দেখাও।

৪। ফিক্সড ভেনচুরি কার্বুরেটরের কার্যাবলি উল্লেখ কর।

৫। ভেরিয়েবল ভেনচুরি কার্বুরেটরের কার্যাবলি উল্লেখ কর ।

আরও দেখুন :

Exit mobile version